ঘুম থেকে জেগে দেখি মৃত্যু শিয়রে গুনছে প্রহর...... (প্রথমেই বলে রাখি - প্রায় আড়াই বছর আগে এই রেসিং গেমটি নিয়ে একটি অসম্পুর্ন পোষ্ট লিখেছিলাম। তো ঐ লিখাটিকেই সম্পুর্ন করার চেষ্টা করছি আবার....)
এটি আমার জীবনের এক উত্তাল সময়ের কথা। সারা বাংলাদেশ চষে দেখার প্ল্যান মাথায়। এডভ্যান্চারাস, চ্যালেন্জিং কি কি আছে? - সব করে দেখার ইচ্ছা মাথার ভেতরে কুট কুট করছে দিনরাত। বাংলাদেশ তখন প্রস্তুত হচ্ছে এভারেষ্টের চুড়া ছুয়ে দেখার।
তখনই রাতুল ভাইয়ের বদৌলতে রাহাত ভাইয়ের সাথে পরিচয়। কি যেন একটা গেমের প্ল্যান করেছেন। axn চ্যানেল - এর AMAZING RACE এর সাথে এর মিল রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই গেমটি প্লে হবে।
এই মজার রেসিং গেমটি আমি দুইবার খেলেছি।
আর কখনও খেলতে পারব কিনা জানি না। তবে সুযোগ এলেও ছাড়বো না । প্রথমবার যখন পার্টিসিপেট করি তখন শুধু ঢাকার মধ্যে এই গেমটি সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে পুরো বাংলাদেশ নিয়ে এই গেমটি করার মাষ্টার প্ল্যান করা হচ্ছিল। এরপর বন্ধু মুগ্ধের মৃত্যু সবাইকে অনেক বড় একটা ঝাকুনি দেয়।
এরপর নানাকারনে আমি নিজেই নিজেকে গুটাতে শুরু করি।
তো এরকম নির্মল আর নির্দোষ একটি গেমের আনন্দ সবার সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছি না.....
৭-অক্ট-২০১০: আজ ট্রেজার হান্টে যাব
সকাল ৭ টা: অফিস. অফিসে..
বৃষ্টি মাথায় সাত সকালে বের হয়েছি অফিসে যাব। ইতিমধ্যে রাস্তায় জানযট লেগে গেছে। আধঘন্টা ধরে হা করে রাস্তায় ঠায় দাড়িয়ে থাকলাম বাসের অপেক্ষায়। এরপর আধঘন্টা হাটলাম রিকসার খোজে।
এরপর তুমুল বৃষ্টির ছাটে কাকভেজা হয়ে অফিস।
বেলা ১১ টায় ট্রেজার হান্ট ম্যানেজিং কমিটি থেকে ফোন এল। আমাদের দল চুড়ান্ত করেছে। সন্ধ্যা ৭:০০ টায় ফার্মগেট সেজান পয়েন্টে রির্পোটিং। দলে আমরা ৩ জন।
আসিফ - আমার এক্স অফিস কলিগ। আর সাইদ ভাই।
সাইদ ভাইয়ের পরিচয় হলো - তিনি সাইকেল সাইদ। বাংলাদেশের ৬৪ জেলা সাইকেল চালিয়ে ভ্রমন করেছেন। বাংলাদেশের সমস্ত জায়গার নাম মুখস্ত করে ফেলেছেন সাইকেল চালিয়ে।
