‘‘কাশ্মীর কখনোই ভারতের অবিচ্ছেদ্দ অংশ ছিলা না’’- কথাটা বললেন শ্রীমতি অরুন্ধতি রায়। এমন কথা বলেছেন ভারতীয় বুদ্ধিজীবি, সমাজকর্মী এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার প্রাপ্ত লেখিকা শ্রীমতি অরুন্ধতি রায়। শ্রীমতী রায়ের কথাগুলো উচ্চারিত হচ্ছে জনউত্তালে প্লাবিত ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বুকে দাড়িয়ে। ‘স্থিতপ্রজ্ঞ’তার জন্য শ্রীমতি রায়কে ধন্যবাদ। ইতিহাসের ভাষ্যে ‘মোরগা’ কাশ্মীর রূপান্তরিত হলো তিনটা রসালো হাড্ডিতে।
যথাক্রমে, পূর্বাংশের ষাট ভাগ ভারতের, পশ্চিমাংশের ত্রিশ ভাগ পাকিস্তানের দখলে এবং উত্তরাংশের দশ ভাগ মহাচীনের বন্দুকের নলের মুখে। এখন প্রশ্ন কাশ্মীর ভারত, পাকিস্তান ও চীনের হলো কি করে ? বা ওখানে হচ্ছেটা কি?
জম্বুদ্বীপে সময়টা হলো শৈব্য, বৈদিক, জৈণ ও বৌদ্ধ ইত্যাদি মতের প্রভাব ও প্রসারে প্রবাহমান। একদা আধুনিক শ্রীনগরের সন্নিকটে সম্রাট আশোকের পুরাতন রাজধানী ছিল। মধ্যপন্থী বৌদ্ধ মতের প্রসার ঘটতে থাকে সমাজের সাধারণ মানুষ, উৎপাদক, বণিক, সামন্ত, পুরহিত ও রাজন্যদের মধ্যে। সম্রাট অশোকও তাঁর শাসনকালে মধ্যপন্থী বৌদ্ধমতবাদের শুধুই অনুসারী হননি , এই মতের প্রসারের জন্য নিবেদিত ছিলেন আমৃত্যু।
উত্তরে কাশ্মীর ছিল মধ্য এশিয়া ও চীনের বৌদ্ধ মতের বিনিময় কেন্দ্র। বৌদ্ধ মত সর্বভারতীয় পর্যায় অতিক্রমের মাধ্যমে বিশ্ব মতের সাম্রাজ্য বিস্তার করে এশিয়াতে। কুশান সম্রাট কনিষ্কের সময় যা মধ্য-এশিয়া থেকে পূর্বইউরোপে পৌঁছেছিল। সম্রাট কনিষ্কের দরবারে সংস্কৃত দরবারী ভাষা হিসাবে ব্যবহার হতো।
প্রাচীন সংস্কৃত ভাষার মহাকাব্য ‘‘মহাভারত’’-এ আছে কম্বোজ কাশ্মীর শাসন করতো মহাভারতীয় সময়।
কম্বোজ রাজ্য ছিল অনেকটা গণরাজ্য সরকার কাঠামো। গুপ্তরা হলো আর্য, শক ও কুশাণদের পরবর্তী হিন্দুকুশ পর্বতমালা অতিক্রমকারী মধ্য এশিয়ার হুন গোষ্ঠীর উত্তম-পুরুষ। স্থানীয় শৈব্য ও বৈষ্ণব মতের গুপ্ত সম্রাটদের দরবারেও সংস্কৃত ভাষা দরবারী ভাষা হিসাবে ব্যবহার হতো। বৌদ্ধ মতের অনুসারী হর্ষবর্দ্ধনের সময়ও সংস্কৃত ভাষার কদর ছিল দরবারে।
অষ্টম শতাব্দীতে বৌদ্ধ মতের বার্ধক্যে পতিত ও বিভিন্ন গোষ্ঠী বিরোধে কলুষিত অবস্থা ভারতের।
বৌদ্ধ মত পরাজিত হয় উদিয়মান দক্ষিণ ভারতীয় ব্রাহ্মণ পন্ডিত শঙ্কর আচার্য্যের শৈব্য মুক্তমতের কাছে। ইতিহাসে এই মতকেই ‘‘হিন্দুধর্ম’’ বলে চিহ্নিত করেছে পাশ্চাত্যের ইতিহাসবিদরা।
ঐতিহাসিকভাবে সিন্ধু নদ ও তার পূর্ববাসীরা আরবসহ অন্যান্য উত্তর- পশ্চিমাবাসীদের কাছে ‘হিন্দু’ নামে পরিচিত ছিল। সুতরাং ধর্ম, বর্ণের উর্দ্ধে হিন্দুস্তানের আধিবাসী মাত্রই গণভাবে ‘হিন্দু’ নামে একদা ভূ-পরিচিতি ছিল। আদি ‘‘হিন্দু’’ ভূ-পরিচিতি হাল আমলে সামান্য সম্প্রদায়ের গন্ডির পাঁকে গড়াগড়ি খাচ্ছে ! অথচ প্রচলিত ও কথিত হিন্দু মতের প্রভাব বিস্তার হতে দেখব ভারতে ব্রাহ্মণ পন্ডিত শঙ্কর আচার্য্যের কাশ্মীর অভিযানের পরবর্তীতে।
