প্রশ্ন করেই যাব অবিরত
[যেহেতু এ লেখাটি একজন কোরানের অলৌকিকতায় অবিশ্বাসীর দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা হয়েছে তাই আপনার যদি ধর্ম-বিরোধি লেখা সহ্য না হয় তবে অবশ্যই তা নিজ দায়িত্বে পড়বেন। পরবর্তীতে কোনো অভিযোগ গ্রহণ যোগ্য হবে না।
কোনো দ্বিমত থাকলে জানাতে দ্বিধা করবেন না। ]
কোরান কি অলৌকিক গ্রন্থ? - ১
কোরান কি অলৌকিক গ্রন্থ? - ২(ক)
কোরান কি অলৌকিক গ্রন্থ? - ২(খ)
"That which can be asserted without evidence, can be dismissed without evidence."
— Christopher Hitchens
কোরানের অলৌকিকতা প্রমাণে প্রদত্ত যুক্তিগুলো খণ্ডনঃ
৫। যেহেতু আল্লা আছেন তাই তিনি অবশ্যই মানুষকে পথ প্রদর্শন করবেন আর এটাই করা হয়েছে আসমানী কিতাব আল-কোরান অবতরণের মাধ্যমে।
ঈশ্বর যে মানুষের কল্পনার সৃষ্টি তা এই ধরণের দাবি থেকে উপলব্ধি করা সহজ। আল্লা যে মানুষের জন্য পথ প্রদর্শন করবেন বা এর প্রয়োজন অনুভব করবেন তা নিশ্চিত হলেন কিভাবে? মানুষ ঈশ্বরকে নিজের মত কল্পনা করে- ফলে মনে করে মানুষের সকল বৈশিষ্ট্য যেমন খুশি হওয়া, রাগ করা, সৃষ্টি হিসাবে মানুষের খোঁজখবর নেয়া ইত্যাদি মনুষ্যসুলভ বৈশিষ্ট্য তার রয়েছে এবং সে ইবাদত করলেই তিনি খুশি হয়ে যাবেন।
আরো সমস্যা হল, আল্লা বলি আর ঈশ্বর বলি সে যে খুব একটা শুভকর কিছু সে সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হলাম কিভাবে? আমরা যদি আমাদের আনন্দে থাকাটাকে ঈশ্বরের অবদান বলে মনেও করি তাহলেও তাকে শুভকর কিছু বলে মেনে নিতে আমার আপত্তি আছে, কেননা অশুভ কিছু কি মানুষকে আনন্দ দিতে পারে না? এখানে যুগের পর যুগ মানুষের অফুরন্ত দুর্দশার কথা নাইবা বললাম যা ঈশ্বরের দ্বারা এক মূহুর্তে সমাধান যোগ্য। এছাড়া ঈশ্বর অধিকাংশ মানুষকে অনন্ত কাল নরক বাসের জন্যই সৃষ্টি করেছেন (কারণ কে কি করবে তা জেনেও তাকে সৃষ্টি করেছেন আর মানুষকে পাপ প্রবণ করে তৈরী না করলে তো সে পাপ করত না। অনেকে বলবেন তাহলে আল্লা তাদের পরীক্ষা করবে কিভাবে? আমি বলব, আল্লার পরীক্ষা করার দরকারটা কি? তার কিসের অভাব? পরীক্ষার নামে হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের উপর এ দুর্ভোগের হেতু কি? মানুষকে সে যদি ইবাদত/স্তুতি পাবার জন্য সৃষ্টি করে তবে তো বলব সে সফল না, কারণ বেশির ভাগ মানুষ তার ইবাদত করা তো দূরে থাক বিশ্বাসও করে নি।
এছাড়া আল্লার ইবাদত পাবার অভিলাষটা তাকে নিদারুণ খাটো করে তোলে। ) ঈশ্বর যদি মানুষের জন্য অনন্ত কাল নরক বাসের শাস্তি দিতে চান তবে আমি নির্দ্বিধায় বলব সে অসীম অশুভকর ও চরম নিন্দনীয় সত্ত্বা এবং সেই সাথে তাকে না মানাটাও নিদারুন গর্বের বিষয় বলে মনে করব। আর যদি কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের ঈশ্বর ও ঈশ্বরের গুণাবলি ঐ ধর্মের প্রচারকের বুজরুকি হয় তবে আমি বলব ওই ধর্মপ্রচারকটা তার কল্পিত ঈশ্বরের মতই নিন্দনীয়। এই ধরনের একটা ঈশ্বর যে নাকি মানুষকে অনন্তকাল( এর কম হলে সমস্যা কি ছিল?) আগুনে পোড়াতে চায় সে আবার মানুষের ভালোর জন্য নবী-রসুল পাঠায়, কোরান পাঠায়। তিনি যদি মানুষের এত ভাল চান তবে চরম বিপদ গ্রস্ত মানুষকে একটু সাহায্য করলে সমস্যা কি ছিল? যদিও সাহায্য করলে তার কোনো ক্ষতি নেই এবং তিনি যদি চাইতেন তবে নাকি মানুষ এই ধরণের বিপদেও পড়ত না।
দেখি মানুষ হজে গিয়ে একেবারে পদপিষ্ট হয়ে মারা গেলেও আল্লার কোনো খোঁজ নাই!! লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেয়ে আছে, মারা যাচ্ছে অহরহ কিন্তু আল্লা কারো ডাক শুনেনি, অথচ মানুষের জন্য তার কি দরদ, নবি-রসুল-কোরান পাঠাচ্ছেন হেদায়াতের জন্য। কেন, মানুষ কোরানের আইন না মেনে কি খুব খারাপ অবস্থায় আছে- উন্নত বিশ্বের কোনো দেশে কি কোরানের আইন চলে?
