আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোবর কার মাথায়, আমাদের নাকি সংবিধান প্রণেতাদের ?

ভালো আছি

জাতির জনক কে- ইবরাহীম আ. নাকি শেখ মুজিব- এ নিয়ে ব্যাপক তর্ক গেছে । একদল এখনো গোঁ ধরে আছেন যে, শেখ মুজিবকে জাতির জনক বললে মহাভারত তো অশুদ্ধ হবেই হবে, সঙ্গে মহাপাপও হবে । শেখ মুজিব সময়ের পিতা নাকি সময়ের সন্তান- এ নিয়ে আহমদ ছফা যথেষ্ট আলোচনা করেছেন, যুক্তিসঙ্গত ও ইতিহাস আশ্রিত ভাষায়...তাছাড়া শেখ মুজিব জাতির জনক হবার যোগ্যতা রাখেন কি না, কিংবা তাকে বাংলাদেশের সর্বশ্রেণীর মানুষ ‘বন্ধু’ ভাবতে ভালোবাসে, নাকি ‘জনক’ বলতে- এসব বুদ্ধিজীবী ও সার্ভেয়ারদের বিষয়-আশয় । তবে আমার মতে ‘জাতির জনক’ শেখ মুজিবকে বলা আর ইবরাহীম আ.কে বলার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই । দুইজন সম্পূর্ণ দুই প্রেক্ষিতের মানুষ ।

সুতরাং কোনো পাপ ছাড়াই বলা যায় । মুসলিম জাতীয়তাবাদকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ তো কোনোক্রমেই অস্বীকার করে না । সুতরাং একজন তো মুসলিম জাতি হিসেবে ‘আবীকুম ইবরাহীম’ বলে স্বীকৃত আছেনই । দৈশিক জাতীয়তাবাদের ক্ষেত্রে অন্যজনকে বলাতে মুমসলিমদের কিংবা ইবরাহীম আ. এর অবমাননা হওয়ার ক্ষেত্রটা কোথায়- সেটা এখনও আমার বুঝে আসে না । এছাড়াও তুরস্কের কামাল আতাতুর্কের মতো পৃথিবীর বহুদেশে এভাবে স্বজাতির জনক গ্রহণের নজির আছে ।

আমদের ভেতরও বহুক্ষেত্রে একেক উদ্দেশ্যে একেকজনকে পিতা স্বীকৃতি দেবার প্রবণতা দেখা যায় । এভাবে কেউ হন ‘রুহানী পিতা’, কেউ শিক্ষাদানের গুণে ‘পিতা’র মর্যাদা পান । কোনো কোনো অঞ্চলে তো কেবল বাবার ভাই হওয়ার বদৌলতেই চাচাদের ‘বাবা’ বলে ডাকা হয় । হাদীসেও এমন বর্ণনা আছে । এবং এটা শরীয়ত পরীপন্থী নয় ।

উপর্যুক্ত আলোচনার অবতারণা ঘটানোর অন্য একটা কারণ আছে । বিষয় হলো, ‘গড পাওয়ার’ আর ‘ম্যান পাওয়ার’ সাংঘর্ষিক হতে পারে কি না । ইবরাহীম আ.কে আগুন কেন পুড়লো না সেটা সাবই জানেন- আল্লাহ তায়ালার আদেশের ফলেই । কিন্তু আগুনের আসলে কোনো ক্ষমতা আছে কিনা- এ নিয়ে ওলামায়ে কেরামের এক দলের মত হলো, আসলে আগুনের কোনো ক্ষমতাই নেই, আল্লাহ যখন চান, তখন তাকে পোড়ানের ক্ষমতা দান করেন । অন্যদলের অভিমত, আগুনকে আল্লাহ সৃষ্টিলগ্ন থেকেই পোড়ানোর ক্ষমতা দিয়েছেন ।

কারণ তাকে এ উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে । তবে আল্লাহ তায়ালা চাইলে তার এ ক্ষমতা খুশিমতো রহিত করতে পারেন । আর এটাই ‘কুলনা ইয়া নারু....’ আয়াতের তাফসীরের জন্য উপযুক্ত অভিমত । এখন প্রশ্ন হলো আমরা যে রাজনৈতিক ভাবে ভোটের মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় দেশের প্রধানমন্ত্রী কিংবা জনপ্রতিনিধিদেরকে নির্বাচিত করি, এটা কি আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতার প্রতি কোনো চ্যালেঞ্জ ? ‘জনগণ এই প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার উৎস’ সংবিধানের লিখিত এই বাক্যটির অর্থ কি এমন যে, এই প্রজাতন্ত্রের সকল মানুষ আল্লাহ তায়ালার সর্বময় ক্ষমতাকে অস্বীকার করে ? নাকি কেবল এতুটুক যে, দেশের আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক যাবতীয় সেবামূলক কার্যক্রম চালানোর বিশেষ পাওয়ার কাউকে বা কোনো দলকে দেয়ার সম্পূর্ণ অধিকার কেবল এ দেশের জনগণের আছে । তারা যাকে চাইবে পছন্দমতো নির্বাচিত করবে ।

যখন চাইবে না, তখন তাকে সরে যেতে হবে, কোনটা ? আমার তো মনে হয়, শেষোক্ত অর্থটাই এখানে উদ্দেশ্য । নইলে তো দেশের জনগণ হিসেবে আমরা সবাই পাপের ভাগীদার হয়ে যাবো । তাহলে, যদি কোনো বিশেষ দল ( তারা অন্য যে কোনো ক্ষেত্রে বিতর্কিত হতে পারে, সেটা আলাদা বিষয়) তাদের গঠনতন্ত্রে ‘সর্বময় ক্ষমতা আল্লাহর’ লিখে থাকে, সেটা সংবিধান পরীপন্থী হয় কী করে ? আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতা বলে তো কেউ ম্যানপাওয়ারকে অস্বীকার করে না । বরং মানুষকে তার নিত্যদিনের প্রয়োজন মাফিক শক্তি পরিচালনার ক্ষমতা তো আল্লাহ তায়ালাই দিয়েছেন । বুঝলাম না, সমস্যাটা আসলে কোথায় ? আমাদের মগজে নাকি সংবিধানে ? গোবর কার মাথায়, আমাদের নাকি আইন প্রণেতাদের ? এই বিষয়গুলো ক্লিয়ার না হলে কিন্তু এই ‘আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী’ বাক্যটিই তুলকালাম বাঁধিয়ে দিতে পারে ।

তাতে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ আবারও এ দলের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে পড়বে । তখন বুমেরাং হবে সব, পাল্টে যাবে আগের হিসাব । কারণ জনগণ এ প্রজাতন্ত্রের বিশাল ক্ষমতাধর.......

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.