৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরপরই ওরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দলীয় ও রাজনৈতিক পরিচয় যা-ই হোক না কেন, ওরা দুর্বৃত্ত, ওরা অমানুষ। ওরা সন্ত্রাসী। ওরা মানবাধিকার হরণকারী। ওরা মানবতার শত্রু।
আমরা নিজেদের সভ্য বলে দাবি করি। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই বলে রাজপথে স্লোগান দিই। ভোটের অধিকার রক্ষা হলো না বলে চিত্কার করি। গণতন্ত্র বিপন্ন বলে টিভিতে-সেমিনারে বিতর্কের ঝড় তুলি। কিন্তু সংখ্যালঘু মানুষগুলোর ওপর যে বারবার হামলা হচ্ছে, তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, একাত্তরের মতো বাস্তুভিটা ত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে, আক্রমণ হচ্ছে মন্দিরে, সে বিষয়ে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের পরদিন যশোরের অভয়নগরে, দিনাজপুরের সদর উপজেলার চেহেলগাজীতে এবং আরও বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর যে বর্বর হামলা ও নৃশংস ঘটনা ঘটেছে, তার জবাব কী? এসব এলাকার গরিব ও প্রান্তিক মানুষগুলো কোনো দিন ক্ষমতায় যাওয়ার প্রতিযোগিতা করেনি। কারও অধিকারে হস্তক্ষেপ করেনি। তার পরও যেকোনো রাজনৈতিক দুর্যোগের প্রথম শিকার হয় তারাই। এই কি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নমুনা!
এই মানুষগুলোর অপরাধ কী? প্রথম অপরাধ, তারা সংখ্যালঘু হয়ে জন্ম নিয়েছে। দ্বিতীয় অপরাধ, তারা বিরোধী দলের বর্জন সত্ত্বেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।
বিরোধী দলের ভোট বর্জনের আহ্বানে অনেকে সাড়া দিয়েছেন, আবার অনেকে সাড়া দেননি। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে ১৪৭টি আসনে অন্তত ৩৯ দশমিক ৮১ ভাগ ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। অর্থাত্ প্রায় দুই কোটি লোক ভোট দিয়েছেন। তাঁদের সবাই কিন্তু ভোটবিরোধী শক্তির আক্রমণ ও আক্রোশের শিকার হননি। ভোটবিরোধী বা বর্জনকারী শক্তিটি বেছে বেছে সংখ্যালঘু পাড়া, গ্রামে হামলা চালিয়েছে, তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে।
ভোটপ্রদানকারী সংখ্যাগুরুদের মধ্যে তাদের আত্মীয়-স্বজন মামা-চাচা-ভাই রয়েছেন। তাঁরাই তাঁদের নিরাপত্তা দেন। কিন্তু এই সংখ্যালঘুদের কেউ নেই।
যেভাবে এই বিপন্ন মানুষগুলোর পাশে রাষ্ট্রের দাঁড়ানোর কথা, সেভাবে কখনোই সে দাঁড়ায়নি।
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বড় ধরনের হামলা হয় খালেদা জিয়ার আমলে ১৯৯২ সালে ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙার পর।
সংখ্যালঘুদের ওপর ভয়াবহ দুর্যোগ নামে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর। কারণ, হিন্দুরা বিএনপি-জামায়াতকে ভোট দেননি। এবারের রাগ, তাদের কথা অগ্রাহ্য করে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিলেন বলে? এভাবে একবার ভোট দেওয়ার জন্য, আরেকবার না দেওয়ার জন্য। আর কত মার খাবে সংখ্যালঘুরা?
২০০১ সালের নির্বাচনের পর কালীগঞ্জের একটি আক্রান্ত গ্রামে গেলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক বৃদ্ধ নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘বাবা, ভোটার তালিকা থেকে আমাদের নামটি বাদ দিয়ে দাও। তাহলে আমরা পৈতৃক ভিটেমাটিতে থাকতে পারব।
না হলে প্রতিটি নির্বাচনের পর আমাদের এভাবে হামলার শিকার হতে হবে। ’
সেই বৃদ্ধ বেঁচে আছেন কি না, জানি না। বেঁচে থাকলে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইছি। আর বেঁচে না থাকলে তাঁর আত্মা আমাদের অভিশাপ দিতে থাকবে। কেননা, এই দেশটি যেমন সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের তেমনি সংখ্যালঘুদেরও দেশ।
তাই, আসুন সবাই মিলে এই দুর্বৃত্তদের মোকাবিলা করি। সব অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।
আর নয়, এখনই, এই মুহূর্তে এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে, এই সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে ‘রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।