আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গণতন্ত্র ও যুদ্ধাপরাধ একসঙ্গে নয়

বাংলা আমার দেশ

জামায়াত ও তাদের সমর্থকদের সা¤প্রতিক বিষোদগার হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোন বিষয় নয়। এর একটা প্যাটার্ন আছে এবং প্রায় তিন সপ্তাহ আগে এই প্রথমবার তারা এ ধরনের বক্তব্য রাখল, তাও নয়। অতীতেও রেখেছে, দেশে যখন কোন সংকটের আশংকা দেখা দেয় বা তাদের ওপর মনোযোগ বেশি দেয়া হচ্ছে বলে মনে হয় তখনই তারা এ ধরনের উক্তি করে। এর একটা কারণ আছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনও মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে সংবেদনশীল।

এ ধরনের মন্তব্যে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত যারা, কিছু রাজনীতিবিদ, সিভিল সমাজের বিভিন্ন গ্র“প এ প্রতিবাদে অংশ নেয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি তোলে। কিছুদিন পর সবাই আবার আগের অবস্থানে ফিরে যায়। এরই মধ্যে দেখা যায় আশংকিত সংকট আর কোন ইস্যু নয়।

জামায়াত থেকেও দৃষ্টি সরে যায়। লক্ষণীয় এ সময় সরকার [সব সরকার] রেফারির ভূমিকায় বা ‘নিরপেক্ষ’ থাকে। এর অর্থ, জামায়াত যে এসব মন্তব্য করে তার পেছনে পৃষ্ঠপোষকতা বা নির্দেশ আছে বলেই সে করে। সেই সিভিল সমাজের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণকারী গ্র“প বা রাজনৈতিক দল যে-কেউ হতে পারে। স¤প্রতি জামায়াত যে এসব মন্তব্য করেছে এর অনেক কারণের একটি হতে পারে।

চারদিক থেকে বলা হচ্ছে, জামায়াতকে অনেক বিষয়ে ছাড় দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার পক্ষ থেকেও স্বীকার করা হচ্ছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, সার সংকট প্রকট। বিশ্ববিদ্যালয় আপাতত মনে হচ্ছে শান্ত, কিন্তু সেটি নাও হতে পারে। যেভাবে সরকার চেয়েছিল (উপদেষ্টার মতে) সেভাবে রাজনীতি চলছে না, চারদিকে অস্বস্তি। হয়তো এসব কারণে জামায়াতের এসব মন্তব্য।

জামায়াতি মন্তব্যগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ধারাবাহিকভাবে এগুলো দেয়া হচ্ছে এবং এমনভাবে দেয়া হচ্ছে যেন মানুষজন অসন্তুষ্ট হয়। ইতিমধ্যে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আপনারা হয়তো এসব মন্তব্য দেখেছেন। তবুও কিছু উল্লেখ করছি— ১. মুজাহিদ ঃ ‘যুদ্ধাপরাধী বলে কিছু নেই’। ২. কাদের মোল্লা ঃ কেউ সুন্দরী নারীর লোভে, কেউ ভারতীয় স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। ’ (মোল্লা অবশ্য বলেছেন, তিনি এ ধরনের মন্তব্য করেননি)।

৩. শাহ হান্নান ঃ ১৯৭১ সালে যা হয়েছিল তা ‘গৃহযুদ্ধ’। ৪. মাহমুদুর রহমান ঃ এমনিতে মুদ্রাস্ফীতির চাপে জনগণের এখন দিশেহারা অবস্থা। এর ওপর দেশে কোন কর্মসংস্থান নেই। বর্তমান সময়ে জনগণের জন্য এর চেয়ে বড় কোন সংকট নেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করার মতো বিলাসিতা এখন জনগণের নেই।

