আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাশ্মীর গিয়ে কি দেখবেনঃ

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

কাশ্মীর গিয়ে কি দেখবেনঃ বহু বতসর পুর্বে ক্যাডেট কলেজে পড়ার সময় ইংলিশ ডিবেটে "ভিলেজ লাইফ ভার্সেস টাউন লাইফ" ডিবেটে ভিলেজ লাইফের পক্ষে বলতে গিয়ে বলতাম-"গড মেইড দ্যা ভিলেজ, ম্যান মেড টাউন। গড মেইড সব কিছুই অনিন্দ সৌন্দর্যে ভরপুর......সেই সৌন্দর্যে কোন ক্ষুত নেই, ম্যান মেড যতই সুন্দর দেখাকনাকেনো-সেই সৌন্দর্যে অনেক ক্ষুত থাকবেই"-সেই কথাটি আবারো প্রমান পেয়েছি কাশ্মীর দেখে। হিমালয়ের তুষার আবৃত পর্বত শ্রেনীর মাঝে চিরপ্রসিদ্ধ কাশ্মীর উপত্যকা। আপেল, আখরোট আর চেরী ফলের দেশ কাশ্মীর। চিনার গাছের সৌন্দর্য্যে ছায়া বর্ণময় পুষ্পশোভায় ভরা এক নন্দনকানন কাশ্মীর যেনো অনিন্দ্য সুন্দর প্রাকৃতিক ছবি।

যেন এক রুপকথার রাজ্য। চোখ জুড়ানো অসাধারন রুপসী উপত্যকার নাম কাশ্মীর। প্রতিটি ভ্রমন পিয়াসী মনকে হাতছানি দেয় তুষারের মুকুট পরা সবুজ উপত্যকার পাহাড়ি দেশ ভুস্বর্গ কাশ্মীর। কাশ্মীরের সৌন্দর্যে সত্যি কোন ক্ষুত নেই। কাশ্মীরের দুটি অংশ।

একটি ভারত শাসিত জম্মু কাশ্মীর এবং অন্যটি পাকিস্তান অধিভুক্ত আযাদ কাশ্মীর। জম্মু কাশ্মীর ভারতের একটি রাজ্য। কী ভাবে কাশ্মীর ভারতের অধিভুক্ত তা আমরা অনেকেই জানি-কাজেই আমি কাশ্মীরের রাজনৈতিক পটভুমি আলোচনা করবোনা। ফিরে যাই কাশ্মীর ভ্রমনে। সংগত কারনেই আমাদের বাংলাদেশীরা বিদেশ ভ্রমনে প্রথমেই বেছে নেই-আমাদের নিকট প্রতিবেশী দেশ ভারতের কোলকাতা, আজমীর, দিল্লীর তাজমহলকে-যা ভ্রমন না হয়ে অনেকটাই হয়েযায় শপিং।

কিন্তু একটু সাহসী হলেই আমরা অনেক কম খরচে ভুস্বর্গ কাশ্মীর ভ্রমন করে আসতে পারি। প্রথমেই আমি জানাচ্ছি কাশ্মীর গিয়ে আমরা কী দেখবো এবং সেইসব যায়গার সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ- জম্মু, কাটরা, কোইলাশ কুন্ড, শ্রীনগর, ডাল লেক, গুল মার্গ, উলার লেক, সোনা মার্গ, পহেলগাঁও, লাদাখ এবং কারগিল। জম্মুঃ ৩০৫ মিঃ (৯৯০ ফিট)উচ্চতায় তাওয়াই নদীর তীরে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের শীতকালীন রাজধানী শহর। পর্য্যটকদের কাশ্মীর উপত্যকায় পৌঁছানোর তোরণদ্বার। সমতল আর কাশ্মীর উপত্যকার মাঝে জম্মু তাওয়াই এই পথের শেষ রেলস্টেশন।

