আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুরে দাঁড়াও তারুন্য। ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ।

খিয়ারি মানে খিয়ার থেকে। গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে চলমান নানা ধরনের আলোচনা ও সমালোচনা নিয়ে কিছু কথা না লিখে শান্তি পাচ্ছিনা। যারা এই লেখাটি পড়বেন তাদের প্রতি সম্মান রেখে প্রথমেই প্রশ্ন করব আপনি কে? এই প্রশ্নটি যখন নিজের কাছে করি তখন স্বাভাবিক ভাবে আমার উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত নাম, স্থায়ী ও অম্থায়ী ঠিকানা, কর্ম বা পেশা, ধর্ম, স্রষ্টা, জাতিয়তা ইত্যাদি অনেক বিষয় এগিয়ে আসে। আরো বিশ্লেষণ করলে আমার ভেতরের ভাল, মন্দ, আবেগ, লোভ, দয়া,স্বার্থপরতা হ্যান ত্যান ইত্যাদি অনেক ধরনের সত্তা টের পাই; এই সব মিলিয়েই তো আমার- আমি। গণজাগরণ আন্দোলন নিয়ে বলতে গিয়ে এতসব মনস্তাত্বিক বিষয় টেনে আনছি কেননা আমার- আমি’র ভেতর আজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠেছে- আমি তরুণ।

আমি সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের আশাবাদী তরুণ! আমি বাঙালী! আমি বাংলাদেশী! আমি বিশ্বাস করি, এই আমার বাংলাদেশ, একদিন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে গাইবে- আমার সোনার বাংলা -আমি তোমায় ভালবাসি। সারা বিশ্ব আমার বাংলাদেশকে অনুসরণ করবে। আমি সেই স্বপ্ন দেখা তাজা রক্তের তরুণ! এই গণজাগরণ মঞ্চ বা শাহবাগের আন্দোলন এর পক্ষ বা বিপক্ষ, যত মত-দল-পথ-বিভক্তি বা একে নিয়ে যত কিছুই বলা হোক বা করা হোক না কেন - এই আন্দোলনকে বাংলাদেশ ও বিশ্বের ইতিহাস বাংলাদেশী তরুণদের একটি অহিংস গণ আন্দোলন পরিচয়ে যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখবে। গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। আমার মতন লাখো তরুন যারা স্বপ্ন দেখেন একদিন বাংলাদেশের হানাহানি ও দুষ্ট রাজনীতির অবসান ঘটবে, যারা স্বপ্ন দেখেন অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারে নিজস্ব স্থান তৈরি করে ফেলবে।

সেই স্বপ্ন দেখা তরুনদের কেউ হয়তো আওয়ামীলীগ সমর্থন করে আবার কেউ বিএনপি, কেউ বাম, কেউ বা ভিন্ন মতাবলম্বী। তারপরও মত পার্থক্য ঘুঁচিয়ে বিবেকবোধ সম্পন্ন এই তরুনরাই সেদিন ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগের মোহনায় জড়ো হয়েছিলেন। সেদিন রাজনৈতিক দরকষাকষি অথবা সমঝোতা অথবা অস্পষ্ট কোন কারণে যখন কুখ্যাত রাজাকার ও চিহ্নিত মানবতাবিরোধী আপরাধের দায়ে অভিযুক্ত কাদের মোল্লার অভিযোগ প্রমাণিত হবার পরও তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া থেকে রেহাই দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল। তখনই টগবগে তরুন ব্লগাররা প্রতিবাদের ডাক দেয়। কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড এবং সেই সাথে সকল রাজাকারের ফাঁসি’র দাবিতে সেই তরুনদের ডাকে জড়ো হয়েছিল হাজারে হাজার ছাত্র-জনতা ও বাংলাদেশের অতি সাধারণ গণমানুষ।