আরো সমস্যা আছে। মহাবিশ্বের কোনো স্রষ্টা আছে মানেই ধর্মবাদীরা মনে করেন তিনি কোনো একটি ধর্মের বর্ণিত ঈশ্বর হবেন আর ঐ ধর্ম তাদের-ই ধর্ম। অন্য ধর্মে জোর করে হলেও বা যত মত তত পথ জাতীয় বুলি আউড়িয়ে হলেও মানুষকে কিছুটা শান্ত রাখা সম্ভব কিন্তু মুসলমানরা এ ব্যাপারে একেবারেই নাছোড়বান্দা। তাদের ধর্মের বাইরে যে ঈশ্বর থাকতে পারে তা তাদের চিন্তারও বাইরে।
তাদের কথা হল- ঈশ্বর আছে, তিনি ধর্মের জগতের বাইরের কেউ নন এবং তিনিই আল্লা , আল্লা ছাড়া আর কোনো মাবুদ নাই। অনেককে দেখেছি আল্লার পরিবর্তে ঈশ্বর শব্দটার ব্যবহার নিয়েও আপত্তি তুলতে আবার আল্লা শব্দটি ব্যবহার করে এ নামে মন্দ কিছু বললে মাথা নিয়ে ঠিকে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়ে।
৬। কোরান রচনায় মুহাম্মদের স্বার্থ কি ছিল? তিনি যদি কোরানকে নিজের রচিত বলে প্রচার করতেন তবে যুগ শ্রেষ্ট কবি হতে পারতেন।
হজরত মুহাম্মদ “ নবী-রসুল মুহাম্মদ” হতে পেরেছিলেন কোরানকে আল্লার বাণী বলে প্রচারের মাধ্যমে।
আজ থেকে ১৪০০ বছরের অধিক সময় আগে এরকম প্রচার ও তাতে বিশ্বাস করার মত লোকের অভাব ছিল না যেখানে আজকের যুগেও এমন বিষয়ে বিশ্বাসের মত মানুষের সংখ্যা কম নয়। এখনো অনেক ভণ্ড পীরের হাজার হাজার মুরিদের খোঁজ পাবেন একটু খবর নিলেই। মুহাম্মদ একজন নারীর(খাদিজা) ব্যবসা দেখাশুনাকারী থেকে একটা জাতির নেতা হতে পেরেছিলেন কোরানকে অলৌকিক বলে প্রচারের মাধ্যমে। মুহাম্মদের যা কিছু অর্জন সব এর মাধ্যমেই। নিচের কয়েকটি আয়াত লক্ষ্য করি-
“হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।
এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে”। (৩৩:৪৫-৪৬)
“হে নবী, আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আল্লাহ্ আপনার করায়ত্ব করে দেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচাতো ভগ্নি, ফুফাতো ভগ্নি, মামাতো ভগ্নি, খালাতো ভগ্নিকে যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে। কোন মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পন করে,নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে সেও হালাল। এটা বিশেষ করে আপনারই জন্য-অন্য মুমিনদের জন্য নয়।
আপনার অসুবিধা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে। মুমিনগণের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি আমার জানা আছে। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল,দয়ালু”। (৩৩:৫০)
স্বীয় পোষ্যপুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করলে তা জায়েজ করার জন্য নিম্নোক্ত আয়াত নাজিল হল-
“অতঃপর জায়েদ যখন জয়নবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল, তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করলাম যাতে মুমিনদের পোষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেসব স্ত্রীকে বিবাহ করার ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না থাকে। আল্লাহর নির্দেশ কার্যে পরিণত হয়েই থাকে”।
(সূরা আহযাব,৩৩:৩৭)
(এই আয়াতটি নিয়ে পরে বলছি)
অবশ্যই বিদ্যমান আছে রসুলুল্লার মধ্যে সর্বোত্তম আদর্শ (সূরা আহযাব, ৩৩:২১)
এভাবে নিজেকে মহিমান্বিত করতে, সুবিধা আদায় করতে এমনকি ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সমস্যায় পড়লেও তা সমাধানের জন্য হজরত মুহাম্মদের উপর নাকি আয়াত নাজিল হয়েছে!
কোরান যে খুব একটা ভাল কাব্যগুণ রয়েছে তা কোনো নিরপেক্ষ বিচারে নির্ধারিত করা যায় নি। কোরানের উপর অলৌকিকতা আরোপ ছাড়া কোরানের প্রতি মানুষের এত সমীহ আনা সম্ভব ছিল না কোনোকালেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।