একজন ভুয়া মহাপুরুষ
পত্রিকার কাজটা পিছিয়ে যাওয়ায় মনটা বেশ খারাপ ছিল। তাই নববর্ষ খুব একটা ভাল গেল না। কিন্তু তবুও বাড়িতে তো বসে থাকা যায় না। পহেলা বৈশাখ বলে কথা। বন্ধুদের সাথে যশোর উদীচির অনুষ্ঠান দেখতে গেলাম।
অনুষ্ঠান দেখতে-দেখতে সম্পুর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ভাবে মাথায় এই গল্পটার আইডিয়া এল। কিন্তু শরীরের অবস্থা বিশেষ ভাল না। সারাদিনের ক্লান্তি সাথে এলার্জির অষুধের কেরামতিতে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। তবুও চেষ্টা করি। কারণ জানি ফেলে রাখলে আর লেখা হবে না!
আমাদের ব্লগার সাদমান সাদিক ভাই।
অতি ভদ্র ছেলে। সফটওয়ার ইঙ্গিনিয়ারিং পড়েন। সেহেতু মেধাবি বলতেই হবে সেই সাথে একজন ভাল মানুষও বটে। মুল চরিত্রটা তার ঘাড়ে দেই।
ব্যস্ত মানুষ আমাদের সাদমান ভাই।
সারা দিন ক্লাস, আড্ডা, হ্যান-ত্যান বহুত কাজ। তবে আশ্চর্য হল এইসব কাজ গুলোর মধ্যে ফেবুতে বসা তার হয় না। রাতের দিকে বসে একবার।
এমনি একদিন বসেছে সাদমান ভাই ফেবুতে। প্রথমে নটিফিকেশন চেক।
তারপর মেসেজ। আজ একটা মেয়ে মেসেজ দিয়েছে সাদমান ভাইকে।
" ভাইয়া আপনার লেখা আমি পড়ি নিয়মিত। আমার খুব ভাল লাগে ব্লগ পড়তে। তবে বেশ কিছু দিন আপনার লেখা পাচ্ছি না।
লেখেন না কেন?" মেসেজটা পাঠিয়েছে সেজুতি রহমান।
ভালই লাগে যখন এমন মেইল করে। এখনি রিপ্লাই করা ঠিক হবে কিনা ভাবছেন তিনি।
হঠাৎ চমকে উঠলেন সাদমান ভাই। এই সেজুতি রহমানকে তিনি চেনেন।
আজ থেকে ৫ বছর আগে একে সাদমান ভাই নিজে সৃষ্টি করেছিলেন। এটি তার নিজের তৈরি ফেইক আইডি।
৫ বছর আগে ফেসবুক তেন জনপ্রিয় ছিল না। তাই ফেইক আইডি দিয়ে মানুষ ধোকা দেয়াও সহজ ছিল। সাদমান ভাই অবশ্য শুধু বন্ধুদের মজা করার জন্য এটি তৈরি করেছিলেন।
তবুও যে এটি ফেইক তা বোঝার কোন ব্যবস্থা ছিল না। প্রোফাইল পিকচার ছিল ৮-৯টা। এগুলো তার এক বন্ধুর কাজিনের। সাদমান ভাই তখন কলেজে পড়তেন। বন্ধুর কাছ থেকে শুনেছিলেন ঐ আপু ভার্সিটিতে ২য় বর্ষে পড়তেন।
যাহোক সাদমান ভাই বহু কষ্টে পাসওয়ার্ড বের করে আইডিতে ঢুকলেন। আইডিটা বেশ কিছুদিন ধরে ব্যবহার হচ্ছে। এটার হ্যাকার পাসওয়ার্ড বদলায়নি সেটা এক বিরাট রহস্য। তিনি নিজেও বদলালেন না। চোর ধরার মধ্যে মজা আছে।
