আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি।
কিস্তি ৭২:
কিছু অসাধারণ স্মৃতি মানুষকে সব সময় জাগিয়ে রাখে, আনন্দে রাখে, এ সব স্মৃতি হাতড়ে মানুষ সুখ পায়। আমার সে রকম মনে রাখার স্মৃতি শ্রীঙ্গল ট্যুরটি। আমার সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম লং ট্যুর ছিল সেটি।
সেই ট্যুরে যারা গেছে তাদের সবার কাছে এটি এখনো ভালো একটা স্মৃতি হয়ে আছে বলেই মনে করি। শ্রীমঙ্গলের সেই ট্যুরটা ছিল প্রচণ্ড শীতের মধ্যে।
রাত ন’টার মধ্যে বাস আসার কথা। বাস আসছে না, টেনশন। সবাই রেডি, কখন আসবে বাস? বাপ্পী ফোনে কার সাথে কথা বলছে।
এসে বলল, ভাই যে বাসটা আমাদের দেয়ার কথা, সেটা অ্যাকসিডেন্ট করেছে। নতুন একটা পাঠাচ্ছে। অনেক্ষণ পর বাস এলো। সেই বাসের পেছনের দিকের কাঁচ ভাঙ্গা। বাবু ও আমার মধ্যে যত বিবাদই থাক আমরা কখনোই প্রকাশ করি না।
এ ক্ষেত্রেও তাই হলো। আমরা দুজনেই আসলে একজন অন্যজনকে সম্ভবত খুব বেশি ভালো জানি। আবার খুব বেশি খারাপ জানি।
এখানে সে সব বলা উদ্দশ্য নয়, অনেকে বলতো আমরা মানিক জোড়। হবে হয়তো।
আমি ও বাবু দুজনে সিদ্ধান্ত নিলাম সিনিয়র হিসাবে বাসের সামনে আসন গেড়ে বসার বদলে আমরা সব ট্যুরে পেছণে গিয়ে বসব। প্রথম ট্যুরেই সেটার বাস্তবায়ন করা হলো। আমরা দু’জনেই বাসের শেষ সিটে গিয়ে বসলাম। প্রচণ্ড ঠান্ডায় জমে যাবার মত অবস্থা। গাড়ি ছুটছে শ্রীমঙ্গল।
মধ্যরাতে আমরা বিরতি দিলাম উজান ভাটিতে। সেখান থেকে বাবু আর আমি দুইখান মাফলার কিনলাম। সেই রকম গরম মাফলার। এটা প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। ভোরের একটু আগে এসে শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়ার একটু আগে ডিএফআইডির বাংলোর সামনের টিলায় ওঠার একটা মোড়ে আটকা পড়লাম।
তখনো ভালো মত ভোর হয়নি। গাড়ির নাকি লিভার ফেইল। তাই এই আটকে পড়া। অনেক চেষ্টা চরিত্তর করে সেটি ঠিক করা গেলো না। তাই সবাইকে বললাম, বাস থেকে নেমে এসো।
চা বাগানে ভোর দেখার অপার সুযোগটা আমরা সবাই নিলাম। সেই ট্যুরে আমাদের সাথে যারা ছিলো তাদের অনেকেই পরে আমার খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।
মৌ, গ্লোরিয়া, লিপি, সাদিয়া, পুনম, সাম্য, মীর মামুন, বাপ্পাী, শাশীম, সাংবাদিক সমিতির থেকে আসা আমার বন্ধু সেলিম, শামীম, ছোট ভাই ইব্রাহিম ও আশিকসহ আরো অনেকে। সবার নাম এ মুহুর্তে মনে পড়ছে না।
সবাই বের হয়ে চা বাগানে ঘোরাঘুরির পর পর জানা গেলো গাড়ি ঠিক হবে না।
তাই লোকাল একটা বাস পেয়ে ওই বাসেই আমরা সবাই গেলাম হীডের বাংলাতে। সেখানে পৌছে রুম ভাগ করে দেয়ার পর সবাই ফ্রেশ হয়ে সকালের নাশতা সেরে নিল। জানালাম সবাই রেস্ট নিক। আমি ও বাবু মিলে একটা লোকাল বাস ঠিক করলাম। সেই বাসে করে আমরা শ্রীমঙ্গলে চা বাগান, লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট, খাসিয়া পুঞ্জিসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে সেদিন দুপুরের মত ট্যুর শেষ করলাম।
