আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টমাস মান-এর ব্ল্যাক সোয়ান এর অনুবাদ (১ম কিস্তি)

আমি আমার পৃথিবীর রাজা
বিশ শতকে রাইন নদীর পাড়ে ডুসেলডর্সে থাকেন এক বিধবা। নাম তার ফ্র রোজালি ভন টুমলার। এক দশকের বেশি হবে তিনি এখানে এসেছেন। মেয়ে আনা ও ছেলে এডুয়ার্ডকে নিয়ে তার সংসার। বিলাসবহুল না হলেও স্বচ্ছন্দেই দিন কাটান তিনি।

যুদ্ধের শুরুতেই মারা যান তার স্বামী লে. কর্নেল ভন টুমলার। তবে যুদ্ধ েেত্র মরেননি তিনি। নিরর্থক একটা সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে তার। লোকে বলে শহিদ হয়েছেন। তবে তার মৃত্যুটা তার স্ত্রীর জন্য তেমন সম্মানজনক নয়।

রোজালির বয়স তখন মাত্র চল্লিশ। স্বামীর মৃত্যু ঝড়ের মতো উড়িয়ে নিল তার আনন্দ-আহাদ। ছেলেমেয়ের বাবাকে হারানোর পাশাপাশি উৎফুল্ল স্বামীকে হারালেন। বিবাহিত জীবনের সব রং ধূসর হয়ে গেল তার। রোজালির পূর্বপুরুষ রাইন নদীর পাড়েই থাকত।

রোজালিও মনে-প্রাণে রাইনবাসী। তবে বিয়ের পর টুমলারের সঙ্গে বিশ বছর তিনি ব্যস্ততম শিল্প নগরী ডুইসবার্গে ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি ডুসেলডর্ফে ফিরে আসেন আঠারো বছরের মেয়ে ও ছোট ছেলেকে নিয়ে। ছেলেটা মেয়ের চেয়ে বারো বছরের ছোট। রোজালি প্রকৃতিপ্রেমী।

তাই শান্ত মনোরম ডুসেলডর্ফে ফিরে এলেন। আরেকটা কারণ অবশ্য আছে। আঁকাআঁকির প্রতি আনার খুব ঝোঁক। আর্ট একাডেমিতে পড়তে চায় সে। দশ বছর ধরে এ ছোট পরিবারটা তাই শহরতলি পিটার ভন কর্নেলিয়াসে আবাস গেড়েছে।

এখানে তাদের ছোট্ট ছিমছাম বাসা। বাড়ির চারপাশে বাগান। আর মনোরম আসবাবপত্রে সাজানো ঘর। আসবাবপত্রের কোনো কোনোটা রোজালির বিয়ের আমলের। কিছু আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব প্রায়ই আসে এ বাড়িতে।

এদের মাঝে আর্ট একাডেমি ও মেডিসিনের অধ্যাপক, এক দম্পতি ও শিল্প নগর থেকে আগত দুজনের কথা না বললেই নয়। সন্ধ্যায় এদের হাসি-কলোরলে উচ্ছ্বসিত হয় রোজালির ঘর। রাইনবাসীর স্বভাবটাও এমন আমুদে। ফ্র ভন টুমলারও বেশ সামাজিক। ঘোরাফেরা ও আড্ডা পছন্দ করেন।

সাধ্যের মধ্যে যতটা পারা যায় করেনও। তার সরলতা, উচ্ছলতা, আন্তরিকতা ও প্রকৃতির প্রতি টানের কারণে সবাই তাকে পছন্দ করে। দেখতে ছোটোখাটো হলেও তার শরীরের গাঁথুনি বেশ আকর্ষণীয। ধূসর ঢেউ খেলানো চুলগুলোতে বয়সের আঁচ লেগেছে। পিঠে সময়ের ছাপ এঁকে দিয়েছে ছোটোবড়ো নানা তিল (এগুলো দূর করার কোনো চিকিৎসাই নেই)।

তবে বাদামি চোখজোড়ার মোহনীয় দ্যুতিতে ছড়িয়ে পড়ে তারুণ্য। খোসা ছাড়ানো বাদামের রঙের মতো চোখই তাকে এতটা আকর্ষণীয় করেছে। নাকটা ঈষৎ লাল। লজ্জা পেলে রক্তিম হয়ে ওঠে। নাকের লালচে ভাব কাটাতে ভালো করে পাউডার মাখেন তিনি।

