বরাবরই ফেলে রাখা অপ্রয়োজনীয় বিষয়নিয়েই লিখতে ভালালাগে আমার তাই আবারও তার পুনরাবৃত্তি।
পাথরের গুনাবলী সম্পর্কে বিশ্বাস রাখেন না এমন ব্যক্তিত্ব খুজে পাওয়া যে মুশকিল তা আমাদের আশেপাশে একটু নজর দিলেই প্রতিয়মান। পাথরের গুনাবলীতে বিশ্বাস করেন খোদ উচ্চশিক্ষিতরাও। শোনাযায় খোদ মধ্যপ্রাচ্যের লোকদের পাথর ধারণ করে ধনবান হওয়ার খবরও। এটি মূলত হিন্দু ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস হলেও আমাদের মুসলামদের মাঝে বিশ্বাস করেন না এমন লোক হয়তো কম।
এটি বহুল প্রচারের জন্য এখন ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করা হয়। দেখানো হচ্ছে এই পাথর বাবাজির ব্যবহারের ফলে মানুষের উপর থেকে কিভাবে শুক্র থেকে বৃহষ্পতিরর সকল প্রভাব মুক্ত হয়ে একজন ব্যক্তি ধনবান হয়ে উঠছেন।
রাশী রক্রের প্রকার ভেদ হস্তরেখা গননা করে মুখের লক্ষনাদি বিচার বিশ্লেষণ করে এই পাথর প্রয়োগ করা হয়। ইসলাম ধর্মে এই রাশি/হাস্তরেখা গণণা কঠোর ভাবে নিষেধ করা হলেও অনেক মুসলমানরাই এই পাথরের দিকে ঝুকে পরেন অন্ধ বিশ্বাসে নিজেদের ধন সম্পদ বৃদ্ধির আশায়। বৈজ্ঞানিক জগতে বিজ্ঞান যেখানে নিজের কর্মকেই ভাগ্য পরিবর্তনের চাবিকাঠি হিসেবে জানেন সেখানে আমারা এই যুগে বসবাস করেও বিশ্বাস স্থাপন করি এই পাথরে।
অনেক নাস্তিক বাদি যেখানে ধর্মকেই বিশ্বাস করে না, আবার দেখা যায় ঠিকই পাথরে বিশ্বাস স্থাপন করে অঙ্গুলী সাজিয়ে বিভিন্ন রংয়ের পাথরের আংটি ধারণ করে থাকেন। আমার মাথায় আসে না, কর্মপন্থায় যেখানে ধর্ম, কর্ম, উন্নয়নের চাবিকাঠি সেখানে তারা কোন বিশ্বাসে পাথর ধারণ করেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, এই পাথর দিয়ে যারা প্রতিনিয়ত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে আসছেন তাদের নিজেদের ভাগ্য বদলায় না হাজারের ১জনারও। এখবরটি হয়তো আমাদের সারাজীবন অন্তরালেই থেকে যায়। তেমনিই একজন পাথর বিক্রেতার সাক্ষাৎকার নিয়ে নিলাম উত্তরার সেক্টরের মধ্যে অবস্থিত একটি ছোট্ট চায়ের দোকানে বসে।
# চেহারা- পোষাক পরিচ্ছদ দেখেই অনুমানেয় তার অর্থনৈতিক অবস্থা। হাতে ছোট্ট একটি বক্স (ফেরি ওয়ালাদের মত, উপরের কাচ লাগানো)। কাচের উপর দিয়ে পাথর গুলো দৃশ্যমান। দুপুর টাইমে আমার মত লোক কম আছে যারা বাইরে চা খেতে যায়, তাই চায়ের দোকানও ফাকা থাকায় ডেকে বসালাম বিক্রেতা মহোদয়কে। সালাম দিয়ে অতিব বিনয়ের সহিত বললাম চাচা মিয়া কেমন আছেন।
কৌশলগত ভাবে একটু আগ্রহ নিয়ে তাকালাম তার বক্সের দিকে। উনি বসলেন। - বসে বললেন আলহামদুললিল্লাহ। বললাম চাচা - এগুলো কি পাথর নাকি- গ্লাসে আলতো করে হাত বুলিয়ে। চাচা যেন চমকিয়ে উঠলেন- বললেন ধরবেন না, এগুলো পাথর, পাথর অনেক মহামূল্যবান-- এর গুনাবলীর শেষ নাই_____________________________________________________________________ প্রায় ৫মিনিটের শর্ট বক্তিতা।
শুনলাম বেশ আগ্রহ বশতই। তাতে যেন উনি আরো আগ্রহ পেলেন। বক্তিতা দিয়ে চললেন। কথার ফাকে ফাকে আমি উনার দিকে লক্ষ্য করলাম। পায়ে রাবারের স্যান্ডেল, পাঞ্জাবী, পাজামা।
পরিপাটি থাকার যথেষ্ট চেষ্টা।
বললাম- চাচা আজ বেচা বিক্রি কেমন- নিরস মুখে বললেন- নারে বাবা এসবের এখন আর কদর নাই; লোকে এর মর্ম বুঝতে চায় না, এই অবিশ্বাসে ধ্বংশ হয়ে যাবে সব একদিন। ইত্যাদি ইত্যাদি। ইচ্ছা ছিল একটু চেতানোর, দুপুর টাইমে হয়তো বেচারা দুপুরের খাবারও খায় নাই তাই ভেবে আর বিরক্ত না করে ফিরে এলাম।
# বেশ কিছু দিন আগে।
ফিরছিলাম গাজিপুর বিআরটিসি বাসে। আব্দুল্লাহ পুর পর্যন্ত এর শেষ গন্তব্য হলেও এই গাড়ীগুলো গ্যাস নিয়ে থাকেন গাজীপুর বড়বাড়ী থেকে আর যাত্রী বহন করে নিজেদের কিছু বারতী ইনকাম করে থাকেন।
আজমপুর রাজউক কমপ্লেক্সের সামনের চায়ের দোকানে ২টা চা নিয়ে তিন জন ভাগ করে খেলেন। উনাকে পূর্ব থেকেই চিনি বলে লক্ষ্য করলাম তাদের কথোপকথন। বলতে পারেন ফলও করলাম।
তাদের কথোপকথনের মধ্যে প্রাধান্য ছিল পাথরের গুনাবলী। কয়েকটি পাথরের আংটি তৈরী করে রেখেছেন, ডেলিভারী হচ্ছে না এই নিয়েও কথা বললেন। অবশেষ উঠলেন বিআরটিসি বাসে। নামবেন টঙ্গীতে। বাসে উঠেই যখন কন্ডাকটর ভাড়া চাইতে আসলেন উনি ২টাকা বের করে দিলেন।
প্রসঙ্গত এই বাসে উঠলেই ৫টাকা করে নেন যা গেট থেকেই ওঠার সময় বলে নেন।
এই নিয়ে বেধে গেল ঝগড়া। উনার পেছনের ছিটেই আমি। আমি বিরক্ত হয়ে বলে ফেললাম, চাচা মিয়া নিজের ভাগ্যে গাড়ী জোটাতে পারলেন না আজ অবধি, মানুষের তো ঠিকই কটি পতি বানাচেছন প্রতিদিন। এই কথায় হাসির রোল পড়ে গেল বাসের পেছনের দিকে।
বেচারা কড়া দৃষ্টিতি তাকালেন- আর তাড়াহুরো করে নেমে গেলেন টঙ্গীতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।