আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে জামায়াত ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদীর মনোভাব !

"A little knowledge of science makes man an atheist, but an in-depth study of science makes him a believer in God." Francis Bacon.

যারা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে জড়িত , তারা অনেক সময় তাবলীগ জামায়াতকে সহ্য করতে পারেনা । আবার যারা তাবলীগ জামায়াত এর সাথে জড়িত তারাও জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করেন । অথচ উভয়েই ইসলামের জন্য কাজ করছেন । তারপরও তাদের মধ্যে কেন মিল নাই । কেন বিরূপ ধারণা ? আমি অধ্যাপক গোলাম আযমের লেখা একটা বই হাতে পেলাম যেখানে উনি মাওলানা মওদুদীর তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে কিরূপ ধারণা পোষণ করতেন তা তুলে ধরেন ।

আশা করি উনার মন্তব্য জানা উভয়ের জন্য ভালো হবে । আমি যদিও ব্যাক্তিগতভাবে তাবলীগ জামায়াতকে পছন্দ করি এবং জীবনে অনেক বার কিছু সময় লাগিয়েছি । জামায়াতের সাথে কখনই জড়িত হইনি । যাক নিচে হুবহু বইয়ের অংশ বিশেষ তুলে দিলাম ; '১৯৫৬ সালের জানুয়ারী মাসে তিনি সর্ব প্রথম পূর্ব পাকিস্তানে সফরে আসেন । .....আমি তাবলীগ জামায়াতে ইতিপূর্বে চার বছর অত্যন্ত একাগ্রতার সাথে কাজ করায় ঐ জামায়াত সম্পর্কে মাওলানার মতামত জানার খুবই আগ্রহ ছিল ।

তাবলীগ জামায়াত ত্যাগ করা সত্বেও ঐ জামায়াতের বিরূপ সমালাচনা কখনও আমি পছন্দ করিনি । ....মাওলানাকে জিজ্ঞেস করলামঃ তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে আপনার ধারণা কি ? তিনি জওয়াবে বললেন, আমি মাওলানা ইলিয়াস সাহেবের প্রাথমিক কর্মস্হল পূর্ব পান্জাবের মিওয়াদে যেয়ে এ জামায়াতকে জানার চেষ্টা করেছি এবং অশিক্ষিত , ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ সাধারণ লোকদেরকে তিনি যে পদ্ধতিতে ইসলামের আলো দান করছিলেন তার প্রশংসা করে মাসিক তারজুমানুল কুরআনে আমি লিখেছি । একথ বলে তিনি উপদেশ দেন যে "দ্বীনের কাজ যে যেখানে যতটুকু করছে তাতে আমাদের কাজ হচ্ছে বলে মনে করতে হবে । দ্বীনের সবটুকু কাজই আমাদের পক্ষে করা সম্ভব নয় । দ্বীন কায়েম হলে সরকারী উদ্যোগে ও পৃষ্ঠপোষকতায় সব রকম কাজই জনগণকে দিয়ে করান যাবে ।

কিন্তু পূর্বে অন্যদের দ্বারাও অনেক কাজ হওয়া প্রয়োজন । " এক বৈঠকে ঈমানদার ও সৎলোক তৈরীর গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে মাদ্রাসা, খানকাহ ও তাবলীগের মাধ্যেমেও নেক লোক তৈরী হচ্ছে বলে মন্তব্য করলে তিনি বললেন, " এসব ঈমানদার লোক যারা তৈরী করছেন তারা যদি সমাজব্যবস্হা পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে তাদের মন-মগজ গড়ে তুলতেন তাহলে এরা সহজেই ইকামাতে দ্বীনের মুজাহিদে পরিণত হতেন । কিন্তু শুধু ব্যাক্তি জীবনে যারা সৎ হয়ে গড়ে উঠেন তারা বাতিল সমাজব্যবস্হারই দিয়ানতদার খাদেমে পরিণত হতে বাধ্য । এ জাতীয় লোক ঘুষ খাবেনা, অন্যায় করবেনা, যুলুম করবেনা -- এ কথা ঠিক । তারা যেখানেই কাজ করবে ইখলাসের সাথে আনুগত্য করবে ।

