ঘুম থেকে জেগে দেখি মৃত্যু শিয়রে গুনছে প্রহর......
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বলা হয়েছিল সকাল ৭ টার মধ্যে কমিটিতে রিপোর্ট করতে হবে। কিন্তু সবাই এতো ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল যে ম্যানেজমেন্টের লোকজনই সকাল ৮ টায় ঘুম থেকে উঠল।
ঘুম ভেংগে জেগে দেখি বৃষ্টি হচ্ছে। ঝুম বৃষ্টি। বেশ শীত শীত একটা ভাব।
বৃষ্টির মধ্যেই আমাদের সবগুলো টিমকে পাশের মাঠে নিয়ে যাওয়া হল।
[বৃষ্টি মাথায় মাঠে আমরা সবগুলো টিম]
ওখানে টিমের সবাইকে ১ ফুট মতো লম্বালম্বি ভাবে কাটা একটি করে পাইপ আর একটি মার্বেল হাতে ধরিয়ে দিল। সবাই মিলে পাইপগুলোর সাহায্যে মার্বেলটিকে গড়িয়ে গড়িয়ে কিছু দুরের একটি নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। নিয়ম হলো পাইপ থেকে মার্বেলটি পড়ে গেলে আবার প্রথম জায়গা থেকে শুরু করতে হবে। যে দল যত তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারবে তাদেরকে তত তাড়াতাড়ি পরবর্তি টাস্ক দেয়া হবে।
আমরা দ্বিতীয় বারে সফল হয়েছিলাম।
[মার্বেল রোল করাচ্ছে একটি টিম]
এরপর আমাদের প্রত্যেকটি টিমকে একটি করে জিপিএস ডিভাইস দিল। আগাগোরা ভোটকা মতো এমন জিনিস জীবনে প্রথম দেখলাম। আজিব এক জিনিস। এই মুহুর্তে আমি পৃথিবীর কোন অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশে দাড়িয়ে আছি তা ডিসপ্লেতে দেখায়।
আবার আমি অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ বলে দিলে ডিসপ্লেতে দাগ টেনে রুট বলে দেয় কোনদিকে যেতে হবে। এটি সরাসরি পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে থাকা সেটেলাইট গুলো থেকে ডাটা নিয়ে কাজগুলো করে। খুবও এক্সাইটিং জিনিস। তো আমাদেরকে একটি অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ লিখে দিল। জিপিএস ডিভাইসের দেখানো রুট ধরে সেখানে যেতে হবে।
[জিপিএস ডিভাইসে লোকেশন ইনপুট দিচ্ছে মুগ্ধের টিম]
তো এই ডিভাইসটা ধরে শ্যামলী আর আগেরগাঁও নামক জায়গাটা পুরো চষে ফেললাম। প্রায় ২ ঘন্টা ঘুরে ঘুরে গন্তব্যে পৌছালাম। সেখানে কমিটির একজন থাকবে বলেছে। একে একে সবগুলো টিম চলে আসলো। কমিটির টিকিটাও দেখতে পারছি না।
একটি টিম কমিটিকে ফোন করল। ওরা বলল, কমিটির লোক জায়গাতেই দাড়িয়ে আছে। আমাদের তো পুরো মেজাজ খারাপ। জিপিএস ডিভাইস বলছে আমাদের সেট করা লোকেশন থেকে আমরা ৫ মিটার দুরত্বে দাড়িয়ে আছি। ৫ মিটার দুরত্বের মধ্যে কয়েকটি ছাপড়া ঘর আর দুইটি বিল্ডিং ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
তাহলে কমিটির লোকটি কোথায় দাড়িয়ে আছে?
[ম্যানেজমেন্ট টিম - মাঝে মাঝে আমরা ওদের পৌছার আগেই ডেস্টিনেশনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকতাম। ]
পুরো ১ ঘন্টা আমরা সেখানে দাড়িয়ে ছিলাম। ভাবছিলাম এর মধ্যে কোন ধাঁধা আছে কিনা। ম্যানেজমেন্ট বলছে তারা ঠিক জায়গাতেই আছে। অথচ আমরা দেখছি না।
সবগুলো টিম একই জায়গায় এসেছি। অর্থাৎ ভুল জায়গায় আসিনি। তাহলে??
আসলে ব্যাপারটি ছিল ৫ মিটার দুরত্বের। আগেই বলেছি আমাদের দৃষ্টিসীমায় কয়েকটি ছাপড়া ঘর ছিল। এবং একটি ছাপড়া ঘরের ভেতরেই পিনপয়েন্ট লোকেশনটি ছিল।
কমিটির একজন ঘরের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে ছিল। কিন্তু আমরা তো আর কারওর ঘরে ঢোকার সাহস দেখাতে পারিনা। খেলাম সবাই পেনাল্টি।
যাইহোক। আমাদেরকে একটি এসএমএস এর মাধ্যমে আরেকটি লোকেশন দেয়া হয়।
আমরা এবার প্রমান করলাম যে জিপিএস ট্রেকিং এ আমরাই সবচেয়ে ওপটিমিষ্ট।
লোকেশনটি ছিল আষাবরের একটি বাড়ির গ্যারেজ। ওখানে আমাদেরকে একটি ধাঁধা দেয়া হয়। আমার ঠিক মনে পড়ছে না ধাঁধাটি কি ছিল। আসিফ আর সাইদ ভাইকে ধাঁধার সমাধান বের করতে দিয়ে আমি বের হলাম খাবার কিনতে।
সেই সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি। যেইনা গ্যারেজ থেকে বের হয়েছি দেখি মৃদুল ভাইয়ের টিম। তিনজনের চোখই জিপিএস ডিভাইসের স্ক্রিনে। আশেপাশে তাকানোর সময় নেই। আমাকে পাশ কাটিয়ে সবাই সামনে চলে গেল।
আমি বিপরীত দিকে হাঁটা ধরলাম। সামনে একটি কলার দোকান দেখা যাচ্ছে।
[ধাঁধার সমাধান খুজছে একটি টিম]
--------------------------------------------------------------------
১ম পর্ব - ট্রেজার হান্ট - Race against you.
২য় পর্ব - ট্রেজার হান্ট - গন্তব্য মিরপুর
৩য় পর্ব - ট্রেজার হান্ট - সিজন III - দি সিটি মেইজ
--------------------------------------------------------------------
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।