আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মতিঝিলের অভিযান কেন যৌক্তিক??

আমি কেবলই আমার মতো আমাদের অনেকের কাছে এখন মনে হচ্ছে যে সেদিন মধ্যরাতের অভিযান অন্যায়, অযৌক্তিক এবং জুলুম। এক্ষেত্রে অনেকেই শুধু মধ্যরাতের অভিযানের সময়টুকুকে গননায় নিয়েছে। এবং শুধু সেরাতের ২ টা ৩০ মিনিটের সময় থেকে মূল্যায়ন করলেও বিষয়টি অন্যায় এবং অযৌক্তিক মনে হওয়াটা স্বাভাবিক। আমি নিজেও মনেকরি যে, যদি শুধুমাত্র একটি নিরীহ সমাবেশের উপরে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় তাহলে সেটা মেনে নেয়া উচিৎ নয়। সম্ভব নয়।

কিন্তু আমরা অভিযানকে সমর্থন করছি কেন? এটাই প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে ৫ তারিখের আরো আগে ফিরে যেতে হবে। আসুন একটি পিছনে ফিরে যাই। হেফাজত ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এটা তাঁদের দাবি।

কিন্তু তাঁদের ১৩ দফা দাবিনামা আক্ষরিক অর্থেই রাজনৈতিক দাবি। এগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে অবশ্যই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আইনে পরিনত করতে হবে। দুনিয়াজুড়ে গোষ্ঠীবদ্ধ কোন শ্রেণী_গোত্রের দাবিনামা রাষ্ট্রীয় আইনে পরিনত করতে হলে তাঁদেরকে জনগনের ম্যান্ডেটের জন্য নির্বাচনে যেতে হবে। জনগন সেগুলোকে গ্রহন করে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসালে তবেই তাঁদের দাবী(মুলত ইশতেহার) বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। অন্য কোন রাজনৈতিক দলের উপরে অযৌক্তিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে দাবি আদায়ের কোন সুযোগ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নাই।

আর এক্ষেত্রে তাঁদের দাবি প্রায় সংবিধানের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ। উপরন্তু অনেক দাবি এমনিতেই প্রচলিত আইনেই সমাধান সম্ভব বলে সরকারের পক্ষে বলা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে সরকারী দলের নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহার। সেক্ষেত্রে হেফাজতের দাবিকে আমলে নেয়ার কোন সুযোগ শাসকদের হাতে নাই। এমতাবস্থায় আমরা দেখলাম গত ৬ এপ্রিল মতিঝিলে ঢাকা অভিমুখে লং মার্চ পরবর্তী একটি সমাবেশে ১৩ দফা ঘোষণা করা হলো।

স্বাভাবিকভাবে একটি প্রক্রিয়া হলো যে, কোন দাবিনামা উত্থাপন করলে পরে সেই দাবি মানতে সরকার পক্ষকে নির্দিষ্ট সময় দেয়া গণতান্ত্রিক রীতি। কিন্তু সেই সমাবেশে দাবিনামা ঘোষণার সঙ্গে কর্মসূচীও ঘোষণা করা হয়। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ৫ তারিখের ঢাকা অবরোধ ছিল। প্রশ্ন হলো, তাঁরা কী আগেই জানতো যে দাবি মানা সম্ভব নয়? তানাহলে কর্মসূচী দিল কিভাবে? দেয়ার কথা সময়। না, তাঁরা সময় না দিয়েই কঠোর কর্মসূচী প্রদান করে সারাদেশে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে।

আর সেই সমাবেশে আমরা দেখেছি বিরোধী দলের দু’জন নেতা শরীরে হাজির হয়ে একাত্মতা প্রকাশ করতে। এর মানে বিরোধী দল সেই ১৩ দফাকে সমর্থন করে। যাহোক, এরই ধারাবাহিকতায় দাবিনামা মানতে ফটিকছড়ির ভুজপুরে চালানো হয় পৈশাচিক তাণ্ডব। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি বিএনপির নেতারা ১৩ দফাকে অস্বীকার করে বক্তৃতা বিবৃতি প্রদান করছে।

