"কি, বিয়া? ও; ও একটা ওইছিল জোবনের পরথম কালে। "
"হ্যার পর?"
"হ্যার পর আর কি? অহন কাম কইরা খাই। "
"মাইয়া মানষেরাও কামের জন্যি। তয় রাস্তায় ক্যান ঘরের। "
"আমাগো কি ঘর আছে? যে ঘরের কাম করুম।
আমরা ওইলাম রাস্তার মানষ ঘর পামু কই?"
"রাস্তায় কি ঘর অয় না?"
"অয়। তয় করুম না। "
ঝাড়–টা পাশে রেখে সুফি ভিকারির পাশে বসে। ভিকারী রোজই আসে। একবারের জন্য হলেও।
পলাশীর কড়াই গাছতলা দিয়া লাঠি ঠক ঠক করতে করতে যাবে। ইচ্ছে সুফির সাথে একবার দেখা। নবিলার জীবনে হাতের ঐ লাঠিখানাই সাথী। ট্রাক চাপা পড়ে ওর ডান পা’টা কাটা গেল। সেই হতে আর বাড়ি ফেরেনি।
স্বজনদের হারিয়ে ও কেবল সুফির পানে তাকিয়েই যেন একটু শান্তি পায়। আবার পা খাড়া করে দাঁড়াতে চায়।
সুফির রূপ নেই, জৌলুস নেই শুধু টগবগ একখণ্ড যৌবন। জোছনার আলোও যেন তার বক্ষ পানে তাকিয়ে থাকে অবারিত মাঠের সোনালি ফসলের মত। জংলী কলা পাতার মত দোলা লাগে ওর ক্ষুধার্ত মাতাল বক্ষে।
নবিলা অপ্রতিভ দৃষ্টিতে সুফির সুপ্ত যৌবনের দিকে তাকায়। সুগঠিত সুঠাম দেহ। মালিক যেন বায়না ধরে তাকে গড়ে ছিল। কিন্তু রঙটা দিল বদখত।
নবিলা বলে, "তরে লইয়া দ্যাশে ফিরবার ইচ্ছে অয়।
তয় এত্তো ট্যাকা কই পামু?"
"তর দ্যাশে যাইয়া কি করুম? রাস্তা পামু? তুই ভিক্ষে পাবি?"
"ভিক্ষা করুম না। একটা ঘর বাধুম। "
"দিনে দু’ট্যাকা পাছ্না আবার সোয়াগ করিস। "
"তুই দেক্ষিস, আমি অনেক ট্যাকা কামামু। সব গলিতে ভিক্ষে করুম।
একটা পাও নাইতো কি? আমি গাড়ি লাহান চলতে পারি। "
"কাম কামাই করাস না। যা ভিক্ষে করগে। প্যাট চলে না ঘর। "
"তুই দেক্ষিস, আমি কত্তো কামাই।
"
সুফি কোমরের সাথে কাপড় এঁটে কাজ শুরু করে। নবিলা লাঠি ঠক ঠক করে চলে যায়। তার অনেক টাকা আয় করতে হবে। বেশি লোকের ভিড়ে থালা পেতে বসতে হবে। আগের চেয়ে বেশি করে চিল্লাইতে হবে।
অনেক দিন কেটে গেল। নবিলার কোন দেখা নেই। হয়তো বা কোথাও পড়ে আছে। তার লাশ নিয়ে একদল কুকুর ঝগড়ায় মেতেছে। দুর্গন্ধে কেউ তার পাশ দিয়ে হাঁটছে না।
সুফির নবিলাকে ভালো লাগে না। তবু ভাবে নবিলা কেন আসে না। লাঠি ঠক ঠকের অপেক্ষায় থাকে। দিন যেন আর কাটে না। মনে ভাবে রাস্তার কাজ ছেড়ে দিয়ে সে চলে যাবে।
সারা রাস্তা খুঁজে দেখবে।
হঠাৎ একদিন নবিলার লাঠির শব্দ ভেসে এলো। সুফি ঝাড়– ফেলে দ্রুত তার দিকে ছুটে গেল। নবিলার করুণ দৃষ্টিতে আশার আলো। সে সুফির পানে তাকাল।
ঐ দৃষ্টি যেন অগ্নির বুকে জলসা জেগে আছে কারো বাসরের প্রতীক্ষায়।
সুফি জিজ্ঞেস করে, "তুই আসিস না ক্যান?"
"অনেক ট্যাকা কামামু। হ্যারপর তরে লইয়া দ্যাশে ফিরুম। "
"পারবা না। হুধা হুদি দেমাগ দেহাও ক্যান? যেমুন আছো এমুনই থাকো।
আমরা ওইলাম রাস্তার মানষ ঘর আমাগে হইবে না। "
"তুই আমারে পর ভাবিছ? আমি তর পর ওই?"
