এখন আমাদের সামনে কোনো প্রীতিকর চিত্র ফুটে উঠছে না। প্রতিদিনই সকালে কাগজের দিকে চোখ মেললেই একটা যেন ভীতিকর ছবি মগজের কোষে কোষে জমা হয়ে যায়। একটা অস্বস্তিকর অস্থিরতার ছবি রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সারাদেশের জনপদে। দিনে অন্তত কয়েকটি খুনখারাবির ঘটনার সচিত্র প্রতিবেদন যেন থাকতেই হবে জাতীয় দৈনিকগুলোয়। এটা কিছুতেই একটা জাতির সুস্থতার লক্ষণ হতে পারে না।
এ রকম অবস্থা কেন হচ্ছে, সুস্থ মানুষ মাত্রেরই মনে এ প্রশ্ন খচখচ করে না- বিঁধে পারে না। যেন একটা অশুভ কোনো কিছু ঘটতে যাচ্ছে, যেন কোথাও কোনো অশুভ শক্তি দূরনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানুষের চিত্তকে অস্থির করে তোলার একটা লক্ষ্য এবং কর্মসূচি নিয়ে বসে আছে। এসব ঘটনার খবর পড়তে পড়তে আমাদের চারপাশের প্রতিদিনের দৃশ্যমান জনপদকে দিনের পর দিন রক্তাক্ত উপত্যকা মনে হতে থাকলে মানুষ ক্রমশ চিত্তের প্রশান্তি হারিয়ে ফেলে ক্লান্ত, অবসন্ন, হতাশ ও উদ্যমহীন, নিস্পৃহ ও নির্লিপ্ত হয়ে পড়বে। মনস্তাত্তি্বকরা জানেন, উদ্যমহীন, হতাশ মানুষকে দিয়ে যেকোনো কিছুই করিয়ে নেওয়া সম্ভব। তার নিজস্ব কোনো চিন্তাশক্তি থাকবে না।
মানুষ হয়ে পড়বে প্রতিবাদহীন, প্রতিরোধহীন, কাঠের পুতুলের মতো। কোনো জাতির জন্য সেটা হবে বড় অনাকাঙ্ক্ষিত একটা অবস্থা এবং তা কখনোই কাম্য হতে পারে না। আবার এ অবস্থা মানুষকে মরিয়া করে দিতে পারে, তাকে সিদ্ধ হাতে আইন তুলে নেয়ার ইচ্ছাও যোগাতে পারে। সেটাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতিই ঘটাবে। দেশ ও জাতিকে প্রতিদিন বিতৃষ্ণ বিরূপ, শ্বাসরুদ্ধকর একটা অবস্থার ধারক করে তুলে নেপথ্যের কোন অশুভ শক্তি কোন উদ্দেশ্যে কী করতে চাইছে, সময় থাকতে এখনই তা ভাবা দরকার এবং ত্বরিত তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার বলে দেশ ও জনগণের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষীরা মনে করছেন।
এই ২৫ মার্চ বৃহস্পতিবারের কালের কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায়ই রয়েছে : ১. দুদিনের মধ্যে ছয়টি খুনের খবর, রাজধানীতে মেয়ের 'প্রেমিকের' হাতে মা-বাবা খুন; ২. নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মেঘনারচরে রাতে ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতা খুন ও তার জের ধরে পরদিন সকালেই সে এলাকায়ই এক আওয়ামী লীগ কর্মী খুন; ৩. চট্টগ্রামে এক স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে অন্য এক স্কুলের শিক্ষার্থী খুন হওয়ার প্রায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জামালপুরে একইধরনের হত্যার ঘটনা, জামালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর এক ছাত্রকে তার সহপাঠীদের ছুরি মেরে খুন করে ফেলা। এসব খুনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে_কোথাও জোড়া খুন, কোথাও বা খুনের বদলে খুনের ঘটনার মতো, আবার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা বেশ দূরে হলেও একই ধরনের দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছে দুই জায়গায়ই।
গত ২৪ মার্চ বুধবার কালের কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় চট্টগ্রামে এক স্কুলের ছাত্রদের হাতে আরেক স্কুলের ছাত্রের খুন হওয়ার লিড নিউজটার পাশে মিরপুরে তিনটি 'অপমৃত্যু' আর তিনটি 'আত্দহত্যা'র খবর রয়েছে। মঙ্গলবারের কালের কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় এক খবরে আছে, সিলেটে প্রকাশ্য দিবালোকে কলেজ শিক্ষককে হত্যা করে মোবাইল ফোনে খুনিরা তাঁর গ্রামের বাড়িতে খবর দিয়ে বলেছে, 'খুন করেছি, এসে লাশ নিয়ে যা। ' খুনিদের স্পর্ধার পরাকাষ্ঠার পরিচয় বহন করে এ খবরটি।
এ প্রসঙ্গে আমরা এর আগেই সম্পাদকীয়তে শিক্ষাঙ্গনগুলোর অবস্থা এমন হলে শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি। সারাদেশের শিক্ষাঙ্গনে যে- নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে, এ ঘটনা যেমন তারই বহিঃপ্রকাশ, আবার অন্যদিকে, এমন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তির উচিত সাজা না হলে নৈরাজ্য যে আরো সর্বগ্রাসী হয়ে উঠবে, সে কথাও জোর দিয়েই বলা যায়।
উপরোলি্লখিত ক'দিনের উপর্যুপরি খুন-খারাবির ঘটনা দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্দক অবনতিরই পরিচয় বহন করছে। তবে, এই অবনতি শুধু কি খুনিদের বাড়বাড়ন্তের দরুনই ঘটছে, নাকি ১৯৭৩-৭৪ এর মতো বিভিন্ন বাহিনী ও সন্ত্রাসী গ্রুপের সুপরিকল্পিত অপতৎপরতার কারণেই ঘটছে এবং যার কোনো সুনির্দিষ্ট ও সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক লক্ষ্যও থাকা সম্ভব_তা অবশ্যই এখন সময় থাকতে ভালোভাবে তলিয়ে দেখা জরুরি। এখনো তো জেএমবির জঙ্গি, যুদ্ধাপরাধের বিচারে বাধাদানকারী বিভিন্ন মৌলবাদীগোষ্ঠী ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক সরকারকে অজনপ্রিয় করে সংকীর্ণ স্বার্থহাসিলের উদ্দেশ্যে দেশে নানাভাবে খুন-খারাবির ধারাবাহিক মচ্ছব বাধাতে পারে।
মানুষ যাতে দিশেহারা হয়ে যায়। মানুষ যাতে দিশাহীন হয়ে কোথা দিয়ে কারা কী করতে চাইছে, তার কূলকিনারা না-পায়। একটা ভয়াবহ অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্য হাসিল করতেই যেন নেপথ্যের অপশক্তি অতিতৎপর হয়ে উঠেছে।
আমরা অবিলম্বে স্বাভাবিক জনজীবন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীকে প্রতিটি খুন-খারাবির ঘটনার ব্যাপক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্যউদ্ঘাটন ও অপরাধীদের শক্ত হাতে দমন করার আহ্বান জানাচ্ছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।