জম্মুর অন্যতম আকর্ষন রঘুনাজীর মন্দির এর অবস্থান এই শহরের কেন্দ্রে। আরো দেখতে পাবেন জয়পুর পাথরের তৈরী রাম, লক্ষণ, সীতা সহ অনেকের মুর্তি। অমর সিং প্যালেস মিউজিয়ামে অনেক ঐতিহাসিক ছবি এবং তার ব্যক্তিগত বই সংগ্রহ দেখে মুগ্ধ হবেন। কেমন করে যাবেনঃ-কলকাতা থেকে দুরত্ব ১৬৬৭ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে জম্মুর ডাইরেক্ট এয়ার সার্ভিস নেই।

তবে কোলকাতা-দিল্লি-জম্মু এয়ার সার্ভিস আছে। শিয়ালদাহ থেকে প্রতি দিন জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেস ছেড়ে ৪৪ ঘন্টা পর জম্মুতে পৌঁছে। থাকা এবং খাবারের জন্য তেমন ভাবনার কিছু নেই। একটা বিশয় উল্লেখ করছি-নবিবাহিত এবং বয়স্ক ভ্রমনকারীগন সব সময় তৃতীয় এবং মধ্যম মানের হোটেল চয়েস করবেন। ইয়াং এবং ব্যাচেলরগন ইয়ুথ হোস্টেল/ ডরমেটরী বেছে নিবেন-তাতে খরচাপাতিতে অনেক বেশী শাস্রয় হবে।

যেখানে ২০০-২৫০ রুপীতে হোটেল/ লজ পাবেন, সেখানে ২৫/৩০ রুপীতে ইয়ুথ হোস্টেল/ডরমেটরীতে থাকতে পারবেন। ইচ্ছে করলে আগেই জম্মু ও কাশ্মীর ট্যুরিজমের সেন্ট্রাল রিজার্ভেশন থেকে সব ধরনের হোটেলে বুকিং দিয়ে নিতে পারেন। কাটরাঃ ২০-৩০ রুপীতে ২ ঘন্টায় জম্মু থেকে ৪৮ কিঃমিঃ বাস জার্ণীকরে কাটরা পৌঁছতে হবে। সকাল ৬ টা থেক রাত ৮ টা পর্য্যন্ত কিছুক্ষণ পরপর বাস যাচ্ছে। ট্যাক্সি জীপ করেও যেতে পারেন-তবে পাহাড়ী পথবলে খরচ বেশী পড়বে।

১৪ কিঃমিঃ হাটাপথে পৌঁছতে হয় উত্তর ভারতের প্রসিদ্ধ বজ্ঞোদেবীর তীর্থ মন্দিরে। ১৬০০মিটার (৫২০০ ফিট) উচ্চতায় পাহাড়ী মন্দির এটি। এখানে থাকা এবং খাবার জন্য শ্রীধর সভা, বৈষ্ণ সেবা সংঘ এবং ধর্ম্নাথ ট্রাস্টে সুবন্দবস্ত আছে। কৈলাস কুন্ডঃ কৈলাশকুন্ডের অন্য নাম কপলাশ লেক। ভাদরোয়া শহর থেকে প্রায় ১৮ কিঃমিঃ দূরে ৪৪০০ মিটার(১৪৩০০ ফিট) উচ্চতায় স্বচ্ছ নীল জলের সরোবর কৈলাশ কুন্ড।

এখানে আরো আছে-মহেশ্বর বিষ্ণু, মহাদেব ত্রিশুল ও বাসুকী নাগের মুর্তি এবং মন্দির। থাকার জন্য আছে ২০০/৩০০ রুপীতে পর্যাপ্ত ট্যুরিস্ট বাংলোর সুবিধা। শ্রীনগরঃ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে নয়নাভিরাম কাশ্মীর উপত্যকার ১৭৬৮ মিঃ (৫৭৪৬ ফিট) উচ্চতায় ডাল লেক আর ঝিলাম নদীর দুই তীরে চিনার-পাইন গাছের ছায়ায় রাজধানী শহর শ্রীনগর। এই শ্রীনগরেই রয়েছে বিশ্ব বিখ্যাত ডাল লেক। কবি নজরুলের সেই বিখ্যাত ঝিলাম নদী এঁকেবেঁকে চলে গেছে শ্রীনগরের বুক চিরে।

