পরজীবীর মত বেঁচে আছি। সবার শ্রম আর ঘামের উপর দখলদারিত্ব করে। আমার মত অসৎ সকলে, যারা উৎপাদন ও শ্রমের সাথে যুক্ত না হয়ে বেঁচে থাকে।
‘বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন’ একটি স্বাধীন ছাত্র গণসংগঠনের নাম। ভাষা আন্দোলনের অগ্নিগর্ভ থেকে অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা নিয়ে ১৯৫২ সালের ২৬ এপ্রিল এর জন্ম।
ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্রদের এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা ছাত্রস্বার্থ রক্ষা ও ছাত্রদের অধিকার আদায়কে অগ্রাধিকার দেয়। সকল শিক্ষার্থীর জন্য বৈষম্যহীন বিজ্ঞানভিত্তিক গণমুখী ও একই ধারার শিক্ষানীতি বাস-বায়নের জন্যে সে লড়ছে অবিরাম। ছাত্র ইউনিয়ন মনে করে যে শিক্ষা জীবনের সমস্যা সমাধান ও শিক্ষার্থীর স্বার্থ-অধিকার সুপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন সমাজ থেকে শোষণ-বৈষম্যের অবসান ঘটানো এবং তা নিশ্চিত করার জন্য সমাজতন্ত্রই সর্বোৎকৃষ্ট অর্থনৈতিক-সামাজিক ব্যবস্থা।
http://www.biplobiderkotha.com
ছাত্র ইউনিয়ন কোনো রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন বা সহযোগী সংগঠন নয়। ছাত্র ইউনিয়ন ব্যতীত অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন বা সহযোগী সংগঠন।
সহযোগী সংগঠনের চরিত্রও এখন অঙ্গ সংগঠনের মতো। এরা সকলেই এদের নিজ নিজ রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ও নেতানেত্রীদের নির্দেশের গণ্ডীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এরা ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে ভাবনাকে কখনোই প্রাধান্য দেয় না। উল্টো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এরা সন্ত্রাস, লুটপাট, ভর্তি বাণিজ্য, টেণ্ডারবাজী, দখলদারিত্ব, খুন, ধর্ষণসহ নানাবিদ অপকর্ম করে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করে। এরা বিপুল অর্থ ব্যয় করে তথাকথিত ‘ক্যাডার বাহিনী’ লালন করে আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বড় বড় মিছিল বের করে ওমুক নেতা ওমুক নেত্রী জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ বলে শ্লোগান দেয় এবং হাতে তালি দেয়।
জন্ম কথা
৫২’র মহান ভাষা আন্দোলনের সঠিক নেতৃত্ব দেয়ার মতো কোন ছাত্র সংগঠন সেসময় দেশে ছিল না। মুসলিম ছাত্রলীগ নামের যে সংগঠনটি তখন ছিল, সেটা ছিল নামে ও প্রবনতায় সামপ্রদায়িক এবং বহুলাংশে আপোসকামী। তারা ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল। ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব তাই স্বাভাবিক ভাবেই চলে এসেছিল সচেতন ও প্রগতিবাদী ছাত্রদের হাতে। এই আন্দোলন শুধু ছাত্র সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, দেশের আপামর জনতার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল।
