আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি

প্রতিটা মানুষেরই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে একবারের জন্য হলেও পাখি হওয়ার ইচ্ছে জাগে। ‘পাখি যদি হতাম আমি, ঘুরতাম সারা বিশ্ব রে!’ -ছড়াকাররা এমন করে পাখি হওয়ার বাসনা প্রকাশ করেছেন। সে বাসনা ছড়িয়ে গেছে আমাদের প্রাণেও। পাখি হয়ে সারা বিশ্ব ঘুরে দেখার বাসনা থেকেই

প্রত্যাশার জাল বোনা ছিল কোয়ার্টার ফইনাল পর্যন্ত। কোয়ার্টার ফাইনালের আগেই ছিঁড়ে গেলো সে জাল।

হতাশা-বিস্ময়-লজ্জা দিয়ে শেষ হলো ঘরের মাঠে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ। হতাশা-লজ্জা দিয়ে শেষ হলেও কোয়ার্টার ফইনালের সম্ভাবনা ও সুযোগ দুটোই তৈরি করে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশ যে তিনটি ম্যাচ জিতেছিল তা দিয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া যেতো যদি ইংল্যান্ডের কাছে ক্যারিবীয়রা না হারত। কোয়ার্টার ফইনালে না হয় যাওয়া হলো না, মেনে নেয়া যেতো সেটা। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র ৭৮ রানে অলআউটের লজ্জা মেনে নেয়া কি সম্ভব! এর চেয়েও বড় লজ্জা পেতে হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে মাত্র ৫৮ রানে অলআউট হয়ে।

এ বিশ্বকাপে একমাত্র বাংলাদেশই একাধিকবার ১০০-এর নিচে অলআউট হয়েছে। কেনিয়া-কানাডাকেও এদিক দিয়ে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ড দুইবার তিন শতাধিক রান তাড়া করে জিতেছে। বিশ্বকাপে তিন শতাধিক রান তাড়া করে জেতার ৪টি রেকর্ডের দুটিই এ বিশ্বকাপে করেছে আয়ারল্যান্ড। একটি আবার ইংলান্ডের মতো শিরোপা প্রত্যাশীর বিপক্ষে ৩২৭ রান তাড়া করে।

এদিক দিয়ে আইসিসি সহযোগী দেশগুলোর থেকেও তাই পিছিয়ে ছিলো বাংলাদেশ। এবার ছিল বাংলাদেশের চতুর্থ বিশ্বকাপ। আগের তিন বিশ্বকাপে ছিলো না কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানেসর সেঞ্চুরি। এবারও হলো না। ওদিকে নেদারল্যান্ডসের রায়ান টেন ডোয়েশ্চেট এবারের বিশ্বকাপে তুলে নিয়েছেন দুটি সেঞ্চুরি।

এখানেও আইসিসি সহযোগী দেশগুলোর ক্রিকেটারদের থেকে পিছিয়ে ছিলো বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এর মধ্যেও প্রাপ্তি আছে বাংলাদেশের। চাপের মুখে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৫৮ রানে অলআউট হয়ে পরের ম্যাচেই আবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় অনেক বড় প্রাপ্তি। এ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে করা ২৮৩ রান বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় রান। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত কোয়ার্টার ফইনালের স্বপ্ন জিইয়ে রাখাও বড় প্রাপ্তি।

নিজেদের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রেখে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ এমনকি ভারতের কোয়ার্টার ফাইনালের সম্ভাবনাকে সংশয়ে ফেলে দেয়াও কম প্রাপ্তি নয়! সামগ্রিক পারফরম্যান্স বিবেচনায় বাংলাদেশের ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং কোনো বিভাগই সেভাবে চোখে পড়ার মতো কিছু করে নি। তারপরও বোলিং-ফিল্ডিং কে এগিয়ে রাখতে হয়। ব্যাটিংটাই সবচেয়ে বেশি হতাশায় ডুবিয়েছে। উপমহাদেশে এবারের বিশ্বকাপে বেশ ভালো রান পাচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা। সেখানে ৬ ম্যাচে ১৮৮ রান করে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানসংগ্রহকারী ইমরুল কায়েস।

সব মিলিয়ে একশো রান পার করেছেন আর মাত্র তিন ব্যাটসম্যান। তামিম দুটো শূন্য ও ১টি হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ১৫৭ রান। সাকিব ১৪২ এবং জুনায়েদ করেছেন ১১৪ রান। এ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানও ইমরুলের, নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৭৩। ৬ ম্যাচে মাত্র ৪টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

