আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন...

এ মন যখন, বেসামাল বেহিসাবী হতে চায় এ মন তখন, তরি কথা ভেবে পথ হারায় ---My heart says, you’re only mine Never-ever leave me behind I wanna be with you every time... সাইভার ওয়ার্ল্ড

[১৮৪৭-১৯৩১] আমরা হয়তো এমন একজনের নাম শুনে থাকবো। যিনি পারিপার্শ্বিক অনেক কিছু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করতেন। একবার তিনি মুরগির মতো ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বের করবার উদ্দেশ্যে ঘরের এক কোণে ডিম সাজিয়ে বসে পড়লেন। তিনি আর কেউ নন, তিনি হচ্ছেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন। এই বিজ্ঞানীকে নিয়ে তাঁর মৃত্যুর পর নিউইয়র্ক পত্রিকায় ছাপা হয়, ‘মানুষের ইতিহাসে এডিসনের মাথার দাম সবচেয়ে বেশি।

কারণ এমন সৃজনী শক্তি অন্য কোনো মানুষের মাঝে দেখা যায় নি। ’ অন্যতম অবদানসমূহ ঃ ১. ভোল্ট গণনা করার যন্ত্র আবিষ্কার ২. ডুপ্লেক্স টেলিগ্রাফ পদ্ধতির আবিষ্কার ৩. বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার ডাইনামো এবং জেনারেটর আবিষ্কার ৪. কিনেটোগ্রাফ’ গতিশীল ছবি তোলবার জন্য প্রথম ক্যামেরা আবিষ্কার টমাস আলভা এডিসনের জন্ম ১৮৪৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কানাডার মিলানে। তাঁর পিতা ছিলেন ওলন্দাজ বংশোদ্ভুত। এ সময় তাঁর পিতার আর্থিক সচ্ছলতা ছিল। ফলে এডিসনের ছেলেবেলার দিনগুলো ছিল আনন্দদায়ক।

সাত বছর বয়সে এডিসনের পিতা মিশিগানের অন্তর্গত পোর্ট হারান নামে একটা শহরে এসে নতুন করে বসবাস শুরু করলেন। এডিসন স্কুলে ভর্তি হলেন। তিনি অসম্ভব মেধার অধিকারী ছিলেন। কিন্তু স্কুলের গন্ডিবাঁধা পড়াশুনা তাঁর নিকট একঘেঁয়েমি মনে হত। পড়াশুনায় কোনো মনোযোগ নেই, শিক্ষকদের অভিযোগ শুনে ক্ষুব্ধ হতেন।

ফলে স্কুল ছাড়িয়ে আনলেন। এখানেই এডিসনের তিন মাসের স্কুল জীবনের সমাপ্তি ঘটল। আর কোনদিন স্কুলে যান নি এডিসন। এবার মায়ের নিকট তাঁর পড়াশুনা শুরু হল। এডিসন ছোটবেলা থেকে পারিপার্শ্বিক যা কিছু আছে, যা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন এগুলো নিয়ে।

বেশ মজার ঘটনা। একবার তিনি মুরগির মতো ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বের করতে পারেন কিনা তা দেখবার জন্য ঘরের এক কোণে ডিম সাজিয়ে বসে পড়লেন। এর কয়েক বছর পর তিনি বাড়িতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য একটা ছোট ল্যাবরেটরি তৈরি করলেন। কিছুদিন যেতেই তিনি হাতে-কলমে পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কিনে ফেললেন। এ সময় বাবার আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তিনি স্থির করলেন কাজ করে অর্থ সংগ্রহ করবেন।

তেরো বছরের ছেলে কাজ করবে! তাঁর বাবা-মা দু’জনে রীতিমত অবাক। এডিসনের জেদ চাকরি করবে। অগত্যা আর কি করা, বাবা-মা দু’জনে রাজি হলেন। এডিসন অনেক খোঁজাখুঁজির পর খবরের কাগজ ফেরি করার কাজ পেলেন। আরো বেশকিছু আয় করার জন্য তিনি খবরের কাগজের সহিত চকলেট বাদামও রেখে দিতেন।

এভাবে কয়েক মাসের মধ্যে বেশকিছু অর্থ সংগ্রহ হল। এ সময় এডিসন জানতে পেলেন একটি ছোট ছাপাখানা যন্ত্র কম দামে বিক্রি হবে। তিনি যে সামান্য অর্থ জমিয়েছিলেন তাই দিয়ে ছাপাখানার যন্ত্রপাতি কিনে ফেললেন। এবার নিজেই একটি পত্রিকা বের করলেন। একইসঙ্গে সংবাদ সংগ্রহ করা, সম্পাদনা করা, ছাপানো, বিক্রি করা, সমস্ত কাজ করতেন।

অল্পদিনেই তাঁর কাগজের বিক্রির সংখ্যা বৃদ্ধি পেল। লাভ হল একশো ডলার। তখন তাঁর বয়স ছিল পনেরো। একদিন এডিসন লক্ষ করলেন, একটি ছেলে রেল লাইনের উপর খেলা করছে। দূরে একটি ওয়াগন এগিয়ে আসছে।