এই উপত্যকায় ১৩৪৯ সালে শাহ মীর প্রথম কাশ্মীর শাসকরূপে তার রাজত্ব শুরু করেন। পরবর্তীতে মোগলরা ১৫২৬ থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত কাশ্মীর মোগল সম্রাজ্যের শাসনভুক্ত ছিল। আহম্মদ শাহ দুররানী শাসন করেন ১৭৪৭ থেকে ১৮২০ সাল। শিখ সম্প্রদায়ের মহারাজা রণজিৎ সিং ১৮৪৬ সাল পর্যমত্ম কাশ্মীর শাসন করেন। অমৃতশর চুক্তির বুনিয়াদে দখলদার খ্রীষ্টান ব্রিটিশ শাসকের কাছ থেকে নগদ নারায়ণের বিনিময়ে কাশ্মীরে আশ্রিত ডোগরা রাজত্ব শুরু হয়।
যা ১৮৫৭ সালের ব্রিটিশ বিরোধী যুদ্ধে ভারতীয়দের পরাজয়ের পর ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রীত আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়।
কাশ্মীরের ডোগরা মহারাজা হরি সিং-এর ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি’ ভারত না পাকিসত্মান মানসিকতা সহ পরবতীর্তে ভারতের সাথে গাঁটছড়া বাঁধায় রাজ্য গ্রাসের সুযোগ সৃষ্টি হলো। স্বাধীন কাশ্মীর চিন্তা বায়োবীয় রূপ ধারণ করে সঠিক চিন্তার ও যোগ্য নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে। ব্রিটিশ-ভারতের গভর্ণর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেনের নেতৃত্বাধীন ভারতে অশ্রিত ব্রিটিশ সেনাবাহিনী হরি সিং-এর স্বাধীন কাশ্মীরের বৃহত্তর অংশ দখলে নেয়। অযুহাত ডমিনিয়ন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে জেনারেল অচিনলেকের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ সেনাবাহিনী স্বাধীন কাশ্মীর ও হায়দ্রাবাদের নিজামের রাজ্য দখল করে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের স্বঘোষিত গভর্ণর জেনারেল জিন্নাহ’র হুকুম অমান্য করে পাকিস্তানে অবস্থানরত ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কমান্ডার লে. জেনারেল ডগলাস গ্রেসি কাশ্মীর দখল করতে। পাক-ভারত ডোমিনিয়নের প্রভু লর্ড মাউন্টব্যাটনের নিয়ন্ত্রীত সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল অচিনলেকের কমান্ডের অধিনে ছিল গ্রেসী। সুতরাং বেচারা বৃদ্ধ গভর্ণর জেনারেল জিন্নাহ’র কথায় ছোকরা জেনারেল গ্রেসী পাত্তা দেয়নি। কাশ্মীর দখল নিতে প্রতিবেশী অস্ত্রধারী পাঠান গোত্রাধিপতিদের উঁস্কানির মাধ্যমে জিন্নাহ নিজের সেনাবাহিনীর মতো ব্যবহার করে। উনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ, আফগান ও রাশিয়ার ত্রিপক্ষীয় ভাগ-বাটোয়ারা চুক্তিকে বরাবর অস্বীকার করে আসছিল দখলদার কবলিত একদা দুর্বল চীন।
১৯৪৯ সালে দখলদার মুক্ত হয় পিপলস্ রিপাবলিক চীন। পরবর্তীতে কাশ্মীরের অংশ অকসাই চীন দখলে নেয় পড়ে পাওয়া মাল হিসাবে।