বিকালে আমরা গেলাম একটা চা কারখানায়। সেখানে বাগান থেকে তোলা পাতা প্রসেস করা হচ্ছে। আমি ও বাবু সকালেই অনুমতি নিয়ে এলাম। বিকালে সেখানে সবাই ভিন্ন রকমের একটা আনন্দ পেলো। সাধারণত কারখানায় এত লোক অ্যালাউ করা হয়না, কিন্তু সে দিন কীভাবে যেনো আমাদের লাক ফেভার করে গেলো জানি না।
সন্ধ্যার দিকে বাংলোয় ফেরা হলো। সবাই কান্ত। বাংলোয় এসে রেস্ট নিচ্ছে। পরের দিন সকালে আমাদের যাওয়ার কথা মাধকুণ্ড জলপ্রপাত দেখতে। সেই ঝর্ণা শ্রীমঙ্গল থেকে তিন ঘণ্টার জার্ণি।
রাতেই বাসের মিস্ত্রি এসে বাস ঠিক করলো। সকালে বাস দেখলাম বাংলোর সামনে। খুব ভালো লাগায় মনটা ভরে গেলো। আগের রাতটাকে এনজয় করার জন্য আমি ও বাবু প্ল্যান করলাম। সে প্ল্যান হলো বার বি কিউ হবে।
কিন্তু শ্রীমঙ্গলের কমলগঞ্জে জঙ্গলের মধ্যে বার বি কিউ করার মত অভিজ্ঞ লোক বা সরঞ্জাম দুটোর কিছুই পেলাম না। আমি আর বাবু দুজনে গেলাম ভানুগাছ চৌরাস্তা বাজারে। সেখান থেকে ব্রয়লার মুরগি কেনা হলো। সাইকেলের শিক পাওয়া গেলো। শিক চোখা করে আনলাম।
বাংলোর বাবুর্চিকে বললাম মুরগি ধুয়ে ভালো করে মশলা পাতি মাখিয়ে দিতে। কি কি মশলা লাগবে তাও এনে বুঝিয়ে দিলাম। বাবুর্চি তাই করলো। রাতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার ভেতর টিলার ওপর বাংলোর পাশে আমরা বার বি কিউ করলাম। মুরগি পোড়াচ্ছি আমি আর বাবু।
সবাই একটু একটু করে টেনে টুনে খেয়ে ফেলছে। সেই বনে পোড়ানো মুরগির যে কী স্বাদ, সেটি কেবল খাদকরা (!) বুঝতে পেরেছিলেন। আমরা অনেক ক্ষণ আনন্দ করলাম বার বি কিউ নিয়ে।
তার পরের রাতে আরো মজা হয়েছিল। আমরা সন্ধ্যার পরে ঘণ্টা খানেক ব্রেক দিয়ে রিয়ালিটি শো করলাম।
ফান রিয়ালিটি । এ আইডিয়াটা আমি নিজেই তৈরী করেছিলাম। আগে যখন ট্যুরে যেতাম, দেখতাম খালি বক্স পাসিং খেলা হয়। কয়েক মিনিটে শেষ। আমি ভাবলাম বিকল্প দরকার।
তাই বিভিন্ন বিষয় লিখে একটা বক্সে রাখা হবে, যে যেটা পায় সেটি পারফর্ম করবে। দারুণ একটা খেলা। দারুন বললাম এ কারণে সেখানে যে সব সাবজেক্ট অ্যাড করা হলো সেগুলো ছিল মজার। চলমান সময়ের বাংলা সিনেমার বিভিন্ন সংলাপ, সিনেমার নাম ও গান সহ বিভিন্ন বিষয় সেটাকে অন্তর্ভূক্ত ছিল । এভাবেই পরের রাতটি আনন্দ ঘন হয়ে উঠলো।
বিশেষ করে ডিপজলের ডায়ালগগুলো বেশ চলছিল। বলে রাখি বাংলা সিনেমার প্রতি আমার ও বাবুর বিশেষ দূর্বলতা রয়েছে। আমরা দুজনেই সময় পেলে অশ্লীল (!) বাংলা সিনেমা দেখতাম। সময় না পেলে জোর করে সময় বের করেও দেখতাম।
হিডের বাংলোয় দুদিনের খাবার ও থাকাটা এখনো নিশ্চয় অনেকের স্মরণে আছে।
অনেকে আমাকে এখনো এ ট্যুরটার কথা বলেন। সম্ভবত আমার বিবেচনায় শ্রীমঙ্গল ট্যুরটি ছিল সবচেয়ে বেশি নির্মল আনন্দদায়ক ও মনে রাখার মত ট্যুর। তবে আমার যামানায় একটা ট্যুর খারাপও হয়েছিল। সে কথাও আমি জানাবো, পরের কোনো একটা পর্বে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।