আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এরা কি মানুষ না জানোয়ার?



গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার উলুসারা গ্রামের একটি বাড়িতে ‘জব্বার ফুড প্রোডাক্টস’ নামের খাদ্য ও কোমল পানীয় তৈরির একটি কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গে ইটের গুঁড়া ও ছাই মিশিয়ে এখানে যৌন-উত্তেজক পানীয়, আমের রস (ম্যাংগো জুস), তেলসহ ১২টি খাদ্যপণ্য তৈরি করা হয়। এসবের মধ্যে শিশুদের জন্য তৈরি করা কোমল পানীয় রয়েছে। স্থানীয় বাজারে এসব খাবার ও পানীয় দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। জানা গেছে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই এসব খাদ্যপণ্য তৈরি হচ্ছে।

পণ্যের গায়ে লেখা আছে, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খাদ্য পুষ্টি কর্তৃক পরীক্ষিত, বিএসটিআইয়ের আওতাভুক্ত নয়। ’ কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের স্বপক্ষে কোনো কাগজপত্রই দেখাতে পারেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘খাদ্য পুষ্টি’ নামে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির অধীনে একটি ইনস্টিটিউট রয়েছে, যার নাম পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট। সেখান থেকে পণ্যের মান পরীক্ষা করা হলে অন্তত ইনস্টিটিউটের নামটি ঠিকভাবে লেখা হতো বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক অভিমত দেন।

কারখানার এক শ্রমিক জানান, ইটের গুঁড়া, ছাই, নোংরা পানি ও রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে এসব পণ্য তৈরি করা হয়। রাতে একজন ‘কেমিস্ট’ (রসায়নবিদ) এসে কাজটি করেন। ‘কেমিস্ট’ যখন কারখানায় ঢোকেন, তখন শ্রমিকদের কাউকে ভেতরে থাকতে দেওয়া হয় না। কারখানাটিতে ৮-১০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে চার-পাঁচজনই শিশুশ্রমিক, যাদের বয়স ১০-১৫ বছরের মধ্যে।

সফিপুর জেনারেল হাসপাতালের মালিক এবং চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ কামরুল আহসান জানান, এসব ভেজাল পানীয় শরীরে সাময়িক যৌন উত্তেজনা তৈরি করলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এ ছাড়া শরীরে যেকোনো রোগের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। জব্বার ফুড প্রোডাক্টসের ওই কারখানায় প্রস্তুত করা খাদ্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে: নিশিতা এনার্জি ড্রিংকস, নিশিতা ফিলিংস, সান অরেঞ্জ ড্রিংকস, সান ফ্রুট ম্যাংগো ড্রিংকস, ট্যাং বক্স, মুক্তা সরিষার তেল প্রভৃতি। এগুলোর মধ্যে টাইগার এনার্জি ড্রিংকসের আদলে মোড়ক নকল করে নাম দেওয়া হয়েছে ‘নিশিতা ফিলিংস’ এবং ‘ফিলিংস এনার্জি ড্রিংকস’। এ দুটি পানীয় যৌন-উত্তেজক বলে জানা গেছে।

বোতলের গায়ে লেখা আছে, ‘শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য’ এবং ‘ইহা কোন ঔষধ নয়, সম্পূরক খাদ্য মাত্র। ’ সরেজমিনে দেখা গেছে, উলুসারা গ্রামের এফবি ফুডওয়্যার নামের একটি কারখানার সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে সরু রাস্তা দিয়ে ভেতরে ঢুকলে টিনশেডের একটি বাসা চোখে পড়ে। তৈরি করা পণ্য মার্কেটে বিক্রির জন্য বাসার বাইরে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। একটি কক্ষে বড় আকারের স্টিলের ড্রামে রাখা কালো রঙের পানি (ফিলিংস এনার্জি ড্রিংকস) বোতলের মধ্যে ভরছেন একজন। চার-পাঁচটি শিশু রয়েছে, যাদের কেউ বোতলে মুখ লাগাচ্ছে, কেউ প্যাকেট করছে।

নোংরা পরিবেশের মধ্যে তৈরি হচ্ছে ওই সব ভেজাল পণ্য। এসব পণ্য উপজেলার কালিয়াকৈর বাজার, চন্দ্রা, সফিপুর, মৌচাক বাজার, কোনাবাড়ি, ভান্নারা, পল্লী বিদ্যুৎ বাজার, বাড়ইপাড়াসহ প্রায় সব বাজারের দোকানপাটে পাওয়া যাচ্ছে। উলুসারা গ্রামের করিম মিয়া (ছদ্মনাম) বলেন, ‘এখানে যৌন-উত্তেজক ওষুধ তৈরি করা হয়। আমিও এখান থেকে এনে ওই তরল খেয়েছি। ’ চন্দ্রা এলাকার ব্যবসায়ী সোলাইমান জানান, ‘জব্বার ফুড প্রোডাক্টস’-এর অনেকগুলো খাদ্যপণ্য থাকলেও শুধু ‘ফিলিংস এনার্জি ড্রিংকস’ নামের দুটি পণ্য তাঁরা বিক্রি করেন।

এটি খেলে যৌন উত্তেজনা তৈরি হয়। ফলে বাজারে এর চাহিদা বেশি। ওই কারখানার ‘রসায়নবিদ’ রাজিবুল আলম দাবি করেন, এখানে মানসম্মত এনার্জি ড্রিংকস তৈরি হয়। এটি খেলে যৌন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ কারণে বোতলের গায়ে লেখা রয়েছে ‘শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য’।

রাজিবুল আলম দাবি করেন, পানীয়ের বোতলের মোড়কে যেসব উপাদানের কথা উল্লেখ আছে, তার সবই এতে দেওয়া হয়। মোড়কের গায়ে লেখা আছে স্যাফ্রন, সুগার, লিকুইড, গ্লুকোজ, মধু, চিনাবাদাম, পেস্তাবাদাম, কাজুবাদাম, কিশমিশ, খেজুর, মাশরুম, কুরিয়ান জিংসেন, হাইট্রক এসিড, ভিটামিন ই, পারমিডেট ফুড কালার ও পেজারভেটিভ এনার্জি ড্রিংকস মিশিয়ে পানীয়টি তৈরি করা হয়েছে। কারখানাটির মালিক জব্বার আলী বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। পণ্য তৈরি না করলে অনুমোদন দেবে কীভাবে! তাই এখনই পণ্য তৈরি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। ’ পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআইয়ের সহকারী পরিচালক কে এম হানিফ জানান, ‘জব্বার ফুড প্রোডাক্টস’ নামের কোনো কারখানার অনুমোদন নেই।

অনুমোদনের আগে পণ্য বাজারজাত করা অবৈধ বলে জানান তিনি। শিগগির ওই কারখানায় অভিযান চালানো হবে বলে জানান সহকারী পরিচালক। সূত্রঃ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.