আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘সীমান্তে বিএসএফ-এর হত্যাকাণ্ড’ প্রসঙ্গে ছাত্র গণমঞ্চ আয়োজিত মুক্ত পাঠচক্রে ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের হামলা ও মারধরের ঘটনায় দায়ীদের অবিলম্বে শাস্তির দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে।

‘সীমান্তে বিএসএফ-এর হত্যাকাণ্ড’ প্রসঙ্গে ছাত্র গণমঞ্চ আয়োজিত মুক্ত পাঠচক্রে ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের হামলা ও মারধরের ঘটনায় দায়ীদের অবিলম্বে শাস্তির দাবীতে সংবাদ সম্মেলন ২৩ জানুয়ারি ২০১১। সময়: দুপুর-১.০০ টা। মধু’র কেন্টিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ, আপনারা ইতিমধ্যে জানেন, গতকাল ২২ জানুয়ারি ২০১১, আনুমানিক বিকাল সাড়ে চারটায় ছাত্রলীগের একদল সন্ত্রাসী ডাকসু ভবনের দোতলায় ছাত্র গণমঞ্চ আয়োজিত পাঠচক্রে হামলা চালায় এবং সভা পণ্ড করে।

তারা জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের আহ্বায়ক মাসুদ খানসহ পাঠচক্রে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের আটক ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এক পর্যায়ে সংবাদ পেয়ে ছাত্র গণমঞ্চসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী এবং অরুন দে, গোপাল চন্দ্রসহ শুভাকাঙ্খিরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা আটকৃতদের আটকাবস্থা থেকে উদ্ধার করেন। এরপর ছাত্র গণমঞ্চ, বাংলাদেশ ছাত্রফেডারেশন, সংস্কৃতির নয়াসেতু, প্রপদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন যৌথভাবে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল করে। মিছিল উপাচার্যের বাসভবনে হাজির হয়।

নেতৃবৃন্দ সহকারী প্রক্টরের উপস্থিতিতে উপাচার্যের সাথে সাক্ষাত করে লিখিতভাবে অভিযোগ জানান এবং অবিলম্বে হামলার জন্য দায়ীদের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য জোর দাবী জানান। এ দিন সন্ধ্যায় টিএসসি সড়কদ্বীপে গণসংস্কৃতি ফ্রন্ট আয়োজিত আসাদ স্মরণে অনুষ্ঠানমালার মঞ্চ থেকে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যপার্বনের মঞ্চ থেকে তাৎক্ষণিক নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সাংবাদিক বন্ধুগণ, আপনারা জানেন, গত ৭ জানুয়ারি ২০১১ ফেলানীসহ বছরের প্রথম সপ্তাহেই ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) চার জন বাংলাদেশী হত্যা করেছে। গত ১০ বছরে ১০০০ বাংলাদেশীকে বিএসএফ হত্যা করেছে। এমন অবস্থায় সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধে ছাত্রসমাজকে সোচ্চার হবার আহ্বান জানিয়ে ছাত্রগণমঞ্চ গত ২০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক স্থিরচিত্র প্রদর্শনির আয়োজন করে।

যার খবর ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে। সেদিন প্রদর্শনীতে আমরা ছাত্র গণমঞ্চের নিয়মিত সাপ্তাহিক পাঠচক্রে ‘সীমান্তে বিএসএফ-এর হত্যাকাণ্ড’ বিষয়ে মুক্ত আলোচনায় সকলকে আমন্ত্রণ জানাই এবং তার হ্যান্ডবিল প্রচার করি। এ উদ্দেশ্যে প্রেস বিজ্ঞপ্তিও সংবাদপত্রে পাঠানো হয়। তার ধারাবাহিকতায় গতকাল ২২ জানুয়ারি ২০১১, আমরা ডাকসু ভবনের দোতলার একটি কক্ষে পাঠচক্র সভা শুরু করি। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বতমান এবং প্রাক্তন ছাত্ররা অংশ নেয়।