হাঁ, পন্ডিত জওহর লাল নেহেরু তখন ভারতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রথম গণতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রী। কারণ ব্রিটিশ-ভারত সম্রাজ্য তখনও জীবন্ত ভিক্টোরিয়ার ডমিনিয়নের অধিনে। অথচ বাজারে চালু রাজনৈতিক পরাশর মুনিদের বরদানে স্বাধীনতার চাটাম ! রানী’র নিয়োগকৃত গভর্ণর জেনারেল মাউন্টব্যাটেন কথিত স্বাধীন (ডমিনিয়ন) ভারতের তখনও প্রধানমন্ত্রীর মুরোববী ! যে লড়াইটা দখলদার ব্রিটিশ সেনাবাহিনী শুরু করেছিল হরি সিং-এর কাশ্মীর রাজ্য দখল করে।
ভারতীয় নেটিভ সরকার সেই লড়াইটা বজায় রেখেছে দখলদার ব্রিটিশদের কূটকৌশলের নেটিভ উত্তরসূরী হিসাবে।
‘‘সুনিতা জাতব স্বসেণহে কুকুরটিকে খেতে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিধি বাম। তাঁর এই মমতার উল্টো ফল ফলেছে। কুকুরটির মালিক সুনিতার খাওয়ানো দেখে ফেলে।
কী সাহস ! দলিত হয়ে কি না আমার কুকুরকে খাইয়েছে। তাঁর নালিশ পেয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত সুনিতাকে ১৫ হাজার রূপী জরিমানা করেছে। আর উচ্চবর্ণের মালিক কুকুরটিও তাড়িয়ে দিয়েছে। সুনিতার হাতের ছোঁয়ায় কুকুরটিও এখন অচ্ছুৎ !’’ ভারতের এই রূপকথার কাহিনীটা যদিও দুই হাজার দশ সালের। এই হচ্ছে আজকের বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক এবং ‘ধম্মোনিরপেক্ষ দেশ’ ভারতের সামাজিক প্রকৃত রূপ।
আর সাম্প্রদায়ীকতার জমজমাট হলি উৎসব ছিল পিতা ও কন্যার শাসন আমলে। কম পক্ষে কয়েক হাজার বার সাম্প্রদায়ীক দাঙ্গা ঘটেছে ধর্মনিরপেক্ষতার নেকাবের আড়ালে। সুতরাং ছলনার ধর্মোনিরপেক্ষ লেবাসের ভেলায় ভাসতে থাকলো আধুনিক গণতান্ত্রীক ভারত।
বাংলাদেশের মতো ভারতেও উনিশশ নববই সাল পর্যন্ত আইটিসি ও হিন্দুস্তান লিভার সবচেয়ে বড় কোম্পানীর তকমাধারী ছিল। কেন টাটা বা আম্বানি’রা বর্তমানের মতো সুযোগ সুবিধা থেকে তখন বঞ্চিত ছিল সমাজতন্ত্রের নামে ? কেন নব্য হিন্দু বা মুসলিম জাতিয়তাবাদ সৃষ্টি হলো ? ভারতের বিষফোঁড়া বাবরি মসজিদ কেন চিহ্নিত করলো ব্রিটিশরা ? সেই একই কারণে নাবালক ভারত ভাগ হলো ! তাইতো ভারতের ভাগ্যের সিকেতে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পদ প্রকারান্তে চিট্ হলো।
সমাজে জোরালো ভাবে বিপনণ শুরু করলো বর্ণবাদী ভেদাভেদ এবং সাম্প্রদায়ীক দাঙ্গা ? বর্ণবাদী সমাজ থেকে সৃষ্টি হয়েছে লাঞ্ছিত-বঞ্চিত সংখ্যাগরীষ্ঠ জনসংখ্যার নতুন পরিচয়ে প্রতিরোধী মাওবাদী নামে।
সমাজতন্ত্র ও ধর্মোনিরপেক্ষতার পেখমে সজ্জিত নিপুন ভন্ডামীর রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ফলাফল, প্রতি তিন জন মানুষের মধ্যে একজন বুভুক্ষ অবস্থায় বাজারে জিন্দালাশ ভোক্তা হিসাবে বিচারণ করছে দুই হাজার দশ সালেও। অথচ একশত পনেরো কোটি লোকসংখ্যার ভারত বর্তমান পৃথিবীর নবীন বৃহত্তরো অর্থনৈতিক পরাশক্তি। আর সেই ভারত কি না আগত আগামী বিশ্বের প্রধান নেতৃত্বদানকারীর ভূমিকা পালন করবে !