[প্রথম আলো, ১৩.১১.০৭] ৫. বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদের ডিন এবিএম মাহবুবুল ইসলাম : ‘যুদ্ধাপরাধী হতে হলে দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হতে হয়। কিন্তু আমাদের এখানে যুদ্ধ হয়েছে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে। বাংলাদেশ সেই যুদ্ধের অংশ ছিল না। এ কারণে বাংলাদেশে কখনোই যুদ্ধাপরাধী ছিল না। ’ [ঐ] ৬. চট্টগ্রামের ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ড. মোঃ আবদুস সামাদ : যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলে এদেরই বিচার করা উচিত।

কারণ, এরা গত ৩৬ বছরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেনি। [ঐ] এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অপরিচিত শিক্ষকও এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। ৭. ১৪ নভেম্বর আরেক সভায় গিয়াস কামাল চৌধুরী, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, জামায়াত, খেলাফত মজলিশ ও তাদের সমর্থকরা আরেকটি সভায় ‘বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিদারদের প্রচ্ছন্ন হুমকি দেন। ’ [প্রথম আলো, ১৪.১১.০৭] ৮. জামায়াতের সহকারী সচিব ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক : ‘সংবিধান পরিবর্তন না করে এই দাবি পূরণ করা সম্ভব না। সংবিধান পরিবর্তন করতে হলে গণভোট করতে হবে।

’ [ঐ] ৯. অ্যাডভোকেট মসিউল আলম : যারা বিচার দাবি করছে তাদের উদ্দেশ্যে— ‘ধরে নিয়ে বিচার করলে আপনাদেরও তো ধরে নিয়ে যেতে পারে। ধরাধরি শুরু হয়ে গেলে তো কেউ রেহাই পাবেন না’। [ঐ] ১০. সাদেক খান : ‘একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধারাও যুদ্ধাপরাধ করেছে, বিচার করতে হলে দুই পক্ষেরই করতে হবে। [প্রথম আলো, ১৫.১১.০৭] উল্লেখ্য, প্রেস ইন্সটিটিউটের এক সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি এর সভাপতি।

১১. সেই মাহবুবুল ইসলাম : ‘সংবিধান জারি হয়েছে ১৯৭২ সালে। কাজেই ’৭২ সালের পর থেকে দেশের কোন নাগরিক যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হলেই কেবল তার বিচার করা যাবে। ’ এখান থেকেও প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সেনাধ্যক্ষকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেয়া হয়। প্রশংসা করা হয় ব্যারিস্টার মইনুলের। একই সঙ্গে সমান্তরালে চ্যানেল আইয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল রশীদের সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়েছে।

বিচারের সম্মুখীন করার জন্য নাকি তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করে, তার খুনের সঙ্গে জড়িত হিসেবে জেনারেল জিয়ার কথা বলেছেন। তার মেয়ে তথাকথিত ফ্রিডম পার্টির স্বঘোষিত সভাপতি মেহনাজও একই কথা বলেছেন। দুই এসব মন্তব্যের সার কথা হল— ১. বঙ্গবন্ধুর অবান্তর প্রশংসা, ২. যুদ্ধাপরাধী নেই, কারণ, যুদ্ধ হয়েছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে, ৩. বঙ্গবন্ধু সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, সুতরাং এসব প্রশ্ন উঠানো উদ্দেশ্যমূলক, ৪. সংবিধান/বিধি না বদলালে বিচার করা যাবে না, ৫. যারা বিচারের দাবি তুলছে তাদের প্রতি দেয়া হয়েছে প্রচ্ছন্ন হুমকি। আইনবিদ ও অন্যরা ইতিমধ্যে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বিস্তারিতভাবে।

শুধু বলা যেতে পারে জামায়াত ও জামায়াত সমর্থকরা যা বলেছে তা ডাহা মিথ্যা। এটি তাদের ট্রেড মার্ক, নতুন কিছু নয়। যুদ্ধ ভারত-বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর সঙ্গে হয়েছে। সে কারণে আত্মসমর্পণ দলিলে বাংলাদেশে আত্মসমর্পণের কথা লেখা হয়েছে। সুতরাং এটি গৃহযুদ্ধ তো নয়ই, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধও নয়।

