আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্যান গগ এবং বৌদ্ধধর্ম

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
কেবল ওস্তাদ আঁকিয়েই নন, মানুষ হিসেবেও অতি উত্তম ছিলেন ভিনসেন্ট ভ্যান গগ। যিনি বলেছিলেন:An artist needn't be a clergyman or a churchwarden, but he certainly must have a warm heart for his fellow men. একনিষ্ট খ্রিস্টান হলেও জীবনের এক পর্যায়ে জাপানি সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে বৌদ্ধ দর্শনের সংস্পর্শে এসেছিলেন এই বিশাল হৃদয়ের মানুষটি, এমন কী একটি ছবিতে নিজেকে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হিসেবে কল্পনা করেছেন এই ওস্তাদ আঁকিয়ে ... ১৮৭০ এর দশকে ফ্রান্সে হঠাৎ করেই জাপানি সংস্কৃতি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে । ফ্রান্সে জাপানি সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ প্রবল হয়ে ওঠে, যাকে Japonisme বলা হয়।

জাপানি শিল্পের নান্দনিক শৈলী পশ্চিমা শিল্পের চেয়ে আলাদা হলেও জাপানি সূক্ষ্ম সৌন্দর্যবোধ ফ্রান্সে আলোচিত হতে থাকে। কাঠের ব্লকে ছাপচিত্র থেকে শুরু করে (যাকে বলা হয় ukiyo-e) ‘কিমোনো’ অবধি ফ্রান্সে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে শান্তিবাদী বুদ্ধের দর্শনও আলোচিত হতে থাকে। ‘জগতের সকল প্রাণি সুখি হোক’-বুদ্ধের এই অপার মানবিক বাণী শিল্পপ্রেমিক ফরাসি জনগনকে স্পর্শ করেছিল। ukiyo-e বা জাপানি কাঠের ব্লকে ছাপচিত্র।

ukiyo-e শব্দটির অর্থ ‘ভাসমান বিশ্ব’। বৌদ্ধদর্শন অনুযায়ী: দুঃখময় জগতে মানুষ ভেসে ভেসে নির্বানের পথে যাত্রা করে ...জাপানি কাঠের ব্লকে ছাপচিত্রেও বৌদ্ধ দর্শনের ছাপ স্পস্ট। Portrait of Pere Tanguy (1887-1888) জাপানি সংস্কৃতির প্রভাব ভ্যান গগ এর ছবিতে পড়েছিল। এই ছবিটিই বলে দেয় ভ্যান গগ কত গভীর ভাবে জাপানি সংস্কৃতিকে উপলব্দি করেছিলেন। জগৎ দুঃখময়, দুঃখের কারণ আছে, দুঃখকে অতিক্রম করা যায় এবং সে পথও আছে-বুদ্ধের এই শিক্ষা একনিষ্ট খ্রিস্টান হয়েও ভ্যাগ গগ আন্দোলিত হয়েছিলেন।

নির্বানে র পথ আসলে ধ্যানের পথ। কাজেই বিশেষ এক উদ্দেশ্য নিয়ে ১৮৮৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভ্যান গগ ফ্রান্স ত্যাগ করে আরলেস যান। আজন্ম অস্থির ছিলেন ভ্যান গগ। এবার যদি বদ্ধনির্দেশিত পথে ধ্যান করে স্থির হওয়া যায়। রক্তের অর্ন্তগত পাগলামী নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ...বুদ্ধও গৃহত্যাগ করেছিলেন অসীম নির্জনতায় নিজেকে ধ্যানমগ্ন রেখে হৃদয়ে সত্যের অনুভূতির সন্ধ্যানে ।

আরলেস। মানচিত্র। উনিশ শতকী নির্জন শহর আরলেস। অবস্থান দক্ষিণ ফ্রান্সে। অনেকের মতে ভ্যান গগ-এর জীবনে আরলেস অধ্যায় সবচে সৃজনশীল।