নবিলা সুফির পাশে বাঁশের লাঠিটা নামিয়ে বসে। সুফির আধো খোলা আধো ঢাকা চেহারার দিকে তাকায়। ফুলের কাণায় কাণায় যেন মধুর উদগ্র উৎস। মধুকরির সামান্যতম স্পর্শে ওর বক্ষের মধু যেন উজাড় করে ঢেলে দেবে।
নবিলার মনটা যেন কড়ায় গণ্ডায় ভরে ওঠে। হৃদয়ের ফাঁকা জায়গায় শির শির বাতাস ধরে। চোখ নামিয়ে আবার লাঠির পানে তাকায়। ঐ লাঠিটাই যেন তাকে পঙ্গু করে রেখেছে।
"চা লাইবেন।
” ডাকে যেন নবিলার দৃষ্টির পরিবর্তন ঘটে। আবার পঙ্গুত্ব পৃথিবীতে ফিরে আসে।
"চা খাইবা?"
সুফি মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি সূচক জবাব দেয়।
"এই চা। "
মূহুর্তের মধ্যে নবিলার কণ্ঠ পরিবর্তন হয়ে যায়।
কথায় একটা ব্যক্তিত্ব ভাব জাগে। সুফিকে টাকাগুলো দেখিয়ে, "দ্যাখো কত্তো ট্যাকা। "
"কত্তো?"
"তা পারায়.............। " নবিলা থেমে যায়।
চাওয়ালা জিজ্ঞেস করল, "ক'কাপ?"
নবিলা ডান হাতের আঙ্গুল উঁচু করে ইঙ্গিত করল, দু'কাপ।
সুফি কাপ ধরে মুচকি হাসি ছাড়ে। সে হাসি যেন চা'র ধোয়ার মত খানিক ভেসে বেড়ায়। আবার ফিরে আসে নবিলার মাতাল বক্ষে। বুকের আড়ালে লুকিয়ে থাকা যৌবন সোনালি সাজে প্রকাশিত হয়। চাওয়ালা যেন ওদের সাথে ভাব মিলায়।
কথার ছলে সেও খানিক জায়গা কেড়ে নেয়। খোঁড়ার প্রতি তাকিয়ে একটু হাসে। সে হাসি এক বিদ্রুপের হাসি। নবিলা তার প্রতি খেয়াল রাখে না। শুধু ভাবে, তার চারটা টাকা ক্ষয়ে গেল সামান্য রঙ্গিন পানিতে।
এ চার টাকার জন্য তাকে কতবার না লোকের কাছে নির্লজ ভাবে হাত তুলতে হয়েছে। কত জনইবা তাকে তাচ্ছিল্যের চোখে দেখছে। কত না বিদ্রুপের হাসি হাসছে।
চাওয়ালা আবার একটু খোঁড়ার দিকে তাকিয়ে চলে যায়। নাবিলা বলে, "আমাগো তাল পুকুরডা বড় সোন্দর।
তুই গোছল করলি চেহারা এ্যক্কেরে টসটস কোরবো। আর ঘরখানা যা বানামু না; দেক্ষিস, সে রকম একক্ষান। "
"তোর কি বাড়ি ফেরা ওইব? এ্যাত্তো ট্যাকা তুই কৈ পাবি?"
"আরে তুই দেক্ষিস, পামু । তরে বয়াইয়া খাওয়ামু। ” নবিলা আস্তে আস্তে লাঠি খাড়া করে।
"কি করবি?"
"চৈল্লা যামু। "
"আর একটু বয় না?"
"ওহন কি বয়নের সময় আছে? কত্তো কাম। "
নবিলা চলে যায়। পিছন ফিরে আর তাকায় না। সুফি খানিক ওর দিকে তাকায়।
লোকটা কিছুই অয় না। তবু কেন জানি মায়া লাগে।
অনেক দিন হয়ে যায়। নবিলার কোন দেখা মেলে না। এদিক ঐ চাওয়ালা কুদ্দুস তাকে আর ছাড়তে চায় না।
প্রত্যেকদিন আসে। সুফির কোমল মনে বার বার আঘাত হানে। সুফিও যেন নবিলার কথা ভাবতে ভাবতে কুদ্দুসের কাছে দুর্বল হয়ে যায়। সেও জানে না কেন। সে কোন পুরুষের পরশ পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে।
কুদ্দুস চা বিক্রি করে সে দিক দিয়ে নবিলার চেয়ে ভালো। কারোই ঘর নেই। রাস্তার কাজ, রাস্তায়ই ঘুম। সোজা এক কোটি তারার মুখোমুখি চেয়ে থাকা। কত বড় তাদের আশা।
বস্তির পাশে একচালা উঠাইয়া থাকবে দু'জন। চা বিক্রির পর দু'জন মাতামাতিতে রাত কাটিয়ে দেবে। যদিও বয়সের দিক দিয়ে কুদ্দুস খানিক এগিয়ে। বিয়ের দিক দিয়েও। কুদ্দুস বিয়ে দু'টো করেছিল।
কেউ ঘর করেনি। তার নাকি চরিত্রের দোষ। সবাইকে সে প্রতিশ্রুতি দেয় সুখী করার কিন্তু দু'দিন কাটার পরই সব শেষ। মিথ্যে প্রতিশ্রুতি।
আজ সুফির জন্য একজোড়া বালা নিয়ে এসেছে।
কুদ্দুস যেন আর তর সহ্য করতে পারছে না। সুফি কুদ্দুসের প্রতি মৌন মিনতির সুরে, "ঠিক আছে, তরে আমি বিয়া করুম। "
"আচা কইলা?"