সেই স্বতঃস্ফূর্ত গণজমায়েত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানের স্ফুলিঙ্গ হয়ে এখন গণজাগরণ আন্দোলন। এই আন্দোলন বাংলাদেশের জন্মের বিরোধীতাকারী জামাত-শিবির চক্রকে, ধর্মকে ব্যবহার করে তাদের দেশবিরোধী চক্রান্তকে নতুন প্রজন্মের কাছে চিনিয়ে দিয়েছে নতুন করে, এই আন্দোলন সুবিধাবাদী মুখোশধারীদের মুখোশ খুলে দিয়েছে জনগণের সম্মুখে, এই আন্দোলন নতুন প্রজন্মকে হারিয়ে যাওয়া বা দখল হয়ে যাওয়া শ্লোগান দিতে শিখিয়েছে নতুনভাবে, এই আন্দোলন দেশাত্ববোধ জাগিয়ে প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এই আন্দোলন অবশ্যই নতুন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলন। এই আন্দোলনকে অস্বীকারকারী জামাত-শিবির ও তার সহযোগীরা শুরু থেকেই এর বিরুদ্ধে অনলাইনে- রাজপথে নানা ধরনের অপপ্রচার -কুৎসা -বানোয়াট বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে। নাস্তিক ব্লগারদের আন্দোলন বলে সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তাদের এই চেহারা তো নতুন নয়! তারা একাত্তরকে অস্বীকারকারী। মহান মুক্তিযুদ্ধকে তারা গন্ডগোল বলে চালিয়ে দেয়। ইসলামকে রক্ষা করতে অখন্ড পাকিস্তানের দাবিতে এরাই সেদিন মুক্তিকামী বাঙালীকে নাস্তিক-হিন্দু বলে নিবির্চারে হত্যা করতে গঠন করেছিল রেজাকার বাহিনি, আল বদর বাহিনি, আল শামস বাহিনি। পাকিস্তানের পতাকা হাতে এরা বাঙালীদের মালাউন বলে লুঠ, হত্যা, ধর্ষণ করতে গিয়ে নারায়ে তাকবির - আল্লাহু আকবর বলেছিল। সেই নরপশু রাজাকার আলবদরদের বিচার করা নিয়ে দেশে যখন আবারো হানাহানি আর দুষ্ট রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়েছে, বিএনপি যখন জামাত-শিবিরকে বাঁচাতে সবোর্চ্চ রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে, আওয়ামী- বিএনপি’র সেই পুরোনো জোট-মহাজোটের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চক্রান্তে দেশে যখন পরিকল্পিতভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, বাংলাদেশ বিরোধী সেই কালো শক্তি কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে জল ঘোলা করে তাতে মাছ শিকারের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

জামাত-শিবির পরিকল্পিতভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। তারা একদিকে গণমানুষের গণজাগরণ আন্দোলন নস্যাৎ করতে প্রচারণা চালাচ্ছে এই বলে যে গণজাগরণ মঞ্চ আওয়ামী সরকারের মদদে বাম-রাম-নাস্তিকদের আন্দোলন, আরেকদিকে সরল ধর্মপ্রাণ বাঙালীদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে তাদের উস্কে দিয়ে সংহিসতা ছড়াচ্ছে। দেশী-বিদেশী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তারা দেশে একটা অরাজকতার পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সংহিসতাকে তারা গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়ে রাজাকারদের শাস্তি প্রতিরোধের পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করতে চাইছে। যদি এই কাজে তারা সফল হয় তবে তালেবানি কায়দায় ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনাও তারা করতে পিছপা হবেনা।

তাই সাবধান দেশপ্রেমিক জনতা! সাবধান আওয়ামীলীগ! সাবধান বিএনপি! সাবধান প্রজন্ম তরুন মুক্তিযোদ্ধা! সাবধান শাহবাগের জেগে থাকা তরুণ প্রজন্ম! এই প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে, বিভক্ত করতে, নানা রকম অপপ্রচারে মেতেছে তরুনদের মুখোশ নিয়ে জেগে থাকার ভান করা কিছু সুবিধাভোগী। এই সুবিধা ভোগী গোষ্ঠী গণজাগরণ আন্দোলনের তরুন প্রজন্ম নেতৃত্বকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে আন্দোলনের গতি কমাতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফেসবুক, ব্লগে, আড্ডায় নানা ধরনের অপপ্রচার করে যাচ্ছে। আন্দোলন নিয়ে রুটি ভাগাভাগির গণ্ধ শুকছেন তারা। দলীয় স্বার্থ হাসিল, সরকারের এজন্ডা বাস্তবায়ন ইত্যাদি অপপ্রচার যারা চালায় তাদেরকে খুঁজে বের করার সময় এসেছে।

ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এইসব মীরজাফরদের চেহারা ইতিহাস যুগে যুগে দেখতে পায়। তাই সাবধান দেশপ্রেমিক প্রজন্ম তারুণ্য। যারা এখনও লেখাটি পড়ছেন তারা সকলেই হয়তো জানেন এই গণজাগরণ আন্দোলনটি ভুমিষ্ট হবার কথা। জানেন তার বেড়ে ওঠার দৈনন্দিন গল্পটিও। জানেন শাহবাগ থেকে দেশে-বিদেশে- জেলা-উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ার গল্পও।