ছেলেটির সেদিকে নজর নেই। বিপদ আসন্ন বুঝতে পেরে হাতের কাগজ ফেলে দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন লাইনের উপর। আর ছেলেটি কেউ নয়। স্টেশন মাস্টারের একমাত্র ছেলে। কৃতজ্ঞ স্টেশন মাস্টার যখন এডিসনকে পুরষ্কার দিতে চাইলেন, এডিসন সে সময় টেলিগ্রাফ শেখবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন।

স্টেশন মাস্টার রাজি হলেন মহানন্দে। আর কয়েক মাসের মধ্যেই এডিসন টেলিগ্রাফি শেখা রপ্ত করে নিলেন। এর সঙ্গে সাংকেতিক লিপি ও তার অর্থ বুঝতে সক্ষম হলেন। অত্যন্ত পরিশ্রমী ছিলেন এডিসন। একবার স্টাফোর্ড জংশনে রাত্রিবেলায় ট্রেন ছাড়ার সিগনাল দেওয়ার কাজ পেলেন।

রাত জেগে কাজ করতে হত এবং দিনের বেলায় সামান্য কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিয়ে নিজের গবেষণার কাজ করতেন। এ সময় তিনি একটি ঘড়ি তৈরি করলেন যেটি আপনা থেকেই নির্দিষ্ট সময়ে সিগনাল দিত। এর পরে বোস্টন শহরে কাজ করার সময় দেখলেন, অফিস জুড়ে ভীষণ ইঁদুরের উৎপাত। তিনি হঠাৎ করে একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করলেন যা সহজেই ইঁদুর ধ্বংস করতে সক্ষম। তিনি ১৮৬৯ সালে বোস্টনে চাকরিরত অবস্থায় একটি যন্ত্র আবিষ্কার করলেন যা দিয়ে ভোল্ট গণনা করা যায়।

এই যন্ত্রের গুণাগুণ বিবেচনা করে উদ্ভাবক হিসেবে তাঁকে পেটেন্ট দেওয়া হল। আর এই পেটেন্ট এডিসনের জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এরপর বোস্টন শহর ছেড়ে চলে এলেন নিউইয়র্কে। হাতে মোটেও পয়সা নেই। খাওয়া হয় নি দু’দিন ধরে।

এক টেলিগ্রাফ অপারেটরের সাথে পরিচয় ঘটল। সে এডিসনকে এক ডলার ধার দিয়ে গোল্ড ইনডিকেটর কোম্পানির ব্যাটারি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। সেখানে দু’দিন কেটে গেল। তৃতীয় দিন তিনি খেয়াল করলেন ট্রান্সমিটারটি খারাপ হয়ে গিয়েছে। ম্যানেজারের অনুমতিক্রমে তিনি অল্পক্ষণের মধ্যেই ট্রান্সমিটারটি মেরামত করে ফেললেন।

এর ফলে তিনি কারখানার ফোরম্যান হিসেবে চাকরি পেলেন। তাঁর মাইনে ছিল ৩০০ ডলার। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি নিজের যোগ্যতা বলে ম্যানেজার পদে উন্নীত হলেন। এই অর্থ দিয়ে তিনি নিজের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে গবেষণার কাজে লাগাতেন। গোল্ড ইনডিকেটর কোম্পানি টেলিগ্রাফের জন্য এক ধরনের যন্ত্র তৈরি করত যার ফিতের উপর সংবাদ লেখা হত।

এ সময় এডিসনের মনে হল বর্তমান ব্যবস্থার চেয়ে আরো উন্নত ধরনের যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব। এজন্যে প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার। এ সময় চাকরিতে ইস্তফা দিলেন এডিসন। কয়েক মাস প্রচণ্ড পরিশ্রমের পর উদ্ভাবন করলেন এক নতুন যন্ত্র। এটি আগের চেয়ে অনেক উন্নত এবং সেই সঙ্গে এর উৎপাদন ব্যয়ও কম।

তিনি এ যন্ত্রটি নিয়ে গেলেন গোল্ড ইনডিকেটর কোম্পানীর মালিকের নিকট। এতে মালিক খুশি হলেন। এডিসনকে জিজ্ঞাসা করলেন, কত দামে সে যন্ত্রটি বিক্রি করবে? এডিসন wØavwš^Zfv‡e বললেন, যদি পাঁচ হাজার ডলার দাম বেশি হয়, আবার তিন হাজার ডলার খুব কম হয় তবে কোম্পানী স্থির করুক তারা কি দামে যন্ত্রটি কিনবে। কোম্পানীর মালিক এডিসনকে চল্লিশ হাজার দিয়ে বললেন, আশা করি আপনাকে আমরা সন্তুষ্ট করতে পেরেছি। এডিসন তো হতবাক! এই প্রচুর অর্থ বিজ্ঞানী এডিসনের জীবনে এক অভাবনীয় পরিবর্তন এনে দিল।

