একবিংশ শতাব্দীর তরুণ প্রজন্ম আজ হাঁটছে কোন পথে? হাঁটছে না বলে ট্রান্সফার হচ্ছে বললে বেশী মডার্ণ মনে হবে। মুঠোফোন হাতে, হেডফোন কানে, সিগারেটের টানে, মোটর বাইকের কর্কশ গর্জনে তরুণ প্রজন্ম আজকে ১২০ কেবিপিএস রেটে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। বন্ধু, আড্ডা, গানই হয়েছে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। কেউ বলছে কাছে থাকুন, আরেকজন বলছে হারিয়ে যেতে, কেউবা জানাচ্ছে নিজেদের পুজিঁবাদের পরিবারে সাদর আমন্ত্রণ। মেধা, কাজ, প্রচেষ্টার বদলে একটি নাম্বারই হয়ে উঠছে আমাদের পরিচয়।
প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে একবিংশ শতাব্দীর তরুণের লক্ষ্য আজ কি?
বছর দশ আগেও দেশের তরুণ প্রজন্ম দেশের জন্য ভাবত। এর মানে এই না যে, তারা দেশ মাতার প্রেমে পাগল হয়ে রাত দিন মা মা করত। অন্তত পক্ষে, তাদের জীবনের লক্ষ্য ছিল সুদৃঢ় এবং সে লক্ষ্য অর্জনে ছিল দৃঢ় সংকল্পবদ্ধতা। আজকে যদি লক্ষ্য করি দেখা যাবে, একজন তরুণের কাছে দেশ তো দূরে থাক নিজের পরিবার অপেক্ষাও বড় আপন জিনিস হল একটি মোবাইল ফোন, কিছু ফ্রি এসএমএস, ব্যবহারে বোনাস মিনিট আর একটি মেয়ে বন্ধু। প্রেম-ভালোবাসা রাস্তায় জমাট বাধাঁ ময়লা পানির চেয়ে সস্তা বস্তুতে পরিণত হয়েছে এই প্রজন্মের কনসার্টের গানে।
যা হবার তাই হয়েছে, প্রেমে ব্যর্থতা, মাদকাসক্ততা, ক্যারিয়ারের অকাল মৃত্যু, অতপর পরিবারের দুঃসহ গ্লানি... এসবের উদাহরণ আজ আর নতুন করে দেয়ার প্রয়োজন নেই।
রাস্তাঘাটে হাঁটতে গেলেই তরুণ প্রজন্মের মূল্যবোধের গণধর্ষণ দেখে থমকে দাড়াঁতে হয়। সিগারেট ঠোঁটে বাইকে চড়ে গার্লস স্কুলের সামনে ছোট বোনদের প্রতি কুৎসিত যৌনউদ্দীপক বাণী ছুড়ে দেয়া আমাদের অধপতনের চূড়ান্ততারই প্রকাশ। এতো গেল ছেলেদের অবনমনের কথা। একবিংশ শতকের মেয়েরাও কম যাবে কেন? নারী-পুরুষ সকলেই কিন্তু আজ সমান।
ঢাকার বেইলী রোডে গতমাসের এক শুক্রবার রাতে পরিবারের সাথে ডিনার যেয়ে দেখলাম, মিনি স্কার্ট ও ভেস্ট আজ কেবল পশ্চিমা ললনাদেরই ভূষণ নয়, আমার দেশের পতিভক্ত মেয়েরাও এখন সংবেদনশীল দেহাংশ প্রদর্শনের মডার্ণ রেসে ভারতীয় মুন্নী-শিলাদের সাথে প্রতিযোগিতা করছে। তাদের দেখে যে কারো পইে কুৎসিত কামনা করা অসম্ভব কিছু নয়। আর যাই হোক, তরুণ ছেলেরা অক্ষম নয়।
কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের এক তরুণীর প্রেমিকের হাতে ছুরিকাঘাতে নিহত হবার ঘটনায় সুশীল সমাজ ছেলেটিকে আইনের কাঠগড়ায় দাড়ঁ করিয়ে তরুণ প্রজন্মের অধপতনের হার মিটার স্কেলে পরিমাপ করলেন। নিহত মেয়েটিকে আর কাঠগড়ায় দাড়ঁ করানো সম্ভব নয়।