বিরোধী দল মূলত ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে মরিয়া ছিল। এরপরে আমরা দেখলাম হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ্‌ আহমদ শফী সাহেব হেলিকপ্টারে উড়ে বগুড়া গিয়ে বললেন, আগামী ৫ মে তারিখে কী হবে আমি জানিনা। এরও আগে হেফাজতের বিভিন্ন কর্মসূচী সভা সমাবেশে নেতারা ঘোষণা করেছে ৫ তারিখে ১৩ দফানা মানলে দেশ চালাবে হেফাজতে ইসলাম। এখন খবর বেরিয়েছে উনারা নাকি মন্ত্রীসভাও ঠিক করে ফেলেছিল। নামের তালিকাও করে ফেলেছিল।

এদেশে বিনোদনে পরিনত হওয়া একটি দৈনিক পত্রিকা ও এর সম্পাদকের বালখিল্যেই যে এসব পরিকল্পনা হয়েছিল সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। শ্রীঘরে যাওয়ার সুবাদে দেশবাসী এসব কথা এখন অবগত। এরমধ্যে ৪ মে শনিবার মতিঝিলে প্রধান বিরোধী দলের নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোট সমাবেশ করল। তাঁদের নেত্রী বললেন, আলেম-ওলামাদের উপরে নির্যাতন বন্ধ করতে হবে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, উনার কাছে আলেম-ওলামা হলো একাত্তরের খুনি-ধর্ষক কতিপয় ব্যক্তি। সঙ্গে এও বললেন যে, আগামীকাল(৫ মে) হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ রয়েছে।

তাঁদেরকে সঠিকভাবে কর্মসূচী পালন করতে দেয়া হোক। উনি কিন্তু বলেন নি যে, হেফাজতের ১৩ দফা দাবী মেনে নেয়া হোক। কেন বলেন নি? কারন এটা নিয়ে উনি ভোটের রাজনীতি করবেন। দাবী আদায় বা বাস্তবায়নের রাজনীতি নয়। তিনি সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখান করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বে-আইনী দাবী মানতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিলেন।

উনারা এই সমাবেশ করেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করে। প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদল এবং হেফাজতে ইসলাম উভয়কেই অনুরোধ করেছিলেন সাভার ট্র্যাজেডির উদ্ধারকাজের সময়ে কোন কর্মসূচী পালন না করতে। কিন্তু উভয় পক্ষই তাঁদের কর্মসূচী বহাল রাখেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হেফাজতের ১৩ দফা নিয়েও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বুঝতে হবে, ৫মে হেফাজতের ঢাকা অবরোধ ও মিটিং।

আগেরদিন ৪ মে উনার(বেগম জিয়া) ৪৮ ঘণ্টা সময় বেধে দেয়ার কারন কী? জনগণ যাতে হুকুম দিলেই রাস্তায় চলে আসে সেজন্য প্রস্তুত থাকতেও বললেন। এটার কারন আমরা ৫ তারিখ সন্ধ্যায়ই জানতে পেরেছি। এরপরে এলো সেই ৫ মে রবিবার। হেফাজতিরা ঢাকা অবরোধ করলেন। এরপরে চাইলেন মতিঝিলে সমাবেশ করতে।

প্রশাসন শর্ত সাপেক্ষে সমাবেশের অনুমতি দিল। অন্যান্য শর্তের মধ্যে প্রধান শর্ত ছিল বিকাল ৫ টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করে স্থান ত্যাগ করতে হবে। হেফাজত মিটিং করল। কিন্তু মিটিং এর আগেই বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ জ্বালাও পোড়াও লুটপাট এরকম নানান তাণ্ডবে দেশ কাঁপিয়ে তুলল। যেন তাঁরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

রীতিমত জঙ্গীবাদের মহড়া। জঙ্গী ভাষায় নেতারা বক্তৃতাও করলেন। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা মতিঝিল ত্যাগ করবে না। এই হলো তাঁদের প্রতিজ্ঞ। সারাদিন কোরআন পোড়ানো থেকে শুরু করে হেন কোন কুকর্ম নাই যা তাঁরা করেন নাই।

যদিও অনেকে বলছে এগুলো নাকি জামাত-বিএনপির অপকর্ম। কিন্তু হয়েছে হেফাজতের পর্দায় ঢেকে। এই দায় হেফাজতের এড়ানোর সুযোগ নাই। হেফাজতের অনড় অবস্থান, বেগম জিয়ার আগেরদিনের আল্টিমেটাম কেমন যেন একইসুত্রে গাঁথা বলে মানুষ ভাবতে শুরু করল। এমতাবস্থায় সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক সম্মেলনে হেফাজতিদের স্পষ্টভাবে আইন মেনে ৫ টার মধ্যে ঘরে ফিরে যেতে অনুরোধ করলেন।