সালাম, বরকত, রফিক, শফিক ও জব্বারের তাঁজা রক্তের বিনিময়ে আমরা পে্যেছিলাম আমাদের প্রাণপ্রিয় বর্ণমালার মর্যাদা ও রক্তঝড়া ২১ ফেব্রুয়ারী ‘শহীদ দিবস’। ভাষা সংগ্রামের সফল উত্তরণের পরে ভাষা সৈনিকরা উপলব্ধি করেছিলেন, রক্তেগড়া ঐতিহাসিক এই সংগ্রামকে যথাযোগ্য পরিণতিতে এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজন অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী প্রগতিবাদী রাজনৈতিক চৈতন্যে উদ্বুদ্ধ একটি গণ ছাত্র সংগঠন। তাই ভাষা সংগ্রামের সামনের কাতারের প্রগতিশীল চিন-া-চেতনায় উজ্জীবিত প্রধান ছাত্র নেতৃবৃন্দ, যারা অনেকেই ছিলেন দেশভাগ পূর্ব ছাত্র ফেডারেশনের উত্তরসূরী, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-জেন্ডার রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থিকে প্রগতিশীল কর্মসূচীর ভিত্তিতে একতাবদ্ধ করতে পারে এমন একটি ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলার জন্য সিদ্ধান- গ্রহণ করেন।
১৯৫২ সালের ২৬ এপ্রিল ঐক্য, শিক্ষা, শানি- ও প্রগতি- এ চার মূলনীতিকে ভিত্তি করে পূর্ব পাকিস-ান ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। জন্মলগ্নে এই প্রতিষ্ঠানের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন কাজী আনোয়ারুল আজিম ও সৈয়দ আবদুস সাত্তার।
এরপর ১৯৫২ সালের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত প্রথম সম্মেলনে মোহাম্মদ সুলতান সভাপতি এবং মোহাম্মদ ইলিয়াস সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই সম্মেলনেই সংগঠনের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা হয়।
ছাত্র-ছাত্রত্ব-ছাত্র ইউনিয়ন
শিক্ষা জীবনে একজন ছাত্রের মৌলিক কাজ হচ্ছে তার ছাত্রত্ব অর্থবহ ও পরিপূর্ণ করা। ছাত্রত্ব হলো- শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে তৈরী করা। যেন মানুষটি তার সমগ্র জীবনে সৎ, দেশপ্রেমিক, মানবিক গুনাবলীর অধিকারী, প্রগতিশীল, আদর্শবান, যুক্তিনিষ্ঠ ও বিজ্ঞানমনস্কতার পরিচয় বহন করার সক্ষমতা অর্জন করে।
কোনো সংকীর্ণতা, সীমাবদ্ধতা যেন তাকে স্পর্শ করতে না পারে। সময়ের কাজ যেন সময়ে করতে শেখে। বুঝে শুনে কাজ করার সক্ষমতা অর্জন করে। যুক্তি ও বিজ্ঞানমনস্কতার নিরিখে পথ চলতে সক্ষম হয়।
ছাত্র জীবনে একজন ছাত্রের মৌলিক কাজ হলো শিক্ষা অর্জন করা।
শিক্ষা ও জ্ঞানের মাধ্যমে সমাজ, মানুষ, পৃথিবী, রাজনীতি, বিজ্ঞান, দর্শন, অর্থনীতি সংস্কৃতিসহ নানা বিষয়ে সম্যক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করা। শুধু জ্ঞান অর্জন করলেই হবে না, প্রয়োগের মাধ্যমে এ অর্জিত জ্ঞানের সাথে সমাজ, দেশ, দেশবাসী ও বিশ্ব সভ্যতা-বিশ্ব মানবতার যোগসূত্র তৈরী করতে হবে।
একজন ছাত্রকে অবশ্যই অন্যান্য ছাত্রদের সাথে যুক্ত হয়েই তার প্রকৃত শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ প্রতিষ্ঠা ও অধিকার আদায় করতে হবে। এজন্য সকলের মধ্যে সচেতনতা এবং একতা গড়ে তোলা অপরিহার্য। কিন' সেই সাথে নিজেকে উপযুক্তভাবে জ্ঞানসমৃদ্ধ ও সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে।
অন্যকে যুক্তিবান ও বিজ্ঞানমনস্ক করতে হলে প্রথমে নিজেকে যুক্তিবান ও বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সমাজটাকে পরিবর্তন করতে চাইলে নিজেকেও পরিবর্তন করতে হবে। বিপ্লব করতে চাইলে নিজেকেও বিপ্লবী হিসেবে তৈরী করতে হবে। আমি বা আমরা যা-ই করতে চাই না কেন তার জন্য মানুষের কাছে যেতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে এবং তাদেও কাছ থেকে শিখতেও হবে।
