যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।
কিছুদিন আগে বিভিন্ন জায়গা থেকে তত্ত্ব নিয়া তার সম্পর্কে লেখছিলাম। লেখা বিশেষ কিছু না। একটু বর্ননা।
বলা যায় বিস্তৃত কিছুর সামান্য বর্ননা। বিষয়টা এইরকম। আইজ কি একটা কারণে তারে নিয়া লেখতে ইচ্ছা হইল। হইতে পারে আমার নিজের মনরে তার সম্পর্কে স্মরণ করাই দেয়া অথবা অন্য কিছু। কি সেইট্যা জানি না।
ডোন্ট নো।
তিনি আহমদ ছফা (৩০ জুন ১৯৪৩-২৮ জুলাই ২০০১)। আমাদের দেশের এক নক্ষত্র। তার চিন্তার বিশালতা এবং গভীরতা ব্যাপক। তিনি নতুন ভাবে চিন্তা করতে শিখাইছেন আমাদের।
ছফার বলা একটা কথা হইতেছে যেইটা আমার খুব পছন্দ।
]“আমার কাছে ঈশ্বর-চিন্তা আর মানুষের অমরতার চিন্তা সমার্থক। কেউ যদি আমাকে আস্তিক বলেন বিনা বাক্যে মেনে নেব। আমি আস্তিক। যদি কেউ বলেন নাস্তিক আপত্তি করব না।
আস্তিক হোন, নাস্তিক হোন, ধর্মে বিশ্বাস করুন আর নাই করুন,আমি কোন বিবাদের হেতু দেখতে পাইনে। আমার অভীষ্ট বিষয় মানুষ,শুধু মানুষ। মানুষই সমস্ত বিশ্বাস, সমস্ত মূল্যচিন্তা, সমস্ত বিজ্ঞানবুদ্ধির উৎস“-আহমদ ছফা(নির্বাচিত প্রবন্ধ)। [/sb
আহমদ ছফার যেই জিনিসটা এখন বেশী নাড়া দিতেছে সেইট্যা হচ্ছে নিম্নলিখিত ঘটনা “একবার দুই মেরুর দুই ‘জাতি’কে অর্থাৎ বুদ্ধিজীবী ও আলেমসমাজকে একটি প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করাবার উদ্দেশ্যে ইনসানিয়াত সেন্টার বাংলাদেশে’র ব্যানারে তাঁর উদ্যোগে শিশু একাডেমিতে দুই বিপরীত সত্তার ব্যক্তিবর্গকে আলোচক হিসেবে উপস্থিত রেখে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন হাফেজ্জী হুজুর।
‘সাম্রাজ্যবাদ ও মুসলিম বিশ্ব’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন লিবিয়ান রাষ্ট্রদূত জনাব হাসান আল আইব, বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি জনাব কে. এম. সা’দউদ্দীন, প্রফেসর এমাজউদ্দীন ও ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা কমিউনিস্ট লীগের আবদুল মতিন সাহেব। কমিউনিস্ট আবদুল মতিন সাহেবকে কেন দাওয়াত করা হবে এ বিষয় নিয়ে লিবিয়ান রাষ্ট্রদূত আপত্তি করলে পর ছফা ভাই ভীষণ খেপে যান এবং বলেন, আমাদের সমাজ বিপ্লব কাকে নিয়ে কীভাবে করতে হবে তা আমরাই ভাল জানি, আপনি নন। আমাদের কাছে পয়সা নেই বলে আপনাদের মুসলমান ভাইদের পয়সা দিয়ে কাজগুলো করতে চাই। তাই বলে এ ব্যাপারে পলিসি আপনাদের হবে না, হবে আমাদের।
রাষ্ট্রদূত ক্ষমা চেয়ে তখন থেমে যান। ” (ছফা, স্মা., পৃ. ১৯০ ইসহাক ওবায়দী)