সুদৃশ্য ৭ টি ঝুলন্ত সেতুর সাহায্যে নদী পারাপারের সুব্যবস্থা। আর অরণ্য পাহাড়ের পটভুমিকায় ঝিলাম ও ডাল লেক/হ্রদের বুকে শতশত ভাসমান সুসজ্জিত হাউসবোট সৃস্টি করেছে ভুবন বিখ্যাত শ্রীনগরের বিশেষ সৌন্দর্য। কাশ্মীর উপত্যকা তথা শ্রীনগর ভ্রমনের উপযুক্ত সময় মার্চ থেকে অক্টোবর। অন্য সময় বলতে গেলে বরফ ঢাকা থাকে। কলকাতা থেকে ট্রেনে জম্মু হয়ে জম্মু থেকে বাস/ টেক্সি করে পৌঁছতে হবে শ্রীনগর।

জম্মু তাওয়াই শ্রীনগরের রেল সংযোগকারী স্টেশন। জম্মু তাওয়াই স্টেশনের অদুরেই বাস স্টান্ড থেকে সকাল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বাস যাচ্ছে শ্রীনগরে ১০/১২ ঘন্টায়। শ্রীনগরে থাকার জন্য একটা স্পেশালিটি আছে। বিভিন্ন দামের, ভিন্ন ভিন্ন রকমের হোটেল, লজ, বাংলো, পেয়িং গেস্ট থাকার ব্যবস্থা ছাড়াও ঐতিয্যবাহি হাউসবোটে আপনি থাকতে পারবেন। হাউসবোট এক বিচিত্র সুস্বজ্জিত গৃহতরী।

২৪ থেকে ৩৮ মিটার লম্বা এবং ৩-৬ মিটার চওড়া ভাসমান নৌকার মধ্যে সুস্বজ্জিত বেড রুম, ডাইনিং রুম, বাথ রুম ছাড়াও বৈঠকখানা এমনকি স্নানবাথের ব্যবস্থা সহ সব রকমের খাবার এবং পানীয়'র সুব্যবস্থা নিয়ে সারা বিশ্বের পর্য্টকদের মনোরঞ্জনের জন্য সদাই ব্যস্ত। ডাললেক(শ্রীনগর)ঃ কাশ্মীর পাহাড়ী এলাকা হলেও সারা এলাকা জুড়ে রয়েছে অসংখ্য নয়নাভিরাম লেক। ডাল বোট থেকে ডালহ্রদের শুরু। এলাকা ভেদে এক এক অংশের এক একনাম। যেমন নাগীণ লেক, নুরজাহান লেক, জাহান আরা গার্ডেন লেক ইত্যাদি।

ডালের বুকে ভেষে আছে-অসংখ্য রাজকীয় হাউসবোট। আর জীবনকে উপভোগের জন্য রয়েছে-রাজকীয় যত্তসব আয়োজন। এখানে আছে ৫ টি মুঘল চিনার গার্ডেন। ডালের পাশে মুঘল সম্রাট জাহাংগীরের প্রমোদ উদ্যানের নাম নিশাত বাগ। নিশাত বাগের ৪ কিঃমিঃ আর শহর থেকে ১৫ কিঃমিঃ দূরে সালিমারবাগে প্রণয় উদ্যান।

