আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোরান কি অলৌকিক গ্রন্থ? - ২(খ)

প্রশ্ন করেই যাব অবিরত

[যেহেতু এ লেখাটি একজন কোরানের অলৌকিকতায় অবিশ্বাসীর দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা হয়েছে তাই আপনার যদি ধর্ম-বিরোধি লেখা সহ্য না হয় তবে অবশ্যই তা নিজ দায়িত্বে পড়বেন। পরবর্তীতে কোনো অভিযোগ গ্রহণ যোগ্য হবে না। কোনো দ্বিমত থাকলে জানাতে দ্বিধা করবেন না। ] কোরান কি অলৌকিক গ্রন্থ? - ১ কোরান কি অলৌকিক গ্রন্থ? - ২(ক) কোরানের অলৌকিকতা প্রমাণে প্রদত্ত যুক্তিগুলো খণ্ডনঃ "That which can be asserted without evidence, can be dismissed without evidence." — Christopher Hitchens ৩। কোরান যদি অলৌকিক গ্রন্থ না হত তবে তাতে অনেক পরস্পর-বিরোধী কথা বা অসঙ্গতি থাকত।

কোরান যদি অলৌকিক গ্রন্থ না হত তবে তা বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হত না। যেহেতু কোরানে বিজ্ঞানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কিছুই পাওয়া যায় নি তাই এটি অলৌকিক গ্রন্থ। এ কথাটিও কোরান থেকে উৎসরিত। কোরানে আছে, “তারা কি কোরান অনুধাবন করে না? তা যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও পক্ষ থেকে নাজিল হত তবে তারা এতে বহু অসঙ্গতি পেত”। (সূরা-নিসাঃ৮২) আবারো অসীম জ্ঞানীর যুক্তিবোধ দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না।

কোনো গ্রন্থ যদি আল্লা না লেখে তবে তাতে অসঙ্গতি পেতে হবে কেন? আল্লা ছাড়া যারাই বই লেখেছে তাদের বইতে কি নানা রকম অসঙ্গতি রয়েছে? আর কোনো গ্রন্থে অসঙ্গতি পেতে হলে ঐ গ্রন্থ সম্পর্কে নির্মোহ থাকতে হয়। যে গ্রন্থকে আপনি আল্লাহ প্রেরিত গ্রন্থ বলে গভীর ভাবে বিশ্বাস করেন এতে অসঙ্গতিপূর্ণ কিছু আছে বলে আপনি কি মনে করবেন বা মেনে নিবেন? একটা গল্প বলি- “এক লোক একবার বলেছিল সে কোনো একদিন সারা দিন ঘুমিয়েছিল। পরে দেখা গেল সে ঐ দিনে মোটেও ঘুমায় নি, রাত্রে ঘুমিয়েছিল। পরে তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে সে বলল, আরে দিন তো সূর্যের আলো যুক্ত রাত। আমি দিনে ঘুমাই নি তো কি হয়েছে রাতে ঘুমিয়েছি।

আর দুটোই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। আমার কথার সত্যতা বুঝতে হলে তা বুঝার মত জ্ঞান থাকতে হবে”। এ ধরণের কথা শুনলে কি বলবেন? বস্তুত কোরানে অনেক পরস্পর বিরোধি কথা রয়েছে কিন্তু এগুলোকে ঐ গল্পের মত করে ব্যাখ্যা দেয়া হয়। বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারের সাথে একদল লোক কোরানের বিভিন্ন শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে বিজ্ঞানময় করার মহান কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে রেখেছেন। এরা এতই নির্লজ্জ যে বিজ্ঞানের কোনো কিছু কোরানের সাথে সংঘাত তৈরী করলে সাথে সাথে শব্দের অর্থ-ব্যাখ্যা পরিবর্তন করবেন, নতুন অভিধান তৈরী করবেন, আধুনিক তফসির বানাবেন আর অবশেষে দাবি করবেন তাদের কোরানে সবই ছিল ঐ বিষয়টি বিজ্ঞান খোঁজে পাবার আগেই।

কোরানে প্রচুর অসংগতিপূর্ণ আয়াত আছে। কিন্তু এগুলো ধরলে ঈমানদাররা বলবেন, ‘ঊহা রুপক’, নতুবা বলবেন, ‘এই হুকুম রহিত করা হয়েছে ‘। রহিত বা মনসুখ আয়াত সম্পর্কে আপত্তি তোলা যায় এই বলে যে – এ হুকুম পরবর্তীতে রহিত হয়ে যাবে জেনেও আল্লা কেন এই আয়াত নাজিল করলেন, যেহেতু কোরান কিয়ামতের আগ পর্যন্ত সর্ব কালের জন্য অনুসরণ যোগ্য গ্রন্থ। আর কোরানে রুপকের এত প্রাদুর্ভাব কেন, কেন আল্লার সাহিত্যরস কোরান রচনার সময় এভাবে উছলে পড়ে বিরুপ হয়ে দাড়াল যে একে রুপক না বললে ইমান নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে? আর দিনদিন কোরানের আয়াতগুলোকে যে হারে রুপক বানানোর হিড়িক পড়েছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে স্বয়ং আল্লার অস্তিত্বই রুপক হয়ে যায় কিনা কে জানে। কোনো শাস্ত্রের অলৌকিকতায় অতিমাত্রায় বিশ্বাসে কারো যদি বুদ্ধি লোপ পেয়ে যায় তাহলে আসলেই সমস্যা বটে।

