আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টমাস মান এর ব্ল্যাক সোয়ান ৩য় কিস্তি

আমি আমার পৃথিবীর রাজা

প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তী তাই মেয়ের কাছ থেকে রসিকতা, আদর, মন খারাপ করা কথা, এমনকি কষ্ট হাসিও সাদরে গ্রহণ করেন রোজালি। মেয়ে তাকে সহজভাবে নিলে খুশি হন তিনি। তাকে নিয়ে ঠাট্টা করলে তিনিও হেসে ওঠেন, মনে করেন এেেত্র হাসাই উচিতÑ একারণেই নিজের কোনো কিছুতে হাসলে আনার বাঁকা কথাতেও হেসে ওঠেন। প্রায়ই এমনটা ঘটেÑ বিশেষ করে যখন তার প্রকৃতি প্রেম উথলে ওঠে। এেেত্র সব সময়ই তিনি তার মেধাবী মেয়েকে ছাপিয়ে যেতে চান।

বসন্ত তার কতটা পছন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এটা যেন তারই ঋতু, এ ঋতুতেই জন্মেছেন তিনি। সব সময় রোজালি জোর দিয়ে বলেন জীবনের সব সুখকর মুহূর্ত তাকে বসন্তই এনে দিয়েছে। বসন্তের মৃদু বাতাসে পাখির কিচিরমিচিরে তার চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তার বাগানে ক্রকাস, ডেফোডিল, হায়াসিন্থ ও টিউলিপের প্রথম কুঁড়ি ফুটলে আনন্দে পানি এসে যায় তার চোখে।

মেঠো পথে বেগুনি ফুলগুলো, সোনালি ফুলের দ্যুতি, ফরাসিথিয়া, লাল-সাদা যে গাছÑ তারও ওপর লাইলাক, আর লাল-সাদা বাদামের উঁকি-ঝুঁকিÑ এসব আনন্দই মেয়েকে তার সঙ্গে উপভোগ করতে হবে। রোজালি উত্তরের ঘর (আনার স্টুডিও) থেকে মেয়েকে টেনে নিয়ে আসেন। বিমূর্ত চিত্রের সামনে থেকে তুলে আনেন আনাকে। আনাও সানন্দে হেসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মায়ের সঙ্গে কাটিয়ে দে প্রকৃতির প্রেম। আশ্চর্যজনক হলেও আনা কিন্তু বেশ হাঁটতে পারে।

আর হাঁটার সঙ্গী পেলে কী করে যেন হিসাব করে পা ফেলে তাল সামলে নেয়। হাঁটা শেষ হলেও কান্ত হয় না আনা, খেয়াল-খুশিমতো এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে। ফুল ফোটার ঋতুতে রাস্তাগুলো কাব্যময় হয়ে ওঠে। তাদের হাঁটাপথের পরিচিত প্রিয় দৃশ্যগুলো মনোরম সাজ-পোশাক পরে সাদা-গোলাপি ফলের আভাস দেখা যায়Ñ কী চমৎকার সময় ! লম্বা সাদা পপলার গাছের ফুলগুলো লেকটাকে ঘিরে রেখেছে। সাদা ফুলগুলোয় বাতাস খেলে গেলে মনে হয় তুষার পড়ছে।

মাটি ছেয়ে যায় ফুলে। রোজালির মন তখন আবার আনচান করে। মেয়েকে একটু উদ্ভিদ বিজ্ঞান শোনাতে ইচ্ছা করেÑ পপলার ফুল উভলিঙ্গ, তবে প্রতি গাছে এক লিঙ্গের ফুলই থাকে। কিছু গাছ হয় শুধু স্ত্রী ফুলের আবার কিছু থাকে কেবল পুরুষ ফুলের গাছ। বাতাসের পরাগায়নের কথাও আগ্রহভরে বলেন তিনি।

ফোরার বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে জেফিরাসের গল্পও অনায়াসে ফাঁদতে পারেন। পরাগায়নের গল্প এটা, রোজালি এ গল্পকে খুব মজার মনে করেন। গোলাপের ঋতুতে তার আনন্দ বাঁধ মানে না। নিজের বাগানে ফুলের রানীর যতœ-আত্তি কিছু কম করেন না তিনি। সবকিছু তিনি একাই সামলে নেন।

