আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলা একাডেমীর 'স্মৃতি: 1971' সিরিজ 3য় খন্ড থেকে উদ্ধৃতি

টুকিটাকি ভাবনাগুলো

"জনগনের যুক্তিসংগত দাবী যে প্রাদেশিক ভাষা বাংলাই পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যবধান 2 হাজার মাইল, ভাষার কোন মিল নেই এমন ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ভাষা দুইটি করাই সংগত। সমগ্র পাকিস্তানের 6 কোটি 90 লক্ষ লোকের মধ্যে 4 কোটি 40 লাখ লোকেরই মাতৃভাষা বাংলা (1952 সালের পরিসংখ্যান)। পুর্ব পাকিস্তানের কত লোক বাংলা ছাড়া অন্য ভাষা বোঝে? মিলিটারীরা আমাকে হয়ত এখানেই গুলি করে মারবে। আমার বিশেষ অনুরোধ, তোমরা আমার লাশটা বারান্দায় ফেলে রেখো যাতে সকলে আমার মৃতদেহ দেখে মনে মনে সাহস পায় বিদ্রোহ করার জন্যে।

" -- শহীদ ভাষাসৈনিক, রাজনীতিবিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, পৌত্রি আরমা গুনের স্মৃতিচারনে। "আমরা গ্রামের বাড়ী চলে যাবার পনের দিন পরেই বাবা গিয়ে হাজির হলেন- সাথে চারটে হিন্দু পরিবারের 30/35 জন সদস্য। বাগেরহাট শহরে ঢোকার পর পাক-আর্মিদের প্রধান লক্ষ্য ছিল হিন্দুদের হত্যা করা এবং লুটপাট চালানো। শহরে নিরাপত্তার অভাব বলেই বাবা ওদের নিয়ে গ্রামে এসেছেন। আমাদের গ্রামটা ছিল কিছুটা দুর্গম এলাকায়।

পাক-আর্মি সহজে ঢুকতে পারছিল না। কিন্তু রাজাকার এবং শান্তি কমিটির লোকদের অত্যাচারে সাধারন মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠল। সন্ধ্যা হলেই ওরা লুটতরাজ, ঘরবাড়ী জ্বালানো, মেয়েদের উপর অত্যাচার এবং একটা পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ শুরু করে দিত। ভয়াবহ রাতটা ছিল 28শে অক্টোবর। শত্্রুরা জানত সামনা-সামনি ওরা বাবার সাথে পারবে না।

তাই চোরের মত রাতের অাঁধারে লুকিয়ে থেকে পিছন থেকে গুলি করেছিল। " - রোকেয়া খান, বাবা শিক্ষাবিদ মোয়াজ্জেম হোসেন সম্পর্কে। "আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি প্রত্যক্ষ সৈনিক ছিলেন না। তিনি কখনো কারো অমঙল সাধন করেননি, কারো অকল্যান সাধনও করেননি। তাহলে এমন সরল ও নিরীহ মানুষটিকে ধরে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানওয়ালারা হত্যা করল কেন? একাত্তরের যুদ্ধে পাকিস্তানী সৈন্য ও দালালরা কেন নির্বিচারে হত্যা করল বাংলাদেশের হিন্দুকে? যদি এসব হত্যাকারিদের (স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি) ধরা হতো তাহলে জেরার মুখে নিশ্চয়ই সেই সত্যটি প্রকাশ করত তারা।

এই মানবিকবোধশুন্য জন্তুদের ক্ষমা করে সামাজিক সংকল্পকে বিপন্ন করেছি। বড় ভুল করেছি আমরা। " -- মমতাজউদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক অবনী মোহন দত্ত স্মৃতিচারনে। "মুসলিম লীগের স্থানীয় দোসররা হানাদার বাহীনিকে সাথে নিয়ে গ্রামে গ্রামে চিহ্নিত করে দিয়েছিল হিন্দুদের এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের। " - প্রফুল্লরন্জন সিংহ, বাবা সমাজসেবী নূতনচন্দ্র সিংহ সম্পর্কে।

"একদিন সন্ধ্যার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলের পিছনে, রেল লাইনের কাছাকাছি তাঁদের সকলকে পিছনে হাত বেঁধে জল্ল্লাদেরা একটা নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। তারপর সেখানে আগে থেকে খুঁড়ে রাখা একটি বড় গর্তের পাশে নিয়ে গিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। কেউ নিহত, কেউ মারাত্মকভাবে আহত, আবার কেউবা অল্প আহত হয়েছিলেন। যাঁরা বেঁচে ছিলেন তাঁদের মৃত্যুর আগেই জল্লাদেরা সকলকে টেনে হিঁচড়ে সেই গর্তের মধ্যে ফেলে দিয়ে তড়িঘড়ি মাটি চাপ দিয়ে চলে যায়। অল্প আহত ওই কর্মচারীটি প্রাণপণে দু'হতে মাটি সরিয়ে 'জীবন্ত কবর' থেকে কোনমতে বেরিয়ে অসেন।

" - সাঈদউদ্দিন আহমদ, সাংবাদিক, নাট্যশিল্পী এম এ সাঈদ স্মৃতিচারণে । "না, খুঁজে পাওয়া যায়নি বাবার লাশ। প্রিয় স্বদেশের মাত্র সাড়ে তিনহাত জায়গা জুড়ে অবস্থান করবেন, বাবার অহংকারী মন হয়ত মেনে নিতে পারেনি। তাইতো স্বদেশের বক্ষ জুড়ে নিজ অস্তিত্বকে স্বাক্ষী রেখে অহংকারী হয়েছেন আমার বাবা। " - মো: শাহেদুল ইসলাম, বাবা শিক্ষাবিদ এবিএম আশরাফুল ইসলাম ভুঁইয়া প্রসঙে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.