HSC এর রেজাল্ট প্রকাশিত ।
চারপাশে হাসিতে আনন্দে – বেদনা বিমর্ষতায় ভরা ।
যারা উড়িয়ে দিয়েছে সব ভ্রুকুটি – গোল্ডেন / যতটুকু দরকার স্বপ্নের ইউভার্সিটির জন্য – পেয়ে গেছে – তাদের ,
এবং যারা এখন মনে করছে ‘আমাদের দিয়ে কিছুই হবে না’ তাদের জন্য কিছু না লেখে পারলাম না । [সাইন্স এর পোলাপাইনের জন্য বিশেষতঃ । কেননা বাকি বিভাগগুলোর ভর্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আমার আইডিয়া zero]
আমরা এখন ৩ ভাগে বিভক্ত ।
মানে তোমরা আরকি । যারা এবার HSC পরীক্ষার ফলাফল পেলে ।
এই রেজাল্ট হজম করার আগেই ৩ শ্রেণীর যোদ্ধাদের-ই জেনে রাখা উচিত – ইউ আর হাফওয়ে দেয়ার ।
‘দেয়ার’ বলতে সাফল্য এবং ব্যর্থতা দুটোই বুঝাচ্ছি – এখন স্টিয়ারিং শক্ত করে না ধরলে ব্যর্থ হয়ে যাবে নিঃসন্দেহে । অথবা সেমি-ব্যর্থ [আমার মত] ।
এমনকী গোল্ডেন বাবুরাও ।
আর ধরলে ? তোমার সাফল্য ঠেকাচ্ছে কে ?
৩ শ্রেণীঃ
১। গোল্ডেন বয়জ & গার্লস, ২। একটুর জন্য প্রত্যাশা মিস করনেওয়ালা-ওয়ালী, ৩। F গ্রেড পেয়ে কষ্টে থাকা বন্ধুরা
~~১ম শ্রেণীঃ Golden 5 – ইয়া----হু স্টেটে আছে ।
~~
নিঃসন্দেহে ইয়াহু স্টেটে থাকবে !
আমার অভিজ্ঞতাঃ
July 18,2012। হাতে ভাঙ্গাচোরা সিটিসেল CDMA হ্যান্ডসেটটা নিয়ে ডাইনিং রুমে পাইচারী করছি । 5 টা পর্যন্ত ‘ড্যাম কেয়ার’ একটা চেহারা নিয়ে ডেস্কটপে FIFA 10 খেলেই যাচ্ছিলাম একটার পর একটা ম্যাচ । 6 টায় ডিটেইলস রেজাল্ট দিবে বলেছিল । ভাইয়া ল্যাপটপে বাংলালায়ন লাগিয়ে মাঝে মাঝে চেক করছে ।
কিন্তু সার্ভার ডাউন খেতে খেতে ছোট্ট রেজাল্টটা মোবাইলেই আগে এসেছিল নেটের চেয়ে । আশায় আছি ডিটেইলসটাও আসবে আগে । মাঝে মাঝে মেসেজ দিচ্ছি । ব্যাক করছে ছোট্ট একটা মেসেজ । ছোট করে GPA: 5.00 লেখা ।
হঠাৎ পেলাম পুরোটা ।
গুনলাম – এক,দুই,তিন,চার,পাঁচ,ছয় ... ভুল করলাম না তো ? যদি চিল্লাই আর দেখি ভুল তাহলে সবাই কতটা কষ্ট পাবে ! আরো দুইবার গুনলাম । নাহ , এক,দুই,তিন,চার,পাঁচ,ছয় ... সবগুলোই এবার ।
ডান হাঁটু গেড়ে বসে ডাইনিংরুমের মেঝেতে ঘুষি দিয়ে ভয়েস সপ্তম আকাশে তুলে বললাম , ‘ইয়াহ ! প্রথমবারের মত গোল্ডেন’ তারপর ফিসফিস করে ‘ফাইভ’
আমার মত পাবলিক যদি এমন উচ্ছ্বাস দেখাতে পারে তোমরা প্রাণবন্ত তরুণ-তরুণী – তোমরা কেন দেখাবে না ?
