আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাপান প্রবাসে ভূমিকম্প

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল!

জাপানে ভূমিকম্প সম্পর্কিত একটি লেখা অন্য একটি ব্লগে পেয়েছি, তুলে দিলাম। জাপান প্রবাসে ভূমিকম্প শেখ আলীমুজ্জামান ১১ মার্চ ২০১১, শুক্রবার। লাঞ্চ আওয়ারে হাতে সময় ছিল তাই জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম মসজিদে। ওতসুকা মসজিদটি আমার কর্মস্থল থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে, তবে আমাদের বৈশাখী মেলা যেখানে হয় সেই ইকেবুকুরো থেকে কাছে। মসজিদে কয়েকজন প্রবাসী বাঙ্গালী ভাইয়ের সাথে দেখা হলো।

নামাজ শেষে বৈশাখী মেলার সহযোগী মোঃ জসীম উদ্দীন আর আমি এলাম ইকেবুকুরোতে। এক সাথে লাঞ্চ শেষ করে জসীম রওনা হয়েছে মেট্রো স্টেশনে আর আমি বাসে ওঠার জন্য যাচ্ছি। হঠাৎ মনে হলো পায়ের নীচটা হাল্কা হয়ে গেছে, ঠিকমতো হাঁটতে পারছি না। আরে কি হলো, চার দিকে তাকিয়ে দেখি ইমারত গুলো দুলছে। বুঝলাম ভূমিকম্প শুরু হয়েছে! চারদিকে একটা চাপা গুমরে ওঠার আওয়াজ, সেই সাথে নারী কন্ঠের আর্তনাদ।

এ সময়ে রাস্তায় হাঁটা নিরপদ নয়, ছাদের উপরের বা রাস্থার পাশের সাইনবোর্ড গুলো ভেঙ্গে পড়তে পারে। দ্রুত একটা ভবনে ঢুকে পড়লাম। ঢুকেই বুঝলাম ভুল করেছি। প্রবল দুলছে ছাদ, চারদিকের দেয়াল। জানালার কাঁচের গ্লাসে চিড় ধরছে।

কিছু লোক হুড়োহুড়ি করছে বাইরে যাবার জন্য। কেউই প্রকৃতিস্থ নয়, সবাই প্যানিক আক্রান্ত। দোয়া দরূদ পড়তে পড়তে দেয়ালে হাত দিয়ে সামলে নিলাম প্রথম ধাক্কাটা। মনে হলো ভিতরে থাকা নিরাপদ নয়, ছুটে বাইরের খোলা চত্ত্বরে এলাম। দেখি কয়েক শত মানুষ বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে, সবাই আমার মতোই উদ্ভ্রান্ত।

চোখে মুখে আতংকের স্পষ্ট ছাপ। দূরে কোথা থেকে ভেসে আসছে নারী কন্ঠের আর্তনাদ। না শেষ হয়ে যায় নি ভূমিকম্প, আবারো এলো ভুকম্পনের ধাক্কা। এই অঞ্চলে সব চেয়ে উঁচু ইমারত, সানসাইন সিটি। তাকিয়ে দেখি সরু ডাল যেমন বাতাসে দোলে তেমনি ভাবে দুলছে ষাট তলা সানসাইন বিল্ডিং।

পাশের একটি ভবনের পলেস্তরা খসে পড়লো! এই মুহুর্তে ভুগর্ভস্থ মেট্রো নিরাপদ নয়, জসীমকে ফোন দিলাম। ফোন ডেড। আমার স্ত্রী যেখানে কাজ করে, সেই হাসপাতাল বিল্ডিংটি খুবই পুরণো, ভেঙ্গে পড়েনি তো! ফোন দিলাম তাকে, ফোন যাচ্ছে না। মেয়েটা স্কুলে, যোগাযোগের চেষ্টা করলাম, ফোন যাচ্ছে না। পাশ থেকে কে যেন বললো পুরো টেলিফোন কমিউনিকেশন ডেড।