আহমদ ছফা একটা জিনিস ঠিকই বুঝেছিলেন। এই দেশে যে হারে মাদ্রাসা হইতেছে,যে হারে ছাত্র বার হইতেছে এবং যে হারে তাদের সাথে বুদ্ধিজীবি তথা প্রগতিশীলদের দূরত্ব সৃষ্টি হইতেছে তাতে একটা সমস্যার সৃষ্টি হইব পরে। সমস্যা সৃষ্টি হইছে। সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিমদের দেশে মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধ করা যাইব না।
অতএব তাদের লগে প্রগতিশীলদের দূরত্ব সৃষ্টি হইলে তারা বিপথে যাইব। ইসলামে জিহাদ নামে একটা জিনিস আছে। সেইটারে ভীন্ন ব্যাখ্যা দিয়া মাদ্রাসা ছাত্রগনরে উশকাইয়া যেকোন গর্হিত কাজ লাইক বোমা বাজি করানো অসম্বভ কিছু না। যেইটার প্রমাণ আমরা পাইছি।
একটা বৃহৎ জনগোষ্টির লগে দুরত্ব রাইখ্যা প্রগতিশীলরা কিছুই করতে পারব না।
উল্টা দেশে মৌলবাদের বিকাশ হইব। উগ্র সাম্প্রদায়িকতা বিকাশ হইব। মৌলবাদের বিকাশপথ রুদ্ধ করবার জন্য প্রথমেই যেইট্যা দরকার সেইট্যা হইতেছে প্রগতিশীল বুদ্ধিজিবী এবং মাদ্রাসা বুদ্ধিজিবীগনের একই প্ল্যাটফর্মে আইস্যা পরস্পরের সহমতের এবং সহনশীলতার ভিত্তিতে সহযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি করা।
মাদ্রাসা ছাত্র স্কুল ছাত্র আলাদা দৃষ্টিতে দেখা থেইক্যা ই মৌলবাদের বীজ রোপিত হইয়া যায়। তারপরে আসতেছে কওমী মাদ্রাসার কথা।
ওরা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার কিছু মানে না। কি পড়ায় না পড়ায় তারাই জানে। বাংলাদেশে কোন চাকরি ও পায় না এই কওমী মাদ্রাসা গুলায় পড়া ছাত্ররা। এখন আমার প্রশ্ন হইল এই হাজার হাজার ছাত্ররা কি করব? তাবিজ কব ঝাড়ফোকঁ দিয়া জীবিকা নির্বাহ করব? মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে আধুনিক হইয়া গেলে তো এইসব তাবিজ কবজ ও বন্ধ হইয়া যাইব। তখন কি করব এরা? এরা যদি বিদ্রোহী হইয়া যায়? আন্দোলন শুরু করে চরম্পন্থা অবলম্বন কইরা?
তখন কিছুই করার থাকব না।
এখন ই এদের শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন করা দরকার যাতে তারা পইড়্যা কোন চাকরি পাইতে পারে। এখন কথা উঠতে পারে তারা কি এই পরিবর্তন মানব?
আপনি যদি তাদের মানে কওমী সংখ্যাগরিষ্ট বুদ্ধিজিবীদের নিয়া এই পরিবর্তন টা আলাপ আলোচনা ভিত্তিতে করতে পারেন তাইলেই তারা মানব। জোর কইরা কিছু চাপাইয়া দিলে মানব না। এইট্যা সরকারের দায়িত্ব। যদি না করা হয় তাইলে ভবিষ্যতে ব্যাপক ক্ষতি হইব এই দেশের।
একটা জিনিস আহমদ ছফার মত আমার করতে ইচ্ছা করতেছে। তিনি বস্তির গরীব ছেলেমেয়েদের জন্য একটা স্কুল বানাইছিলেন। আমি ও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি এইরকম একটা স্কুলের। জানিনা পারব কি না। তবে ভেতর থেকে উৎসাহ পাইতেছি।
দেখা যাক কি হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।