নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই
১
ভোরের টেবিলে কড়া পানীয় ওষ্ঠের চুমুকে দ্রুত শেষ হয়ে গেছে। বাম কনুইয়ের নিচে দু'দলের সংঘর্ষের খবর। দ্রুতপঠনের স্টাইলে শিরোনামে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। জানালার গ্রিল গলিয়ে কা কা আওয়াজ আসে। গরম না পড়লেও অনেকটা অভ্যেস বসত সিলিং ফ্যান চলতে থাকে।
ভোরের আলোয় এই কৃত্রিম বাতাসটাকে নিজের মনে হয়। টেবিল ক্লথে প্লাস্টিকের ফলছবি, চল্টা ওঠা সাদা দেয়াল, হরলিক্সের পুরনো বয়ামে রাখা চিনি, পড়ে থাকা চিনির চামচ। চায়ের পেয়ালাতে হাতের পিঠ ছুঁয়ে গেলে টের পাই ক্রমে শীতল ও সহনীয় হচ্ছে তার সিরামিক। শিশুর আঙুলের মত উপবৃত্তাকার বোঁটাকে স্পর্শ করি, পেয়ালার মসৃণ সংসর্গ বহুদিন পর দেখা হওয়া বন্ধুর ঘনিষ্টতার মত । না দেখে পেয়ালার কানায় আঙুল ঘুরছে।
ভাবছিলাম দিনটি আজ কেমন যাবে।
এমন সময় গৃহপোষা বেড়ালটা পায়ের কাছে এসেছে। তার সাদা গোঁফ গোড়ালীতে স্পর্শ করছিল; হয়তো ও ভাবছিল এখনি একখন্ড রুটি ছুড়ে দেয়া হবে। শরপোশে ঢাকা রুটি জুড়িয়ে গেছে। আর মাথাটা ঘুরিয়ে মাসুম বিড়ালীয় আবেদন মন গলাচ্ছে না।
কাল রাতের একটা অস্বস্থিকর কিছু মনে করার চেষ্টা করছিলাম। মনে না হচ্ছে না। খুব আশা করেছিলাম কিছুটা সময় এভাবেই চলবে। কিন্তু ফোনটা বাজতে থাকল। রিংটোনে থেমে থেমে ডাকতে থাকে ওপাশের কেউ।
পণ্ড হয় অল্প সময়ের এই নিরবতা।
২
ক্রমাগত শব্দের যন্ত্রণায় আহত হয়ে যাই। শব্দ শুষে নেয়ার যদি কিছু থাকত! রোদওঠার সঙ্গে সঙ্গেই শ্রমিকের কাজ কর্ম শুরু হচ্ছে। বিকট শব্দে হাতুড়ি পেটানোর শব্দ হচ্ছে - কনস্টাকশন চলছে প্রতিবেশীর বাড়িতে। নিচের তলায় মোজাইক চলছে, মেশিনের কর্কষ আওয়াজ হচ্ছে।
স্টেরিওতে গান ভেসে এল। আবার মনে হল টিভিতে রান্না বান্নার অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা কিছু বলছে। পেয়াজ কুঁচি কুঁচি করছে, বেরেস্তা বানাচ্ছে। চিৎকার করে ফেরীওয়ালা ডেকে গেল - পুরানা শিশি বোতল। ঘট ঘট শব্দে কড়া নাড়ছে কেউ।
কেউ এল বোধ হয়। ছোট ভাইটার বন্ধু? বেশ জোরেসোরে আলাপ চলছে - দোস্ত, আজকে ম্যাচে কত স্কোর হবে বল তো?
নারী কণ্ঠের আলাপচারিতা -
-আচ্ছা ভাবী বলেন তো রুনা লায়লা এই কান্ড করছে কেন?
-কি কান্ড?
-উর্দু গান গাইছে ওই দিন, দমা দম মাসকেলান্দার
-না না উর্দু ক্যান হবে। পেপারে পড়লাম ওইটা সিন্ধি গান।
-একই কথা। পাকিস্তানি প্রেমের গান? একটা বাংলা গান হইলে কি সমস্যা ছিল?
-কি যে কন না।
এইটার মানে লেখছে - মাসকেলান্দার আউলিয়া, আমার দেশরে স্বাধীন করে রাখ!
বাবা ফোনে ব্যস্ত হয়। একাধিক কণ্ঠস্বরে হোটেলের তর্কবিতর্কের মতো ভরে ওঠে চারপাশ। জ্বি জ্বি করছেন.. উচু গলায় কারো ঠিকানা দিচ্ছেন ..একজন বলছে, আচ্ছা, শুনেছেন ডেস্টিনি কনসার্ট করছে বিরাট করে? যাবেন নাকি?
-না, সময় হবে না, ঐ দিন গোলাম আলীর কনসার্টের কথা শুনেন নাই? এগুলো সব ঠক বাজি, পয়সা খেয়ে ঠিক ঠাক প্রোগ্রাম করে না।
..
ল্যাণ্ড ফোন বা মোবাইলের অনর্গল শব্দের অত্যাচারে বাতাসে ঝড় বয়ে যায়। ঘন্টার পর ঘন্টা ডুবে থাকি এসবেই।
যোগাযোগ এত না হলে কী ক্ষতি হয়? এত কথা বলে কী এমন ফায়দা? অনেক রাত হয়। তবুও নির্জন হয়ে যায় না। দুর থেকে কিসের চিৎকার ভেসে আসে। বালিশে কান চেপে ধরে থাকি যাতে সামান্য শান্তি পাওয়া যায়।
--
ড্রাফট ১.০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।