কিন' নিজে না বুঝলে অন্যকে সে কি বুঝাবে।
ছাত্র ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে এই কাজগুলো যথার্থভাবে মেনে চলতে হয়। এই ধারায় উদ্বুদ্ধ একজন ছাত্রই কেবল ছাত্র ইউনিয়ন করার যোগ্যতা রাখে। ছাত্র ইউনিয়ন নিছক খাতায় নাম লেখানো মার্কার সংগঠন নয়। এই সংগঠন করতে হলে প্রথমত তাকে তার ছাত্রত্ব রক্ষা করতে হয়।
তারপর সংগঠন সম্পর্কে বুঝতে হয়, জানতে হয়। ক্রমাগত সচেতনতা বাড়াতে হয়। শুধু তত্ত্ব চর্চা নয়, বাস-ব প্রয়োগ, সত্যিকার আন্দোলন সংগ্রাম, ছাত্র সমাজ ও জনগণের মাঝে প্রত্যক্ষ কাজ ইত্যাদির মাধ্যমে উন্নত জীবন দর্শন ও সামাজিক কর্মযজ্ঞের নিবেদিত প্রাণ কর্মী হয়ে ওঠার নিরন-ও প্রয়াস চালাতে হয়। প্রচলিত শিক্ষা কাঠামোর সীমাবদ্ধ জ্ঞান অর্জন করলেই যেমন জ্ঞান অর্জন করা যায় না তেমনি শুধু মাত্র ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দিলে বা নাম লেখালেই প্রকৃত অর্থে ছাত্র ইউনিয়ন করা হয়না।
জাতীয় রাজনীতি ও ছাত্র ইউনিয়ন
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ক্ষমতার অপব্যবহারের রাজনীতি অথবা কোন রাজনৈতিক দল বা তাদের উপদলের লেজুড়বৃত্তি করে না।
কিন' বাস-ব জীবনের কঠোর অভিজ্ঞতায় ছাত্রসমাজ দেখতে পায় যে, তারা যে গণতান্ত্রিক, অসামপ্রদায়িক, প্রগতিশীল, অবারিত ও সমৃদ্ধশালী শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা জীবন চায়, তার পথে পদে পদে অন-রায় সৃষ্টি করে রাখছে দেশের প্রচলিত সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর লুটপাটতন্ত্রের অর্থনৈতিক-সামাজিক ব্যবস্থা। আর সেই প্রতিক্রিয়াশীল আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাকে লালন-পালন করে চলেছে দেশের বর্তমান শাসক-শোষক শ্রেণী।
সামপ্রদায়িকতা, স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা, মুক্তবাজারের নামে লুটপাটতন্ত্র, বিশ্বায়নের নামে সাম্রাজ্যবাদী শোষণ-আগ্রাসন ইত্যাদির ফলে ছাত্রসমাজের প্রত্যাশা ও সুন্দর স্বপ্নগুলো প্রতিনিয়ত নানাভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা এই শিক্ষাই দিচ্ছে যে, প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার আমূল রূপান-র ও বর্তমান শাসক-শোষক শ্রেণীকে পরাভূত না করতে পারলে ছাত্র সমাজ তার বহু আকাঙ্খিত শিক্ষা জীবন নিশ্চিত করতে পারবে না।
অন্যদিকে, দেশবাসীর অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ছাত্র সমাজ জাতীয় সমস্যাবলী থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন রাখতে পারে না।
