আমার কিছু বলার ছিল
বন্ঢু যহন বউ লইয়া আমার বাড়ির সামনে দিয়া
রঙ্গ কইরা হাইটা যায়,
ফাইট্টা যায়, বুকটা ফাইট্টা যায়........
গাইতে-গাইতে হেঁটে যাচ্ছে চামেলি আর হুসনা। দুইজনই গার্মেন্টসকর্মী। দুজনেরই হাতে মোবাইল। এমন সময় চামেলির মোবাইলটা বেজে উঠলো। চামেলি রিং রিসিভ করে,
-হায় দুষ্ট! কি খবর তোমার??? কই তুমি হে? ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করছো? সারারাত বুধহয় আমার টেনশনে ঘুমাও নাই! আমি? আমি এইতো ভার্সিটির দিকে যাই।
ক্লাস আছে। এখন রাখি।
বলে রিংটা কেটে দিল। হুসনা জিজ্ঞেস করলো,
-কিরে কেঠায়?
-আরে ঐ পোলাটায়।
-কোনটায়?
-আরে ওই যে গত সপ্তায়ে ফেইসবুকে পরিচয় হইলো!
-ও ও ও! ওই পোলাডা যে জানে তুই নর্থ সাউথ ইনিভার্সিটিতে পরস?
-হ।
-হায়রে পোলারপাল! মাইয়াগো কন্ঠ হুনলে আর স্থির থাহন যায় না! ও আমার লুতুপুতুরে....
-হি হি হিহি
এভাবে পথ চলতে-চলতে তারা এসে মফিজের পান-চা’য়ের দোকানের সামনে দাঁড়ালো। মফিজ নন-মেট্টিক পোলা। তয় হালকা-পাতলা ইস্মার্ট। চায়না কোম্পানির বদৌলতে নেট ইউজ করোন যায় এমুন একখ্খান মোবাইল তার আছে। যদিও নেট সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই নাই।
খালি মাঝে মইধ্যে দুই-চাইরডা গান হুনে আর নতুন কোন বাংলা সিনামা আইলে পাশের দোহানথন ডাউনলোড করি আনি দেহে। তয় পোলা হিসেবে খারাপ না। টংয়ের দোহান। চিনি-বিস্কুট হাবিজাবির লগে এপাশে চা আর পান বেচে।
হুসনা মফিজকে উদ্দেশ্য করি বলে, “ও মিয়া! করা লিগার বেশি কইরা চিনি আর ঘন করি দুধ দিয়া দুই কাপ চা দেও দেখি”।
কথা শেষ করার আগেই হুসনার মোবাইল টিট টিট কইরা জানান দিলো যে মেসেজ আইছে। হুসনা মোবাইল খুইলাই, “আররে! এরেই কয় ভাইগ্য!” চামেলি,
-কি হইছে?
-পঁচশ টেকা পাইছি!
-আমার কমিশন দিবি কিন্তুক! কেডা দিলো?
-খাড়া! ফেইসবুকও লগইন মাইরা দেহি।
এই কইয়া মোবাইল টিপি ফেইসবুকও ঠুকবার লাগলো। মফিজ অতক্ষণ তাগো কাজ-কারবার খুব মনোযোগ দিয়া দেখতাছিলো। যদিও কিছুই বুঝবার পারতাছিলো না।
হঠাৎ নজরে পড়লো, আরে বা! হুসনার মোবাইল দেহি তারডার লাহান! সেইম টু সেইম! এইবার খুব ভালা কইরা দেইখা রাখলো হুসনা কেমনে কিতা করে। তারপরে হুসনা-চামেলি চা খাইয়া চইলা গেলো। তারা চইলা যাইতেই মফিজ তার মোবাইল লইয়া হুসনার মত টিপতে লাগলো। টিপি টিপি ফেইসবুকের ফার্স্ট ফেইজ খুলি ফেললো। তারপরেতো আর কিছু হয় না! খালি নাম-ধাম এই সেই চায়! কি করবো ভাইবা পায়না! মনে করছিলো এইডা বুঝি টেকার মেশিন।
ঠুকলি পরেই টেকা! মাগার, কেমতে কিতা? খালি নামধাম চায়। পরে মনে করলো নামধাম দিলি পরেই বুঝি টেকা দিবো। মাগার এইবার দেহি ছবি চায়! দিলো ছবি। এইভাবে ধীরে ধীরে মফিজ ঢুকে গেলো ফেইসবুকের অজানা রাজ্যে!!!
