আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারী: সমান নয় চাই ন্যায্য অধিকার



৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হলো। ১৯৯১ সন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ দিবসটি পালন করে আসছে। ১৯৭৪ সনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এ দিবসকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অতি পুরাতন কাল থেকেই নারীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। নারীরা এখনও শিকার হন নানা অত্যাচারের।

যুগ পাল্টালেও নারীর উপর নির্যাতন কমেনি এতটুকুও। শুধু রং পাল্টেছে নির্যাতনের। কখনো কখনো নারীর উপর এত বিভৎস নির্যাতন হয় যা এ সভ্য যুগে কল্পনা করা যায় না। নারীর প্রতি অন্যায় দৃষ্টিভঙ্গি নারীদের এই দুরাবস্থার কারণ। এ থেকে কখনো মুক্তি মিলবে কিনা তা বলা মুশকিল।

আরবের আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগ সম্পর্কে আমরা কম-বেশী সবাই জানি। যেখানে নারীরাই সবচেয়ে নিগৃহীত হতো। কোন বাবা কণ্যা সন্তান সহ্য করতে পারতো না। কণ্যা সন্তান জন্ম হলে বাবা অপমান বোধ করতো। নবজাতক কণ্যাকে জ্যান্ত কবর দেয়া হতো।

ইহুদী খৃষ্টান ও হিন্দু কোন ধর্মেই নারীদের বেশী মর্যাদা ছিল না। ইহুদীদের পুরাতন গ্রন্থ ‘তালমুদে’ বলা হয়েছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নারী জাতিকে মানব জাতির অপরাধের ফল হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। হিন্দু ধর্মের সতিদাহ প্রথার কথা এখনো কেউ ভুলেনি। বর্তমান এই সভ্যতার চরম উৎকর্ষের যুগে নারীরা শিা-দীা, কাজে-কর্মে ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক এগিয়েছে একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। নারীরা আজ রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ অফিসার, আর্মি অফিসার, ব্যবসায়ী বলতে গেলে সকল পেশায়ই তাদের সরব পদচারনা।

কিন্তু নারীদের এত উৎকর্ষ এত উন্নতির পরও কি নারীরা অত্যাচারের স্টিম রোলার থেকে রেহাই পেয়েছে? তাদের কি ইজ্জত-আব্র“ সমুন্নত হয়েছে? তারা কি তাদের সঠিক মর্যাদা পেয়েছে? সত্যকথা হচ্ছে বর্তমান এ সভ্য যুগে নারীরাই সবচেয়ে বেশী নির্যাতিতা। তাদের উপর যে বর্বরতা চালানো হয় তা জাহেলী যুগকেও হার মানায়। প্রতিটি ণে বিশ্বের ভিভিন্ন জায়গায় নারীকে ধর্ষণ করা হয়, হত্যা করা হয়, নির্যাতন করা হয়, এসিড নিপে করা হয়, আগুনে পুড়ে মারা হয়। ভারতে গর্ভবতী মহিলাদের আল্ট্রাসনো পরীার মাধ্যমে গর্ভের সন্তান মেয়ে নাকি ছেলে তা পরীক্ষা করা হয়। যদি মেয়ে হয় তাহলে গভাবস্থায়ই তাকে মেরে ফেলা হয়।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নারী নির্যাতনের দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে খ্যাতিও (!) অর্জন করেছে। ইভটিজিং, যৌতুক, এসিড সন্ত্রাসের ঘটনা এখানে নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার। নারীরা বাজারের পণ্য। টিভির পর্দায় এদেরকে পণ্যের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়। উপস্থাপন করা হয় নগ্নভাবে।

নাটক সিনেমাতে নারীদেরকে পুরুষের মনোরঞ্জনের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। ফ্যাশন শোর নামে নারীর দেহ প্রদর্শনী চলে। বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগীতার নামে নারীর সবকিছুকেই বিসর্জন দেয়া হয়। এ সভ্যযুগেও প্রত্যেকটি দেশের হোটেলগুলিতে নারীদের দেহ দিয়ে পুরুষদের খেদমত করানো হয় সরকারী বৈধতা নিয়েই। শপিংমল, মার্কেট বিপনী বিতানগুলোতে নারীরা সেলসম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পিছনে কাজ করে তাদের রুপ সৌন্দর্য্য।

দেশে দেশে পতিতালয় গড়ে উঠেছে নারীদের নিয়ে যা দিয়ে সরকার আয়ও করে থাকে। নারীদের ব্লু ফিল্ম তৈরী করে বাজারে সিডি ছাড়া হয়। ইন্টারনেটে কোটি কোটি ওয়েব সাইট নারীদের পর্ণোগ্রাফি ও ব্লু ফিল্ম দিয়ে সাজানো। যেখানেই যাবেন সেখানেই নারী অনুষঙ্গ। তবে তা পণ্য হিসেবে, অন্য কিছু নয়।

কিছুদিন আগে বৃটেনে নাকি নারী বক্ষের দুধ বাজারজাত করণ শুরু হয়েছে। তা দিয়ে তৈরী হচ্ছে চকলেট। অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে নাকি এ উদ্যোগ! তবে সবচেয়ে সেলুকাস হচ্ছে যারাই নারীদের ব্যবহার করছে তারাই আবার নারী অধিকার নারী অধিকার বলে চিৎকার করছে। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য বুক ফাটিয়ে আর্তনাদ করছে। কি আজব এ পৃথিবী! শুধু নারী অধিকার নয় চলছে নারীর সম অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই।

