আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কালের কণ্ঠের অস্থিরতার সর্বশেষ নজির

''সংবাদপত্র যা ছাপে তার একটা বড় অংশই হলো 'লর্ড জোনস মারা গেছেন' ধরণের তথ্য। অথচ সেটি যাদের জানানো হয় সেই জনগণ খবরই রাখে না যে লর্ড জোনস বেঁচে ছিলেন''

মোট ১৮৬ জন সাংবাদিকের কোন সুনির্দিষ্ট বিট নেই। মাসে মাসে বেতন নিচ্ছেন অথচ তেমন কাজ নেই। অফিসে এসে আবার বাসার পথ ধরা। এমন তালিকা করে ছাটাই পক্রিয়া শুরু হয়েছে দেশের সর্ববৃহত মিডিয়া বিনিয়োগ কালের কণ্ঠে।

তবে কর্তৃপক্ষের বিবেচনা অনুযায়ী এদের সবাইকে বসুন্ধরার অন্যান্য প্রজেক্টে (বাংলা নিউজ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, সান)বিলি বণ্ঠন করা হবে! শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও এটাই এখন কালের কণ্ঠের স্ট্র্যাটেজি। খোজ নিয়ে জানা গেছে, বসুন্ধরার আরেকটি জায়ান্ট বিনিয়োগ ডেইলি সান বাজারে আসবে আগামী আগস্ট অথবা অক্টোবরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়র অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন দায়িত্ব নিয়েছেন সম্পদনার মতো গুরু দায়িত্ব। বনিবনা না হওয়ায় শাহজাহান সর্দারকে একেবারেই বাইরে রাখা হয়েছে এই প্রজেক্ট থেকে। ডিসেম্বরের মধ্যে বাজারে আসবে ‘বসুন্ধরা রেডিও’ বা ‘বেতার বসুমতি’র প্রজেক্ট।

আজ থেকে শুরু হয়েছে বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফোর নামের নিউজ পোর্টালের যাত্রা। বিডি নিউজের প্রতিষ্ঠাতা আলমগীর হোসেনের হাতে গড়া এই অনলাইন প্রজেক্ট তেমন নতুন কিছু হাজির করতে পারলো না। দীর্ঘ দেড় বছর আগে তিনি মালিকের উপর অভিমান করে সমকালের নির্বাহী সম্পাদকের চাকরি ছেড়ে এক রকম অবসর জীবনকেই যাপন করছিলেন। আজ থেকে এই নতুন মিডিয়ার বাজারে (ইন্টারনেটে) আসায় উনাকে অন্তরের অকুস্থল থেকে একরাশ নীরব শ্রদ্ধা! ড্যাপ নিয়ে মহা ফাঁপরে পড়া বসুন্ধরার মূল প্রজেক্ট কিন্তু এখন একটাই। তা হলো কালের কণ্ঠ।

ব্যবহারিক সাংবাদিকতার ক্যারিশমা যাকে বলা হয় সেই চীন থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে আসা অমিত হাবিবের হাতেই মূলত এখন কালের কণ্ঠের মূল স্টিয়ারিং। আবেদ খান আদতে এখানে গোল টেবিল বৈঠকের সঞ্চালক ছাড়া আর কিছুই নয়। উপসম্পাদক তৌহিদুর রহমানের মেধা আর অমিত হাবিবের প্ল্যানিং এ দুইয়ের সমন্বয়ে বাজারে বেশ ভালোই অবস্থান নিতে যাচ্ছিল কালের কণ্ঠ। কিন্তু… সংবাদপত্রের বাজার ধরার যে কৌশল নিয়ে এগিয়ে ছিল কালের কণ্ঠ তা চুড়ান্ত ফ্লপ করতে যাচ্ছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ দুপুর ২ টায় চট্টগ্রামে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে।

কালের কণ্ঠের ১২ হাজার কপিতে আগুন দিয়ে হকাররা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ব্যুরো অফিস ঘেরাও করে। সকালে গনধোলাই দেয় অফিসের সার্কুলেশন ম্যানেজারকে। সকাল সাড়ে আটটায় পত্রিকা চট্টগ্রামে গেলে হকার সমিতির নেতারা কর্তৃপক্ষের নতুন নিয়ম শুনে হতবাক হয়ে যান। ১০% কমিশন চালুর সিদ্ধান্ত হকাররা নাকি মেনে নিতে পারে নি। ফলে আজ চট্টগ্রামের কোথাও বিক্রি হয় নি কালের কণ্ঠ।

পাশাপাশি প্রথম আলো, সমকাল সহ স্থানীয় পত্রিকা বিক্রিও বন্ধ রেখেছে হকাররা। বসুন্ধরা নিজের পায়ে কুড়াল মেড়ে এভাবে হকারদের লাভের খাত কমিয়ে দিয়ে, ক্ষেপিয়ে দিয়ে কী কাজটা ভালো করলো? আমরা যারা রাজধানীর সংবাদকর্মী, তারাও খোঁজ নিলাম। নোয়াবের মধ্যেও এনিয়ে সকাল থেকে বসুন্ধরার সাথে কথা কাটাকাটি চলছে। খুব বেশি অবাক হবো না আগামীকাল এই ঢাকা শহরেও কালের কণ্ঠ বিক্রি না হলে। তবে আশঙ্কা একটিই.. বসুন্ধরার এই প্রজেক্টটি যেন আবার সেই ‘পুন: মুষিক ভবো’ মানে যায়যায়দিনের পরিণতি বরণ না করে।

একটি জিনিস খেয়াল করে দেখুন, বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে আয়োজন তো ভালোই সাড়া ফেলেছিল, কুইজ নিয়েও পাঠকদের মধ্যে ভালোই অংশ গ্রহণ ছিল, হায়দার আলীর ‘বিরল অনুসন্ধানী প্রতিবেদন’টি কিন্তু দেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চর্চার জন্য ভালো লক্ষণ, রাজধানীর বুকেও প্রচার সংখ্যা বেড়েই চলছিল.. কিন্তু প্রশ্ন শুধু একটাই, হকারদের ক্ষেপিয়ে, কমিশন কমিয়ে এই পত্রিকা কী নয়া দিগন্তের ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছে? সে যাই হোক সাংবাদিকদের রুজি রোজগারের প্রশ্নে কোন আপোষ নাই। কোন প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে যেন শত শত পেটে ভাতের মানুষ অভুক্ত উচ্চারণে প্রেস ক্লাবের সামনে মিছিল, সামবেশে বাধ্য না হন। সাংবাদিকতার জয় হউক!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।