সভা মাঝ পর্যায়ে দু’জন গোয়েন্দা সংস্থার লোক হাজির হন। আমাদের একজন সংগঠক তাদের সাথে কথা বলেন। পাঠচক্রে অংশগ্রহণকারী না হওয়ায়, তাদের পাঠচক্রে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে পেশাগত কারণে তাদের যা জানার প্রয়োজন তা অবগত করার বিষয়ে সহযোগিতা করা হয়। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা চলে যাওয়ার একটুপরেই জহুরুল হক হল শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম চৌধুরি সুমনের নেতৃত্বে শরীফসহ ৭/৮ জন সন্ত্রাসী সভাকক্ষে প্রবেশ করে হামলা চালায় এবং সভা পণ্ড করে দেয়।

তারা দরজা আটকে তল্লাশি, জেরা এবং মারধর করতে থাকে। এতে মাসুদ খানসহ শান্তনু, স্যামুয়েল সাইদ, শান্তনু সুমন, অজয় সরকার, আউয়াল, সৌরভ, জাফরসহ ১০/১২জন শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত হয়। তারা “সরকার বিরোধী জনমত গঠন করা হচ্ছে”, “অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এখানে কেন”, “প্রথম বর্ষের ছাত্রদের এত দুঃসাহস” ইত্যাদি নানা হম্বিতম্বি করতে থাকে। প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ আমরা মনে করি, এটা একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক হামলা এবং এর পেছনে গোয়েন্দা সংস্থার ইন্ধন রয়েছে। এ সরকার যেভাবে হাসিনা-মনমোহন চুক্তি, বাণিজ্য স¤প্রসারণ ও সুরক্ষা চুক্তি, ট্রানজিট প্রদানসহ ভারতের কাছে একের পর এক গোলামীর শৃঙ্খলে বাংলাদেশকে আবদ্ধ করছে-তাতে যে কোন ন্যূনতম প্রতিবাদকে তারা ভয়ের চোখে দেখছে এবং দমন করতে তৎপর রয়েছে।

তাই তাদের প্রভু প্রণব মুখার্জি ও মনমোহনের বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ-এর হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা-তাদের দহরম-মহরমে ‘কাবাব মে হাড্ডি’ হয়ে ঠেকেছে। আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত বিগত বিএনপি-জামাত জোট সরকার মার্কিন-ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে অকার্যকর প্রমাণিত হলে, মার্কিন-ভারতের অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-সামরিক নীলনকশা বাস্তবায়নে ১/১১-এর মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন জরুরী পুতুল সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়। কিন্তু, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০-২২ আগস্ট ২০০৭ সালের ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ তাদের মসনদ টলিয়ে দিয়েছিল। তারপর থেকে ছাত্রসমাজ এই অপশক্তির কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়। আর তখন থেকে ঢাকাসহ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল কার্যক্রমে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি পায়।

অগণতান্ত্রিক ছাত্র আচরণ বিধি প্রণয়ন, সিসি ক্যামেরা বসানো, ক্যামেরা ও ছবির সাহায্যে আন্দোলনকারীদের দমনের উদ্যোগ, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার ইত্যাদি নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়। সাম্রাজ্যবাদ নির্দেশিত ইউজিসির উচ্চ শিক্ষার কৌশলপত্রেও ছাত্ররাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস, এজন্য আবাসিক হল তুলে দেয়া, ক্যাম্পাস পুলিশ গঠন ইত্যাদি নানা অগণতান্ত্রিক প্রস্তাব রয়েছে, যার বাস্তবায়ন চলছে। এভাবে জরুরী অবস্থাকালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে ফ্যাসিকরণ শুরু হয় তা আজও অব্যহত আছে। আমরা জানি, জরুরী সরকারের ধারাবাহিকতায় এক জাতীয় বিশ্বাসঘাতক ও নীলনকশার নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত তাবেদার সরকার এবং মার্কিন-ভারতের নীলনকশা বাস্তবায়নের ঠিকাদার হিসাবে হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। মার্কিন-ভারতের নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে হলে কেবল তাবেদারি যথেষ্ট নয়, ফ্যাসিবাদী শাসনও আবশ্যক হয়।

কেননা দেশি-বিদেশি লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধকে চূর্ণ করা ছাড়া তা বাস্তবায়ন করা যায় না। (যেহেতু এদেশের জনগণের সংগ্রামের এক বিরাট শক্তি হলো ছাত্র সমাজ। ২০-২২ আগস্টের ঘটনাও তার সা¤প্রতিকতম প্রমাণ। ) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ফ্যাসিকরণ আসলে তারই এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফলে বর্তমান সরকারের কালে প্রশাসনের জরুরী অবস্থার ভুত যেমন আরও গেঁড়ে বসেছে, তার সাথে যুক্ত হয়েছে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদী দমন-পীড়ন।