এতটুকু পর্যন্ত ঠিক আছে ।
এরপর কোচিং এ পড়াশোনায় কিন্তু আর জোর থাকে না আগের মত – 90% গোল্ডেনের জন্য এটা প্রযোজ্য ।
ফলাফল ? 50% গোল্ডেন পাওয়া স্টুডেন্ট কিন্তু কোন পাবলিক ইউনভার্সিটিতে চান্স পায় না ।
আমার কথাই বলি । রেজাল্ট পেয়ে বাসার সবাই খুশি – এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উড়াল দিলাম ঠিক তিনদিনের মাথায় [প্রথম রোজা] ঢাকা থেকে ব্রাক্ষণবাড়ীয়া । প্বারেম মানে না দূরত্ব ! বাসায় দেরী করলে তো খুব একটা ঝাড়ি খাওয়া লাগবে না । সোজা গার্লফ্রেন্ডের পাশে ।
তারও ৩০ দিন পরেই আবারও । ঢাকা – ব্রাক্ষণবাড়ীয়া ট্রিপ । ঈদের দিন ।
মাঝখানের দিনগুলো ?
মাঝের দিনগুলো তো নির্ঝঞ্ঝাট – সন্দেহমুক্ত ট্রিপ মারার প্ল্যান করতে করতে মস্তিষ্ক ব্যস্ত থাকে ।
Omeca তে কোচিং করি ঠিকই – কিন্তু কেমিস্ট্রি ক্লাস একটাও করি না ।
করলাম না ক্লাস – কি হইছে ! – টাইপ ভাব নিয়ে সোজা বেরিয়ে যাই আমরা চার বন্ধু ।
এদিকে বাসায় বকাঝকা কম করে – সারাদিন থাকি মোবাইল নিয়ে । মেসেজিং করি , রাতে ফোনে কথা বলি – ওদিকে যে অ্যাডমিশনের আর সময়ই নাই ওটা মাথায়-ই নাই ।
অত্যাধিক আনন্দে সহজাত সতর্কতা বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে ।
খেয়াল হল অক্টোবরের এক তারিখে ।
১০ তারিখ থেকে সব পরীক্ষা শুরু আমার । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে শুরু । কেমিস্ট্রি কিছুই পারি না । বায়োলজী – টাচ ও করি নি । ইঞ্জিনিয়ারিং পর্যায়ের ম্যাথ তো পারি না ।
ভার্সিটী লেভেলের ক্ষেত্রে বস – কিন্তু ওই বসদের ইঞ্জিনিয়ারিং লেভেলের প্রশ্নে ‘সিটিং ডাক’ হওয়া ছাড়া উপায় নেই ।
শেষে ? স্বপ্নের BUET এ পজিশন আসল 1173rd ।
BUET এ পড়া হল না । ধুলিস্যাৎ হল একটা স্বপ্ন , হয়ত একে এড়ানো যেত গোল্ডেন পাওয়ার পর আগের ধারা ধরে রেখে পড়াশোনা চালিয়ে গেলেই ।
কাজেই – ভাইয়া & আপুরা , গোল্ডেন পেয়ে দয়া করে গা ভাসিয়ে দিও না ।
ব্রেইন কিন্তু বলবে ‘তোমার ধার কমিয়ে নিচ্ছ’ কিন্তু নিজেকে বোঝাতে চাবা ‘না – আমি আগের মতই আছি’ আসলে কিন্তু আগের মত থাকবা না । একটু বেশী জোর করে পড়া লাগবে তোমাদের কাল থেকে । কারণ আজ সেলিব্রেশনের মুড যেটা তৈরী হল সেটা ৭ দিনের আগে যাবে না – আর এই ৭ দিনে তোমাদের গতি কমে যাবে অনেক ... আজকের আগে যা ছিল তা থেকে অনেক কম ।
মনে রেখ – গোল্ডেন5 টা কেবল মাত্র ভর্তিযুদ্ধে লড়াই-এর টিকেট । তোমরা রিং-এ ঢোকার টিকেট পেয়েছ ।
প্রাক – বাছাই পর্ব । এবার হবে আসল যুদ্ধ ।
কাজেই , পিস্তল – রাইফেল যা আছে রিলোড কর । মেকানিজমে তেল দাও ।
ম্যাগাজিন ছুড়ে ফেলে দিও না ।
বেস্ট অফ লাক ।