ছাত্র সমাজ সমগ্র জনগণেরই একটি সচেতন অংশ; তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকার, অসামপ্রদায়িকতা, সমাজ ও অর্থনীতির প্রগতিশীল বিকাশ, সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের আগ্রাসী আধিপত্য থেকে মুক্তি, বৈষম্য ও শোষণের অবসান, প্রকৃতি ও পরিবেশের বিপর্যয় রোধ, বিশ্ব শানি--জাতীয় মুক্তির স্বপক্ষে আন-র্জাতিক সংহতি- এসব কোনো বিষয়ই ছাত্র সমাজের বিবেচনা বর্হিভূত বিষয় হতে পারে না। অনেকের মধ্যে এরকম ভুল ধারণা হতে পারে যে ছাত্ররা শুধু লেখাপড়া করবে। দেশ দুনিয়া নিয়ে ভাবার কোন প্রয়োজন তাদেও নেই, কেননা এগুলো তাদেও শিক্ষা জীবনের সাথে জড়িত নয়। কিন' এরকম ধারণা সঠিক নয়। একটা ছোট উদাহরণ দেয়া যাক।
ধরা যাক, পাটকল বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এর প্রতিবাদ করা এবং প্রতিবাদে প্রয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট করা ছাত্র হিসেবে অসি-ত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই যুক্তিসংগত হয়ে ওঠে। যেসব ছাত্রের পরিবার পাটকলের উপর নির্ভরশীল তাদের শিক্ষাজীবন তখন এর ফলে হুমকীর মধ্যে পড়ে। এভাবেই অর্থনীতি-রাজনীতিসহ জাতীয় আন-র্জাতিক ঘটনাবলী অবিচ্ছেদ্য ভাবে ছাত্রসমাজের সামগ্রীক স্বার্থ ও মননে জায়গা করে নেয়। এজন্যই আপনাকে আমাকে ও সমগ্র ছাত্র সমাজকে জাতীয়-আন-র্জাতিক নানা মৌলিক ও ছোট-বড় বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়াটা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।
কিন' এটা হলো ‘রাজনীতি’। এটা ‘দলবাজি’ বা রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি নয়। ছাত্র সমাজের কোন ধরণের রাজনীতি করা উচিৎ সেটাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা অনেক রকম রাজনীতি দেখতে পাই। লুটপাটের রাজনীতি, খুন-ধর্ষণের রাজনীতি, অস্ত্রবাজী-টেণ্ডারবাজী-চাঁদাবাজীর রাজনীতি, নেতা-নেত্রীর নামে স্লোগানের রাজনীতি, ধর্মান্ধ-মৌলবাদী রাজনীতি ইত্যাদি।
ছাত্র ইউনিয়ন রাজনীতির নামে চলতি হাওয়ার এই অপরাজনীতির সাথে মোটেই সমপৃক্ত নয়। এসবকে সে ঘৃণা করে, প্রত্যাখ্যান করে।
আরেক ধরণের রাজনীতি হলো আদর্শ, দেশপ্রেম, ত্যাগের রাজনীতি। ছাত্র ইউনিয়ন সেই রাজনীতির সাথে যুক্ত- যেখানে বৃহত্তর ছাত্র সমাজের মৌলিক স্বার্থের পাশাপাশি এদেশের গরীব দুঃখী-মেহনতী মানুষের সার্বিক অধিকার ও মুক্তির পথনির্দেশ রয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্র ইউনিয়ন যেমন অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানভিত্তিক, বৈষম্যহীন, গণমূখী ও একই ধারার শিক্ষানীতির বাস-বায়ন চায় তেমনি জাতীয় রাজনীতি ও অর্থনৈতিক-সামাজিক ব্যবস্থায় শোষণ-বৈষম্যহীন সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে।
ইতিহাসের অভিজ্ঞতা হল ঐক্যবদ্ধ সচেতন লড়াই-সংগ্রাম ছাড়া কোনো অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এ লড়াই সমগ্র ছাত্র সমাজের, আপনার আমার সকলের। সুন্দর সমাজের জন্য, মানুষ-মানবতা-মনুষ্যত্বের জন্য ও সাম্যের পৃথিবী গড়ার জন্য। এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব-কর্তব্য এড়ানো কোনো সচেতন-যুক্তিবাদী ছাত্র-ছাত্রীর, কোন মানুষের কাজ নয়।
ছাত্র ইউনিয়নের মূলনীতি
১।
ঐক্য ২। শিক্ষা ৩। শানি- ৪। প্রগতি
