দেশের ১০টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৩ শিক্ষাবর্ষের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল গতকাল প্রকাশিত হয়েছে।
এই পরীক্ষায় এবার গড় পাসের হার ৭৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৮ হাজার ১৯৭ জন। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৬১ হাজার ১৬২ জন।আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭১ দশমিক ১৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৬ হাজার ৭৩৬ জন। মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৯১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ৯ জন।
আর কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৬৫৮ জন। পাসের হারের দিক থেকে এবার সিলেট শিক্ষাবোর্ড (৭৯.১৩) শীর্ষে এবং চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড (৬১.২২) সবচেয়ে কম। বিদেশি শিক্ষাকেন্দ্রে অংশগ্রহণকারী ১৬৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৪৮ জন পাস করেছে। পাসের হার বিবেচনায় এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা এগিয়ে।
১০ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯১ জন পরীক্ষার্থী পাস করেছে। ঢাকা বোর্ডে সেরা হয়েছে রাজউক উত্তরা কলেজ। গতকাল সকালে সব শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ফলাফলের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন। এরপর দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জামায়াত-বিএনপির আন্দোলনের নামে জালাও পোড়াও হরতালের কারণে পরীক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছে। অনেকে ঠিকমতো পরীক্ষার হলেও যেতে পারেনি। তিনি বলেন, এবারও পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যেই ফল প্রকাশ করেছি।
প্রতিবছর পাসের হার এবং জিপিএ-৫ বাড়লেও এবার কেন এত কমে গেল জানতে চাইলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল কাসেম মিয়া বলেন, হরতালের কারণে এবারের এইচএসসির ৪১টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। অনিশ্চয়তার মধ্যে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়েছে।
কখন পরীক্ষা হবে তা নিয়ে চিন্তিত ছিল শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর বিমল কৃষ্ণ মজুমদার বলেন, পরীক্ষার পরেও হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় উত্তরপত্র মূল্যায়নে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষকে। ফলাফলে জিপিএ-৫ এবং পাসের হার কমার জন্য তখনকার পরিবেশটাই দায়ী। একদিকে পরীক্ষা চলছে অন্য দিকে গাড়িতে আগুন জ্বলছে, বোমা ফুটছে। পরীক্ষা কেন্দ্রে আসার পথে গাড়ি উল্টে ফেলা হচ্ছে।
সারা দেশে এই প্রভাবটা পড়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তসলিমা বেগম বলেন, সৃজনশীল পদ্ধতি শিক্ষার্থীরা ভালো ভাবে গ্রহণ করেছে। তাদের চিন্তাশক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। পাসের হার আর জিপিএ-৫ কমার জন্য এই পদ্ধতির প্রভাব পড়েনি। তবে শিক্ষাব্যবস্থাকে রাজনীতির বাইরে নিয়ে আসা দরকার।
দুপুরে এইচএসরি ফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ভিড় জমে। কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা উল্লাস করতে থাকে। সন্তানের সাফল্যেও অনেক অভিভাবক আনন্দে কেঁদে ফেলেন। এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে ৭৪ দশমিক ০৪, সিলেটে ৭৯ দশমিক ১৩, বরিশালে ৭১ দশমিক ৬৯, চট্টগ্রামে ৬১ দশমিক ২২, যশোরে ৬৭ দশমিক ৪৯, রাজশাহীতে ৭৭ দশমিক ৬৯, দিনাজপুরে ৭১ দশমিক ৯৪, কুমিল্লায় ৬১ দশমিক ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে।
শূন্যপাস করা প্রতিষ্ঠান : ৭ হাজার ৬৫৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি।
গতবার এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ২৪টি।
পাসের হার কমেছে : এ বছরের পাসের হার ৭৪.৩০ শতাংশ যা ২০১২ সালের চেয়ে ৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ কম। গত বছরে এ হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০১২ সালে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ০৮। ২০১৩ সালে তা কমে হয়েছে ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
একইভাবে চট্টগ্রামে পাসের হার কমেছে। গতবছর ৭২ দশমিক ৩১ শতাংশ পাসের হার হলেও এবার তা প্রায় ১০ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৬১ দশমিক ২২ শতাংশে। রাজশাহী বোর্ডে গত বছর পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৪৪। এ বছর এ হার ৭৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ বছর বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৬৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
গত বছর এ হার ছিল ৭১ দশমিক ১২ শতাংশ। কুমিল্লা বোর্ডে এবার পাসের হার ৬১ দশমিক ২৯। গত বছর এ হার ছিল ৬৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। অন্যদিকে পাসের হার বেড়েছে সিলেট, দিনাজপুর ও যশোর বোর্ডে। সিলেট বোর্ডে এবার পাস করেছে ৭৯.১৩ শতাংশ পরীক্ষার্থী, যা গত বছর ছিল ৭৫ দশমিক ৬৮।
গত বছর সবচেয়ে খারাপ ফল ছিল যশোর বোর্ডের। এবার যশোর বোর্ডে পাসের হার সামান্য বেড়েছে। বোর্ডটিতে এ বছরের পাসের হার ৬৭ দশমিক ৮৭ যা গত বছর ছিল ৬৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। দিনাজপুর বোর্ড এ বছর পাসের হার ৭৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল মাত্র ৭১ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
ঢাকার সেরা ২০ : ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে সেরা ২০-এর তালিকায় এবারও সেরা রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে নরসিংদীর আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ আর তৃতীয় অবস্থানে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। চতুর্থ অবস্থানে রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজ, পঞ্চম অবস্থানে ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ, ষষ্ঠ অবস্থানে নরট ডেম কলেজ, সপ্তম অবস্থানে গুলশানের ক্যামব্রিয়ান কলেজ, অষ্টম অবস্থানে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, নবম অবস্থানে হলিক্রস এবং দশম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা কলেজ।
১১ থেকে ২০তম স্থান অধিকারী কলেজগুলো হচ্ছে_ খিলগাঁওয়ের ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজ, মিরপুরের এসওএস হারমান মেইনার কলেজ, ঢাকা সেনানিবাসের আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, লালবাগের বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ডেমরার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ধানমন্ডির ঢাকা সিটি কলেজ, মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজ, মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ময়মনসিংহের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ ও উত্তরার ট্রাস্ট কলেজ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।