আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের সমালোচনার ভাষা - আমাদের রুচিবোধ

সবাই ভালো থাকবেন

আজকের প্রথম আলোতে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের একটি লেখা ছাপা হয়েছে। লেখার বিষয়বস্তু হল প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস কে নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী। খুব সঙ্গত কারনে লেখক খুব মার্জিত ভাষায় সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন। আমাদের দেশের একমাত্র নোবেল পুরস্কার বিজয়ীকে নিয়ে সরকার যা শুরু করেছে তা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সেইদিন প্রফেসর ইউনূস সাহেব কে নিয়ে বলার সময় ভাষার ব্যবহার দেখেই বোঝা গেছে, শেখ হাসিনার সামান্যতম সৌজন্যবোধও নেই।

দেশের প্রধানমন্ত্রী এতটা সম্মানিত একজনকে নিয়ে এই ধরনের কথা কিভাবে বলতে পারলেন- এটা সত্যিই আমার মাথায় ঢোকেনি। কথা হল, আমরা নিজেরা কি কোনোদিক থেকে কম? জাফর ইকবাল স্যারের কলাম নিয়ে সামুতে নিশিবাস একটি পোস্ট দিয়েছেন পোস্টে কয়েকজনের কমেন্ট পড়ে আমি ভাষা হারিয়ে ফেললাম। sushtho chinta তার কমেন্টে জাফর ইকবাল কে লিখেছেন "মীরজাফরইকবাল" । উনি বলেছেন যে স্যার নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বেচে খান। উনার কাছে আমার প্রশ্ন - কি কারনে তিনি এইধরনের কথা বললেন? স্যার তার বইয়ের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধকে সবসময় তুলে ধরার চেষ্টা করেন, এটাই কি তার কারন? আরেকজন বিশিষ্ট ভদ্রলোক মাধুকরী লিখেছেন জাফর ইকবাল সুবিধাবাদী।

কি সুবিধা উনি নিয়ে থাকেন তা বুঝলাম না। আমাদের দেশে এখন একটা উৎসব হয় - গণিত উৎসব। যারা এখানে কখনো যাননি, তারা আসলে বুঝবেন না এর ব্যাপকতা কতখানি। হাজার হাজার ছেলেমেয়ে এখানে অংশ নেয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ মেধাবী ছাত্র এর পিছনে স্বেচ্ছাশ্রম দেয়। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা অংক করে, অঙ্ক শেখে, গান গায়, কবিতা পড়ে - দেশকে ভালবাসতে শেখে।

আমাদের সৌভাগ্য যে এই অভাগা দেশে এরকম অসাধারণ একটা উৎসব হয় যেটা পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবেনা। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে সেরা ৫ জনের দল যায় আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে। বিশ্বের সেরা বিশবিদ্যালয়গুলো তাকিয়ে থাকে এই প্রতিযোগীতার দিকে। এম আই টি, ক্যালটেক, ক্যাম্ব্রিজ - প্রতিবছর এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহনকারীদের বৃত্তি দিয়ে পড়ার সুযোগ করে দেয়। অত্যন্ত আনন্দের খবর হলো বাংলাদেশের প্রতিযোগীরাও এই সুযোগ পাচ্ছে।

গণিত অলিম্পিয়াড দলের বেশ কয়েকজন সদস্য এরই মধ্যে পেয়েছেন এই সুযোগ। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের ছাত্রদের পড়ার সুযোগ হচ্ছে গণিত উৎসবের মাধ্যমে। সারা বিশ্ব জানতে পারছে - আমরাও পারি, আমাদেরও মেধা আছে। এই গণিত উৎসবের পথিকৃত মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার ও কায়কোবাদ স্যার। তাদের চেষ্টায় আর প্রথম আলো ও ডাচ বাংলা ব্যাঙ্কের সহযোগীতায় বাংলাদেশে একটা নীরব বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে।

আমাদের দেশের ছেলে মেয়েদের মুখস্থ করার অভ্যাস একটু একটু করে দূর হচ্ছে, দূর হচ্ছের গণিত ভীতি। অত্যন্ত মেধাবী একটা প্রজন্ম তৈরী হচ্ছে যারা হয়ত একদিন বদলে দেবে এই বাংলাদেশ। গণিত উৎসব সহ যেকোন ভালো কাজে দেশের শিক্ষার্থীদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাফর স্যার। বেল রিসার্স ল্যাবের মোটা বেতনের চাকরি ছেড়ে তিনি চলে এসেছেন দেশে। আর আমাদের মধ্যে অনেকেই তাকে বলছি মীর জাফার, সুবিধাবাদী।

তার মত এত বড় মাপের একজন মানুষের সমালোচনা করার কি যোগ্যতা আছে জনাব sustho chinta বা মাধুকরী সাহেবের? এই ধরনের কথা বলতে আমাদের রুচিতে কি একটুও বাধেনা? একবারও কি ভেবে দেখি, আমি নিজে কি করছি দেশের জন্যে? ব্লগে বড়বড় কথা বললেই কি দেশপ্রেমিক হওয়া যায়? বিজয় দিবসে ফেসবুক প্রফাইলের ছবিতে স্মৃতিসৌধের ছবি লাগিয়েই হয়ে যাচ্ছি দেশপ্রেমিক নাগরিক, আর যেসকল নিস্বার্থ মহান মানুষগুলো প্রতিনিয়ত আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাদেরকে দিচ্ছি অশ্রাব্য সব গালি। একবার ভাবুনতো মীর জাফর আসলে কারা?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.