আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অস্থিরতার রকমফের

একট হাসি, অলস দুপুর, এক ফোঁটায় জলের পুকুর।
তির তির করে বয়ে চলা নদীটার জানা আছে অনেক গল্প। কলকল করে কি সে সেই গল্পগুলোই বলার চেষ্টা করে?? তুহিন বসে ভাবছিলো এমন অনেক কথা, হয়তো। তার ভাবনা গুলো শেষ হলে আমরা কোন থিসিস যদি না পেতাম, নিদেন পক্ষে একটা ভাব সমৃদ্ধ কবিতা হয়তো পেয়েই যেতাম। কিন্তু হলো না আর।

মোবাইল জিনিসটা আসলেই মানুষের একান্ত সময়গুলোর বারোটা বাজাচ্ছে। : তুই কই? : হুম। : বাসায়? : হুম। : কার? : মানে? : আমি তোর বাসায়। : আমি বাইরে।

: নদীর ধারে? : না। : অ। খুট করে ফোন কেটে যায়। তুহিন অপেক্ষা করতে থাকে। মোবাইল জিনিসটা আসলেই মানুষের একান্ত সময়গুলোর বারোটা বাজাচ্ছে, কথাটা মনে হয় ঠিক হলে না, আসলে তেরটা বাজাচ্ছে।

: মন খারাপ করে বসে আছিস কেন? : ভালো লাগছে না তাই। : কি করতে চাস? : আপাতত একা বসে থাকতে। : অ। : তুই কি করবি? : নদীটারে ঢিলাবো। : কেন? : এমনি, আমার মন ভালো তো তাই।

: মন ভালো হলেই নদীটারে ঢিলাতে হবে? : হু, তুই জানিস না? তার পরে এমন অদ্ভুত প্রাণবন্ত একটা হাসি দেবে,তার পরে পৃথিবীর কোন মানুষের পক্ষে মন খারাপ করে থাকা সম্ভব না। তুহিন মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আর যদি মন খারাপ থাকে তারও,সে কিছুই বলবে না। চুপ করে এসে পাশে বসে থাকবে। তুহিন জানে, এরপরে তার পক্ষে আর নিজের মন খারাপ নিয়ে বসে থাকা হবে না।

সে শত চেষ্টা করেও পারবে না। যতক্ষণ না দিয়ার মন ভালো হয়, তুহিনের মাথা খারাপ হয়ে থাকে। তুহিন ঘড়ি দেখে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে দিয়া এসে পরবে। মনে মনে কেন যেন তার ইচ্ছে হয়, এই পাঁচ মিনিট যদি আরও বেশি হত।

সে যদি আরও খানিক একা থাকতে পারতো। হবে না। তার মন খারাপ সে জানে, এখন তাকে কোন ভাবেই আটকে রাখা যাবে না। সে আসবেই। আর এসেই এই নদীটার সাথে পাল্লা দিয়ে কলকল করতে থাকবে।

কথাটা মনে হতেই তুহিনের মন যেন একটু ভালো হয়ে যায়। দশ মিনিট পার হয়ে গেলো। তুহিন অবাক হয়ওর মন খারাপটা কেটে যেতে থাকে, তার শূন্যস্থান পূরণ করে নেয় অপেক্ষা। পনের মিনিট পার হয়ে যায় আরও। বিশ, পঁচিশ, তিরিশ।

এখন অপেক্ষা জায়গা ছেড়ে দেয় উৎকণ্ঠার কাছে। আরও তিরিশ মিনিট যখন পার হয়, তুহিন নিজেই ফোন দিয়ে বসে দিয়াকে। নো রিপ্লাই। হয়তো দিয়া ড্রাইভ করছে। সময় পার হতে থাকে।

তুহিন অপেক্ষা করতে থাকে। একটু একটু করে বাড়তে থাকে অস্থিরতা। নদীটা তখনও কলকল করেই যাচ্ছে। তুহিন অবাক হতে থাকে নিজেই। কি এক অস্থিরতা ওর ভিতরে কাজ করছিলো সকাল থেকে, তাই সব ছেড়ে খানিক একা হবার জন্য এখানে বসে ছিলো।

এখন কাউকে পাশে পাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠছে সে। উঁহু, ভুল হলো। দিয়াকে পাশে পাবার জন্য অস্থির হয়ে আছে সে। নদীর দিক থেকে চোখ সরিয়ে রাস্তার দিকেই চোখ আটকে আছে যেন আঠা দিয়ে। অস্থিরতায় দম বন্ধ হয়ে আসে যেন তুহিনের।

নদী থেকে পানির ঝাপটা এসে লাগে তুহিনের চোখে মুখে। বিরক্ত হয় সে রাস্তার দিক থেকে চোখ সরাতে হচ্ছে বলে। কেউ নেমেছে নদীতে নৌকা নিয়ে। এখন পানি ছোঁড়াছুড়ি করছে। চোখ ভরা বিরক্তি নিয়ে বকা দিতে যাবে, তখনই থেমে যায়।

এক অতি পরিচিত, অতি আকাংক্ষিত হাসির শব্দে তুহিনের সমস্ত স্বত্ত্বা কেঁপে ওঠে আনন্দে, ভালোবাসায়।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.