সংবিধান ও ১৯৭৪ সালের জরুরি আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিধি এখনও বলবৎ। পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীরা দেশে ফিরে গেছে চুক্তি মোতাবেক। তাদের বিচারের দাবি তোলা যায়, কিন্তু তা করার দায়িত্ব পাকিস্তানের। কিন্তু তাদের সহযোগী বাঙালি যুদ্ধাপরাধীরা এ দেশেই আছে, সুতরাং স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার করা যাবে। দেশী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি বা বঙ্গবন্ধু তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এটিও মিথ্যা, তবে অনেকে তা বিশ্বাস করেন।

আমার কাছে এখন একটি বিচারের রায়ের কপি আছে। ময়মনসিংহের তৃতীয় স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারের রায়। বিচারক কেএ রউফ। কোলাবরেশন কেস নং ৩২. সাল ১৯৭২। রাষ্ট্র বনাম রজব আলী ওরফে আমিনুল ইসলামী মৌলভী কুতুবুদ্দিন আহমদ।

রায় দেয়া হয়েছে ১৩.১.১৯৭৩ সালে। আলীনগর গ্রামের আলবদর প্রধান রজব আলী ২০ আশ্বিন ১৩৭৮ সালে আলবদর ও রাজাকারদের নিয়ে আবু তাহের মিয়া ও বাড়ির কয়েকজনকে থানায় সোপর্দ করবে বলে ধরে নিয়ে যায়। এছাড়া ঘরে তৈজসপত্র, টাকা-পয়সা লুট করে। স্বাধীনতার পর আবু তাহেরের পিতা থানায় এজাহার দেন। থানার তদন্ত রিপোর্টে রজব আলীর কোন দোষ পাওয়া যায়নি।

বাদী নারাজি দরখাস্ত দেন। কিশোরগঞ্জের তৎকালীন এসডিও-ও এটি প্রত্যাখ্যান করেন। এসডিওটি কে কিশোরগঞ্জের কেউ জানালে খুশি হব। স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল এই আবেদন গ্রাহ্য করে বিচার শুরু করে। রায়ে বলা হয়, রজব আলী আবু তাহেরকে ধরে নিয়ে যায় এটি সবাই দেখেছে, তবে রজব আলী তাকে হত্যা করেছে এমন চাক্ষুষ প্রমাণ নেই।

কিন্তু আবু তাহের ফেরেননি, সাক্ষীরা বলেছেন তার লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয়। সুতরাং আবু তাহেরকে হত্যার জন্যই রজব আলী ধরে নিয়ে গিয়েছিল। রজব আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। রায়টি উল্লেখ করলাম কয়েকটি কারণে— ১. জামায়াতিরা যে বলছে, বিচার হয়নি বা ক্ষমা করা হয়েছে তা ঠিক নয়। ২. জামায়াতিরা বলছে, তারা হত্যা করেছে এর প্রমাণ কী? সমসাময়িক পত্রপত্রিকা, জামায়াতি মুখপত্র ‘দৈনিক সংগ্রামে’ নিজামী-মুজাহিদ-কাদের মোল্লা গংয়ের কীর্তি কাহিনী বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য আছে এবং গত ৩৬ বছরে নিজামী-মুজাহিদ গং এগুলো অস্বীকার করেনি। ট্রাইব্যুনালে এসব তথ্য-প্রমাণই যথেষ্ট, রজব আলীর মামলা এর প্রমাণ। নিজামী বা মুজাহিদ নিজ হাতে খুন করেছে কিনা এমন প্রমাণের দরকার নেই। ৩. নিজামী-মুজাহিদরা ঢাকায় থাকলেও তাদের অনুসারী রজব আলীরা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। সুতরাং সারাদেশে এদের হত্যাকাণ্ডের সাক্ষ্য পাওয়া যাবে।

