যারা রাসূল (স) কে ভালোবাসেন তাদেরকে রাসূল (স) প্রেমিক বলা হয়। হযরত রাসূল (স) কে যতটুকু ভালোবাসে তার মধ্য ততটুকু ঈমাণ রয়েছে। ঈমাণ অধ্যায়ন করার বিষয় নয়, উহা অন্তরে ধারণ করার বিষয়। যারা আল্লাহ ও তার হাবীব হযরত মুহাম্মদ (স) কে মন, প্রাণ ও রূদয় দিয়ে ভালোবাসতে পেরেছেন তারাই হলেন ঈমাণদার বা মুমেন।
" যারা আল্লাহ ও তার রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাস আনে এবং তাদের একের সাথে অপরের পার্থক্য করেনা,তাদেরকে তিনি পুরস্কৃত করবেন"( সূরা নিসা-আয়াত ১৫২)
ভালোবাসা ও মুমেন ২ টি শব্দ।
একটির সাথে অপরটির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। পার্থিব জগতের প্রতিটি কাজের সাথে মুমেনের ভালবাসা নিহিত রয়েছে। বিশুদ্ধ কর্ম ও মালিকের সন্তুষ্টির জন্য ইহা অতীব জরুরী
"সৎকর্ম শুধু এই নয় যে পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ( আরাধনার উদ্দেশ্য) করবে। বরং বড় সৎ কাজ হলো এই যে ঈমাণ আনবে আল্লাহ,কিয়ামত দিবস, ফেরেস্তা এবং সমস্ত নবী-রাসূলগণের ুউপর। আর সম্পদ ব্যয় করবে তারই ( আল্লাহ ও রাসূল (স) এর ) মহব্বতে আত্মীয়-স্বজন, এতীম, মিসকী, মুসাফির ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসের জন্য " ( সুরা বাকারা- আয়াত-১১৭)
উপরোক্ত আয়াতা দ্বারা সৎকর্মের বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
এখানে আল্লাহ পাক সৎকর্ম বলতে তার প্রতি ও তার মনোনীত মহামানব নবী-রাসূল এবং নায়েবে রাসূল অলী-আল্লাহদের প্রতি দৃঢ বিশ্বাস স্থাপন করােক বুঝিয়েছেন। বিশ্বাসের সাথে প্রেম ও মহব্বত নিহিত আছে বলে বলা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, আল্লাহর রাহে এবং আল্লাহ ও রাসূল (স) এর সন্তুষ্টি অর্জনে যা ব্যয় করবে তা মহব্বতের সাথে ব্যয় করবে।
উম্মতে মহাম্মদীর জন্য ধর্মীয় কর্মকান্ডের মডেল হলেন হযরত রাসূল (স)। হযরত রাসূল (স) ফরমান " তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত পুর্ণ ঈমাণদার হতে পারবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের ছেলে সন্তান, পিতা মাতা ও সকল মানুষ অপেক্ষা আমাকে ভালো না বাসবে" ( বোখারী শরীফ)
এ হাদীস দ্বারা সুস্পষ্ট যে, হযরত রাসূল (স) কে ভালোবাসার নামই ঈমাণ।
যে যাকে মনে প্রাণে ভালবাসে সে তার নির্দেশ আন্তরিকতার সাথে মান্য করে এবং তার পরামর্শে নিজেকে পরিচালিত করে। মুমেনদের অভিভাবক আল্লাহ ও তার রাসূল (স)। মুমেন গণকে আল্লাহ ভালোবাসেন বলে সর্বদা তাদের আলোর রাস্তায় চলার নির্দেশ দিয়ে থাকেন।
"হে মুমেন গণ! তোমরা আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, রাসূলের নির্দেশ মান্য কর এবং উলিল আমরের নির্দেশ মান্য কর ( আল্লাহর মনোনীত ধর্মীয় নেতা, যিনি নির্দেশ দান করে থাকেন)। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয় বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড় তাহলে তা আল্লাহ প তার রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক।
আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম' ( সুরা নিসা-আয়াত ৫৯)
মুমেনের কল্যাণ ও পরিনতি আল্লাহর কাছে। তাই মুমেন আল্লাহর হুকুম মেনে চলবে। আল্লাহ,হযরত রাসূল (স) ও নির্দেশ প্রদানে যোগ্য ব্যক্তির নির্দেশ মান্য করবে। উলিল আমর বলতে নায়েবে রাসূল (স) বা অলী-আল্লাহগণকে বুঝানো হয়েছে। ইসলাম ধর্মের জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য শরণাপন্ন হতে হয় আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তিদের কাছে।