আমরা জাতীয় ক্ষেত্রে মার্কিন-ভারতে তাবেদারি ও সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সাথে সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নীলনকশার শিক্ষানীতি ও কৌশলপত্র বাস্তবায়নসহ প্রশাসনের গোয়েন্দাবৃত্তায়ন, অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ছাত্রসমাজকে সোচ্চায় হওয়ার আহ্বান জানাই। প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ’ বিশ্ববিদ্যালয় হল মুক্ত জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্র। একটি জাতির জ্ঞানসম্পদের উন্নয়ন এখানে ঘটে। সমাজের সাথে ঘনিষ্ঠ সংযুক্তি এবং গণতন্ত্র ছাড়া এ চর্চা সম্ভব নয়। সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতি সমালোচিত হওয়া ও জনমত সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় পাঠচক্রের উপর যেভাবে হামলা করা হলো তা বিশ্ববিদ্যালয়কে মধ্যযুগীয় কায়দায় নিয়ন্ত্রণের সামিল।

বাক স্বাধীনতা ও গণন্ত্রের বিপরীতে ফ্যাসিবাদ ছাড়া কিছু নয়। এই অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। এই দানবকে এখনই রুখতে হবে। প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ, সহকারি প্রক্টর হামলা খবর পেয়েও ঘটনাস্থলে আটককৃতদের উদ্ধারে হাজির হন নি। কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি।

আপনারা জানেন, কয়েকদিন আগে গার্মেন্টস নেত্রী মোশরেফা মিশুর মুক্তির দাবীতে এক সমাবেশ ছাত্রলীগ পন্ড করেছে। বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের নেতাদের সালাম না দেয়া, মিছিলে না যাওয়ার কারণে শতাধিক ছাত্র শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে, তাদের হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। ভয়ে তারা অভিযোগ পর্যন্ত করতে পারে নি। অথচ, প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে অভিযোগ ছাড়া কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে না। এমন ছাত্রলীগ বান্ধব প্রশাসন ছাত্রদের অভিভাবক হলে ছাত্ররা কোথায় আশ্রয় নেবে? এতগুলো ঘটনায় প্রশাসনের নির্লিপ্ততার ফলাফল হলো গতকালের হামলা।

আমরা প্রশাসনের নির্লিপ্ততার নিন্দা জানাই। আমরা জোর দাবী জানাই: ১. অবিলম্বে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ২. প্রক্টোরিয়াল অফিসের গোয়েন্দাবৃত্তায়ন বন্ধসহ ক্যাম্পাসে গোয়েন্দা তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ৩. হলে হলে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের দমন-পীড়ন বন্ধ করতে হবে। ৪. ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

৫. নিপীড়িত শিক্ষার্থীদের ভরসাস্থল হিসাবে ছাত্র-শিক্ষকদের সমন্বয়ে স্বাধীন অভিযোগ সেল গঠন করতে হবে। ঘটনার প্রতিবাদে এবং দাবী আদাযের লক্ষ্যে আমরা আগামীকাল ২৫ জানুয়ারি ২০১১, বেলা ১১:০০টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক সংহতি সমাবেশ আহ্বান করেছি। আমরা ছাত্র-জনতার, প্রতি আহ্বান জানাই, আসুন, এ সকল দাবীতে সোচ্চার হই, একটি গণতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফ্যাসিকরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ, আপনারা আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আপনাদের মূল্যবান সময় আমাদের দিয়েছেন। দীর্ঘক্ষণ ধৈর্য্য নিয়ে আমাদের বক্তব্য শুনেছেন।

এজন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা আশা করি, আমাদের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে আমরা সব সময় আপনাদের পাশে পাব। সবাইকে ধন্যবাদ স্যামুয়েল সাইদ সমন্বয়ক ছাত্র গণমঞ্চ মঞ্চে উপস্থিত রয়েছেন: সহ সমন্বয়কারী- সান্তনু সুমন, কেন্দ্রীয় সদস্য- জাফরিন গুলশান, ফেরদৌস জামান,সৌরভ, আনাজ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.