একই সাথে তার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কে নিয়ে নানা ধরনের রাজনীতি, কানাঘুষা, বিভ্রান্তি, দলবাজি ইত্যকার নানা হিসাব-নিকাষ, সহিংসতা, মৃত্যু এই সব নিয়ে চলমান দিনযাপন, হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা, খুন এইসবও আপনারা ভলোই জানেন। আর জানেন বলেই আপনাকে সেই প্রশ্নটি আবারো করছি। আপনি কে? নিজের ভেতরকে প্রশ্ন করুন। যদি আপনি তরুণ হন, যদি আপনি বাংলাদেশে জন্মান, যদি আপনি এই লাল-সবুজের পতাকাটাকে নিজের পরিচয় বলে মনে করেন, যদি আপনি বাংলাদেশের জন্মকে স্বীকার করেন, যদি আপনি আপনার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে দেখতে পান তবে আপনাকেই বলছি, ভাবুন। নিজেকে নিয়ে ভাবুন।

দেশকে নিয়ে ভাবুন। বর্তমান কে নিয়ে ভাবুন। আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সফলতার কথা ভাবুন। এটা বসে থাকার সময় নয়। এটা অবহেলা করে এড়িয়ে যাবার সময় নয়।

এটা ক্লান্তির সময় নয়। আমি জাতীয়তাবাদী, আমি আওয়ামী, আমি বাম এই সব পরিচয়কে ঝেড়ে ফেলার সময় এটা। অভিজ্ঞ মোড়ল-রাজনীতিক - যারা বৃদ্ধ হয়েছেন তারা এই গণজাগরণ আন্দোলনকে নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের যতই হিসেব নিকেষ কষুক না কেন তারা কিন্তু তরুণ এই শক্তিকে ভয় পায়। ইনিয়ে বিনিয়ে নিজেকে একটা খোলসের ভেতর ঢুকিয়ে রাখতে চায়। এর তালিকায় অনেক নামী-দামী-বিখ্যাতরাও পড়েন।

এদের আখের গোছানোর স্বভাব আছে। এদের অনুসরন করার দিন নয় এটা। সকলে জানেন যে, বাংলাদেশের জন্ম একদিনে বা রাতারাতি হয়নি। এর জন্য বাঙালীকে মুক্তিযুদ্ধ করতে হয়েছে। সশস্ত্র সংগ্রাম করতে হয়েছে।

দেশকে স্বাধীন করতে লক্ষ লক্ষ মানুষ তার জীবন দিয়েছেন। কত লক্ষ নারী, মা, বোন তার সম্ভ্রম হারিয়েছেন! কোটি কোটি মানুষ এই যুদ্ধকে ক্ষত হিসেবে বয়ে বেড়িয়েছেন তার স্বজন-সপ্ন হারানোর যন্ত্রণাকে সাথে করে। এই বাংলাদেশের ভুমিষ্ট হওয়ার সময় ছিল মাত্র নয় মাস! নয় মাস সময় খুব কম সময় কি? সেই আটচল্লিশ থেকে বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্র জন্মের বীজ। তারপর দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন, উনসত্তর এর গণঅভ্যুল্থান, ১৯৭১ এর রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। এরপর একটি স্বাধীন বাংলাদেশ।

লাল-সবুজের একটি স্বাধীন পতাকা। স্বাধীন বাঙালীর সমবেত সুর - আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। এই সুরকে বুকে ধারণ করে জেগে থাকা শাহবাগ, জেগে থাকা গণজাগরণ আন্দোলন কোনভাবেই নস্যাৎ করতে দেয়া যাবেনা। সেই বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রাখার সময় এটা। তাই বাংলাদেশের পক্ষের সকল তরুন-জনতাকে জেগে থাকার আহ্বান জানাই।

জেগে থাকা তরুন হিসেবে আমি সবার আগে রাজাকারের ফাঁসি চাই। বাংলাদেশের বিরোধীতাকারীদের বিচার চাই। দল হিসেবে জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ ও জামাতকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করে তার বিচার চাই। আমি ও আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। সাধারণ জনতার মুক্তি চাই।

জয় বাংলা। জয় জনতা। জয় গনজাগরণ আন্দোলন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.