আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারী না পুরুষ ??

Quazi Hassan’ World of Writings

ভালবাসা দিবস আবার ফিরে আসছে। বিশ্ব জুড়ে এর পরিচিতি ভ্যালেনটাইন ডে হিসেবে। অন্য যে কেন দিবস থেকে এর কিছু পার্থক্য আছে। এটা একেবারেই যারা ভালবাসে , তাদের একটা দিন। প্রেমিক, প্রেমিকদের সম্পর্ককে ঝালাই করে নেয়া আর নতুন করে ভালবাসা দৃঢ় করার অঙ্গীকারের দিন।

আজকের লেখা, ভালবাসা দিবসের ইতিহাস, ব্যাপ্তি কিংবা তাৎপর্য নিয়ে না । তবে বহুল আলোচিত বিষয় "বড় প্রেমিক কে: নারী না পুরুষ?? " এবং " সিদ্ধান্ত কার ভালো : নারী না পুরুষ ? " নিয়ে। তবে লেখা শুরুর আগে পাঠকদের একটা বিষয় বলে রাখি। মহান সৃষ্টিকর্তা প্রথমে বানালেন পুরুষ। পুরষের অপূর্ণতা দূর করার জন্যে দরকার হলো নারীর।

সম্ববত কম পক্ষে দুটি কারণ এর পিছনে কাজ করেছে । এক, পুরুষ একা খুবই নিসঙ্গ্ বোধ করছিল । দুই, বংশ বিস্তারের জন্যে পুরুষ একা যথেষ্ট না। আরেকটা কথাও বলে রাখি, এ লেখায় কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য, উপাত্ত কিংবা মতবাদ ব্যবহার করা হয় নি। বরং সাধারণ যুক্তি, পর্যবেক্ষণ আর অভিজ্ঞতা উপর ভর করে এই লেখা।

"বড় প্রেমিক কে: নারী না পুরুষ??” রবীন্দ্রনাথ , জীবানন্দ , শরৎচন্দ্র আমাদের বাংলা সাহিত্যের বড় বড় প্রেমিকদের নাম। নারীর সৌন্দর্য আর গুনে মুগ্ধ হয়ে তারা সৃষ্টি করেছেন অনবদ্য সব রচনা। কত না নাম দেয়া হয়েছে প্রেয়াসীদের। কৃষ্ণকলি, নিরুপমা , মাধবী আরো কত শত সব মধুর নাম । কিন্তু উল্টো দিকে, পুরুষকে নিয়ে মহিলা লেখকরা তেমন কোনো বিশাল চেষ্টা করেছেন বলে শোনা যায় না।

পুরুষদের কোনো গুনে মেয়েরা খুবই বিমোহিত হয়ে পরে তার বিশেষ কোনো প্রমানও নাই। গল্প, নাটক, কবিতায় এবং বাস্তবে প্রচুর পুরুষ দেখি, যারা প্রেমে হতাশ হয়ে প্রচন্ড মারাত্বক সব ঘটনা করে। কেও খায় বিষ, কেও করে আত্মহত্যা , কেও হয় পাগল , আর কিছু মানুষ হয় মাতাল আর বৈরাগী। শিল্পী গান করে , “যেদিন আমার মরণ যাত্রা যাবে…” মজনু লায়লীকে নিয়ে মনের মধ্যে এমন অবস্থা তৈরী করেছিল, যে মানসলোকের লায়লী বাস্তবের লায়লীকে অতিক্রম করে ফেলেছিল। প্রেমিকাকে নিয়ে হাহাকার করলেও, অনেক বড় মাপের কবি, লেখক আর প্রেমিকরা বুঝতে সমর্থ হয়েছেন, নারীকে পরিপূর্ণ বুঝা তাদের কর্ম না।

নারী শিশুর জন্ম দেয় , নিয়মিত ভাবে শারীরিক অশস্তী নিয়ে বসবাস করে। সমাজের বিভিন্ন জ্বালা- যন্ত্রণা তাদের নিত্য সাথী। প্রকৃতি তাদের গায়ে পুরুষের মত গায়ের শক্তি দেয় নি, কিন্তু কষ্ট সহিষ্ণুতা তারা অনেক এগিয়ে। নিজের আর পারিপার্শিক জগতের প্রয়োজনে তারা অনেক বেশী রিয়ালিস্টিক। প্রেমে বিফল হয়ে একেবারে চুরন্ত হতাশ তারা খুব কমই হয়।

মেয়েদের পাগল হয়ে যাওয়া, মাতাল হয়ে ঘুরা ইত্যাদী মোটামুটি অসম্ভব ব্যাপার । প্রতিটা নারীর মন আটলান্টিক মহাসাগরের থেকেও বিশাল। তার ভালোবাসার প্রকাশ পুরুষ থেকে স্বতন্ত্র। সে ভালবাসাকে ধারণ করে নিজের একান্ত আপন মন্দিরে। পুরুষের মতো সাময়িক বহির্প্রকাশ তার মধ্যে নেই।

আছে ভালবাসাকে সযত্নে ধারণ আর লালন করার অসাধারণ ক্ষমতা। একটা গল্পের ঘটনা একেবার পরিষ্কার করে বুঝাবে বিষয়টাকে। টাইটানিক ছবির নায়িকা তার নাতনির কাছে তার যুবক বয়সের প্রেমের উপাখ্যান এমনভাবে বর্ণনা করেছিল, যেন মনে হচ্ছিল ঘটনা মাত্র হয়েছে। প্রতিটা দৃশ্য তার মনে একেবারেই সজীব আর প্রানবন্ত। নারীর প্রেম সময়ের সাথে ক্ষয়ে যায় না।