এই মফস্বল শহরেই অনেক বিখ্যাত ছবি এঁকেছেন ডাচ ওস্তাদ। Avenue of Plane Trees near Arles Station এই ছবিটি আরলেস পর্যায়ে আঁকা । বাস্তবতার নিখুঁত বর্ননা কমই দিয়েছেন ভ্যান গগ। একটি দৃশ্য দেখে মনে যে ভাব সৃষ্টি হল সেই ভাব ফুটিয়ে তুলেছেন বলেই ভ্যান গগ কে চিত্রকলায় Expressionism -এর পথিকৃৎ বলা হয়। বাস্তবতা বিষয়ে বৌদ্ধদর্শনের একটি ধারণা হল বাস্তবতা- বিভ্রান্তিকর।

তবে তার মানে এই নয় যে বাস্তবতা অসত্য বা উদ্ভট কল্পনা। কিন্তু আমাদের ধারণা ও প্রত্যয় এই ধারণা দেয় যে- আমরা যে উপাদান দ্বারা গঠিত সেই উপাদান থেকে আমারা পৃথক। মোট কথা, বৌদ্ধদর্শনে বাস্তবতা হল কর্মের প্রকাশ ( মেনিফেস্টশান অভ কার্মা। ) An Old Woman of Arles, এই ছবিটিও আরলেস পর্যায়ে আঁকা । নির্জনতার সন্ধানে আরলেস গেলেও মানুষকে এড়িয়ে যাননি ওই উত্তম মানুষটি।

বোঝাই যায় অতি যত্নে এই নারীর ছবি এঁকেছিলেন। যে ভ্যান গগ একবার বলেছিলেন, I feel that there is nothing more truly artistic than to love people....বুদ্ধের শেষ জীবনের একটি মানবিক ঘটনা স্মরণ করি। একজন চন্ডাল বুদ্ধকে নিমন্ত্রণ করেছিল। বুদ্ধের শিষ্যেরা সে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে নিষেধ করেছিল এই ভেবে যে এরা ‘অখাদ্য’ খায়। বুদ্ধ সংকীর্ণমনাদের বারণ শোনেননি।

তিনি সেই অচ্ছুতের বাড়ি নিমন্ত্রণ খেতে গেলেন। লোকটা বুদ্ধকে ‘শূকরমদ্দপ’ খেতে দিল। সেটি খেয়ে সেই যে বুদ্ধ অসুস্থ বোধ করলেন-আর সুস্থ হননি ... মহামতি বুদ্ধের পরনে ছিল সন্ন্যাসীর পোশাক । যাকে চীবর বলা হয়। ভ্যান গগও নিজেকে কল্পনায় চীবরে আবৃত করেছিলেন ... VanGogh-self-portrait-dedicated to gaugin ... আরলেস পর্যায়ের এই ছবিটি নিয়ে শিল্পবোদ্ধাদের মাঝে আগ্রহের শেষ নেই আজও।

তার কারণ আছে। এই আত্মপ্রকৃতিতে নিজেকে বৌদ্ধ সাধু কল্পনা করেছেন ভ্যান গগ। ছবিটি সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেছেন, ... ব্রোঞ্জের উপাসনারত শাশ্বত বুদ্ধ। যার চোখ, জাপানি কায়দায় তির্যক। মহাত্মা ভ্যান গগ একবার বলেছিলেন ... Conscience is a man's compass. এই ভেবে বিস্মিত হই ভ্যান গগ উনিশ শতকে বুদ্ধের বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন- যে বুদ্ধ একবার উচ্চারণ করেছিলেন- ‘জলের ফোঁটাটির প্রতিও আমার দয়া হইত।

’ উৎসর্গ: অমিত চক্রবর্তী এবং নষ্ট কবি। তথ্যসূত্র http://blogs.princeton.edu/wri152-3/f05/dtso/ Click This Link
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।