তারপর হইতে সময়ে-অসময়ে ফেইসবুকে ঠু মারে মফিজ। মাগার কেমতে কি? টেকাতো মিলে না!!! এমন করে বছর পার হয়।
এর মাঝে ফেইসবুক আয়ত্ত করে ফেলেছে মফিজ। জেনে গেছে অজানা সব রহস্য। বুঝে গেছে রিয়েল আর ফেইক আইডি’র কেরামতি। মাগার পারতে কি আর বুচ্ছে? সব ঘটনার পিছনেইতো কাহীণি থাকে। না কি? এই এক বছরে মফিজ ফেইসবুকের বদৌলতে একখান প্রেমও করি ফালাইছে।
ধণীর দুলালি সানজিদার সাথে। পরে দুইজনের দেখাও হয়। মাগার গরীব বলে মফিজরে মানি নেয় নাই সানজিদা। অন্যত্র বিয়া হইয়া গেছে সানজিদার। এরপর থেইকা মফিজ বদলাইয়া গেছে।
এখন আর সে গরীবি সহ্য করবার পারে না। এখন আর সে ফেইসবুকে মফিজ উদ্দিন না! সে এখন “পাল বয় রোমিও”! ঝাক্কাস প্রোফাইল ডিটেইলস! ঢাকা ভার্সিটির ইস্টুডেন্ট! পুরা ফাটায়া দিছে আরকি!!! অখন সারাদিন মফিজ এ্যট এ্যনি কস্ট টেকার ধান্ধায় থাকে....
তা যাই হোক, এমন কইরা এখন দিন যায় রাইত আসে মফিজের। তো একদিন ফেইসবুকে ঢুকছে, ঢুকি দেখে একটা মেসেজ আর একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট। পরে দেখে মেসেজ আর ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একজনেরই। মেসেজে লিখা, “এ্যড মি.”।
পরে মফিজ ভালা কইরা রিকোয়েস্ট পাঠানো আইডিটা চেক করে। না। ঠিকই আছে। মনে হইতাছে রিয়েল আইডিই। নাম, “সুবর্ণা কামাল”।
ব্রাক ইউনিভার্সিতে পড়ে। পিতা, মাতা, ভাই, বোনের আইডিও রিলেশান ফিল্ডে দেওয়া আছে। পিতার আইডি খুইলাতো মফিজ ভীরিম খাইয়া পরে! অ্যাঁ.... বিরাট বড়লোক! মফিজ মনে-মনে কয়, এই এত্তদিনে বুঝি ভাইগ্য খুল্লো!!! যদি এই মাইয়ারে পটাইবার পারি, তবে আমারে আর পায় কেডা??? সারাজীবন ঠ্যাংয়ের উপরে পা তুলি খাইয়া পার করি দিমু!!! হে হে হা হা হা হা কইরা একটা ভিলেনি হাসি মারে। তারপরে, রিকুয়েস্ট এ্যক্সেপ্ট কইরা মেসেজের রিপ্লাই দেয়। তারপরে রাত্রে মাইয়াটা ধৈন্যাপাতা জানাইয়া মেসেজের উত্তর করে।
তারপর তাদের মাঝে প্রতিদিনই যোগাযোগ হতে থাকে। আর লাইক-কমেন্ট-পোকতো আছেই। তাদের মাঝে সুন্দর একটা সম্পর্কের সৃষ্টি হয়! সেই সুন্দর সম্পর্ক দিনেদিনে ভালোবাসায়রূপ নেয়।
সানজিদার কথা এখন আর মফিজের মনেই পরে না। সারাদিন তার চিন্তায় কেবলি সুবর্ণার বিচরন।
এমনিভাবে দিন কাটছে। এরমাঝে মোবাইল নম্বর দেওয়া নেওয়াও হয়ে গেছে। প্রতিদিনই সময়ে-অসময়ে সুবর্ণার ক্লাসের ফাঁকে কথা চলে দুজনার। প্রেম জমে ক্ষীর যারে কয়। এখন যেনো একজনকে ছাড়া অপরজনের একমুহুর্ত কাটে না।
প্রেম করছে আজ এক বছর। দুজনই কি করে আজকের দিনটাকে সেলিব্রেট করা যায় সেই কথা বলছে। কথার মাঝে মফিজকে সুবর্ণা দেখা করতে বললো। বেস.......
