মাশরাফি'কে কেন দলে নেয়া হলো না এ নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। আমি শুনেছি/পড়েছি কিন্তু সে বিতর্কে অংশ নেইনি। আমার নিজস্ব মতামত ছিল কিন্তু তা এই স্ফুলিংগকে দাবানলে রূপ দিতে পারে ভেবে আর আগাই নি। এখন ভাবছি পরিস্থিতী যেহেতু কিছুটা শান্ত হয়ে এসেছে তাই সাহশ করে মতামতটা সামু'র মাধ্যমে আপনাদের সাথে শেয়ার করেই ফেলি। তিরস্কার হতে পারে, কিন্তু কেউ তো আর মারতে আসবে না :-)
এ ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই যে সুস্থ মাশরাফি বাংলাদেশের সেরা বোলার।
তার নৈপুন্যে অনেক খেলা আমরা জিতেছি (গত বিশ্বকাপে ভারতর বিপক্ষে মাশরাফি'র বোলিং আমি কোনদিনও ভুলবো না)। বাংলাদেশের বোলিং স্টার বলতে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব এক কথায় মাশরাফি'কেই জানে। স্লগে সে অনেক সময় ভালো ব্যাটিং ও করেছে।
কিন্তু এই মাশরাফি কি সেই মাশরাফি? ইন্জুরি আক্রান্ত এবং অবশ্যই যাকে আবার ডাক্তারের ছুরির নিচে যেতে হবে সে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে'র মত এতবড় আসরে খেলার মত শারিরিকভাবে সুস্থ আছে কিনা সেটাই ছিল মুল বিবেচনার বিষয়। দেশের মাঠে ক্রিকেট আর তাতে মাশরাফি নেই এটা ভাবা সত্যিই কষ্টকর।
আবেগের জায়গাটা ঐখানেই। মাশরাফি'র মত ক্রিকেট প্রেমি খেলোয়ারের পক্ষে এই আবেগ সংবরন করা কঠিন। তাই সে আবাহনী - মোহামেডান ম্যাচে পুরো ৫০ ওভার মাঠে ছিল এবং ১০ ওভার বোলিং ও করেছিল। কিন্তু তাতে কোচের মন গলেনি। তিনি বলেছেন মাশরাফি বিশ্বকাপ খেলার মত ফিট নয়।
আর তাতেই মাশরাফি বাঁধিয়েছে কোচের সাথে কথা কাঁটাকাটি। "এটা বলবে ফিজিও। কিন্তু কোচ কেন বললেন?" শেষ পর্যন্ত ফিজিও ও বলে দিলেন, মাশরাফি বিশ্বকাপ খেলার মত ফিট নয়।
এখন দুটো পক্ষ দাড়িয়ে গেল। এক পক্ষ হচ্ছে নির্বাচক কমিটি আর অন্যপক্ষ হচ্ছে সাধারন জনতা।
নির্বাচক কমিটি জানিয়ে দিলেন ১৫ জনের বিশ্বকাপ টিমে মাশরাফি নেই। বলে ফেলাটা খুবই সহজ কিন্তু সাধারন জনতার পক্ষে সেটা মেনে নেয়া মোটেই সহজ নয়। তাই সারাদেশে বিক্ষোভ আর আন্দোলন। আবেগপ্রবন জনতার রায়, "বিশ্বকাপে মাশরাফি'কে দেখতে চাই"।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে মাশরাফি'কে দলে নেয়া উচিৎ ছিল কি না? অন্তত ১৫ জনের দলে রাখা যেত কি না? দেশের বড় বড় ক্রিকেট বোদ্ধারা বললেন, "অবশ্যই রাখা উচিৎ ছিল।
শেষ পর্যন্ত সময় নেয়া উচিৎ ছিল। একেবারেই যদি ফিট না হত তাহলে আই সি সি'র কাছে অনুরোধ করে অন্য কাউকে দলে নেয়া যেত। এত আগেই তাকে বাদ দিয়ে নির্বাচক কমিটি তার প্রতি অবিচার করেছে। "
কিন্তু কথা হচ্ছে আপনি কেন এমন একজন খেলোয়ার'কে বিশ্বকাপের মত এতবড় একটা আসরে দলে নেবেন যে গত এক বছরের বেশি সময়ে একটা পুরো সিরিজ সুস্থভাবে শেষ করতে পারেনি; সিরিজে'র প্রথম বা দ্বিতীয় ম্যাচেই ইন্জুরড হয়ে মাঠ ছেড়েছে ম্যাচের দ্বিতীয় বা তৃতীয় ওভার বল করতে যেয়েই।