~~২য় শ্রেণীঃ গোল্ডেন / স্বপ্নের ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি-পরীক্ষার যোগ্যতা অর্জনে সদ্য ব্যর্থ সেমি-হতাশ,সেমি ক্ষিপ্ত জনতা – ‘কি হইল এইটা’ স্টেটে আছে । ~~
কি হইল স্টেটেই তো থাকবা ! তবে চিন্তাটা উলটে নিতে হবে । অনেকটা ‘গ্লাসের অর্ধেক খালি !!’ আর , ‘গ্লাসের অর্ধেক ভর্তি !!’ এই দুইটি চিন্তাই যেমন সঠিক ।
যেহেতু, যেটা হয়ে গেছে সেটা পালটানো যাচ্ছে না – ‘কি হইতে পারে’ স্টেটে নিজেকে সুইচ করে নাও ।
এক –
BUET / ইঞ্জিনিয়ারিং বা যে লক্ষ্য ছিল [যার আশা বিলীন হল মাত্র] তার আশা একেবারেই ছেড়ে দেওয়া । লাগবে না আমার ইঞ্জিনিয়ারিং – আমার লাগবে ব্রাইট ক্যারিয়ার - অ্যাট অ্যানি কস্ট । ঢাকা ভার্সিটির অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স বা অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রিতে পড় – ঠিকমত পড়লে জীবনে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না । ম্যাথ – বায়োলজি ডিপার্টমেন্টেও বেশ কিছু ভাল ভাল সাবজেক্ট আছে । CSE আছে – যদিও না পড়াই উত্তম ওখানে ।
একই কথা খাটে অন্যান্য ভার্সিটিগুলোর জন্যও ।
যদিও – ঢাকা ভার্সিটির কথাই আলাদা। আর ওখানে পড়াটা অনেকের কাছেই BUET থেকেও বেশি আকাঙ্ক্ষার ।
আমার ভাই ছিল BUET EEE ’07 । ওর ছিল 3টায় A আর 3টায় A+ - যাকে বলে ঠেলে ঠুলে GPA 5 ।
তারপরেও BUET এ তার পজিশন আসল 75th . আজকের দুনিয়ায় BUET এ ওই রেজাল্টে পরীক্ষা দেওয়া যায় না - মানি - তাই বলে ভাল ভার্সিটিগুলোয় সেরকম রেজাল্ট করা যাবে না তাও কিন্তু না ! আমার ভাই বেচারার মাঝে মাঝেই আক্ষেপ হত ঢাকা ভার্সিটির অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স পড়তে কেন চেষ্টা করল না ।
ভাইয়ার ফ্রেন্ড মাশরুক ভাইয়া , উনিও EEE ’07 । উনি ২০০ এর ভেতরে ছিলেন ঢাকা ভার্সিটিতে , BUET এ ১০০ এর মধ্যে । ঢাকা ভার্সিটিতে জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার তার শখ ছিল । পরিবারের চাপে BUET বেছে নিতে হল তাকে ।
কিন্তু তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে EEE পড়তে হচ্ছে এই দুঃখ কখনই ভুলে উঠতে পারেন নি । ঠিকমত ক্লাস করতেন না – মাঝে মধ্যে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়তেন নিরুদ্দেশ যাত্রায় – জীবন নিয়ে অতিমাত্রায় হতাশা ছেয়ে ধরে তাঁকে ।
কাজেই – BUET –ই লাইফের সবকিছু – তা কিন্তু না !
অথবা – অন্য যে ইউনিভার্সিটির চিন্তাই তোমার স্বপ্নে থাকুক । সেটাই চূড়ান্ত লক্ষ্য না !
একটু শক্ত হও । আমরা মাত্র ১৮ – ১৯ বছর বয়েসী ! [আমিও 19 ] আমাদের মনের জোর এত কম অবশ্যই না যে নতুন লক্ষ্য ঠিক করে নিতে পারব না !