প্রেম তার নিজের জায়গায় থাকে। ভিতরটা যতই অশান্ত থাকুকনা কেন, তার মধ্যে প্রচার কিংবা লোক দেখানোর কোনো চেষ্টা থাকে না । প্রেম তার নিজের জগতের , নিজের অহংকার। " সিদ্ধান্ত কার ভালো : নারী না পুরুষ ? " আপনার বাসার সিদ্ধান্তগুলো কে নেয়? সকালের নাস্তা কি হবে, বাজারে কে যাবে, কাপড় চোপড় কে ধুবে ইত্যাদি ইত্যাদি । খুব সম্ভত বাড়ির গৃহী কর্তী।

কিন্তু বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার বেলায় দেখা যায়, গৃহ কর্তা লাফ দিয়ে আসেন। কিন্তু যার যাই কাজে অভিজ্ঞতা নাই, সে যখন সে কাজ করে , তার ফলাফল হয় বেশ কিছুটা অনিশ্চিত। পুরুষ যখন সিধান্ত নেয়, তার মধ্যে বাস্তবতা থেকে অহমিকা কাজ করে অনেক বেশী। মাত্র কিছু দিন আগেকার কথা। আয়ারল্যানডের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্টানের প্রধান ছিলেন পুরুষরা।

তারা অগ্র পশ্চাত না ভেবে সবই বিনিয়োগ করেছিলেন যুক্তরাষ্টের রিয়েল এস্টেট মার্কেটে। বিনিয়োগ লাভের জায়গায় শূন্য হয়ে গেল। মোটামুটি দেশটা দেউলিয়া হতে বসেছিল। পরে বেশ কিছু মহিলাকে বসানো হলো সর্বোচ্চ পদ গুলোতে। এখন দেশটা বিপদ থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে।

আরেকটা ঘটনা বলি ইসলাম ধর্মের ইতিহাস থেকে। নবী করিম (দঃ) নবুওতি প্রাপ্তির পরে একবার একটা পরিস্তিতির মধ্যে বললেন। ৬ হিজরীতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন ওমরাহ যাবার। তিনি তখন মদীনায় থাকতেন। তিনি সাহাবীদের জানালেন ওমরাহ পালনের কথা।

সবই দল বেধে তীর্থ যাত্রায় রওনা দিলেন। কিন্তু পরে মক্কার দ্বার প্রান্ত থেকে তাদের ফিরে আসতে হলো। মুসলমান আর কুরাইশদের মধ্যে চুক্তি হলো। সেবার মুসলমানরা আর কাবা ঘরে যাবে না। পরের বছর থেকে তারা হজ্জে আসতে পারবে।

রাসুল্লাহ (দঃ) চুক্তি হওয়ার পরে সাহাবীদের বললেন , মক্কার দ্বার প্রান্তেই পশু কোরবানী দিয়ে, চুল কেটে , ওমরাহ র পোশাক পরিবর্তন করে ফেলতে। কিন্তু তারা অনেক আশা করে এসেছিল কাবা যাবার জন্যে। তারা এমন হতাশ হলেন তারা প্রিয় নবীর আদেশ পালন করতে দ্বিধা করলেন। রাসুল্লাহ (দঃ) এমন পরিস্তিতির জন্যে প্রস্তুত ছিলেন না। কি করবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারলেন না।

আল্লাহ'র থেকে কোনো ওহি আসল না। তিনি মন খারাপ করে তাবুতে গেলেন। তার স্ত্রী সায়ীদাহ উম্মে সালমাহ(আঃ) সব শুনে বললেন, তাকে একাই পশু কোরবানী দিয়ে, চুল কেটে , পোশাক পরিবর্তন করে ফেলতে। তিনি তাই করলেন। রাসুল্লাহ ( দঃ) দেখা দেখি অন্যরাও অনিচ্ছা সত্তেও একই কাজ করলেন।

সম্মানিত পাঠকরা বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই, যেহেতু আমরা সাধারণ মানুষরা ওহি পাই না , আমাদের হাতে শুধুই অন্য উপায়টা খোলা। আপানদের জানা হয়ে গেল, সিধান্ত নিতে সমস্যা হলে কে আপনাকে পথ বাতলাতে পারে। প্রকৃতি পরিস্তিত বুঝতে আর সিধান্ত নিতে নারীদের পুরুষদের থেকে এগিয়ে রেখেছে। উপসংহার আমি জানি এই লেখা পড়ে, আমার পুরুষ বন্ধুরা খুব রাগ করবেন। তাদের জন্যে একটা গল্প বলি।

একবার এক দেশে রাজা রাজ্যত্তের সব পুরুষদের ডেকে বললেন, যারা তাদের স্ত্রীকে ভয় পায় না , তার যেন হাতের বাম দিকে যেয়ে দাড়ায়। দেখা গেল , একজন শুকনা , পাতলা পুরুষ ছাড়া বাকি সবাই বাম দিকে যেয়ে দাড়ালো। রাজা ভাবলেন, যাই হোক একজন হলেও তার রাজ্যত্তে এমন মানুষ আছে যে স্ত্রীকে ভয় পায় না। রাজা যখন তার এই বিশাল বীরত্বের গোপন রহস্য জানতে চাইলেন, লোকটি বলল , বের হওয়ার সময় স্ত্রী বলে দিয়েছে , যেখানে বেশী ভিড় তার থেকে সে যেন দূরে থাকে ...........। ০১/২৭/১১


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.