ধরেনিন মাশরাফি'কে দলে নেয়া হল এবং আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামানো হল।
মাশরাফি মাঠে থাকাটাই যেমন দলের মনোবল'কে অনেকগুন বাড়িয়ে দিতে পারে তেমনি খেলার মাঝখানে তার ইন্জুরিও কি দলের মনোবল'কে ভেংগে দেয়ার জন্য যথেষ্ট নয়? এমন একটা ম্যাচে মাশরাফি খেলার মাঝখানে ইন্জুরড হয়ে মাঠ ছাড়লে সেটা বাংলাদেশ'কে মানুষিকভাবে ভেংগে দিত এবং দলের পরাজয়ের কারনও হতে পারত। সেটা হয়নি কারন বাংলাদেশের প্রতিটি খেলোয়ার অনেক আগে থেকেই জানত মাশরাফি দলে নেই, সুতরাং তাকে নিয়ে ভাবারও কোন সুযোগ নেই। তাকে বাদ দিয়েই ভাবতে হবে এবং তার শুন্যতা যারা দলে আছে তাদেরকেই পুরন করতে হবে। এর ফল ভালো হয়েছে। দলের মধ্যে ঐক্য তৈরি হয়েছে এবং দল স্বাভাবিক খেলা খেলে জয়লাভও করছে।
আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি সুস্থ মাশরাফি দলে থাকলেও দলের খেলা এরচাইতে খুব বেশি ভালো হত না। নির্বাচক কমিটি আনফিট মাশরাফি'কে দলে রাখার আবেগি বিলাশিতা না করে ভালোই করেছে।
এবার আসুন দেখে নেই মাশরাফি'কে দলে নিলে বর্তমান ১৫ জনের দল থেকে কে বাদ পরত। পেস বোলারে'র পরিবর্তে পেস বোলার আসবে এটাই স্বভাবিক। সুতরাং মাশরাফি'কে জায়গা করে দিতে নাজমুল'কেই যে জায়গা ছাড়তে হত সে ব্যপারে আমি নিশ্চিৎ।
তার মানে ১৪ জন সুস্থ খেলোয়ারের সাথে দলে থাকত একজন অর্ধেক সুস্থ খেলোয়ার। দলে থাকতে না পেরে মাশরাফি যেমন ভেংগে পরেছে নাজমুলও তেমনই ভেংগে পরত। ফলে হঠাৎ মাশরাফি অসুস্থ হয়ে পরলে আমরা যে নাজমুল কে দলে ডাকতাম সে আসলে মন ভাংগা বিশ্বকাপ খেলার জন্য অপ্রস্তুত নাজমুল। এইমুহুর্তে পুর্নোদ্দামে ১৫ জনের দলে অনুশীলন করছে এবং যে কোন মুহুর্তে খেলার জন্য ডাক পাওয়ার অপেক্ষায় আছে যে নাজমুল সে নাজমুল'কে মোটেই পাওয়া যেত না। আর তা অবশ্যই দলকে ক্ষতি করত।
আমিতো বলব এটাই বরং ভালো হয়েছে। মাশরাফি যদি বিশ্বকাপে খেলতেই চায় তাহলে সম্পুর্নভাবে সুস্থ হয়ে দলে ফিরুক। যেমন ফিরেছে হাসি এবং মরগান। দলে ফিরে নিজের যোগ্যতা প্রমানও করছে।
এখনও বলব সুস্থ মাশরাফি দেশ সেরা পেসার এবং দলের অটোমেটিক চয়েস।
তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে, একজন ব্যাটসম্যানের পক্ষে ইন্জুরি থেকে ফিরে এসেই যেভাবে নিজেকে প্রমান করা সম্ভব, একজন বোলারে'র পক্ষে ততটা সহজ নয়। সুস্থ হওয়ার পর তাকে তার ওজন নিয়ে কাজ করতে হয় এবং পাশাপাশি বোলিং ছন্দ নিয়েও। মাশরাফি'র এই দিকগুলোও দেখতে হবে।
সুতরাং সব দিক বিবেচনায় মাশরাফি ইস্যুতে আমি নির্বাচক কমিটি'র সাথে একমত পোষন করছি। আবেগ নয়, আমাদের বাস্তবতা'কে মানতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।