ধাতস্ত হওয়ার জন্য ২৪ ঘন্টার বেশী সময় নিও না ।
যারা ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং করছিলে – দ্রুত বায়োলজী পড়া শুরু কর ।
আর মানসিকতা পালটে ওইসব ইউনিভার্সিটি মুছে ফেল । নতুন লক্ষ্য সৃষ্টি কর - তোমার রেজাল্ট যেসব ভার্সিটিতে তোমাকে অ্যাপ্রুভ করছে – সেগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম ইউনিভার্সিটিকে ।
পড়া যাতে হতাশায় না কমে যায় । তাই বলে মাথা গরম করে উলটা-পাল্টা পড় না ।
ঠান্ডা মাথায় পড় । যা যা পড়া লাগবে ভালমত তাতেই বেশি সময় আর গুলোতে কম সময় দাও ।
বেশি পড়ায় কোন ভাল হয় না – ইফেক্টিভলি পড়ায় তোমার উপকার হবে । সাফল্য আসবে ।
‘শেষ বলে কিছু নেই
সে শুধু শুরুর আরেক রং ’
- চমক হাসান ভাই-এর গান মনে পড়েই যায় ।
তোমার নতুন লক্ষ্যে যুদ্ধ কেবল শুরু কিন্তু !! ভেঙ্গে পড়ার / থেমে যাওয়ার মানসিকতা নিয়ে যাতে ১ টা দিনও সময় নষ্ট না হয় । !!
পিক আপ দ্য রাইট গিয়ারস ! দ্য ওয়্যার ইজ অ্যাবাউট টু বিগিন !!
দুই –
BUET আমার আর আমি BUET এর ! – চিন্তাশীল জনতা । অথবা কাঙ্ক্ষিত ইউনিভার্সিটি [সে যেটাই হোক] এর জন্য ‘পাগলা’ জনতা ।
তোমাদের হাতে একটাই কার্ড আছে ।
সামনের বছর আবার HSC পরীক্ষা দেওয়া ।
জানি – মেনে নেওয়া কঠিন । কিন্তু বাস্তবতা – নির্মম বা আর যাই বল না কেন – এটাই ।
মানুষের জীবন আল্লাহ দিলে এখনও স্বাভাবিক পর্যায়ে ৬০ বছরের [অ্যাভারেজ] । তোমার ৪০ বছর শান্তির জন্য অবশ্যই ১ বছরের আত্মত্যাগ খুব একটা গুরুতর কিছু না !
যদিও মুখে বলতে বা এভাবে ভাবতে সোজা মনে হলেও যে বেচারা/বেচারীকে একটি একটি করে দিন গুনতে হচ্ছে তার জন্য এটা যে কত বড় মানসিক চাপ – সে কেবল ভুক্তোভোগী-ই বোঝে ।
হ্যাঁ – এটা তোমার শেষ সুযোগ – আর এই দফায় কোন ভুল করা যাবে না – কথা সত্য ।
কিন্তু এটা বলে নিজেকে স্বান্তনা দিতে পার – “তবুও এটা একটা সুযোগ তো । এইবার খাইছি তোমাকে HSC – ঊড়ায়া দিব সবকিছু নেক্সট ইয়ার”
এতটুকু যদি করতে পার – পেয়ে যাবে স্বপ্নের ইউনিভার্সিটিকে ।
গ্যারান্টীড !
তবে তোমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারলে কাল থেকেই পড়া শুরু করার কোন দরকার নেই ।
ঈদটা পর্যন্ত বই না ছুলে !
একটু ফ্রেশ হয়ে নেওয়ার চেষ্টা কর পড়াশোনার বাইরে থেকে ।
ঈদটা গেলেই কোপাবা ।
কাজে দিবে – ব্রেইন টনিকের মত ।
নতুন উদ্যম পাবে ।
মজা নিচ্ছি না – আসলেই !! দেখো !
~~৩য় শ্রেণীঃ এক বা একাধিক বিষয়ে F গ্রেড দেখে সদ্য বর্জ্রাহত জনতা – ‘আমারে কেউ মাইরা লা’ স্টেট ~~
এটা তোমার জীবনের সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর সময় – এই কথা যে অস্বীকার করবে নগদে তার দুই গালে দুইটা বসায়া দিবা ।
সিনিয়র জুনিয়র দেখবা না । হুম ?
