কমেন্টার
এডিসনের জম ১৮৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী কানাডার মিলানে। তার পিতা ছিলেন ওলন্দাজ বংশোদ্ভূত।
এডিসনের পিতার আর্থিক স্বচ্ছলতার কারনে ছেলেবেলার দিনগুলি আনন্দেই কেটেছিল। ৭ বছর বয়সে তার পিতা মিশিগানের অন্তর্গত পোর্ট হারান নামে একটা শহরে নতুন করে বসবাস শুরু করেন।
এখানে এসেই স্কুলে ভর্তি হলেন এডিসন।
তিনি ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব মেধাবী ছিলেন। কিন্তু স্কুলের বাধা পাঠ্যসূচী তার কাছে খুবই ক্লান্তিকর লাগতো।
শিক্ষকরা অভিযোগ করতেন, এ ছেলের পড়ায় মন নেই। এডিসনের মা শিক্ষকদের কথায় ক্ষুণ্ণ হয়ে তাকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে আনেন। শেষ হল এডিসনের ৩ মাসের স্কুল জীবন।
এর পরবর্তীতে আর কোনদিন স্কুলে যাননি তিনি। মায়েরকাছে শুরু হলো তার পড়া।
ছেলেবেলায় একবার তিনি মুরগীর মতো ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বের করতে পারেন কিনা পরীক্ষা করার জন্য ঘরের কোণে ডিম সাজিয়ে বসে পড়লেন। কয়েক বছর পর কিশোর এডিসন পরীক্ষা -নীরিক্ষা করার জন্য একটা ছোট ল্যাবোরেটরী তৈর করে ফেলেন বাড়ির নিচের তলার একটা ঘরে। অল্প কিছুদিন যেতেই তিনি বুঝতে পারলেন হাতে কলমে পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন যন্ত্রপাতি আর নানান জিনিস্পতেরের।
বাবার আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। স্থির করলেন তিনি কাজ করে অর্থ সংগ্রহ করবেন। তেরো বছরের ছেলে চাকরি করবে! বাবা-মা দুজনেই অবাক। কিন্তু তিনি জেদ ধরে রইলেন,অগত্যা মত দিতে হল তার বাবা মাকে।
অনেক খোজাখুজির পর হকারের কাজ নেন তিনি।
আরো বেশি আয় করার জন্য তিনি খবরের কাগজের সাথে চকলেট বাদামো রেখে দিতেন। । কয়েক মাসের মধ্যেই বেশ কিছু অর্থ সংগ্রহ করে ফেলেন।
এই সময় এডিসন সংবাদ পেলেন একটি ছোট ছাপাখানা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। জমানো অর্থ দিয়ে তিনি ছাপাখানা কিনে ফেলেন, এবার নিজেই পত্রিকা বের করেন।
সংবাদ জোগাড়, ছাপানো,সম্পাদনা,বিক্রি সব তিনি একাই করতেন!!! অল্পদিনের কাগজের বিক্রির সংখায় বেড়ে গেল। এক বছরে তিনি লাভ করেন ১০০ ডলার। তখন তার বয়স ১৫।
একদিন তিনি মাউন্ট ক্লিসেন্স স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছেন, এওন সময় চোখে পড়ল একটী ছেলে লাইনের উপর খেলছে...দূরে একটি ওয়াগন আসছে...কিন্তু তার সেদিকে খেয়াল নেই। আসন্ন বিপদ বুঝতে প্রে কাগজ ফ্লে দিয়ে এডিসন ঝাপিয়ে পড়লেন লাইনের উপর।
ছেলেটি ছিল স্টেশন মাস্টারের একমাত্র পুত্র। কৃতজ্ঞ স্টেশন মাস্টার তাকে পুরস্কার দিতে চাইলেন...এডিসন তার কাছে তখন টেলিগ্রাফি শিখতে চাইলেন। সানন্দে রাজি হন স্টেশন মাস্টার। কয়েক মাসের মধ্যেই এডিসনের টেলিগ্রাফি শেখা হয়ে যায়।
এইবার শুরু হয় তার নতুন জীবন।