কেউ যদি কোনো পুঁথি শাস্ত্রে বিজ্ঞান রয়েছে বলে মাত্রাতিরিক্ত বিশ্বাস করেন তবে তা থেকেও বিজ্ঞান উদ্ধার করতে পারবেন। এই আয়াতটি দেখেন- আর আমি পাঠাইলাম নূহকে তাহার ক্বওমের প্রতি, অতঃপর তিনি উহাদের মধ্যে অবস্থান করিলেন পঞ্চাশ বৎসর কম এক হাজার বৎসর, অনন্তর প্লাবন আসিয়া তাহাদিগকে পাকড়াও করিল, বস্তুত তাহারা বড়ই অনাচারী লোক ছিল। (সূরা আনকাবুত, ২৯: আয়াত ১৪) আয়াতটির “আলফা সানাতিন ইল্লা খামছিনা আ’মা” মানে হল –“পঞ্চাশ বৎসর কম এক হাজার বৎসর”। অর্থাৎ নূহ নূন্যতম ৯৫০ বৎসর বেচেছিলেন। (এই সানাতুন শব্দ থেকে বাংলা “সন” শব্দটি এসেছে) আজ আমরা জানি মানুষ কখনো এত বৎসর বেচে থাকতে পারে না এবং ব্যাপারটা রীতিমত উদ্ভট।

ইমানের জোরে কেউ যদি এ আয়াতের ব্যাখ্যা দিতে চান যে নূহের উম্মতেরা ১২ মাসে বছর হওয়াটা জানত না, তারা অপেক্ষাকৃত কম দিনকে বছর বলে মনে করত তবুও এই ব্যাখ্যাটা ধোপে টিকে না। কারণ এখানে আল্লা বক্তা, তিনি তো ১২ মাসে বছর হওয়ার ব্যাপারটা জানতেন। আর তিনি এটাও জানতেন যে, তিনি যদি বলেন নূহ নূন্যতম ৯৫০ বছর বেচে থাকেন তবে আরবের মানুষেরা এর মানে কি বুঝবে, আরবের মানুষেরা ঠিকই ১২ মাসেই বছর পরিমাপ করত। ধরেন আমি কোনো এক দ্বীপে ৩ বছর কাঠিয়ে এলাম যা ওই দ্বীপের পশ্চাদ পদ বাসিন্দাদের হিসাবে ৫ বছর। এখন আমি কি ফিরে এসে সকলকে বলে বেড়াব যে, আমি ঐ দ্বীপে ৫ বছর ছিলাম? এছাড়া নূহের উম্মতেরা কম দিনে বছর পরিমাপ করত এ কথার একেবারেই কোনো প্রমাণ নেই এবং কোরানে কোথাও এ কথার উল্লেখ নেই।

আরেকটি আয়াত দেখেন- আর তিনি এমন যে, সমস্ত আসমান ও যমীনকে সৃষ্টি করিয়াছেন ছয় দিনে, তখন তার আরশ(সিংহাসন) ছিল পানির উপরে(সূরা হূদ,১১: আয়াত ৭) আয়াতটি একেবারেই সরল। এই আয়াতে “সিত্তাতি আইয়্যাম” বলতে সরলভাবেই ছয় দিন বুঝাচ্ছে আর “মাউন” মানে পানি। এবার প্রশ্ন, সৃষ্টির পূর্বে দিন এলো কোথা থেকে, পানিই বা এলো কোথা থেকে? আর সিংহাসন পানির উপরে থাকার বিষয়টা কতটা হাস্যকর তা সহজেই অনুমেয়। আবার ধর্মবাদিরা তাদের ইমান ঠিকিয়ে রাখতে এই আয়াতের যেসব ব্যাখ্যা দেন তা এই আয়াতটি থেকে কম উপভোগ্য নয়। আরো কিছু আয়াত বলি- “আর তিনিই প্রতিরোধ করিয়া রাখিতেছেন আসমান সমূহকে পড়িয়া যাওয়া হইতে” (সূরা আল-হাজ্জ, ২২: আয়াত ৬৫) >>এত বড় নীল আকাশ কিভাবে উপরে কিভাবে ঠিকে থাকে তা তখনকার মানুষের জন্য একটা বিস্ময় ও জিজ্ঞাসা ছিল।