তোমার পরিণতি ৩ ধরণের –
১।
ছাদ-টাদ থেকে লাফ মেরে নিজেকে শেষ করে ফেলা । ধুর - রাখলাম না ‘ইয়ের’ জীবন ।
২। ‘আমি কি?আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না’ টাইপ চিন্তাভাবনা করে বাকি জীবনে আসলেই কিছু না অ্যাচিভ করে হতাশায় জীবন্মৃত হয়ে থাকতে পার ।
৩।
সব হতাশার বিরুদ্ধে মনের কোণায় কোণায় জমে থাকা প্রতিটি বিন্দু মানসিক শক্তি একত্র করে এই বিভ্রান্তিকর দশা থেকে বেরিয়ে এসে সঠিক প্ল্যানের ওপর চলা । বাকি জীবনে এতকিছু অর্জন করবে তুমি – একসময় হেসে উঠবে আজকের কথা ভেবে ।
আশা করি প্রত্যেকেই চাও ৩ নং পথ বেছে নিতে ।
তবে কথা হল – কি সেই সঠিক প্ল্যান ? নিশ্চয় – ‘HSC দিয়ে কি পাইলাম ! সবছেড়ে ছুড়ে জার্মানী যামু গা’ টাইপ চিন্তা কোন কাজে আসবে না ।
জার্মানী যাবা – যাবা না কেন ?
সামনের বছর HSC দিয়ে , স্বদেশের মাটি থেকে ব্যাচেলর অফ সাইন্স ডিগ্রী নিয়ে জার্মানী যাবা মাস্টার্স করতে ।
তারপর তোমাকে PhD করতে হবে না ?
তোমার জন্য এসব নয় - ভাবছ তো ? মোটেই না !
মনের প্রতি কোণে জমে থাকা শক্তি একত্রিত কর !
সামনের বছর HSC দিয়ে উড়াতে হবে ! অনেক কাজ বাকি । তোমার অবসর ভাবছ !? আরে নাহ !
আমার অভিজ্ঞতা [হ্যাঁ বাবা , ফেইলের অভিজ্ঞতা , নিজের] :
ক্লাস 9 , 1st টার্ম পরীক্ষা ।
নতুন ডেক্সটপ পেয়েছি গত বছর নভেম্বরের ২৯ তারিখ ।
১৯৯৮-২০০৩ বয়েসকালীন প্রথম ডেক্সটপ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর থেকে PC-hungry ছিলাম । কাজেই নতুনটাকে পেয়ে শুষে খাচ্ছিলাম ওটাকে ।
একদম মে চলে এসেছে পরের বছরের খেয়ালই নাই !
উড়াধুরা গেমিং-এই দিন যায় – পড়াশোনার সময় কোথায় বাবা !
ফিজিক্স পরীক্ষা দিয়ে রাতে বই দেখেই বুঝলাম খুব বেশি হলে ১০ পাচ্ছি ৫০ এ ।
পাস নম্বর ১৪ ।
তাও মিরাকলের আশায় থাকলাম ।
রেজাল্ট দিল ।
ফিজিক্সে ১০ না – ৮ পেয়েছি ।
সুন্দর করে লাল কালি দিয়ে একটা ৮ লেখা ।
খোদ শয়তানের মত লাগল ওটাকে ।
ক্লাস এইটে এ আমি ছিলাম স্কুলে 4th । নাইনের ফার্স্ট টার্মের রেজাল্ট দিতেই নিজেকে খুঁজে পেলাম আস্তাকুড়ে ।
বুঝলাম – আমার কাহিনী এখানেই শেষ ... আর কোনদিন কিছু হবে না আমাকে দিয়ে ।
শুধু ফিজিক্স-ই তো না – আর সাবজেক্টগুলোর ২টায় B , ১টায় A আরগুলোয় A- ... নাও ঠেলা !
ফিজিক্সের ফারুক স্যার প্রথম ক্লাসেই বললেন, ‘কেউ কি ফিজিক্সে ফেইল করেছ?’
গোটা ক্লাসে আমি একা দাঁড়ালাম । এইটে বৃত্তি কোচিং এ প্রথম ১০ জনকে আলাদা করে কেয়ার দেওয়া হত । স্যার আমাদের বিজ্ঞান নিতেন ।
তবে আমি দাঁড়ানোর পর মনে হল না স্যারের আগের কথা মনে আছে ।
একজন ফেইল করলে আগে সে কি ছিল বা তার কি করার সামর্থ্য আছে – সেটার দিকে কেউ নজরটাও দেয় না !