লোকে এটা পছন্দও করে। বসন্তের কন্যা রোজালি। এ মে মাসে পঞ্চাশতম জন্মদিন পালন করলেন ছেলেমেয়ে ও দশ-বারোজন বন্ধুবান্ধব নিয়ে। বাগানে ফুল দিয়ে সাজানো টেবিল, চীনা লণ্ঠন ও কাচের উইন্ড চাইমে মেতে উঠেছিল পার্টি। সে সন্ধ্যায় সবকিছু প্রাণবন্ত থাকলেও এ বয়সের জটিল শারীরিক পরিবর্তনটা গ্রাস করছিল তাকে।

য়ে যাচ্ছিল তার নারিত্ব। মানসিক পর্যায়েও এ পরিবর্তন ধাক্কা দিচ্ছিল। উদ্বেগ, আবেগের অস্থিরতা, মাথা ব্যথা, বিষণœভাব দেখা দিল উপসর্গ হয়ে। বিরক্তিকরভাবে ঐ সন্ধ্যাতেই লণগুলো এমন বাড়াবাড়ি শুরু করল, ভদ্রলোকদের রসিকতাও ভাঁড়ামি মনে হল রোজালির। বেশ কয়েকবার মেয়ের সঙ্গে অর্থপূর্ণ দৃষ্টি বিনিময় করলেন।

রোজালি জানেন কারণ না শুনেই মেয়ে তাকে এ বিব্রতকর অবস্থা থেকে মুক্ত করবে। মেয়ের সঙ্গে রোজালির সম্পর্ক খোলামেলা ও মধুর। মেয়ে যেন তার বন্ধু। মেয়ের কাছে কোনো কিছুই লুকান না তিনি। এমনকি তার শারীরিক পরিবর্তনের গোপন কথাটাও নয়।

আনার বয়স এখন ঊনত্রিশ বছর। শিগগির তিরিশে পা রাখবে। এখনো অবিবাহিতা, রোজালির জন্য অবশ্য এটা ভালোই। স্বার্থপর মনে হলেও রোজালি চান মেয়ে সারা জীবন তার সঙ্গে থাকুক। এতে স্বামী হারানোর শোক তেমন করে বিঁধবে না তাকে।

মেয়ে ফ্রলেইন ভন টুমলার মায়ের চেয়ে লম্বা হলেও চোখজোড়া মায়ের মতোই বাদামি। তবে পুরোপুরি এক নয়। আনার চোখে মায়ের মতো সরলতা নেই। তার চোখে চিন্তার মেঘ শীতল করে রেখেছে দৃষ্টি। বিকৃত পা নিয়ে জন্ম নিয়েছে আনা।

অস্ত্রোপচারের পরও তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। তাই নাচ, খেলাধুলা ও তারুণ্যের সব রং থেকে দূরে থাকতে হয় তাকে। স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তা থেকে সে বুঝেছে দৈহিক অসামঞ্জস্যতার খেসারত দিতে হচ্ছে তাকে। দিনে মাত্র দু-তিন ঘণ্টা করে পড়েই অনায়াসে স্কুল উৎরে গেল আনা। তারপর গতানুগতিক শিা ধারার আশপাশ না মাড়িয়ে চারুকলাকে বেছে নিল সে।

প্রথমে ভাস্কর্য, পরে অঙ্কনে ঝুকল। ছাত্রী হিসেবে এখনেও সে মেধার চমক দেখল। শুধু প্রকৃতির হুবহু নকল না করে মেধা খাঁটিয়ে সে প্রতীকী চিত্র আঁকতে লাগল কখনো তা হত গাণিতিকভাবে। ফ্র ভন টুমলার যে তার মেয়ের ছবি দেখাশোনা করতেন তা না বললেও চলে। মেয়ের ছবি নিয়ে তিনি সভ্যজনদের সঙ্গে আলোচনাও করতেন।

ছবির স্টাইল/ভঙ্গি, রঙ-বিচার, নান্দনিকতা এসবই ছিল আলোচনার বিষয়।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।