কীটপতঙ্গ তাড়ানো শুরু করে ঝরে যাওয়া ফুল ও মরা পাতা ছাঁটা, ফুলদানিতে তাজা ফুল দেয়া-প্রস্ফুটিত, আধো-কলি, কুঁড়ি নানা জাতের ফুলে ঘর সাজানোÑ বিশেষ করে লাল গোলাপ দিয়ে (সাদাগুলো তার পছন্দ নয়) সবই নিজে করেন। নিজের বাগানের ফুল, কিংবা অতিথির আনা ফুল দিয়েও সাজসজ্জা করেন ঘরের। তাকে যারা চেনে, ফুল নিয়েই আসে। একগুচ্ছ গোলাপ পেলে চোখে-মুখে ফুল গুজে ঢেকে ফেলেন রোজালি। ফুল সরানোর পর কসম করে বলেন গোলাপের ঘ্রাণটা একেবারে বেহেশতি।

সাইকি যখন লণ্ঠন হাতে কিউপিডের দিকে ঝুঁকেছিল, তার নিশ্বাসে, চুলে ও গালে এমন ঘ্রাণ পেয়েছিল সে। এই স্বর্গীয় ঘ্রাণেই সাইকি বুঝেছিল চিরকাল মানুষকে গোলাপের ঘ্রাণ নিতে হবে শুদ্ধ আত্মার সান্নিধ্য পেতে। এ ব্যাপারে অবশ্য আনার একটা বিশেষ মত আছে, আমরা এর ঘ্রাণে এতটা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে কষ্ট করে আর ফুল শোকার দরকার নেই। কিন্তু বয়সের অভিজ্ঞতায় ফ্র ভন টুমলার নিজেকে বিজ্ঞ মনে করেন। এমন মন্তব্য সব সৌন্দর্যতত্ত্বের বেলাতেই খাটে।

কিন্তু আনন্দ নির্দোষ, অবচেতন মনেই এর জন্ম। এমন সব মুহূর্তেই আনা তার মাকে চুমু খায়, একসঙ্গে হেসে ওঠে দুজন। রোজালি কখনো শিল্পজাত সেন্ট বা পারফিউম ব্যবহার করেন না। তবে জুলিসপ্লাতজের সিএম ফারিনা ওডিকোলন তার প্রিয়। কিন্তু প্রকৃতির দেয়া সব ধরনের সুঘ্রাণ তা মিষ্টি, তিক্ত, ঝাঁঝালো, কি মাথা ধরানো হোকÑ রোজালি সবই ভালোবাসেন।

প্রাণভরে ঘ্রাণ নেন তিনি, ধন্যবাদ দেন প্রকৃতিকে। তাদের হাঁটাপথের এক জায়গায় একটা ঢালু স্থান আছে, বড়োসড়ো কোনো বিষণœতা যেন, সরু গিরিখাদ, খাদের নিচের দিকে জেসমিন ও অ্যাল্ডারের ঝাড়। জুনের গরম দিনগুলোতে আচমকা বৃষ্টি এসে বোকার মতো ভাসিয়ে দেয় গিরিখাদ। এ জায়গাটায় হাঁটলে আনার মাথা ধরে। তারপরও মাঝে মাঝে মাকে সঙ্গ দেয় সে।

রোজালি গভীর শ্বাস নেন উৎফুল্লভাবে। হঠাৎ কখনো দাঁড়িয়ে পড়েন, আবার চলা শুরু হয়। কুয়াশায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘দেখ কী চমৎকার ! এটাই প্রকৃতির নিশ্বাস, প্রকৃতির মিষ্টি সজীব নিশ্বাস, রোদভেজা ও আর্দ্র নিশ্বাস ফেলছে সে আমাদের ওপর। আয়, প্রাণভরে উপভোগ করি এ মুহূর্ত আমরা দুজনেই তো প্রকৃতির সন্তান। ’ ‘উফ, তুমি না মা’ ! আনা বলে ওঠে, মায়ের হাত ধরে সমান তালে পা ফেলে চলে।

‘প্রকৃতি আমাকে ভালোবাসে না। তার এ সৌন্দর্য দিয়ে আমার মনে শুধু চাপই সৃষ্টি করে। ’

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।