স্টাফোর্ড জংশনে তিনি রাতে ট্রেন ছাড়ার সিগ্নাল দেয়ার কাজ পান...আর দিনে তিনি তার গবেষনার কাজ করতেন। একটি ঘড়িও বানান যা নির্দিষ্ট সময়ে আপনা থেকেই সিগ্নাল দিতো। একজাগায় বেশিদিন কাজ করতে তার ভালো লাগতো না...বোস্টন শহরে তখন তিনি অফিস অপারেটরের কাজ নেন।
এডিসন তখন টেলিগ্রাফ উন্নতির জন্য আরো কিছু যন্ত্র আবিষ্কার করেন।
১৮৬৯ এ তিনি একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন যা দিয়ে ভোল্ট গণনা করা যায়।
এই যন্ত্রের পেটেন পাবার জন্য তিনি আবেদন করেন...এবং পান।
বোস্টন ছেড়ে তারপর তিনি চলে আসেন নিউ ইয়র্কে...হাতে একটি পয়সা নেই...দুদিন ধরে কিছুই খাওয়া হয় নি। এমন সময় আলাপ হল এক টেলিগ্রাফ অপারেটারের সাথে। সে এডিসনকে এক ডলার ধার দিয়ে গোল্ড ইনডিকেটর কোম্পানির ব্যাটারি কঘরে থাকার ব্যবস্থা ক্রে দিল। ২ দিন কেটে গল...৩য় দিন এডিসনের নজরে পড়োলো অফিসের ট্রান্সমিটারটি নষ্ট হয়ে গেছে...কর্মচারী,ম্যানেজার কেউই বহু চেষ্টা করেও ঠিক করতে পারছে না।
ম্যানেজারের অনুমতি নিয়ে এডিসন অল্পসময়েই তা ঠিক্ক করে দেন। ম্যানেজার খুশি হয় তাকে কারখানার ফোরম্যান হিসেবে চাকরী দেন। তার বেতন ছিল ৩০০ ডলার। কিছুদিন পরেই ম্যানেজার পদে উন্নীত হন।
Gold Indicator কোম্পানি টেলিগ্রাফের জন্য এক ধরনের যন্ত্র তৈরী করত যার ফিতের উপর সংবাদ লেখা হত।
এডিসনের মনে হত বর্তমান ব্যবস্থার চেয়ে আরো উন্নত যন্ত্র তৈরী করা সম্ভব। চাকরিতে ইস্তফা দিলেন তিনি...কয়েক মাস নিরলস পরিশ্রমের পর আবিষ্কার করলেন নতুন এক যন্ত্র য আগের চেয়ে অনেক উন্ন আর উতপাদন ব্য্যো কম। এডিসন যন্ত্রটি নিয়ে গেলেন কোম্পানির মালিকের কাছে। মালিক তাকে জিজ্ঞেস করলো তুমি এর জন্য কতো দাম চাও??? এডিসন দ্বিধাগ্রস্থভাবে বললেন যদি ৫০০০ ডলার দাম বেশি বলে মনে হয় আবার ৩০০০ খুব কিমি. হয় তবে কোম্পানীই ঠিক করুক তার কি দামে যন্ত্রটি কিনবে। কোম্পানীর মালিক তাকে ৪০০০০ ডলার দিয়ে বললেন-আশা করি তোমাকে সন্তুষ্টো করতে পেরেছি।
ইতিমধ্যে বিবাহ করছেন এডিসন। তার স্ত্রীর নাম মেরি স্টিলওয়েল। মেরি এডিসনের কাজকর্মে সহকর্মী হিসে থাকতেন। মেরি ছিলেন যেমন দক্ষ তেমন বুদ্ধিমতী। ১৮৮৪ সালে মেরির মৃত্যু হয় তখন তার ৩ সন্তান।
তার মৃত্যুর ২ বছর পর এডিসন বিয়ে করেন মিনা মিলারকে।
১৮৭৬ সালে এডিসন তার নতুন কারখানা স্থাপন করেন মেনলো পার্কে। একদিকে গবেষনাগার , একদিকে কারখানা। এই পার্কেই এডিসনের প্রথম উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার টেলিফোন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ। টেলিফোন আবিষকার করে ছলেন গ্রাহাম বেল কিন্তু তা ব্যবহারের ক্কখেত্রে ত্রুটিযুক্ত ছিল।
এডিসনকে অনুরোধ করার এই ব্যবস্থাটি উন্নত করার জন্য। কয়েক মাসের চেষ্টায় তিনি তৈরী করেন কার্বন ট্রান্সমিটার। এতে রিসিভারের প্রতিটি কথা সুস্পষ্ট শোনা গেল। এডিসনের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে গেল...