এতদিন তিনি অন্যের অধীনস্থ হয়ে কাজ করতেন। সেখানে তাঁর ¯^vaxbZv ছিল না। এবার কয়েক মাসের চেষ্টায় নিউজার্সিতে তৈরি হল তাঁর কারখানা। তিনি সেখানে দিবারাত্রি কাজ করতেন। রাত্রে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিতেন।

এ কারখানাটি ছিল প্রকৃতপক্ষে একটি গবেষণাগার। কয়েক বছরের মধ্যেই এডিসন প্রায় একশোটির বেশি নতুন উদ্ভাবন করে তার পেটেন্ট নিলেন। এগুলি বিক্রি করে পেলেন প্রচুর অর্থ। এডিসন এবার নিজের কারখানায় কাজ করতে করতে পুনরায় আকৃষ্ট হলেন টেলিগ্রাফির দিকে। অল্পদিনেই তৈরি হল ডুপ্লেক্স টেলিগ্রাফ পদ্ধতি।

এর সাহায্যে দুটি বার্তা একই সাথে একই তারের মধ্যে দিয়ে দুই দিকে পাঠানো সম্ভব। এরপরে একই সময়ে একই তারের মধ্যে দিয়ে একাধিক বার্তা প্রেরণ করতে সক্ষম হলেন। আর এই পদ্ধতির সাহায্যে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার যে শুধু অসাধারণ উন্নতি হল তাই নয়, বরং খরচও কয়েকগুণ হ্রাস পেল। তিনি ১৮৭৬ সালে তাঁর নতুন কারখানা স্থাপন করলেন মেনলো পার্কে। এখানে একদিকে তাঁর গবেষণাগার অন্যদিকে কারখানা।

এই মেনলো পার্কে বিজ্ঞানী এডিসনের প্রথম উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার টেলিফোন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ। আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল আবিষ্কার করেছিলেন টেলিফোন, কিন্তু ব্যবহারের ক্ষেত্রে বহুবিধ সমস্যা দেখা গিয়েছিল। এডিসন কয়েক মাসের চেষ্টায় তৈরি করলেন কার্বন ট্রান্সমিটার। আর এর সহায়তায় গ্রাহকদের প্রতিটি কথা স্পষ্ট এবং পরিষ্কারভাবে শোনা গেল। চতুর্দিকে সুনাম ছড়িয়ে পড়ল এডিসনের।

এডিসন দীর্ঘদিন মানুষের শ্রবণ যন্ত্র নিয়ে কাজ করেছিলেন। এবার তিনি স্থির করলেন ইলেকট্রিক কারেন্টকে কাজে লাগিয়ে আলো জ্বালাবেন। সে সময় এক ধরনের বৈদ্যুতিক আলো ছিল কিন্তু তা ব্যবহারের উপযোগী ছিল না। প্রথমেই তিনি এমন একটি ধাতুর সন্ধান করেছিলেন যার মধ্যে কারেন্ট প্রবাহিত করলে উজ্জ্বল আলো বিকিরণ করে। তিনি বিভিন্ন রকমের ধাতু নিয়ে ১৬০০ রকমের পরীক্ষা করলেন।

অবশেষে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর তৈরি করলেন কার্বন ফিলামেন্ট। তিনি শুধু বাল্বের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন। এরপর প্রয়োজন দেখা দিল সমগ্র বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি সাধনে তৎপর হলেন। তিনি তৈরি করলেন নতুন এক ধরনের ডাইনামো, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার জেনারেটর থেকে শুরু করে ল্যাম্প তৈরি করা প্রভৃতি। নিউইয়র্কে প্রথম বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র গড়ে উঠল যার অগ্রনায়ক ছিলেন বিজ্ঞানী এডিসন।

এবার এডিসন তাঁর বিখ্যাত মেনলো পার্ক ছেড়ে ওয়েস্ট অরেঞ্জে চলে এলেন। ১৮৪৭ সালের ঘটনা। এসময় তিনি শব্দের গতির মতো কীভাবে ছবির গতি আনা যায় তাই নিয়ে শুরু করলেন ব্যাপক গবেষণা। মাত্র দু’বছরের মধ্যে উদ্ভাবন করলেন ‘কিনেটোগ্রাফ’ যা গতিশীল ছবি তোলবার জন্য প্রথম ক্যামেরা। ১৯২২ সালে এডিসন আবিষ্কার করলেন কিনেটোফো যা সংযুক্ত করা সিনেমার ক্যামেরার সাথে।

এরই ফলে তৈরি হল সবাক চিত্র। এই পরিশ্রমী বিজ্ঞানী অবশেষে ১৯৩১ সালের ১৮ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করলেন। তাঁর মৃত্যুর পর নিউইয়র্ক পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল, ‘মানুষের ইতিহাসে এডিসনের মাথার দাম সবচেয়ে বেশি। কারণ এমন সৃজনীশক্তি অন্য কোনো মানুষের মধ্যে দেখা যায় নি। ’


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।