শুধু তাই নয়, রাজাকার-আলবদর সব একজোট হয়ে বাঙালি নিধন করেছিল এবং তা ছিল ব্যাপক। ৪. কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানার আলীনগর বাসিন্দাদের অনুরোধ করব, আপনারা আলবদর রজব আলীকে খোঁজ করুন। দেখবেন, তাকে যাবজ্জীবন খাটতে হয়নি, সে ছাড়া পেয়েছে ১৯৭৫ সালে। জেনারেল জিয়া এক ফরমানবলে এদের মুক্তি দেন এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ দেন। সামরিক শাসক জিয়া ও এরশাদ এদের পুনর্বাসন করেন ও জিয়ার স্ত্রী বেগম জিয়া এদের শুধু প্রশ্রয় নয়, ক্ষমতায় বসিয়েছেন।

সুতরাং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়ার কারণ তারা। গণআদালতে এদের প্রতীকী বিচার হলে বেগম জিয়া গণআদালতের উদ্যোক্তাদের দেশদ্রোহী ঘোষণা করে আদালতে সোপর্দ করেন। এর অর্থ জামায়াতকে রাষ্ট্রীয় পোষকতা দেয়া হয়েছে গত ৩০ বছর। নইলে তাদের দাঁড়ানোর ক্ষমতা ছিল না। তিন যেসব বক্তব্য দিয়েছে জামায়াতি ও তাদের সমর্থকরা সে বিষয়ে সরকার নীরব।

এসব বক্তব্য দেশদ্রোহিতার শামিল। এর চেয়ে কম অপরাধের জন্য অনেককে দণ্ডিত করা হয়েছে। জরুরি অবস্থায় যদি দেশদ্রোহিতামূলক বক্তব্য জায়েজ হয় তাহলে ১২ জন শিক্ষক জেলে কেন— এ প্রশ্ন আজ উঠছে। পিআইবির চেয়ারম্যান সাদেক খান এত মারাত্মক বক্তব্য দিয়েও স্বপদে। বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য দিয়েও জামায়াতি শিক্ষকরা স্বপদে বহাল।

মঞ্জুরি কমিশন নিশ্চুপ। এসব নীরবতার অর্থ যে আমরা বুঝি না তা নয়। হ্যাঁ, সরকারের তিনজন উপদেষ্টা ও সিইসি বলেছেন, বিচার হওয়া উচিত। সিইসি বলেছেন, এ দায়িত্ব সরকারের। যুদ্ধাপরাধ ও যুদ্ধাপরাধীদের কথা স্বীকার করেও প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বিচার করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

অন্যদিকে উপদেষ্টা মইনুল হোসেন বলেছেন, সরকার অনেক দায়িত্ব হাতে নিয়েছে আর বাড়তি দায়িত্ব নেবে না। আদালতে যাওয়ার কথা যারা বলছেন তারা প্রচ্ছন্নভাবে জামায়াতকেই সমর্থন করছেন। আদালত গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব দিয়েছিলেন, যার ফলে জামায়াত বাংলাদেশে শক্তিশালী শুধু হয়েছে তাই নয়, পরোক্ষভাবে যুদ্ধাপরাধকেও গ্রাহ্য করা হয়নি। যারা যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য প্রচলিত আদালতে যাবেন, তারা জামায়াতকেই সাহায্য করবেন। সংবিধান, আইন অনুযায়ী সরকারকেই বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এদের বিচারের বন্দোবস্ত করতে হবে।

এটিই বর্তমান সরকারের কাজ নয়— এ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়, সরকারের দায়িত্ব ছিল শুধু নির্বাচন করা, হাটবাজার, দালানকোঠা ভাঙা, রাজনীতিবিদদের জেলে পোরা, পৌর নির্বাচন করা, স্বায়ত্তশাসন দেয়া— এগুলো তাদের দায়িত্ব ছিল না। শুল্ক ফাঁকি, কর ফাঁকি, চাঁদাবাজি, জরুরি আইন ‘ভঙ্গ’, করার জন্য গ্রেফতার ও বিচার করা যাবে, কিন্তু খুনের জন্য নির্বাচনে নিষিদ্ধ বা গ্রেফতার করে বিচার করা যাবে না এটা কোন লজিক নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ওইসব ব্যবস্থা জরুরি হলে, যুদ্ধাপরাধের বিচারও জরুরি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। সরকার ওইসব কাজ হাতে না নিলে এ দাবি উঠত না। আগে কোন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ওঠেনি।