বেশ কিছুদিন পরের কথা। সেজুতি রহমানের (ফেইক আইডি) কথা তার মাথায় নেই। তাছাড়া অন্য এক ক্যচালেও আছেন। ব্লগার মহাপুরুষ অয়ন ওরফে পাগলা অয়ন নাকি এক অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা না কি বাল-ছাল বানাবে তাই নিয়ে প্রতিদিন জ্বালায়ে মারছে। ঘণ্টায়-ঘণ্টায় ফোন করে জ্বালাতন।
কিছু বলতেও পারেন না পোলাপাইন বলে। এমন একদিন হঠাৎ তিনি দেখেন যে সেজুতি রহমান অনলাইন। নক করলেন সাদমান ভাই। টুকটাক কথা হল। ব্যাফুক চাল্লু মাল।
ফেইক আইডি চালাতে ওস্তাদ মনে হল।
এভাবে প্রায়ই চ্যাট করতেন ঐ আইডিটার সাথে। এ যেন এক মজার খেলা। একদিন ঝোকের বসে ফোন নাম্বার চেয়ে বসলেন সাদমান ভাই। আশ্চর্য ব্যপার হল সে দিয়েও দিল।
ফোনও করলেন সাদমান ভাই। কন্ঠ পিউর মেয়েদের। তবুও শিউর হকেন না তিনি। আজকাল চাইনা মোবাইলে ভয়েজ চেঞ্জ বা হাতের খেল। একদিন দেখা করতে বললেন সেজুতিকে।
ভেবেছিলেন এইবার ধরা খাইয়া যাবে বাছাধন। আশ্চর্য এ তাতেও রাজি!!
সাদমান ভাই সন্ধ্যা বেলা টিএসসি তে চায়ের দোকানে অবস্থান করছেন। নিজের উপর রাগ হচ্ছে। এভাবে আসা উচিৎ হয়নি তার। যতই গোপনীয় ফেইক আইডি হোক এমনও তো হতে পারে তার বন্ধুদের কেউ জেনে ফেলেছিল।
আজ তাকে আবুল বানানোর জন্যই ডেকেছে। হারায়ে যাবেন কিনা ভাবছেন।
হঠাৎ চায়ের দোকানের অদুরে গাছের তলায় একটা মেয়েকে দেখতে পেলেন। নীল জামা পরা। চিনতে পারলেন এবং টাস্কি খেলেন।
সেইম জামা পরা ঐ গাছের নিচে দাড়ানো অবস্থায় অবিকল এই ছবিটাই ফেইস বুকে সেজুতির একাউন্টে দেয়া। মেয়েটি কাউকে খুজছে। নিশ্চই তাকে।
সামনে গিয়ে দাড়ালেন সাদমান ভাই।
কেমন আছ?
এই তো।
আপনি হ্যা ভালই। তবে......
প্রচন্ড আওয়াজ হল খুব কাছেই কোথাউ। রাজনৈতিক দুই গ্রুপের মধ্যে মারপিট লেগে গেছে। সবাই যে যার মত ছুটতে লাগলো। সাদমান ভাই কোনরকমে একটা সিএনজি পেলেন।
তারপর সোজা বাসায়। কাউকে কিছু না বলে ঘুম দিলেন।
ঘুম ভাংলো ২ ঘন্টা পর। সেজুতিকে ফোন দিলেন। ফোন বন্ধ।
ভাব্লেন ফেইসবুকে সরি লিখে একটা মেসেজ দিবেন। আশ্চর্য তার ফ্রেন্ড লিস্টে নাই!!! সার্চ করেও পেলেন না।
সেজুতির আইডিতে লগইন করতে গিয়েও পারলেন না। এমন কি মেইলেও না।
সাদমান ভাই বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারলেন তার কাজিন দেড় বছর ধরে স্বামী বাচ্চা সহ ফিনল্যান্ডে আছে।
**সকল ঘটনা কাল্পনিক। সাদমান ভাই প্রেমিকার কাছে ব্যান খাইলে লেখক দায়ী নয়। **
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।