অর্থাৎ নারী ও পুরুষ সমান হতে হবে, তাদের অধিকারও হবে সমান। তবে একথা সত্য, যারা নারী পুরুষের সম অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন কিংবা সমান অধিকারের জন্য আইন প্রনয়ণ করছেন তারা পাগল ও নির্বোধ বৈ কিছুই নয়। একটু উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিস্কার হবে। কলা গাছ ও বাশের বৈশিষ্ট্য এক নয়। এই দুই জাতের গাছের রং, বৈশিষ্ট্য, ধরণ সবই আলাদা।

এখন যদি কেউ এই দুই জাতের গাছকে সমান করতে চায় তাহলে সেটা নিছক বোকামিই হবে। আবার ধরুন যে ব্যক্তি ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হলো, তিনি কি একজন ফাইভ পাশ করা ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করবেন? দুজনের বেতন কি এক হবে? নিশ্চয়ই নয়। আল্লাহ তায়ালা নারী ও পুরুষকে সম্পূর্ন আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য দিয়ে তৈরী করেছেন। নারীরা গর্ভ ধারণ করতে পারে কিন্তু পুরুষ তা পারে না। আবার পুরুষ যে কাজ করতে পারে নারীরা তা পারে না।

পুরুষের সাহস ও বীরত্বপণার ধারে কাছেও নারীরা যেতে পারে না। নারীদের যে ধৈর্য্য তা পুরুষের মধ্যে পাওয়া যায় না। তাই নারী পুরুষের সমান অধিকার চাওয়া ভুল ও অন্যায়। নারীকে মর্যাদা দিতে হলে তাকে ন্যায্য অধিকার প্রদান করতে হবে। যা কেবল ইসলামই নারীকে দিয়েছে।

আজ থেকে প্রায় পনেরশত বছর পূর্বে ইসলাম নারীকে যে মর্যাদা দিয়েছে তা কোনদিন কেউ, কোন সংস্থা ও কোন সংঘ দিতে পারেনি; কিয়ামত অবধি দিতেও পারবে না। অনেকেই নারী অধিকারের প্রসংঙ্গ উঠলে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। তারা ইসলামের উত্তরাধিকার আইন ও পর্দা নিয়ে সমালোচনা করেন। আমাদেরকে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা। গাছ-পালা, নদী-নালা, আসমান-জমিন, পাহাড়-পর্বত, পশু-প্রানী ও সূর্য্য-চন্দ্র সবই আল্লাহর তৈরী।

যিনি সৃষ্টিকর্তা হন তিনিই তার সৃষ্টির স্বভাব সম্পর্কে অধিক জানেন। সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টিকেই ভালবাসেন। এটিই যুক্তি সংগত ও বিজ্ঞান সম্মত কথা। এতএব যে আল্লাহ নারীকে সৃষ্টি করেছেন সেই আল্লাহ নারীর প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের দিকে খেয়াল রেখে ও তার কল্যাণের বিষয়টি সামনে রেখেই তার জন্য যা করার তা-ই করেছেন ও আমাদেরকেও তার বিধান মেনে চলতে বলেছেন। অনুরূপ পুরুষের স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের দিক খেয়াল রেখে তাদেরকেও আল্লাহ তায়ালা যে বিধান দিয়েছেন তা মেনে চলতে হবে।

তার দোষ খোজা কিংবা বিরুদ্ধচারণ করা মোটেও সমুচীন নয়। আল্লাহ তায়ালার বিধান মতো চলতে পারলেই নারী পুরুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এটিই হবে ন্যায্য অধিকার। আর যদি আল্লাহর নির্দেশিত ন্যায্য অধিকারকে উপো করে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয় তাহলে সমাজে বিসৃংখলা দেখা দিবে। পুরুষরা বলবে আমি সারাদিন কঠিন পরিশ্রম করে রোজগার করি, নারীদেরকেও আমাদের মত কঠিন পরিশ্রম করতে হবে।

পুরুষের দাবি মোতাবেক সকল নারীরা যদি কঠিন পরিশ্রমে নেমে যায় আর সন্তান ধারণ থেকে বিরত থাকে তাহলে এ জগত সংসার একদিন মানব শূণ্য হয়ে পড়বে। আবার কোন মহিলা যদি বলে তোমার আমার সমান অধিকার; তাহলে আমি কেন একা সন্তান ধারণ করবো? তোমাকেও সন্তান ধারন করতে হবে তাহলেও বিসৃংখলা দেখা দিবে। ইসলামের বিধান মতে পুরুষেরা বাবার সম্পদে নারীর চেয়ে দ্বিগুণ পেলেও মা, বাবা, ভাইবোনের দেখা-শুনা পুরুষকেই নিতে হয় নারীকে নয়। আবার পুরুষ বিবাহের সময় মোহর দিয়ে বিয়ে করে ও স্ত্রীর ভরন পোষনের দায়িত্ব নেয়। তাতে নারীরই লাভ।

কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধবাদীরা মানুষের সামনে বাবার সম্পত্তিতে ছেলের অর্ধেক ভাগ নারীরা পায়; শুধু এটুকু বলে, আর স্ত্রী হিসেবে সমস্ত ভরণ পোষণ যে পায়, তা আড়াল করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করে। তাই আসুন সমান অধিকার নয়; নারী পুরুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দিন। আমীন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.