এতোকিছু তো বাকধারায় প্রকাশ করা যায় না। এখনও ‘‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের জীয়নকাঠি হলো দখলকৃত একচেটিয়া ভারতীয় বিনিয়োগ ও বাজার’’।
অথচ কেমন সুন্দর শুরু ডমিনিয়ন পরবর্তীতে স্বাধীনতা দিল। পাঠক এতটা গুড় আধ সের নয়। কারণ এখানে তখনও ব্রিটিশ সম্রাজ্যের প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি ডলার দখলদারী বিনিয়োগ জীবিত এবং ডমিনিয়নের হাতে নগদ নারায়ণ হলো পনেরেশো কোটি রূপী !
খ্রীষ্টান শাসক সৃষ্ট হিন্দু ও মুসলিম দুইটি বায়োবিয় নেটিভ জাতি উভয়কেই গ্যাটিজ পালতে ভাগা দিল ভারত এবং পাকিস্থান নামে দু’টি ভূ-খন্ড ! ব্রিটিশদের উচ্ছেদ করতে না পারলেও নেটিভরা লড়াই বাধিয়ে দিল যেন হিন্দু বা মুসলিম ভারত দখলদার ছিল ভেবে। সকল নেটিভ রাজনৈতিক দেবতাগণ কখনো বললো না যে, দখলদার ব্রিটিশদের ঐ সাড়ে তিনশ কোটি ডলারের লুন্ঠন-পূঁজি বিনিয়োগ এবং নগদ নারয়ণের পুরোটাই ভারত ও পাকিসত্মানের জনগণের মালিকানা !
ভারতীয় উপমহাদেশে উনিশশ সাতচল্লিশ থেকে নববই সাল পর্যন্ত সময় ব্রিটিশদের বিনিয়োগ ও বাজার একচেটিয়া বজায় রাখার রাজনৈতিক রক্ষিতা কান্ড ! তাইতো লিভার ও আইটিসি উনিশশ নববই পর্যন্ত এই উপমহাদেশে একচেটিয়া বাজার ভোগ করেছে স্থানীয় নেটিভ রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবী নামক দাস দালালদের মাধ্যমে। এখনও ব্রিটিশরা উপমহাদেশের একমাত্র বিদেশী লুটেরা অতীতের দখলদারীর মতো একচেটিয়া বাজার ভোগ করছে।
যা পাশ্চাত্যের অন্য কোনো দেশের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এমন কি এই উপমহাদেশের কোন দেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তিনটি দেশে সাইন বোর্ড ঝুলাতে পারে নাই একত্রে। সত্য কথা বলতে এই উপমহাদেশের কোন রাজনৈতিক দল বা বুদ্ধিজীবী নাই যারা দেশ তিনটির স্বার্থ রক্ষা করবে ! অথবা নিজেদের বুদ্ধিতে ভিখ্ করবে !
