আমার লেখালেখি এবং চিন্তাভাবনা নিয়েই আমার ব্লগ।
দেশের শেয়ারবাজারে চলছে বলগাহীন দরপতন। আগের দফায় পতন ঠেকাতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নানা ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার সরকার ও বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছে।
এ অবস্থায় পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।
আগের দিনের মতো গতকাল সোমবারও তাঁরা লেনদেন ছেড়ে রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় বিনিয়োগকারীরা মতিঝিলের বেশ কয়েকটি ভবনের কাচ ভাঙচুর করেন।
এদিকে, আগ্রাসীভাবে শেয়ার বিক্রির অভিযোগে পাঁচ ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে এসইসি। আজ মঙ্গলবার হাউসগুলোতে যথারীতি লেনদেন শুরু হবে। হাউসগুলো হলো—আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, পিএফআই সিকিউরিটিজ, অ্যালায়েন্স সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এবং আইআইডিএফসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড।
লেনদেন চালু করার অনুমোদন পেলেও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর প্রধান নির্বাহীদের এক মাস নিষ্ক্রিয় রাখার আদেশটি বহাল রাখা হয়েছে। এসইসির এক জরুরি সভায় গতকাল এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভাশেষে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাউসগুলোর লেনদেন তদন্ত শেষে তদন্ত কমিটি গত রোববার কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাজার পরিস্থিতি: ডিএসইতে গতকাল সাধারণ মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৩২৫ বা ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ কমে ছয় হাজার ৩৯৪ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এ নিয়ে টানা ছয় দিনের দরপতনে মূল্যসূচক কমেছে এক হাজার ১৭৮ পয়েন্ট। এতে সূচক সাম্প্রতিককালের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে। এর আগে গত ২০ জানুয়ারি ডিএসইর মূল্যসূচক ছয় হাজার ৩২৬ পয়েন্টে নেমে এসেছিল। এভাবে দরপতনে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা যে যেমন পারছেন শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।
কিন্তু বাজার কার্যত ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ায় লেনদেনও উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিনিয়োগকারীরা এখন সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের দিকে চেয়ে আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসইসির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে এসইসির করণীয় সবকিছুই করা হয়েছে। এখন সরকারের দিক থেকেই আস্থা ফেরানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
যোগাযোগ করা হলে এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বাজারে যথেষ্ট সংশোধন হয়েছে।
অনেক কোম্পানির শেয়ারের দামই তার মৌলভিত্তির কাছাকাছি অবস্থায় চলে এসেছে। এ অবস্থায় বাজার একটি জায়গায় গিয়ে স্থিতিশীল হবে। তাই এ সময় বাজারে আর কোনো হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না। কারণ বাজারে যত বেশি হস্তক্ষেপ করা হয়, তত বেশি অস্থিরতা বাড়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও ডিএসইর সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে বলা হচ্ছে এ ঘটনার জন্য বিএনপি দায়ী।
এর আগেও একই কথা বলা হয়েছিল। এসব কথা বলে ঘটনার আসল নায়কদের আড়াল করা হয়। তিনি বলেন, বাজারের যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল, তাকে সঠিক খাতে প্রবাহিত না করে নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। এটা অর্থনীতির জন্য একটা ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় সরকারের উচিত হবে বাজারের স্থিতিশীলতা ফেরাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
হতাশ বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ: আগের দিনের মতো গতকাল সোমবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনের সড়কটি বিনিয়োগকারীরা প্রায় সারা দিন অবরোধ করে রাখেন। এ সময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অনেক বিনিয়োগকারীকেই কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। এর মধ্যে একজন হঠাৎ করে সড়কদ্বীপে থাকা একটি সাইনবোর্ড ভেঙে নিয়ে সেখানে কর্তব্যরত ফটোসাংবাদিকদের দিকে তেড়ে আসেন। পরে কয়েকজন বিনিয়োগকারী তাঁর কাছ থেকে সাইনবোর্ডটি কেড়ে নিয়ে সান্ত্বনা দেন।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের মধ্যেও কোরাম পূর্ণ হওয়ায় বেলা ১১টায় ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়।
আর লেনদেন শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যে সাধারণ মূল্যসূচক ২৩৭ পয়েন্ট নেমে যায়। এরপর সূচক কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু এ সুযোগে বিনিয়োগকারীরা বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দিলে ১১টা ৫০ মিনিটের পর আবার পতন শুরু হয়, যা সারা দিনই অব্যাহত থাকে। দুপুর একটার দিকে সূচক ২৮০ পয়েন্টের মতো কমে গেলে বিনিয়োগকারীরা একে একে রাস্তায় নেমে আসেন। প্রথমে তাঁদের সংখ্যা কম থাকলেও কিছুক্ষণের মধ্যে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস থেকে বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভে অংশ নেন।
এ সময় তাঁরা ডিএসইর সামনের সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন। বিক্ষোভকারীরা কয়েক দফা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। বিনিয়োগকারীরা অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এসইসির চেয়ারম্যান ও ডিএসইর সভাপতির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং তাঁদের পদত্যাগেরও দাবি করেন। একপর্যায়ে পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে একজন বিনিয়োগকারী পুলিশকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘আপনারা আমার বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে একটি গুলি করেন। আমি মরতে চাই।
আমি শেষ হয়ে গেছি। এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরাই ভালো। ’
একপর্যায়ে বেশ কিছু বিনিয়োগকারীকে খালি গায়ে জুতামিছিল করতে দেখা যায়। বেলা দুইটার দিকে একদল বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারী মতিঝিলের জীবন বীমা টাওয়ারের (এসইসির কার্যালয়) নিচতলায় কাচ ভাঙচুর করেন। এ সময় চার-পাঁচটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মতিঝিল শাপলা চত্বরের পাশে অবস্থিত আইএফআইসি ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এবং ডিএসই ভবনের বিপরীত পাশের জনতা ব্যাংকের কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কাচ ভাঙচুর করেন বিনিয়োগকারীরা। এ সময় পুলিশ তাঁদের ধাওয়া দিলে বিনিয়োগকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করেন। এ ছাড়া ডিএসইর সভাপতি শাকিল রিজভীর ব্রোকারেজ হাউসসহ কয়েকটি হাউস ভাঙচুরের খবরও পাওয়া যায়।
তদন্তে প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা: গত ৮ ডিসেম্বর দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে নজিরবিহীন দরপতনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদকে প্রধান করে চার সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন—নির্বাহী পরিচালক এ টি এম তারিকুজ্জামান, পরিচালক মাহবুব আলম ও সহকারী পরিচালক তানিয়া শারমিন। এ কমিটিকে ১০ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত শেষ করার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তাদের সাম্প্রতিক দরপতনের কারণও খতিয়ে দেখার জন্য সময় বাড়িয়ে দেয় এসইসি। জানা গেছে, কমিটি সন্দেহভাজন ১৭টি ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনের তথ্য খতিয়ে দেখছে।
এর মধ্যে ডিএসইর দুজন প্রভাবশালী পরিচালকের ব্রোকারেজ হাউসও রয়েছে।
গতকাল তাঁরা দুজনই এসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের ব্যাপারে তদন্ত না করার অনুরোধ করেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।