এর মধ্যে ইমরুল করেছেন দুটি। তামিম ছাড়া অপরটি করেছেন সাকিব। সবচেয়ে বড় পার্টনারশিপ ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে ইমরুল-জুনায়েদের ৭৩ রান। উপমহাদেশের উইকেট যেখানে স্পিনারদের স্বর্গরাজ্য সেখানে বাংলাদেশের স্পিনাররাও বড় কিছু করতে পারে নি। উল্টো ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকা-আয়ারল্যান্ডের স্পিনে ধুঁকেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

৬ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। স্পিনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অস্ত্র রাজ্জাক ৬ ম্যাচে নিয়েছেন ৭ উইকেট। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ছাড়া সব ম্যাচেই রাজ্জাক ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের প্রধান নায়ক শফিউল পেয়েছেন ৬ উইকেট। সেরা বোলিংও তার।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২১ রানে ৪ উইকেট। এভারেজে ফিল্ডিং ভালোই হয়েছে বলা যায়। চারটি কোয়ার্টার ফাইনালের দুটো হবে ঢাকায়। যার একটিতে দেখা যেতে পারত বাংলাদেশকে। এখন এ দুটো ম্যাচ কিছুটা শূন্যতা ছড়াবে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রাণে।

এবারের মতো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান শেষ। অপেক্ষা এখন ২০১৫ বিশ্বকাপের। প্রত্যাশা এ বিশ্বকাপের প্রাপ্তিগুলোকে পরেরবার আরো বড় করা এবং অপ্রাপ্তির শূন্যতা পূরণ করে দেয়া। ২০১১ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স ব্যাটিং নাম ম্যাচ ইনিংস অপ. রান ৫০ এভারেজ সেরা তামিম ইকবাল ৬ ৬ ০ ১৫৭ ১ ২৬.১৭ ৭০ ইমরুল কায়েস ৬ ৬ ১ ১৮৮ ২ ৩৭.৬০ ৭৩* জুনায়েদ সিদ্দিকী ৬ ৬ ০ ১১৪ ০ ১৯.০০ ৩৭ সাকিব আল হাসান ৬ ৬ ০ ১৪২ ১ ২৩.৬০ ৫৫ মুশফিকুর রহিম ৬ ৬ ১ ৮১ ০ ১৬.২০ ৩৬ রকিবুল হাসান ৪ ৪ ১ ৭০ ০ ২৩.৩৩ ৩৮ মাহমুদউল্লাহ ৪ ৩ ১ ৩২ ০ ১৬.০০ ২১* নাঈম ইসলাম ৫ ৫ ০ ৪০ ০ ৮.০০ ২৯ শাহরিয়ার নাফিস ২ ২ ০ ৪২ ০ ২১.০০ ৩৭ মোহাম্মদ আশরাফুল ২ ২ ০ ১২ ০ ৬.০০ ১১ আবদুর রাজ্জাক ৬ ৫ ১ ১৫ ০ ৩.৭৫ ১১ শফিউল ইসলাম ৬ ৫ ১ ২৬ ০ ৮.৬৭ ২৪* রুবেল হোসেন ৬ ৪ ৩ ১১ ০ ১১.০০ ৮* সোহরাওয়ার্দী শুভ ১ ০ - - - - - নাজমুল হোসেন - - - - - - - বোলিং নাম ওভার মেডেন রান উইকেট ইকোনমি এভারেজ সেরা শফিউল ইসলাম ৩৯.২ ৪ ২০৩ ৬ ৫.১৮ ৩৩.৮৩ ৪/২১ রুবেল হোসেন ৩৯.৪ ০ ২১৬ ৫ ৫.৪৮ ৪৩.২০ ৩/৫৬ আবদুর রাজ্জাক ৪৮ ৫ ২১৭ ৭ ৪.৫২ ৩১.০০ ৩/২৯ সাকিব আল হাসান ৪৬.২ ০ ২২৩ ৮ ৪.৮৩ ২৭.৮৮ ২/২৮ নাঈম ইসলাম ৩৭ ২ ১৭৫ ৪ ৪.৭৩ ৪৩.৭৫ ২/২৯ মাহমুদউল্লাহ ২২ ০ ১২৫ ৩ ৫.৬৮ ৪১.৬৭ ১/৩০ সোহরাওয়ার্দী শুভ ১০ ১ ৩৩ ১ ৩.৩০ ৩৩.০০ ১/৩৩ মোহাম্মদ আশরাফুল ১১ ০ ৫৩ ২ ৪.৮২ ২৬.৫ ২/৪২

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.