চিন্তাচেতনার স্বাধীনতাহীন জীবন মৃতপ্রায়।
আমার মাথাব্যাথা কেন? ব-দ্বীপ প্রকাশন আমার একটি বই প্রকাশ করেছে। প্রথমে বইটি প্রকাশের কাহিনীটি বলি একটু।
জীবনের বাস্তবতার মুকাবিলায় লেখালেখি থেকে অনেকটা দূরে প্রায় অর্ধদশক সময়। এবার ডিসেম্বরে বাংলাদেশে গিয়ে ব-দ্বীপ প্রকাশনের মালিক শামসুজ্জোহা মানিক ভাইয়ের বার্তা পেলাম।
২০০৪-০৫ সালে মুক্তমনায় (mukto-mona.com) প্রকাশিত আমার কয়েকটি প্রবন্ধ নিয়ে একটা বই বের করতে চান। লেখাগুলো রেডি করে দিতে হবে এক সপ্তাহের মধ্যে।
মানিক ভাইয়ের সাথে পরিচয় মুক্তমনায় বেশ কয়েক বছর আগে নন্দিনী হোসেনের একটি লেখার উপর নারি-অধিকার প্রসংগে সুন্দর একটি মন্তব্য প্রকাশের সূত্রে। যাহোক তারাতারি বউকে একাকি প্রবাসে পাঠিয়ে দিয়ে লেখাগুলো রেডি করে দিলাম। একুশে বইমেলায় স্টলের দরখাস্ত করার জন্য মানিক ভাই বইটি খুব তারাহুড়ো করে ছাপিয়ে ফেললেন "আস্তিকতা-নাস্তিকতার দ্বন্দ্ব" শিরোনামে।
৩০শে ডিসেম্বর প্রবাসে ফিরার আগে কয়েকটি কপিও আমাকে দিলেন মানিক ভাই। ফেরার পথে আফসোস হচ্ছিলঃ আমার প্রথম বই মাস-খানেক পরই বইমেলায় বিক্রি হবে (কিছুটা উত্তেজনা, পুলকিত বোধ করছিলাম), অথচ আমি সেখানে থাকবো না। ভাবছিলামঃ আমার বই প্রকাশ হবে জানলে আরও দু'মাস পরে আসতাম দেশে।
এখন দেখছি দু'মাস পরে দেশে গেলেও কোনো লাভ হতো না। কারণঃ অজ্ঞাত কারণে ব-দ্বীপ প্রকাশনকে বইমেলায় অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত করেছে বাংলা একাডেমী।
বাংলা একাডেমীর এ খামখেয়ালী সিদ্ধান্তের উপর মানিক ভাই পরিচালিত বংগরাষ্ট্র (http://www.bangarastra.net) লিখেছেঃ
"'অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১১'কে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে যেভাবে বইয়ের দোকান বরাদ্দ করা হয়েছে সেটা নিঃসন্দেহে বাংলা একাডেমীর বর্তমান কর্তৃপক্ষের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ২০১১-এর ২১শে গ্রন্থমেলার একটি মূলনীতি ছিল ২০১০ সালে ২০টি করে বই প্রতিটি প্রকাশন থেকে প্রকাশকদের বের করতে হবে। কিন্তু তারা তাদের নিজেদের কথার নিয়ম মেনে কাজ করেন নাই। ব-দ্বীপ প্রকাশন এ বছর ২৬টা বই প্রকাশ করেও দোকান বরাদ্দ পায় নাই। ব-দ্বীপ প্রকাশনের বইগুলির মধ্যে বিভিন্ন লেখকের লেখা ১) আর্যজন ও সিন্ধু সভ্যতা, মার্কসবাদের সংকট ও বিপ্লবের ভবিষ্যৎ, ২) আস্তিকতা-নাস্তিকতার দ্বন্দ্ব, ৩) জিহাদঃ জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরকরণ, সাম্রাজ্যবাদ ও দাসত্বের উত্তরাধিকার, ৪) বাঙ্গালী মধ্যবিত্তের উত্থান, ৫) বাঙ্গালী জন-চরিত্রঃ কিছু নমুনা বিশ্লেষণ ইত্যাদি বই গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হবার দাবী রাখে।
এই গ্রন্থগুলি যদি বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষ কথিত ‘সৃজনশীল সাহিত্য, বিজ্ঞান ও গবেষণাধর্মী’ গ্রন্থের তালিকার মধ্যে না পড়ে তবে কোন গ্রন্থগুলি এই তালিকাভুক্ত হতে পারে? এটা স্পষ্ট যে বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষ বিশেষ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়েই ব-দ্বীপ প্রকাশনকে দোকান বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত করেছে।
অথচ এমন অনেক প্রতিষ্ঠানকে এবার দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যারা বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত কোন শর্তই পূরণ করে নাই। আমাদের জানা একটি প্রতিষ্ঠান ২০১০ সালে একটি বই প্রকাশ না করেও দোকান বরাদ্দ পেয়েছে। আরেকটি পরিচিত সম্পূর্ণ নূতন একটি প্রতিষ্ঠানের কথা জানা আছে যে সর্বসাকুল্যে পাঁচ-ছয়টি বই প্রকাশ করেই দোকান বরাদ্দ পেয়েছে। বাংলাবাজারের আর এক ব্যক্তির কথা জানা আছে যিনি বইয়ের ব্রোকার মাত্র।
অর্থাৎ প্রকাশকদের নিকট থেকে বই নিয়ে বিভিন্ন বইয়ের দোকানে সরবরাহ করে কমিশন গ্রহণ করেন। তিনিও এবার প্রকাশক হিসাবে গ্রন্থমেলায় বইয়ের দোকান বরাদ্দ পেয়েছেন। এই হচ্ছে একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমীর বর্তমান কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ডের কিছু নমুনার বিবরণ।
ব-দ্বীপ প্রকাশনকে জায়গা বরাদ্দ না দিবার কোনও যুক্তি কি বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষের আছে? এ সংক্রান্ত যেসব যুক্তি তাদের কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন জনকে শুনিয়েছেন সেগুলি নেহায়েতই হাস্যকর। দেশের বিদ্যমান সার্বিক নৈতিক অবক্ষয় যে বাংলা একাডেমীকেও তার আয়ত্তের বাইরে রাখে নাই এই ঘটনার মধ্য দিয়ে সেই সত্যেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
আমরা এই মুহূর্তে বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষের অনৈতিক ও স্ববিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছি। "
আমার ধারণাঃ ব-দ্বীপ প্রকাশনের কয়েকটি বই নাস্তিক্য-সংশয়বাদি ধ্যান-ধারণাকে শুভ আলোকপাত করেছে; কয়েকটি ইসলামের উপর সত্যনিষ্ঠ গবেষণার ভিত্তিতে রচিত -- যে কারণে তারা বাংলা একাডেমীর দ্বারা বইমেলায় স্টল বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ব-দ্বীপ প্রকাশনের অন্যান্য বইগুলো দেখুন এই লিংকে:
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।