. আমার নাইবা হলো পারে যাওয়া...
এখন ২০১১ সাল, আবার এসেছে ২১শে ফেব্রুয়ারী। একটু পিঁছু ফিরে দেখি না, কেমন ছিলো ১৯৫২ এর ২১শে ফেব্রুয়ারী বা তার পরের দিনগুলো। হয়তো সবাই এসব ঘটনা জানেন। তবুও আবার বলি।
২১শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২
সকাল ৯টা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিমনেশিয়াম মাঠের পাশে ঢাকা মেডিকেল কলেজের( তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত) গেটের পাশে ছাত্র-ছাত্রীদের ভীড় জমে উঠছে।
সকাল ১১টায় “কাজী গোলাম মাহবুব, অলি আহাদ, আব্দুল মতিন, গাজীউল হক” প্রমুখের উপস্থিতিতে সমাবেশ শুরু হয়। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ব্যাপারে ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও উপস্থিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মাঝে মতের অমিল দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সলর ডঃ এম,এম,হোসেইন এর নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষক সমাবেশস্থলে আসেন। এবং ১৪৪ ধারা ভংগ না করার জন্য ছাত্রদের অনুরোধ জানান।
উপস্থিত ছাত্র নেতাদের মাঝে “আব্দুল মতিন, ও গাজীউল হক” ১৪৪ ধারা ভংগের পক্ষে মত দিলেও সমাবেশে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে সুনিদৃষ্ট ঘোষনা না দেয়ায় উপস্থিত ছাত্ররা স্বতস্ফুর্ত ভাবে ১৪৪ ধারা ভংগের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে মিছিল নিয়ে পূর্ব বাংলা আইন পরিষদের( বর্তমান জগন্নাথ হলের অন্তর্গত) দিকে যাবার উদ্যোগ নেয়।
আর তখনই পুলিশ লাঠি চার্জ ও গুলি চালায়। গুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্র “আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন আহমেদ, আব্দুল জব্বার, সালাম, শিশু শ্রমিক অহিউল্লাহ, আব্দুল আওয়াল সহ আরও অনেকেই নিহত ও আহত হন।
রফিকউদ্দিন গুলিবিদ্ধ হবার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু বরন করেন। রফিকউদ্দিন আহমেদই সম্ভবত পৃথিবীতে প্রথম ভাষা শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। ২২শে ফেব্রুয়ারী শহীদদের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে, ছাত্রদের এ ঘোষনায় রাতের অন্ধকারে ঢাকা মেডিকেলের মর্গ থেকে অনেক লাশ গুম করে ফেলে।
প্রথম শহীদ রফিককেও রাতের আঁধারে আজিমপুর পুরনো কবরস্থানে তড়িঘড়ি করে কবর দেয়া হয়। তাঁর কবরের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
আহত সালাম ঢাকা মেডিকেলে ২৫শে ফেব্রুয়ারী মারা যান। ২৫ তারিখ বিকেলে তাঁকেও আজিমপুরে কবরস্থ করা হয়। কিন্তু সালামের কবরও আজ পর্যন্ত শনাক্ত বা সংরক্ষন করা হয়নি।
রফিকের মতো সালামও মিশে আছেন হাজার কবরের ভীড়ে।
২২শে ফেব্রুয়ারী হাজার হাজার ছাত্র জনতা নিহতদের স্মরনে কার্জন হল এলাকায় নামাজে জানাজা আদায় করে শোক মিছিল বের করে। শান্তিপূর্ন সেই শোক মিছিলে পুলিশ আবার গুলি চালালে শফিউর রহমান সহ চারজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
২৩শে ফেব্রুয়ারী রাতে বরকতের গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থানে ভাষা শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষনের উদ্দেশ্যে একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মান শুরু করা হয়। মেডিকেল কলেজে জমানো ইট, চুন-সুরকি দিয়ে এ কাজ সুরু করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা, তাদের সাথে অনেকেই এ মহৎ কাজে যোগ দেন।
২৪শে ফেব্রুয়ারী ভোর ৬টায় “শহীদ স্মৃতি-স্তম্ভের” নির্মান কাজ শেষ হয়। সকাল ১০টার দিকে শহীদ শফিউর রহমানের পিতাকে দিয়ে স্মৃতি-স্তম্ভের ফলক উন্মোচন করা হয়।
২৬শে ফেব্রুয়ারী পুলিশের ঘৃন্য কালো হাত সেই “স্মৃতি-স্তম্ভ” ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়।
"স্মৃতির মিনার ভেঙ্গেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু?
আমরা এখনো চারকোটি পরিবার খাড়া রয়েছি তো,
যে ভিত কখনো কোনো রাজন পারেনি ভাংতে,
ইটের মিনার ভেঙ্গেছে ভাঙ্গুক, ভয় কি বন্ধু দেখ একবার
আমরা জাগরী চার কোটি পরিবার"
কবি “আলাউদ্দিন আল আজাদ এ কবিতায় তাঁর তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছিলেন।
১৯৫৬ সালে দ্বিতীয় শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন পূর্ব-বংগ সরকারের তৎকালিন মূখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার, মওলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসানী, ও শহীদ বরকতের জননী হাসিনা বেগম।
১৯৬৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী শহীদ বরকত জননী এই শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্ববোধন করেন। ভাষার জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছে তাঁর ছেলে। মহৎ মৃতুকে বেছে নিয়ে পেয়েছে শহীদের সম্মান। কিন্তু এই মায়ের চোখে আমি কোন গর্ব, আনন্দ, দেখছিনা। দেখছি একরাশ শুন্যতা।
সন্তান হারানোর শুন্যতা। যে শুন্যতা পূর্ণ করার কোন শক্তিই এই পৃথিবীতে নেই।
১৯৬৩ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারী শহীদ মিনারে ছাত্র জনতার ঢল।
যে ভাষার জন্য এতো প্রান, এতো রক্ত বিসর্জন সেই দিনটিকে আমরা কেন সেই ভাষায় স্মরন করি না? শুরু থেকেই কেনো এই গলদ? সেদিন ছিলো ৮ই ফাল্গুন। বাংলা মাসের এই দিনটি কেন আমরা নির্বাচন করলাম না? ২১শে ফেব্রুয়ারী কেনো? ৮ই ফাল্গুন নয় কেনো? এসবের উত্তর বিজ্ঞ জ্ঞানী, গুনীরা হয়তো দিতে পারবেন।
আমার মতো সাধারন মানুষ শুধু ভাষা শহীদদের জন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে পারবো। সকল ভাষা শহীদদের গভীর শ্রদ্ধা ভরে স্মরন করি।
সুত্রঃ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও নেট।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।