যাদের সাথে আল্লাহর যোগাযোগ রয়েছে মুলত তাদের সিদ্ধান্তই আল্লাহর সিদ্ধান্ত। হযরত রাসূল (স) এর যুগে একজন সাহাবী গুরুতর পাপ করে সঠিক ফয়সালার জন্য রাসূলে (স) করীম এর শরনাপন্ন হন। হযরত রাসূল (স) তার অপরাধ মার্জনার জন্য কঠিন শাস্তির নির্দেশ দেন। অন্যান্য সাহাবাগণ এতে আনন্দ উপভোগ করছিলেন। হযরত রাসূল (স) সাহাবাগণকে লক্ষ্য করে বল্লেন, তোমরা কি জান্নাতী লোক দেখবে? এই অপরাধীর দিকে তাকাও তাকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।
এখন সে জান্নাতী।
অনূরুপ ভাবে বেলায়েতের যুগে যারা মাওলার বন্ধুতে পরিণত হয়ে অলীত্বের মর্যাদা লাভ করে নায়েবে রাসূল হয়েছেন, তারাই উলীল অামর। বেলেয়েতের যুগে তাদের নিকট সঠিক ফয়সালার জন্য শরণাপন্ন হতে বলা হয়েছে। তাদের ফয়সালাই মুলত মাওলার ফয়সালা।
যিনি হযরত রাসূল (স) কে আপন করে পেয়েছেন মুলত তিনি ঈমাণ পেয়েছেন।
ঈমাণ পাওয়ার অর্থ আল্লাহকে পাওয়া। হযরত রাসূল (স) এর পবিত্র নামই অশান্ত অন্তরে শান্তি দিতে পারে। হযরত রাসূল (স) যখন মেরাজে যাচ্ছিলেন, বাবে হাতিম থেকে বাইতুল মোকাদ্দাছে জিব্রাইল (আ) কে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তখন তার সম্মানে সকল নবী রাসূল উপস্থিত হয়ে একই সূরে সূর মিলিয়ে কাসিদায়ে মোস্তফা পাঠ করছিল।
প্রত্যক নবী রাসূলের সাক্ষী হলেন, হযরত মুহাম্মদ (স)।
তার সাক্ষী ব্যতীত তাওহীদ প্রচারকারীগণ শাফায়াত থেকে বচ্ঞিত হবেন। তার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস না আনলে আমাদের মত সাধারণ ব্যক্তির কি উপায় হবে? প্রতিটি মুমেন ব্যক্তি যেন হযরত রাসূল (স) কে প্রাণ দিয়ে ভালবেসে রাসূল প্রেমিক হয়ে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, তাই আল্লাহ তায়ালা দয়া করে মুমেন গণকে হযরত রাসূল (স) এর প্রতি দূরদ ও সালাম পেশ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
" নিশ্চই আল্লাহ এবং ফেরেশতাগণ রাসূল (স) এর উপরে দুরদ পড়েন, হে বিশ্বাসী বান্দাগণ তোমরাও তার প্রতি দরূদ পড় এবং শ্রদ্ধার সাথে সালাম প্রদান কর" ( সুরা আহজাব, আয়াত -৫৬)
আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ) থেকে শুরু করে অসংখ্য নবী রাসূল (স)
কঠিন বিপদে হযরত রাসূল (স) এর উসিলায় মুক্তি পেয়েছেন।
হযরত আদম (স) যখন বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত হয়ে পৃথিবীতে নির্বাসিত হয়েছিলেন। শত শত বছর কান্নাকটি করার পরেও যখন মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্ঝত তার কথা শুনছিলেন না।
তখন হযরত আদম (স) এর স্বরণ হলো তিনি আরশুল্লাহর উপর একজনের নাম দেখেছিলেন। তখন তিনি সেই নামের উসিলা ধরে যখন মাফ চাইলেন তখন আল্লাহ সাথে সাথে তার হাবীব এর উসীলায় তাকে ক্ষমা করেছিলেন।
হযরত রাসূল (স) কে ভালোবাসা ও তার অনুগত্য করা এবং জগতে আগমনের দাওয়াত তাদের অনুসারীদের নিকট প্রদানের অংগীকার করিয়েছিলেন আল্লাহতায়ালা সকল নবী রাসুলগনকে। আর তিনি তাদেরকে অনুগ্রহ প্রদানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তাই তাদেরকে উত্তম জাতির উত্তম শ্রেণীতে প্রেরণ করেছেন এবং তাদের সিনায় নূরে মোহাম্মদীর নূর আমানত হিসেবে প্রদান করেছেন, যার দ্বারা তারা পথভ্রষ্ট মানুষকে আলোর পথ বা হেদায়েতের পথ দেখাতে সক্ষম হয়েছেন।
তার সত্যতা প্রমাণ করতে গিয়ে হযরত রাসূল (স) বর্ণনা করেন।
"হযরত আবু হুরায়রা(রা) বর্ণনা করেন, হযরত রাসূল (স) ফরমান-আমি আদম সন্তানদের প্রত্যক যুগের উত্তম শ্রেণীতে যুগের পর যুগ প্রেরিত হয়েছি। অতপর ঐ যুগে জন্মেছি, যে যুগে আমি বর্তমানে আছি"