একবার এক পত্রিকায় লেখা হল...তিনি একজন মহান বিজ্ঞানী।
এডিসন প্রবন্ধটি পড়ে বললেন, "আমি বিজ্ঞানী নই।
আমি একজন উদ্ভাবক। বিজ্ঞানী হচ্ছেন মাইকেল ফ্যারাডে। তিনি অর্থের জন্য কাজ করেন না,কিন্তু আমি করি। আমি প্রতিটি কাজকেই বিচার করি অর্থমূল্য দিয়ে। যে কাজে অর্থ পাবার সম্ভাবনা নেই সেই কাজে আমি আগ্রহ প্রকাশ করি না"।
এতদিন তার কাজ ছিল টেলিফোন নিয়ে...এবার তার মনে হলো তিনি ইলেকট্রিক কারেন্টকে কাজে লাগিয়ে আলো জ্বালবেন। তখন অবশ্য এক ধরেনের বৈদ্যুতিক আলো ছিল কিন্তু ব্যবহারের উপযোগী ছিল না।
কাজ শুরু করলেন প্রহতমেই তিনি এমন একটি ধাতুর সন্ধান করছিলেন যার মধ দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত করলে উজ্জ্বল আলো বিকিরন করবে। তিনি প্রায় ১৬০০ ধাতু নিয়ে পরীক্ষা করেন।
দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর তৈরী হল কার্বন ফিলামেন্ট।
এরপরের কাহিনী এডিসনের ভাষায়- ফিলামেন্ট তৈরী হবার পর তাকে কাচ তৈরীর কারখানায় নিয়ে যেতে হবে তা। এডিসনের এক সহকর্মী ব্যচিলরের হাতে কার্বন ফিলামেন্ট। পেছনে আমি । এমনভাবে দুজনে চলছি যেন মহামূল্যবান কিছু নিয়ে যাচ্ছি আমরা। কাচের কারখানে সবেমাত্র পা দিয়েছি এমন সময় ...সম্ভবত অতি সতর্কতার জন্য হাত থেকে ফিলামেন্টটি পড়ে দু টুকরো হয় এ গেল।
হতাশ হয়ে ফিরে গেলাম। নতুন তৈরী করে আবার চললাম কারখানায়...কপাল মন্দ...এইবার স্বর্ণকারের হাতের স্ক্রু ড্রাইভার পড়ে ফিলামেন্ট আবারো ভেঙ্গে গেল। আবার ফিরে গেলাম। রাত হবার আগেই নতুন একটআ কার্বন নিয়ে এসে বাল্বের মধ্যে লাগালাম...বাল্বের মুখ বন্ধ করা হলো...তারপর কারেন্ট দেয়া হলো...মুহূর্তের মধ্যে জ্বলে উঠলো বৈদ্যুতিক বাতি।
প্রথম বৈদ্যুতিক বাতিটী জ্বলেছিল প্রায় ৪০ ঘন্টা।
দিনটী চিল ২১ শে অক্টোবর, ১৮৭৯ সাল।
প্রথমে এডিসন শুধু বাল্বের উপর পরীক্ষা-নীরিক্ষা করেছিলেন। এরপর প্রয়োজন দেখা দিল সমগ্র বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতি সাধনের। এডিসন নতুন ধরনের ডাইনামো উদ্ভাবন করেন। বিদ্যুৎ সরবারহ ব্যবস্থার জেনারেটর থেকে শুরু করে ল্যাম্প তৈরী করা সমস্তই তার আবিষ্কার।
যখন নিউ ইয়র্কে প্রথম বিদ্যুৎ সরবারহ কেন্দ্র গড়ে উঠলো...এডিসন ছিলেন একাধারে তার সুপারিন্টেন্ড, ফোরম্যান।
১৮৮৭ এ তিনি চলে আসেন ওয়েস্ট অরেঞ্জে। এই সময় তিনি শব্দের গতির মতো কিভাবে ছবির গতি আনা যায় তাই নিয়ে চিন্তা করছিলেন মাত্র ২ বছরের মধ্যে তিনি বের করেন "কিনটোগ্রাফ" যা গতিশীল ছবি তোলবার জন্য প্রথম ক্যামেরা। যখন আমেরিকাতে বাণিজ্যকভাবে ছায়াছবি নির্মানের কাজ শুরু করার ভাবনা চিন্তা চলছিল তখন এডিসন সিনেমার প্রয়োজনীয় সবই উদ্ভাবন করে ফেলেছেন। প্রথম অবস্থায় সিনেমা ছিল নির্বাক।
১৯২২ সালে এডিসন আবিষ্কার করেন "কিনটোফোন" যা সংযুক্ত করা সিনেমার ক্যামেরার সাথে। এরই ফলে তৈরী হয় সবাক চিত্র।
প্রতিভায় বিশ্বাস করতেন না এদিসন, বলতেন পরিশ্রমই হচ্ছে প্রতিভার মূল কথা।
এই মহান মানুষের মৃত্যু হয় ১৯৩১ সালের ১৮ অক্টোবর। তার মৃত্যুর পর নিউইয়র্ক পত্রিকায় লেখা হয়- "মানুষের ইতিহাসে এডিসনের মাথার দাম সবচেয়ে বেশি।
কারন এমন সৃজনীশক্তি অন্য কোন মানুষের মধ্যে দেখা যায়নি"।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।