তখনো দফায় দফায় আসছে ভূকম্পন। মেট্রোর অবস্থা কি দেখার জন্য গেলাম স্টেশনের কাছে। সমস্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ। ভুকম্পন একটার পর একটা আসছেই। কি করি, বাঁচবো তো এ যাত্রা! মাতালের মতো টলতে টলতে একটা টেলিভিশন স্ক্রীণে দেখলাম, আমার মতোই টালমাটাল অবস্থায় ভূমিকম্পের বার্তা পরিবেশন করছে ঘোষক।

দেখি, আগুন লেগে গেছে নান স্থানে। টোকিওতে একটি ভবনের ছাঁদ ধ্বসে পড়ে আহত হয়েছে অনেকে, মারা গেছে কয়েক জন। এর পরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর আসতে থাকলে টোকিওর উত্তরে অবস্থিত মিয়াগি ও ফুকুশিমা জেলা হতে। বাইরে থাকাটা নিরাপদ নয় ভেবে রওনা হলাম মেয়ের স্কুলের দিকে। দেখি হাজার মানুষের কাফেলা।

যানবাহন বন্ধ তাই সবাই হাঁটছে, হাতে মুঠো ফোন। ফোন লাইন ডেড তবু সবাই ব্যাকুল হয়ে ফোনের বোতাম চাপছে, যদি প্রিয় জনের খব জানা যায়! মেয়েকে নিয়ে বাড়ী ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা। দরজা খুলে দেখি আসবাব পত্র মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে, লন্ডভন্ড অবস্থা। ছাদের এক জায়গায় একটা সরু চিড়। আঁধার ঘনিয়ে আসছে, বাইরের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছাকাছি।

পানি নেই, গ্যাস নেই, কারো সাথে যোগাযোগ নেই। কয়েক মিনিট পরপরই আসছে আফটার শক, ভূকম্পন। দশ কিলো মিটার পায়ে হেটেঁ গভীর রাতে বাড়ী ফিরলো আমার স্ত্রী। পরিশ্রান্ত আমরা নিজেদের শপে দিলাম রাতের নিকষ কালো অন্ধকারের কাছে। একটি নিরাপদ ভোরের অপেক্ষায় সারারাত নির্ঘুম কেটে গেল ক্রমাগত ভূকম্পনের মধ্য দিয়ে।

সকালে দেখি পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ফিরে এসেছে। টেলিভিশন থেকে জানলাম, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৮। ভূমিকম্প, সুনামি (জ্বলোচ্ছাস) ও আগুনের তোড়ে প্রায় পনেরোশো মানুষ মৃত কিংবা নিঁখোজ হয়েছে। টেলিফোন লাইনে আংশিক ভাবে সংযোগ পাওয়া গেল। ফোন করলাম -ফোন পেলাম, স্বদেশ ও প্রবাসের অনেক প্রিয়জনের কাছ থেকে।

জাপানে বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রুদূত সাহেবের সাথে কথা হলো, কথা হলো দূতালয় প্রধান মাসুদুর রহমানের (জেসিসি) সাথে। কমিউনিটির কয়েকজন নেতৃস্থানীয় প্রবাসী ও সাংবাদিকের সাথে কথা হলো। সবাই উদ্বিগ্ন, একে অপরের খোঁজ খবর নেবার চেষ্টা করছেন সবাই। জাপানে প্রায় পনেরো হাজার প্রবাসী আছেন। তবে টোকিও এলাকায় ভূমিকম্পে কেউ গুরুতর আহত হয়েছেন বা কারো প্রাণহানি ঘটেছে এমন সংবাদ পাই নি।

এবারের ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল মিয়াগি জেলা। ঐ জেলার বৃহত্তম শহর সেনদাইতে একটি বড় বাংলাদেশী কমিউনিটি আছে। টেলিফোন যোগাযোগ না থাকায় তাদের বিশদ সংবাদ এখনো জানা যায় নি। মালামালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর জানা গেছে। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন তবে প্রাণহানির নির্দিষ্ট কোন খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।