মফিজের শরীরে কাঁপুনি উঠলো! মনে আবার সেই অজানা ভয় পেয়ে বসলো! সানজিদার মত দেখা করার পর সুবর্ণাওতো তাকে ছেড়ে যাবে! এখন......
হঠাৎ মফিজ বলে বসলো,
-আজকের দিনটাকে সেলিব্রেট করতে চাওতো?
-হুম।
-চলো বিয়ে করে ফেলি!
-অ্যাঁ...... (কতক্ষণ থেমে গিয়ে) তোমার মাথা ঠিক আছেতো?
-জ্বী ম্যাডাম।
-না দেখা করে একেবারে বিয়ে!
-হুঁ হুঁ! এটাইতো চমক!
-কিভাবে?
-ওমা! কেনো? বিদেশের পাত্র-পাত্রির মাঝে যেভাবে টেলিফোন মেরেজ হয় না!
-ভেবে বলছোতো?
-জ্বি।
-আবারো ভেবে দেখো?
-(এবার রেগে গিয়ে) বিয়ে করবে নাকি বলো?
-রাগ করছো কেনো? আমি কি না করেছি? কিন্তু.....
-কোনো কিন্তু নেই!!!
এরপর টেলিফোনের মাধ্যমে দুজনের বিয়ে হয়ে গেলো!! বেছ..... এবার আর মফিজরে পায় কে? ধনীর দুলালীর জামাই! ভাবলেই গর্বে বুক ভরে যায়। এবার অন্তরঙ্গতা আরো বেড়ে গেলো। আর এবার দেখা হলেও ছেড়ে যাবার সুযোগ নেই। এর কিছুদিন পর দুজনে দেখা করবে ঠিক করলো।
আজ দুজনার দেখা করার দিন। মফিজ নির্দিষ্ট স্হানে অপেক্ষারত। এমন সময় সুবর্ণা এগিয়ে আসছে। মফিজ দেখেই দম আটকে যাবার অবস্থা! আরে! এ যে দেখি চামেলি! বুকের মাঝে বিষ্ফোড়ন ঘটলো। চামেলিও কাছে এসে,
-তুমি! তুমিই সেই পাল বয় রোমিও যার দোকান থেইকা সেইদিন চা খাইলাম? ভালই দেখি চিটিং জানো!
-অই! কথা কইবি না সুবর্ণা কমাল নামধারি রাক্ষোষী! ইস.... এ আমার তু্ই কি করলি? কত স্বপ্ন দেখছি বড়লোক বাড়ির জামাই হমু!
-আবার বড়-বড় কথা কয়! কত সখে ছুইটা আইছিলাম ঢাকা ভার্সিটি পড়া জামাইয়ের কাছে।
-তুইওতো কইছিলি তুই ব্রাক ইউনিভার্সিটিতে পরস!!!!
-লাট সাবের পোলা!
-বড়লোকের মাইয়া!!!
তাদের তরকাতরকি ঝগঢ়াররূপ নিলে আশেপাশের মানুষ যখন ছুটি আইসা দুইজনরে দুই নাম্বার হিসেবে পুলিশে দিবার ডিসিসন নিলো তথন আর না পাইরা স্বীকার করলো তারা স্বামী-স্ত্রী। তারপরে পাবলিকে তাগো দুইজনরে রিক্সায় তুইলা দিয়া মফিজের বাড়ি পাঠাইয়া দিলো। অখন দুইজনে দুঃস্বপ্নের বাসর সাজাইছে। যদিও অষ্টপ্রহর দুইজনেই ছাড়াছাড়ির লাইগা উইঠা পইড়া লাগে তারপর আবার স্বাভাবিক হইয়া গলা মিলায়া গায়,
আমার সাধ না মিটিলো,
আশা না ফুড়িলো,
সকলি ফুড়ায়ে যায় মা........এহ্...এহ্....এহ্......
কি বুঝলেন পাঠকেরা???
ঈদ স্পেশাল লিখা। ভেবেছিলাম ঈদে দেবো।
কিন্তু, সবার ঈদে বাড়ি যাবার ও আনন্দ করার হিড়িক উঠেছে। তাই অনেকে মিস করতে পারেন ভেবে এখনই দিলাম.....
সবাইকে আগাম জানাই,
*****ঈদ মোবারাক*****
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।