( বোখারী শরীফ-১৬৫৮ ও মেশকাত শরীফ-৫৪৯৩)
আল্লাহ তায়ালা তার হাবীবকে সর্বাধিক ভালবেসে প্রত্যক সৃষ্টির মুল হিসেবে সৃজন করেছেন। তাই রাসূল (স) ফরমান " আদম যখন পানি ও কাদার মধ্য ছিল-আমি তখনও নবী ছিলাম" অর্থাৎ- যখন আদম এর কোন অস্তিত্ব ছিলনা তখনও হযরত রাসুল (স) নবী ছিলেন। প্রতিটি সৃষ্টির মাঝে নূরে মোহাম্মাদী রয়েছে।
আল্লাহতায়ালা নুরে মোহাম্মাদীকে সম্মান প্রদর্শন ও তার পরিচয় জগতে তুলে ধরার স্বীকারোক্তি নিয়েছিলেন নবীগণের কাছ থেকে।
"স্মরণ কর! যখন আল্লাহ নবীদের অংগীকার নিয়ে ছিলেন যে, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত যা কিছু দিয়েছি অতপর তোমাদের কাছে যা কিছু আছে তার সমর্থকরুপে যখন একজন রাসুল ( মুহাম্মদ স) আসবেন, তখন তোমরা অবশ্যই তার প্রতি ঈমাণ আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে। তিনি বল্লেন (আল্লাহ) 'তোমরা কি স্বীকার করলে? এবং এ সম্পর্কে আমার অংগীকার কি তোমরা গ্রহণ করলে? তারা বল্ল' আমরা স্বীকার করলাম। তিনি বল্লেন 'তবে তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম' ( সুরা আল ইমরান-আয়াত ৮১)
হযরত মুহাম্মদ (স) হলেন সকল নবী-রাসূল গণের নেতা বা ইমাম, তাই তাকে বলে হ্য়েছে ইমামুল মুরছালীন। তার পুতপবিত্র নুর সিনায় ধারণ করে নবী রাসুল গণ হেদায়েতের কার্য সম্পাদন করেছেন।
বেলায়েতের যুগে যারা রাসুলের (স) প্রতি স্বশ্রদ্ধ সালামের মাধ্যমে মনেপ্রাণে হযরত রাসূল (স) এর নূর সিনায় ধারণ করে হেদায়েতের কাজ সম্পাদন করেন, তারাও মহামানব হিসাবে দুর্লভ সম্মানের অধীকারী হন।
রাসূল (স) প্রেমিকগণ নিজেদের জীবনের চেয়ে হযরত রাসূল (স) কে বেশী ভালবাসেন।
"নবী মোমেনদের নিকট তাদের জীবনের চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ"
(সূরা আহযাব-আয়াত ৬)
এর সারকথা হলো, প্রত্যক মুসলমানের পক্ষে মহানবী (স) কে ভালবাসা ও তার নির্দেশ পালন করা স্বীয় পিতামাতার নির্দেশের চাইতেও অধীক করণীয়। যদি পিতা মাতার নির্দেশ মহানবী (স) এর নির্দেশের বিপরীত হয়, তা পালন করা মোটেও জায়েজ নয়। এমনকি রাসূল (স) এর নির্দেশকে নিজের সকল আশা-আকাংখার চাইতে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
আল্লাহর হাবীব বলেন-"এমন কোন মুমেন নেই যার পক্ষে আমি ইহকাল ও পরকালে সমস্ত মানবকূলের চাইতে হিতাকাংখী ও আপনজন নই" ( বোখারী)
দয়াল রাসূল (স) কে ভালবাসা ও তার নির্দেশ মান্য করা মুমেনের জন্য ফরজ।
যারা সত্যিকারের মুমেন তারা হযরত রাসুল (স) এর পরিবার পরিজন, তার আহলে বাইতকে শ্রদ্ধা করেন ও ভালবাসেন এবং সর্বদা রাসুল (স) এর উপর মিলাদ, দূরদ ও সশ্রদ্ধ সালাম পেশ করে থাকেন।
এ সমস্ত আমলের মাধ্যমে একজন মুমেন ব্যক্তি হযরত রাসূল (স) এর আশেকে পরিণত হয়ে তার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভ করতে পারে।
মুলত প্রতিটি মুমেনের মাঝে রাসূল (স) এর ভালবাসা রয়েছে। এ কারণে যে, তাদের রূদয়ে নুরে মুহাম্মদীর নূর বিদ্যমান রয়েছে।
যারা সাধনা করে সেই সু্প্ত নুরকে জাগ্রত করতে না পারে তারা রাসুল (স) এর দিদার থেকে বঞ্চিত হ্য়। যেমন কচুরিপানা ভর্তি কোন পুকরে পানি দেখা যায়না কিন্তু পরিশ্রম করে ঐ কচুরিপানা পরিস্কার করলে পানি স্বচ্ছ হয় তেমনি কোন মোমেন ব্যক্তি যদি কোন মহামানবের সংস্পর্শে গিয়ে নিজের মাঝে সুপ্ত নুরের বিকাশ ঘটাতে পারে, তিনিই সৌভাগ্যবান মুমেন যিনি রাসূল (স) এর দিদার লাভে সক্ষম হন এবং তার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।