ঢাকার এমন কোনো রাস্তা নেই যেখানে সাইদ ভাইয়ের সাইকেলের টায়ারের ছাপ পড়েনি। তো ট্রেজার হান্টের অনেক গুলো নিয়মের মধ্যে একটি নি্য়ম ছিল পাবলিক বাস ছাড়া কোনো প্রকার ইন্জিন চালিত ভেহিকেল ব্যবহার করা যাবে না। রিকসায় চড়া যাবে। আর সাইদ ভাইয়ের জন্য আরেকটি অলিখিত নিয়ম চালু হলো - সাইকেল চড়া যাবে না।
তো সাইদ ভাই রিক্সা ভাড়া করে প্রথমেই এক ঠেলায় রিক্সার স্পিড ওঠান ৪০ এ।
তারপর টুপ করে রিক্সায় চড়ে বসেন। কিছুক্ষন পর স্পীড কমলে আবার নেমে ঠেলা। আর পুরো ৩ দিন আমরা ট্রজার হান্টের ধাঁধার উত্তর বের করার চাইতে সাইদ ভাইয়ের পেছনে দৌড়েছি বেশি। তিনি একাধারে প্রচন্ড চিৎকার করে যেতে পারেন। সকালে ঘুম ভাঙ্গে সাইদ ভাইয়ে চিৎকারে।
রাস্তার লোকজন, গাড়িওয়ালা, রিক্সাওয়ালা, হোটেল বয়, ফুটপাথের ক্যানভাসার এমনকি ট্রাফিক সার্জেন্ট পর্যন্ত তটস্থ সাইদ ভাইয়ের চিৎকারে।
বেলা ১:০০ টা: বাকি ১ টাকা কোথায়?
অফিসে একজন কলিগ একটি ধাঁধা বলল। ধাঁধাটা এরকম -
৩ জন বন্ধু হোটেলে গেলো বিরিয়ানি খাবে। খাওয়া শেষে বিল হলো ৪৫ টাকা। তো প্রতিজন ১৫ টাকা করে দিল।
হোটেল বয় টাকা নিয়ে গেলো ক্যাশে। তো ম্যানেজার পরিচিত বলে ৫ টাকা ফেরত দিল। বয় টাকা নিয়ে ২ টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলল আর বাকি ৩ টাকা ফেরত দিল। এখন আসুন ধাঁধা বলা যাক।
৩ টাকা ফেরত নিলে ৩ জনের প্রত্যেকের কত করে খরচ পড়ল? ঠিক ধরেছেন।
১৪X৩ = ৪২ টাকা। হোটেল বয় মেরে দিয়েছে ২ টাকা। কত হল? ৪২+২ = ৪৪ টাকা। ঠিক? তাহলে বাকি ১ টাকা কোথায়?
সন্ধ্যা ৬:৪৫ টা:
সময়ের আগে চলে এলাম সবাই ফার্মগেটের সেজান পয়েন্টে। ট্রেজার হান্ট ম্যানেজিং কমিটির টিকিটাও দেখতে পারছিনা।
সকালে যিনি আমাকে ফোন দিয়েছিলেন তাকে ফোন দিয়ে টাস্কি খেলাম। তিনি নাকি ট্রেজার হান্ট ম্যানেজিং কমিটি ছেড়ে এখন পুরোদস্তুর পার্টিসিপেন্ট। আশেপাশেই কোনো এক চিপা গলিতে ওত পেতে আছেন দলবল নিয়ে আমাদের মতো।
সন্ধ্যা ৭:০০ টা: টিঁট টিঁট.....টিঁট টিঁট
মোবাইলে আজকের দিনের প্রথম এসএমএস আসলো: প্রিয় ট্রেজার হান্টার, আপনার পরবর্তি এসএমএস একটি ধাঁধা সম্বলিত এসএমএস। এবং ধাঁধার উত্তরটি আপনার মোবাইল ফোন সংক্রান্ত।
সন্ধ্যা ৭:০৫ টা: ধাঁধা...ধাঁধা
পরবর্তি এসএমএস পেয়ে গেলাম। আমরা ৩ জন তো এসএমএস দেখে হতভম্ব। এইটা কি?
৬২২১৮১৪৩৬৩৬২২১৫৩০৪২৩২২১৭৩৮১০৩৩৬৩৮২৬২৩১২১৮১৪৩৬৩৬২
(দ্বিতীয় পর্ব লিখছি....)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।