নইলে সরকার জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় করনীয় সবকিছু করবে বলেও জানিয়েছিলেন। এটাই সরকারের কর্তব্য। কিন্তু হেয়াজতিরা অবস্থান নিয়ে বসে পড়লেন। সেই বসে পড়াটা ছিল অবৈধ-বেআইনি। এটা ছিল ওয়াদা বরখেলাপ।

পক্ষান্তরে দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে জ্বালাও পোড়াও মানুষ কোনোভাবেই গ্রহন করে নাই। ঠিক এ মুহূর্তে শামসুজ্জামান দুদু সাহেব বললেন, হেফাজতিরা ঢাকা বাসীর অতিথি। তাঁরা মুসাফির। তাঁদের যেন কষ্ট না হয় সেজন্য ঢাকাবাসীকে প্রয়োজনীয় সকল কিছু নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর আহবান করলেন। রাত ৯টার দিকে বেগম জিয়ার বরাতেও বিভিন্ন মিডিয়ায় স্ক্রল দেখানো হলো, ঢাকাবাসীকে তিনি(বেগম জিয়া) হেফাজতিদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন।

সঙ্গে পরেরদিন(৬মে) দুপুরে বিএনপি অফিসের সামনে জনসভার ঘোষনাও এল। এতক্ষণে মানুষ বুঝলো আগেরদিনের আল্টিমেটামের রহস্য! হেফাজতিরা মতিঝিলে অবস্থান নিয়ে বসে পড়বে। ঢাকাবাসী মানে জামাত-বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তায় বেরিয়ে আসবে। ফজরের নামাজ পড়েই সবাই মতিঝিল অভিমুখে যাত্রা করবে। দুপুর পাড় করতে পারলে বেগম জিয়া নয়াপল্টনের সমাবেশ আর মতিঝিলের অবস্থান একাকার করে ফেলবে।

চারিদিকে শুধু পাঞ্জাবি-পায়জামা-টুপি পরিহিত আলেম-ওলামা থাকবে। যদিও সবাই থাকবে হেফাজতের নামে জামাত-বিএনপি। এমতাবস্থায় পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আইন প্রয়োগ করতে নিশ্চয়ই অস্বীকার করবে। কেননা, এরকম নিরীহ আলেম-ওলামা-মাদ্রাসা ছাত্রদের উপরে বলপ্রয়োগ করা সত্যিই কঠিন! এরপর থেকে দেশ চালাবে হেফাজত-জামাত-বিএনপি। এইবার বলুন এভাবে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের পতনের ষড়যন্ত্র আমাদের কাম্য? নাকি সরকার এটি হতে দিতে পারে? সারাদিনের তাণ্ডবের পরে অবৈধভাবে অবস্থান করতে দিবে কেন? মতিঝিলে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সোনালী, জনতা, রুপালী, অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও ভল্ট রয়েছে।

এখানে রয়েছে দেশের সকল রিজার্ভ। অন্যান্য প্রায় সকল বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়, ভল্ট রয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন বীমা ও অসংখ্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়। এরকম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হেফাজতিরা যেভাবে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর চালিয়েছে, যদি ব্যাংকগুলো পূড়িয়ে দিতো? তাহলে হেফাজতের কয়েক হাজার বাঁচলেও ষোল কোটি মানুষ ঠিকই লোলা-ল্যাংড়া হয়ে যেতো। এই প্রেক্ষিতে মধ্যরাতে উচ্ছেদ অভিযানের বিকল্প নাই।

এটাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এরকম অভিযানে যখন নামে তখন বিপরীত পক্ষ থেকে প্রতিরোধ করা হলে রক্ত ঝরার সম্ভাবনা শতভাগ। আর আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পিছিয়ে আসার কোন সুযোগ থাকেনা। পিছিয়ে আসা মানে সরকারের জন্য ফেল মার্ক নিশ্চিত। আর সেটা যে হতে পারেনা এটা পাগল ও শিশু ছাড়া সবাই বুঝে।

আমাদের জন্য শান্তির সুসংবাদ হলো হেফাজতের নেতাকর্মীরা প্রাথমিক ট্রিটমেন্টেই মতিঝিল ছেড়ে দিয়ে রক্তপাত এড়াতে সহায়তা করেছেন। আচ্ছা, বিএনপি কী ১৩ দফা সমর্থন করে? তাঁরা ক্ষমতায় গেলে কী ১৩ দফার বাস্তবায়ন করবে? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.