তবে এই প্রথম কোন সরকারের একাংশ স্বীকার করল যে, যুদ্ধাপরাধ হয়েছে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা উচিত। জামায়াত এতে খানিকটা বিচলিত। জনমতও প্রবল হয়ে উঠেছে। তাই জামায়াত বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করেছে। এভাবে যদি সরকারের একাংশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের তুষ্ট করে প্রতিরোধটা নমনীয় করা যায়।

আবার একই সঙ্গে ন্যক্কারজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কনফনট্রেশনে যেতে চাইলে এবং এ জন্যই বুদ্ধিজীবী হত্যার ইঙ্গিত করা হচ্ছে। এতে যদি নির্বাচন স্থগিত হয় তা হলে তারাও বাঁচবে আর যারা সরকারের স্থায়িত্ব চাচ্ছে তাদের কৌশলও সফল হবে। এটি জামায়াতের দ্বিমুখী ষ্ট্র্যাটেজি। আমরা যেহেতু নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী, তাই আমাদের উচিত হবে কোন রকম প্ররোচনায় উত্তেজিত না হয়ে ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি জোরদার করে তোলা। জামায়াত যে গত ৩০ বছরের মতো এখনও পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে তার একটি প্রমাণ নিজামী-মুজাহিদের বিরুদ্ধে এখনও দুর্নীতির কোন অভিযোগ না তোলা বা তাদের রাষ্ট্রদ্রোহী বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া না জানানো।

গণতন্ত্র ও যুদ্ধাপরাধ একসঙ্গে চলতে পারে না। অন্যান্য অনেকবারের মতো এবারও এ দাবি ধামাচাপা পড়ে যেতে পারে সা¤প্রতিক দুর্যোগের কারণে। আগেও এ রকমটি হয়েছে। আমাদের উচিত, দুর্যোগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া এবং সঙ্গে সঙ্গে এ দাবি প্রতিদিন তোলা, যাতে নিজামী-মুজাহিদ, রজব আলীদের দুষ্কর্ম বিস্মৃতিতে তলিয়ে না যায়। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতেও অটল থাকা।

এই বিচার ও নির্বাচন পরস্পরবিরোধী নয়। সত্তরের মহাদুর্যোগের পরপরই নির্বাচন হয়েছিল। এ বিচার সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করবে। এ দাবি আবার হারিয়ে না গেলেই আমরা আশাবাদী হতে পারি। গণমানুষ চাইলে বিচার হবেই।

রাষ্ট্রে লজিক ফিরিয়ে না আনলে এ রাষ্ট্র অস্বাভাবিকই থাকবে যেমন আছে মিয়ানমার বা পাকিস্তান। দুর্নীতি দমনে কিছুই হবে না। চুরি ও খুন দুটিই অপরাধ। কিন্তু কোনটি বড় অপরাধ তা নির্ণয়ের দায়িত্ব শাসকদের এবং এটিই সুশাসনের একটি নিরিখ। গ্রামের লোকেরা রজব আলীদের ভোলেনি, তাদের কথাও সবার মুখে মুখে।

আমরা শহুরেরা (এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষমতাবান) নিজামী-মুজাহিদ-কাদের মোল্লাদের ভুলি কিভাবে? তাদের এবং তাদের কৃতকর্ম ভুলে যাওয়া আরেকটি বড় অপরাধ। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কখনও এ ধরনের অপরাধ ক্ষমা করে না। এটিই ইতিহাসের সাক্ষ্য মুনতাসীর মামুন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.