সুদী ব্যাংকে চাকুরী করতে নিষ্ঠার পরিচয় দেবে, কিন্তু সুদ-বিহীন ব্যাংক ব্যবস্হা চালু করার চিন্তা করবেনা । বাতিল সমাজ ব্যবস্হা তাদের নিঃস্বার্থ খেদমত পায় । তারা এর বিদ্রোহী হবার প্রয়োজন বোধ করেন না । সমাজ ব্যবস্হা পরিবর্তনের মন-মানসিকতা যদি সৃষ্টি করা হতো তাহলে এতগুলো সৎ ও মুখলিস লোক ইকামাতে দ্বীনের সংগ্রামে আত্ননিয়োগ করলে বাতিল সমাজব্যবস্হা কবেই উৎখাত হয়ে যেতো । আফসোসের বিষয় যে, এ দৃষ্টি ভঙ্গির অভাবে আল্লাহর নেক বান্দাহ , বাতিল নেযামের দিয়ানতদ্বার খাদেমের ভূমিকা পালন করতে বাধ্য হচ্ছেন ।

আমার অভিজ্ঞতা থেকে বললাম," তাবলীগ জামায়াতে এজতেমায়ী দোয়ায় যেভাবে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা হয় এর মধ্যে এমন এক রূহানী স্বাদ পাওয়া যায় যা আমাকে প্রথমেই আকৃষ্ট করেছিল । " একথার উপর মাওলানা মন্তব্য করলেন, "আল্লাহর সাথে বান্দাহর যে রূহানী সম্পর্ক তা কাতরভাবে দোয়া করার দ্বারা অবশ্যই ঘনিষ্ঠ হয় । এ আকর্ষণও স্বাভাবিক । কিন্তু আল্লাহর যমীনে আল্লাহর খিলাফত কায়েমের দায়িত্ব পালন হলো আল্লাহর বান্দার আসল কাজ । এ কাজ করতে গিয়ে বাতিলের নির্যাতনের শিকার হলে মাবুদের সাহায্য চেয়ে যে কাতর আবেদন জানানো হয় এর স্বাদ আরও বেশী ।

মানুষের মনগড়া আইন ও শাসন উৎখাত করে আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন কায়েমের চেষ্টাই হলো সত্যিকারের অর্থে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ । এ মহান দায়িত্ব পালনের উদ্দেশেই নবী ও রাসূলগণ আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন । এ কাজে পদে পদে যে বাধা রয়েছে এবং এতে তাগুতের সাথে যে সংঘর্ষ বাধে তখন আল্লাহর দরবারে ধরণা দিয়ে যে চোখের পানি ফেলা হয় তা কলিজার রক্ত পানি হয়ে বের হয় । ঐ কঠিন দায়িত্বের বোঝা মাথায় না নিয়ে শুধু গুনাহ মাফের জন্য ও জান্নাত লাভের ইচ্ছা নিয়ে কান্নাকটি করা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যথেষ্ট নয় । যেমন গায়ে পাচড়া হলে চুলকাতে বড়ই মজা লাগে ।

কিন্তু এ দ্বারা পাচড়া ভাল হয়না । পাঁচড়া দূর করতে হলে সুচিকিৎসার প্রয়োজন । " তাবলীগ জামায়ত প্রসঙ্গে একবার কথা উঠল যে, তাদেরকে চীন-রাশিয়ার মতো দেশেও যেতে বাধা দেয়া হয়না । কারণ এটুকু ইসলামে তাদেরও আপত্তি নেই । একথা শুনে মাওলানা বললেন,"কলেমার যেটুকু বীজ তারা ছড়াচ্ছেন এক সময় সে বীজ থেকেও ইসলামী আন্দোলনের গাছ জন্ম নিতে পারে ।

যেসব দেশে প্রকাশ্যে ইসলামী আন্দোলন করতে দেয়া হয় না সেখানে তাবলীগ জামায়াত যদি দ্বীনের বীজ ছিটিয়ে দেন তা অবশ্যই বড় খেদমত । দ্বীনের জন্য যার পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব ততটুকুর স্বীকৃতি দেয়া উচিত । দ্বীনের দাওয়াত যারাই দেন তাদের মধ্যে কুরআনের খবর অবশ্যই পোছে । তাই কুরআনে এক সময় পূর্ণ দ্বীনের খবরও তারা পাবে । " উৎসঃ মাওলানা মওদুদীকে (রঃ) যেমন দেখেছি ।

অধ্যাপক গেলাম আযম ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.