আল্লাহ চমৎকার ভাবে তাদের এ জিজ্ঞাসার জবাব দিয়েছেন। আবার কোরানে অন্যত্র বলেছেন – “লোকদের উপর প্রতিষ্টিত আকাশমণ্ডলের প্রতি কি ওরা কখনও তাকিয়ে দেখে নি, কিভাবে আমরা সেটি নির্মাণ করেছি এবং সেটিকে চাকচিক্যময় বানিয়েছি এবং তাতে কোন ফাটল নেই(সূরা ক্বাফ, ৫০: আয়াত ৬) >>হুম, কোনোই ফাটল নাই! এ জন্যই তো তিনি সর্বজ্ঞ আর মহান! “তোমরা কি জাননা আল্লাহ কেমন ভাবে সাত আসমানকে স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন?” (সূরা নূহ, ৭১: আয়াত ১৫) >> আল্লা যে সাত স্তরে আকাশ তৈরী করেছেন তা আমরা জানব না তো কে? আমরা না মহাজ্ঞানী আল্লার ব্যান্দা............. “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই উপযোগী যিনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা যিনি ফেরেশতাকে সংবাদবাহী বানান যাহাদের দুই দুইটি, তিন তিনটি ও চার চারটি পালক বিশিষ্ট ডানা আছে। (চারিটির মধ্যে সীমাবদ্ধ নহে) বরং তিনি সৃষ্টিতে যত ইচ্ছা অধিক করিয়া থাকেন(হাদিসে বর্ণীত আছে, জিবরাইলের ছয় শত ডানা রয়েছে), (সূরা ফাতির,৩৫: আয়াত১) >>অতি উত্তম! তিনি সৃষ্টিতে যত ইচ্ছা অধিক করিয়া থাকেন!! ফেরেশতা সেমেটিক উর্বর মস্তিষ্কের ফসল। রাজাধিরাজ আল্লার মানুষের সাথে যোগাযোগের জন্য তো দূত প্রয়োজন!! তাই এই ফেরেশতার ব্যবস্থা। আর আল্লা কেন পাইক পেয়াদা ছাড়া সরাসরি মানুষের সাথে যোগাযোগ করেন না সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই, আর আল্লার যদি এক পাল ফেরেশতা রয়েছে তবে তাদের মাধ্যমেই অন্তত মানুষের সাথে যোগাযোগ করে মানুষের আধুনিক যত সমস্যা তা নিরসনের কোনো উদ্যোগ কেন নেন না সর্ব-শক্তিমান ও অসীম করুণাময় তাও এক প্রশ্ন বঠে।

যাই হোক, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের পরেই যে সব শূন্য, সেখানে ডানার সাহায্যে উড়া সম্ভব নয় তা যদি সর্বজ্ঞ আল্লার জানা থাকত তাহলে নিশ্চয় তিনি ফেরেশতার ডানার কথা বলতেন না। আর তা জানতেন না বলেই তো, “সমস্ত প্রশংসা তার জন্যই” !! বেশি না বলে কোরানের অসংগতি একটা তালিকা দেই Quranic contradictions এখানেও দেখতে পারেন- 1000+ MISTAKES IN THE QURAN ধর্মকারীর এই সিরিজটাও একটু দেখতে পারেন - - কোরানের বাণী আর আগেই বলেছি, এটা কোনো যুক্তি নয়। কোনো গ্রন্থে যদি কোনো অসংগতি না থাকে তবেই তা আল্লা কতৃক রচিত গ্রন্থ হয়ে যায় না যদিও কোনো মহা মহা জ্ঞানী এমন দাবী করে থাকেন( উপরোল্লিখিত সূরা নিসার৮২ নং আয়াত দ্রষ্টব্য)। ৪। বিশ্বের কোটি কোটি লোক কোরানকে আল্লাহ রচিত বলে রায় দিয়েছে।

এটা কোনো প্রমাণ নয়। সত্যতা ভোট দ্বারা নির্বাচিত হয় না। বিশ্বের কোটি কোটি লোক কোরানকে অলৌকিক মনে করে বলেই যদি তা অলৌকিক হয়ে যায় তবে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ যেগুলোও কোটি কোটি লোক অলৌকিক বলে মনে করে সেগুলো অলৌকিক হবে না কেন? আবার, কোরানকে যত লোক অলৌকিক বলে মনে করে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি মানুষ একে অলৌকিক বলে মনে করে না, তাহলে এই যুক্তিতে কোরানকে অলৌকিক নয় বলে কেউ যদি মনে করে তবে সমস্যা কোথায়? এক সময় বিশ্বের প্রায় সকল লোকই বিশ্বাস করত সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে, তাই বলে কি তা সত্য হয়ে গিয়েছিল? অনেক লোক কোনো কিছু বললেই বা বিশ্বাস করলেই তা সত্য হয়ে যায় এ ধরণের আর্গুমেন্টকে বলে Argumentum ad populum যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।