না হলে হয়তো তাকে জিজ্ঞাস করতাম, শিক্ষিত একজন মেয়ে হয়ে কেন মাদকাসক্ত ওই ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়তে গেল? সেখানে কি মেয়েটির কোন রূপ ছলনা ছিল না? কিন্তু, এ প্রশ্ন আজ আর কাকে করব? মেয়েদের বাঁচার উপায় হল আত্মহত্যা। এ সম্পর্কে একটি ঘটনা বলি, আমার এক বান্ধবীর চারিত্রিক অধপতন ভয়াবহভাবে ঘটেছিল। একাধিক ছেলের সাথে দৈহিক, মানসিক সম্পর্ক স্থাপনের পর সে যখন ওই ছেলেদের কাছে হাতে নাতে ধরা পড়ে তখন তার আর কি করার আছে? সে তো মডার্ণ জিন্স-টপস পড়া তথাকথিত হট চিকস। এক হাতে ব্লেড নিয়ে অন্য হাতের উপর এলোমেলো দাগ কেটে সে হয়তো বা নিজের করা পাপ কাজের প্রায়শ্চিত্ত করতে চায়। আত্মহননের সে প্রচেষ্টা তার ব্যর্থ হয়।
কোনভাবে যদি সেদিন সে সফল হতো তাহলে চিন্তা করুণ তো, আইন এসে ওই ছেলেদেরকে কাঠগড়ার দাড়ঁ করিয়ে বিচার করত। কিন্তু, প্রকৃত দোষী তো তখন বিধাতার নরকে বসে দুনিয়ার এ বিচার দেখে হাসবে।
আজ আমরা মুক্তি চাই। কিন্তু, মুক্তি কোথায়? মুক্তি তো ভয়েস আড্ডায়, মুক্তি আছে এফএনএফ এ, মুক্তি আছে ৪৫ পয়সায়, মুক্তি আজকে মুন্নী-শিলায়। গ্রামীণফোনে কর্মরত আমার এক আত্মীয়ের সাথে কথা হলো।
তিনি বললেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ২০০ বছরে এদেশে হতে যত সম্পদ ব্রিটেনে পাচার করেছে তার থেকে বেশী টাকা গ্রামীণফোন গত ১২বছরে মুক্তির আশা দিয়ে নিয়ে গেছে। এই মুক্তির বৃথা আস্ফালন আমাদেরকে চিরকালের জন্য এক শোষনের বৃত্তে আটকে ফেলেছে। দুঃখ তাতে নয়! দুঃখ শুধু তখনই হয় যখন দেখি, আমাদের তরুণ প্রজন্ম এ ছলকৌশল বুঝতে পারে না। গকুলের ষাড়ের মত ৫০টাকার বেশী রিচার্জে ৪৪% বোনাস এর সুযোগ আজও তারা লুফে নেয়। রাত-দিনের লেখাপড়া বিসর্জন দিয়ে ৫টাকায় ৫০০এসএমএস খরচ করে বাবা-মার কষ্টের উপার্জন ৫টাকা কড়ায়-গণ্ডায় উসুল করে।
আমরা কত চালাক! আমরা কত বুদ্ধিমান! হাসতে হাসতে প্রেমের খেলায় নিজের জীবনের বাজী ধরেছি। আমাদের চেয়ে বড় সাহসী দেখেছেন?
আমরা দিনবদলের কথা বলি। ডিজিটাল দেশের স্বপ্ন দেখি। এ স্বপ্ন কি পান খেয়ে ঠোটঁ লাল করা, ৫০ বছরের বৃদ্ধ সরকারি সচিব-আমলারা বাস্তবায়ন করবে? নাকি তরুণ মন্ত্রীসভা এ স্বপ্নকে সফল করবেন? আরে উনারা তো, স্কুলের ক্রিড়া অনুষ্ঠানে গিয়ে মইনুল রোডের বাড়ি নিয়ে কাড়া-কাড়ি মূলক বক্তব্য দেন। আমরা তাদের কাছেও আশা করি না।
দিন যদি সত্যিই বদল হয় তাহলে হবে আমার তরুণদের হাত ধরেই। দৃষ্টান্তও কম নেই। পাটের জিন আবিষ্কারের 'স্বপ্নযাত্রা' কারিগর ছিলেন ২৫জন তরুণ বিজ্ঞানী। আমাদের তরুণদের মেধা ধার করে আজকে ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া জয়গান গাচ্ছে। আমরাই কেবল আটকে আছি ফেইসবুক-মোবাইল ফোনের আড্ডার মাঝে, আর না হলে ওয়ারফেজ-আর্টসেলের লম্বাচুলের মাথা ঝাঁকানিতে।
কিছু যদি করার থাকে আমাদেরই আছে। আমার বুড়ো সরকার, রাজনীতিবিদরা কিছু করতে পারবেন না। তাই, তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহবান, এই অযাচিত আড্ডা-গান, অসৎ বন্ধু, সুখ টান কিংবা প্রেমের ধাধাঁয় না আটকে সত্যিই নিজের জীবন ও দেশকে নিয়ে ভাবতে শিখি। হয়তো বা তাতে আমার দেশের দিনবদল না হলেও অন্ততপক্ষে ঘন্টা ঠিকই বদলাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।