এভাবে সবার কাছে অবহেলিত হতে হতে সে নিজেও ভাবে ‘আমি এরকমই – এতটুকুই তো আমার দৌড়’
যা হোক – আমি একা দাঁড়ালাম গোটা ক্লাসে ।
স্যার আমাকে সবার সামনে নিয়ে গেলেন ।
মহাকর্ষীয় ধ্রুবকের মান জানতে চাইলেন ।
বললাম ।
একক জানতে চাইলেন ।
ভুল বললাম ।
‘শুনেছ একক কি বলেছে ?’ গোটা ক্লাসের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন তিনি উচ্চস্বরে । মুখে এক চিলতে হাসি । ‘নিউটন বলেছে’
কি খুশী উনি ।
দাঁতে দাঁত চেপে ফিরে আসলাম নিজের সীটে । বুঝতে পারছিলাম – আমার দশা অতি করুণ ।
মাথায় কিছুই নাই ।
তাই বলে সেটা ভরে নিতে তো কেউ মানা করেনি আমাকে ।
এর আগে প্রতিদিনই রাস্তায় পার হতে হতে ভাবতাম কোন গাড়ি কেন আমাকে চাপা দেয় না !
আত্মহত্যা করলে চিরস্থায়ী জাহান্নাম – এইটুকুই আমাকে বিরত রাখল ।
ভাইয়া নটর ডেম কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আম্মু,আমি আর ছোট ভাই ঢাকায় থাকি ।
আব্বু একা একা কষ্ট করে থাকে ব্রাক্ষণবাড়ীয়া ।
ZFCL এ ।
তখন ভাইয়া বুয়েটে ।
আব্বু আম্মুকে ফোন করে বলল , ‘তোমরা চলে আস । ঢাকায় থাকার দরকার নাই । ছেলের অবস্থা দেখেছ !! আরেকটাকে বল BUET হলে সীট নিতে ।
’
না – কোথাও সাপোর্ট নেই । কেউ বলার নেই ‘তুমি পারবে। ’ । ফ্যামিলির আমার ওপর বিশ্বাস নেই । ফিজিক্সের ফারুক স্যার তো রেগুলার আমাকে ক্লাসে দাঁড় করায় ।
ক্লাসমেটরা সামনাসামনি সহানুভূতি দেখায় – অনেকে আবার পিছে হাসে ...
আগে তো একদমই পড়তাম না । এখন মাঝে মাঝে পড়ি ।
সেদিন এক বাসার সামনে জমা করে রাখা ইটে ঘুষি মারলাম । 2nD টার্ম পরীক্ষার আর মাত্র ২ দিন বাকি ।
ইটস নাউ ... অর নেভার ।
কারণ যদি দ্বিতীয় বার আমার আরেকটা ফেইল আসে – আর আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না ।
ফলাফল – 2nd Term এ ফিজিক্সে ৫০ এ ৪৬ পেলাম । ৯টার মধ্যে ৮টায় A+ , ম্যাথে ৯৯ , ১০০তে । যা ক্লাস থ্রির পর প্রথম পেলাম ।
বুঝলাম – শেষ বলে কিছু নেই ... আসলেই , এটা শুরুর-ই আরেক নাম ।
ও ! ক্লাস নাইনে 1st Term এর অস্বাভাবিক বাজে রেজাল্টের পরও ক্লাস টেনে ঊঠি 3rd পজিশনে থেকে ।
হয়ত স্কুলের টার্ম পরীক্ষার কাছে HSC কিছুই না । কিন্তু – আমি নিজেকে দিয়ে অনুভব করি – ট্রাস্ট মি ! ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তোমরা ।
বি রেডী !!
সামনের একটা বছর বেশ ব্যস্ততায় যাবে তোমাদের ।
HSC দিতে হবে , যারা আজ তোমাকে নিয়ে মজা করে তাদের মুখ চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে ...
পারবে তুমি – আমি বিশ্বাস করি ।
_________________________________
সবশেষে – প্রত্যেক শ্রেণীকেই বলি – বেস্ট অফ লাক !
সামনে কঠিন সময় ।
কিন্তু আমরা পারব ।
আমাদের পারতেই হবে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।