ডালের পশ্চিম দিকে আছে-নাসিমবাগ। এখানেই আরো আছে-মোঘল ঐতিয্য গাগ্রিবাল পার্ক, চারচিনার, কবুতরখানা এবং নেহেরু পার্ক। এখানে আর একটি বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানের নাম হযতরবাল মসজিদ। এই মসজিদে নাকি হযরত মুঃ(সঃ) এর মাথার চুল সংরক্ষিত আছে। শ্রীনগর থেকে ৫৬ কিঃমিঃ দূরে ২৬৫৩ মিঃ(৮৮২২ ফিট) উচ্চতায় দেখে আসতে পারেন গুলমার্গ।

এখানেই বিশ্বের সর্বোচ্চতায় ১৮ হোলের গলফ কোর্স রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাস্ট্র নায়কগন এখানে বেড়াতে এসে এই গলফ কোর্স ব্যবহার করেন। শ্রীনগর থেকে ৮৩ কিঃমিঃ দূরে উলার লেক এবং সোনমার্গ অবশ্যই দেখে আসবেন। সিন্ধু নদের তীর ধরে সন্দধবরল ও ব্যাওদন অজলঙ্গের রমনীয় পার্বত্যগুহা পার হয়ে দেখতে পারবেন ২৭৪৮ মিঃ(৮৯৩০ ফিট) উচ্চতায় সোনমার্গ। এই সোনমার্গ শীতকালে সম্পুর্ন বরফে ঢাকা থাকে শুধু মার্চ-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেখা সম্ভব পাহাড়ী ফুলে ফুলে সজ্জ্বিত পাহাড়ী কণ্যা সোমমার্গ।

শ্রীনগর থেকে ৯৬ কিঃমিঃ দূরে লিডার উপত্যকার ২১৩০ মিঃ (৬৯২২ ফিট)উচ্চতায় অন্যতম পাহাড়ী শহরের নাম পহেলগাঁও। সিন্দু এবং সরু নদী প্রবাহিত ৩০০০-৪৫০০ মিটার উচ্চতায় জম্মু ও কাশ্মীরের বৃহত্তম জেলার নাম লাদাখ-যা বিশ্বের সর্বোচ্চ মানব বসতিপুর্ণ অঞ্চল বলে খ্যাত। এই নদীর তীরেই আছে-লে, কারগিল, পাদুম প্রভৃতি শহর। লে, লাদাখ, পাদুম, কারগীল অঞ্চল রেস্ট্রিক্টেড এরিয়া। ভারত-পাকিস্তানের সৈনিকদের মুখোমুখী অবস্থান।

এসব যায়গায় ভ্রমন করার জন্য ভারতীয় সেনাদের পার্মিশন এবং সাপোর্ট নিতে হয়। লাদাখের ২য় বৃহত্তম শহর কারগিল। জনসংখ্যা মাত্র ৪ হাজার। এরা শিয়া ধর্মাম্বলী। কারগিলের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে অনতি দুরে আমি পাকিস্তানী সৈন্যদের রণ সাজে স্বজ্জিত দেখে যখন আঙ্গুল উচিয়ে "ওরা কারা"- জানতে চাইলাম।

ভারতীয় সেনা অফিসার আমাদের হাত তুলে কিছু দেখাতে বারন করে বললো-ঐ যে, পাকিস্তানী পতাকা দেখা যায়-ঐ দিকটা হচ্ছে "আযাদ কাশ্মীর"... পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত। আমি ভারতীয় সেনা অফিসারকে বললাম-তুমি যেহেতু বলছো-"আযাদ কাশ্মীর"- মানে ওরা স্বাধীন। তাহলে তোমাদের জম্মু কাশ্মীর স্বাধীন নয়? জম্মু-কাশ্মীরও কি একদিন আযাদ হবে? ২৪ মাউন্টেন ডিভিশনের ভারতীয় সেনা অফিসার অনেক কস্টে আমার খোঁচাটা হজম করে-তাঁর রাগ চেঁপে আমাদের ওখান থেকে ফিরিয়ে নিয়ে অন্য দিকে যান।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.