১। ঐক্য: বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন আন-রিকভাবেই বিশ্বাস করে যে ছাত্র সমাজের মধ্যে ঐক্যই সবচাইতে বড় শক্তি এবং একটি ন্যুনতম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল কর্মসূচীর ভিত্তিতে ছাত্র সমাজের মধ্যে প্রকৃত ঐক্য এবং একটি মাত্র সংগঠন গড়ে তোলা সম্ভব।
ব্যপক ঐক্যের স্বার্থে কাজ করে যাওয়া ছাত্র ইউনিয়নের মূল লক্ষ্য এবং এই লক্ষ্যে উপনীত হবার জন্য অসামপ্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল একটি কর্মসূচীর ভিত্তিতে বাংলাদেশের সব ছাত্র-ছাত্রীর একটি মাত্র গণ ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সকল সময়ে প্রস'ত এবং সেই লক্ষ্যে উদ্যেগী ও প্রয়াসী।
২। শিক্ষা: শিক্ষা জীবনের সমস্যা সংকটগুলো দূর করে দেশ ও জনগণের স্বার্থে একটি গতিশীল আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলাই ছাত্র ইউনিয়নের মূল লক্ষ্য। ছাত্র ইউনিয়ন এমন শিক্ষা ব্যবস্থায় চায় যেখানে শিশুকাল হতে একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মানবতাবোধ, জাতীয় ঐতিহ্য, উন্নত জ্ঞান ও ধী শক্তি, প্রগতিবাদী ও বিশ্ব-মানবতাবাদী মানসিকতায় জাগৃত হতে পারে। শিক্ষা পণ্য নয়, সুযোগ নয়, ‘অধিকার’, এই মৌলিক স্লোগান নিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সংগ্রাম।
৩। শানি-: ভারসাম্যহীন পৃথিবী সাম্রাজ্যবাদী গোষ্টীর হিংস্র থাবায় আক্রান-। পৃথিবীর দেশে দেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে চলছে শোষণ, চলছে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। প্রতিদিন অগণিত মানুষ হচ্ছে শোষিত, হচ্ছে হত্যাযজ্ঞের শিকার। আমরা কেউই নিরাপদ নই।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আজ বাংলাদেশের উপরেও তার আগ্রাসন-শোষণ বৃদ্ধির পাঁয়তারা করে চলেছে। দেশের অর্থনীতি-রাজনীতির উপর তাদের নিয়ন্ত্রন আর নগ্ন হস্তক্ষেপ বেড়েই চলেছে। এই লুন্ঠনকারী, হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে এবং সমগ্র মানব জাতির অসি-ত্ব রক্ষার প্রশ্নে বিশ্ব শান্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন তাঁর আপোষহীন লড়াই-সংগ্রাম অব্যহত রেখেছে।
৪। প্রগতি : সমাজ সভ্যতার সম্মুখমুখী অগ্রযাত্রাই হলো প্রগতি।
মধ্যযুগীয় অন্ধকার ও কূপমণ্ডুকতায় ফিরে যাওয়া তো নয়ই, এমনকি চলতি হাওয়ায় গা ভাসিয়ে বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার দৃষ্টিভঙ্গি হলো প্রতিক্রিয়াশীল ও রক্ষনশীল দৃষ্টিভঙ্গি। এ ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ হলো প্রগতি বিরোধী। ক্রমাগতভাবে প্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়া ও এগিয়ে নেয়ার ব্রত নিয়ে কাজ করে চলেছে ছাত্র ইউনিয়ন। বিজ্ঞানমনস্কতার নিরিখে জীবনের সকল কাজ পরিচালনা করা প্রগতির আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের জীবনযাত্রার মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করে তাদেরকে পশ্চাৎপদতা, কু-প্রথা, কুসংস্কার থেকে মুক্ত করে বিজ্ঞান মনস্কতার দিকে, প্রগতির দিকে নিয়ে যেতে ছাত্র ইউনিয়ন নানা পন্থায় নানা প্রয়াস ও লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।