বিনিয়োগ, বাজার ও নগদ হাতাতে শুরুতে সাম্প্রদায়ীক দাঙ্গার ভেল্কি ছিটালো পূর্ব থেকে পশ্চিমে নেটিভদের মধ্যে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী স্বাধীন কাশ্মীর ও হায়দ্রাবাদের নিজাম রাজ্য ঝটিকা দখল করে তোফা নাজরানা দেয় ভারতীয় বর্ণবাদী নেতৃত্বের দেবতুল্য গণতন্ত্রী সরকারকে। কারণ ঐতিহাসিক সত্য হলো সর্বভারত শাসন করতে কথিত আর্য ব্রাহ্মণরা এর আগে কখনো সক্ষম হয়নি।
সুতরাং জনগণের নজর থেকে হিন্দুস্তানে ব্রিটিশ বিনিয়োগ, একচেটিয়া বাজার রক্ষা ও নগদ অর্থ হাতাতে এই সকল সফল উদ্দ্যোগ ঘটায়। কাঠাল ভাঙ্গে সকল নেটিভ রাজনৈতিকদের ঘাঁড়ে ভর করে ব্রিটিশ বুদ্ধিতে।
দখলদাররা পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে অতীত বা বর্তমানে দখলদারী এলাকায় যা যা করে থাকে তাইই ঘটাচ্ছে। যেমন প্যালেস্টাইন, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, ইরাক, আলজেরিয়া এবং আফগানিস্তান ইত্যাদির বেলায় যে গণতান্ত্রিক ছবক বিলাচ্ছে সীসা ও বোমার মাধ্যমে। সরব-নীরবতায় জানতে পারবো কাশ্মীরেও সেই একই ঘটনা ঘটানো হচ্ছে কথিত ভারতীয় অখন্ডতার অজুহাতে।
কাশ্মীর সম্পর্কে বলতে যেয়ে শুরু করে ছিলাম মহাভারতের নায়ক শ্রী কৃষ্ণের ভাষায় ‘স্থিতপ্রজ্ঞ’ অরম্নন্ধতী রায়কে উদ্ধৃতি দিয়ে। শেষ করবো ভারতীয় বংশোদ্ভুত ‘সালমান রুশদী’র উপন্যাস ‘শালিমার দ্যা ক্লাউনে’র ভাষায় শুনুন কাশ্মীরের বেদনার রোজনামচা। ‘‘গোঁড়া ধর্মান্ধরা আমাদের পুরুষদের হত্যা করছে এবং সৈন্যরা আমাদের নারীদের লাঞ্ছিত করছে। ’’ এরপর সে নির্দিষ্ট কয়েকটা শহরের নাম বলল যেখানে জঙ্গীরা স্থানীদের হত্যা করেছে গুলি করে, ফাঁসিতে লটকে, ছুরি মেরে, শিরশ্ছেদ করে এবং বোমা মেরে – বাদগাম, বাটমালু, ছাওয়ালগাম। ‘‘এই হচ্ছে তাদের ইসলাম।
তারা আমাদের ভুলে যেতে চায়, কিন্তু আমরা তাদের স্মরণ করি। ’’
এর মধ্যে সৈন্যরা নারীদের যৌনলাঞ্ছনা করে এই জনগোষ্ঠীর মনোবলটাই ভেঙে দিয়েছে। ঝুলান পুষ্পরাতে বন্দুকের নলের মুখে সৈন্যরা তেইশজন নারীর ইজ্জত লুটেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সৈন্যদের অল্প বয়সী নারীদের অবমাননা করা এখন এক সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কম বয়সী মেয়েদের তারা ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়, উলঙ্গ করে, গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে এবং ছুরি দিয়ে তাদের স্তন কেটে নেয়’’।
আরও বেশী জানতে হলে উপন্যাসটা পাঠ করতে হবে। সাধে তো অরুন্ধতী রায় বলেনি কাশ্মীর ভারতের নয় !
তাহলে এখন সম্মান রক্ষার উপায় কি ষড়যন্ত্রের জালে আটকাপড়া ঐরাবত শাবক ভারতের ? প্রয়োজন ‘স্থিতপ্রজ্ঞ’ ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ। মহাভারতে শ্রী কৃষ্ণ তাঁর প্রিয় সখা পার্থকে বলেন,‘‘ যিনি পুত্র, মিত্র প্রভৃতি সকলের প্রতি সেণহশূন্য, যিনি অনুকূল বিষয়ে অভিনন্দন ও প্রতিকূল বিষয়ে দ্বেষ করেন না, তাঁহারই প্রজ্ঞা নিশ্চলা ও তিনিই স্থিতপ্রজ্ঞ’’। ভারতীয় রাজনীতিবিদদের উচিৎ সংকীর্ণ নেটিভ মানসিকতা বর্জণের মাধ্যমে আন্ত:জাতিরাষ্ট্র সংঘ কাঠামো গড়া।
**আমার এই লেখাটি খুলনা জার্নালে পুর্বে প্রকাশিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।