ওয়েষ্ট ইন্ডিজের সাথে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের একদিনের আন্তর্জাতিক খেলা হয়েছে ১৬ বার। এর মধ্যে ১১ বার জয়লাভ করেছে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র ৩বার। আর বিশ্বকাপে এই দুই দলের দেখা হয়েছে ৩ বার। ওয়েষ্ট ইন্ডিজ জিতেছে ২ বার।
বাংলাদেশ একটি ম্যাচও জিততে পারেনি। গত বিশ্বকাপে (২০০৭ সালে) ওয়েষ্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ৯৯ রানে পরাজিত হয় বাংলাদেশ। এই পরিসংখ্যান বলে দেয় দু’টি দলের সামর্থের পার্থক্য। এক সময়ের শক্তিধর ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম দু’টি (১৯৭৫ ও ১৯৭৯) বিশ্বকাপেই জয়লাভ করে। তৃতীয়টিতেও (১৯৮৩ সালে) ফাইনাল খেলে।
সেখানে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে সুযোগই পেয়েছে ১৯৯৯ সালে। সেই হিসেবে বাংলাদেশকে কোনভাবেই তাদের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। কিন্তু এর মধ্যে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা। দিনে দিনে দুর্বলতর হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। দলীয় কোন্দল ও সুযোগ সুবিধা না পেয়ে তারকা খেলোয়ারদের দলত্যাগে গত তিন বছর একটি শক্তিহীন দলে পরিণত হয়েছে তারা।
অন্যদিকে বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেক। অর্জন করেছে যে কোন দলের সাথে জয়লাভের সামর্থ। এই দুই দলের সর্বশেষ মোকাবেলা হয়েছে ২০০৯ সালের জুলাই-এ ওয়েষ্ট ইন্ডিজে। ওই সিরিজের তিনটি খেলাতেই বাংলাদেশ জয়লাভ করে। স্বপ্নের সেই সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট সিরিজেও পরাজিত করে বাংলাদেশ।
আইসিসি ঘোষিত সর্বশেষ র্যাংকিং-এ ওয়েষ্ট ইন্ডিজকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অবস্থান ৮ নাম্বারে। ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ৯। র্যাংকিং-এ এরপরের দলগুলো হলো আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, নেদারল্যান্ড ও কেনিয়া। র্যাংকিং নির্ধারিত হয় সর্বশেষ পারফরম্যান্স বিবেচনা করেই।
সেই হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেক। কিন্তু বিশ্বকাপ উপলক্ষে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ দলও নতুন করে সাজিয়ে শক্তিশালী করা হয়েছে। রামনরেশ সারওয়ান, শিবনারায়ণ চন্দরপল, সুলেমান বেনদের সঙ্গে দলে ফিরেছেন ক্রিস গেইলও। ২০০৯ সালে পল রেইফারের দলের চেয়ে ড্যারেন স্যামির এ দলটির শক্তি অনেক বেশি। তার উপর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হ্যাট-ট্রিকসহ ৬ উইকেট নেওয়া ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বোলার কেমার রোচ হুঙ্কার দিয়েছেন বাংলাদেশকে হারানোর।
বলেছেন, 'আমরা (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) বাংলাদেশের চেয়ে ভালো দল। ' এসব হিসেব নিকেশ পেছনে ফেলে দ্বিতীয় রাউন্ড যাত্রা সহজ করতে হলে আমাদের জিততে হবে।
হ্যাট-ট্রিকের পর থেকে কেমার রোচ ভীষণভাবে আলোচনায়। সমর্থকদের কেউ কেউ ভয় পাচ্ছেন। ভাবছেন, সে-ই বোধ হয় শেষ করে দেবে।
এক্ষেত্রে বলবো হ্যাট-ট্রিকতো প্রতিদিন হয়না। তাছাড়া আয়ারল্যান্ডের চেয়ে ব্যাটিং শক্তিতে আমরা এগিয়ে। তামিমদের অভিজ্ঞতা আছে বিশ্বের প্রায় সব বোলারকে মোকাবেলা করার। রোচকে না হয় বাদ দিলাম, জ্বলে উঠতে পারে ক্রিস গেইল। ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংয়ে আরো ভয়ের নাম ড্যারেন ব্রাভো ও কিয়েরন পোলার্ড।
দুজনই এমন ব্যাটসম্যান, ক্রিজে ঠিকমতো সেট হলে যে কোনো বোলিং তুলোধুনা করতে পারেন। তবে এতো হতাশ হবার কিছু নেই। বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানও শুন্য রানে আউট হয়, সেরা বোলারও তুলোধুনা খায়। কার শক্তি বেশি আর কার কম তা প্রমান হয় মাঠে। ভালো খেললে বাংলাদেশ দলেও জ্বলে ওঠার মতো অনেকেই আছেন।
তামিম বা ইমরুল ক্রিজে দাড়িয়ে গেলে রানের চাকা বিদ্যুৎ গতি পায়। বিশ্বকাপে আগের দুই ম্যাচে পঞ্চাশের বেশি রানের ওপেনিং পার্টনারশীপ দিয়ে শুভ সূচনা করেছেন এরা। যে কোন দিন জ্বলে উঠতে পারেন বিশ্বমানের স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক। আর সর্বোপরি আছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার আমাদের সেনাপতি সাকিব আল হাসান। এক সাকিব জ্বলে উঠলেই আমাদের এনে দিতে পারেন জয়।
সে ক্ষমতা তার আছে। শেষ কথা মাঠে আমাদের সেরাটা খেলতে পারলে জয় আমাদেরই।
এই জয় পাওয়া আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। বিশ্বকাপ ফিক্সচার হবার পর থেকেই আমরা আয়ারল্যান্ড নেদারল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টার্গেট করে রেখেছি। মিরপুরের যে উইকেটটাতে আজ দুপুরে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলা হবে, এটাতে বল ঘুরবে-এমনটি জানিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক।
যদি তাই হয় তাহলে আমাদের ঘুর্ণি যাদুতে আটকে ফেলা সহজ হবে ক্যারিবিয়ানদের। মনে রাখতে হবে আমাদের চেয়ে তাদের প্রত্যাশাও অনেক, চাপও অনেক। সেই ১৯৭৯ এর পর আর বিশ্বকাপ ছুয়ে দেখা হয়নি ক্যারিবিয়ানদের। ৩২ বছর পর তারা এবার কাপ জিততে চান বলে ঘোষনা দিয়েছেন দলের ম্যানেজার রিচার্ডসন। অথচ বাংলাদেশের বিপক্ষে জিততে না পারলে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলাই অনেক কঠিন হয়ে যাবে।
এই চাপের সঙ্গে বাড়তি যোগ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার মাঠে দীর্ঘদিন না খেলার অনভিজ্ঞতা। কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে নিশ্চয় অসুবিধা হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। আর মিরপুর স্টেডিয়ামের গ্যালারিভর্তি দর্শক। এই সমর্থনই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বলে দলপতি সাকিব ঘোষনা করেছিলেন। পাশাপাশি আছে সারাদেশে ১০ কোটি ক্রিকেট ভক্তের ভালবাসা ও শুভকামনা।
jahiduzzaman
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।