"বিয়া কি মিছা জিনিস?"
"না তা কই নাই। ভাবতাছি, ঐ খোঁড়া আইলে আবার বলবানাতো বিয়া করুম না?"
"কৈলামতো তরে বিয়া করুম। ওয়ারে বিয়া করুম না।
”
কুদ্দুসের দিনগুলি নতুন স্বপ্নে কাটছে। সে যেন নতুন মাংসের গন্ধ পাচ্ছে। কিন্তু সুফির দিনগুলি ভালো যাচ্ছে না। বিয়ার কথা মনে হতেই ব্লাউজ উঁচু করে দেখে সিগারেটের দাগ। আগের স্বামী তাকে এতোটুকু চিহ্ন এঁকে দিয়েছে।
সোহাগ ভরা স্বামীর বুকে একটু জায়গা হয়নি। তার দেহটাকে দলিত, মথিত, নিষ্পেষিত করে ছাড়ছে। তার সাজানো স্বপ্নকে ভেঙ্গে চূরমার করে দিয়েছে। নবিলাই তাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখাইছে। পানির কাছে থাকতে থাকতে যেমন পিপাসার ভাব জাগে তেমনি নবিলার পুকুর পাড়ের স্বপ্নের ছায়ার কুটিরের মত সুফির হৃদয়ে আনন্দ ঢেউ খেলছে।
জীবনকে বিছিয়ে দিতে চায় নতুন সাজে। তার এই স্বপ্নই একদিন মাটির বাসনের মত ভেঙ্গে চূরমার হয়ে গেছে। নবিলা বেটাই তার জীবনে আবার নতুন করে ঝড় তুলে দিছে।
নবিলা মেডিকেলের গেটে একটা থালা পেতে বসে আছে। এখানের কামাই তার পোষায় না।
লাঠি বগলে নিয়ে আবার ওঠে। পাশে এক ভদ্রলোক কাঁদছে। তার পাশে গিয়ে শুনল কি হয়েছে। জানা গেল ভদ্রলোকের ছেলের দু'টো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে।
নবিলা যেন দেখতে পেল জীবনের আশার আলো।
মনে মনে উচ্চারণ করল, একজন ভালা মাইনষে বাঁইচা থাকব। আমিও পামু অনেক ট্যাকা। সুফিরে লইয়া দ্যাশে যামু, ঘর বাধুম। কেউইতো জানবো না শুধু একা জানুম। সারাডা জীবোন না অয় এমুন এট্টা দুঃখরে লুক্কাইয়া রাইখ্যা সুফিরে লইয়া ঘর বাধুম।
দুনিয়ার কেউ দেখুম না। তাল পুকুরের পাড়ে ঘরের খাটে শুইয়া দিন কাটামু।
নবিলা যেন সুফিকে তার খুব কাছাকাছি দেখল। কি যেন একটা মহামিলনের গন্ধ তার কাছে ভেসে এলো। সে যেন জীবন শক্তির প্রথম অভিষেকে অভিষিক্ত হচ্ছে।
উত্তাল জগতে নবিলা যেন অর্ধেক আন্দোলন-রক্তধারার রক্তিম রণবীর। টাকাগুলোর মাঝে যেন তাকিয়ে দেখে পুকুর পাড়ে তার শান্তির সাধারণ কুটিরখানি। সুফি মাটির দেয়ালে গা এলিয়ে তার শিশু সন্তানকে স্তন পান করাচ্ছে। শিশুটি হাত-পা তুলে পৃথিবীকে ঝাপটে ধরতে চাচ্ছে। স্তনের বোটা বার বার বেরিয়ে আসছে তার মুখ হতে।
মাটির প্রদীপটা নেব্বার উপক্রম করছে।
সুফি কুদ্দুসের সাথে ঘুমিয়ে পড়ছে পলাশীর কড়াই গাছের নিচে। একটা গাছই যেন সারা পৃথিবীটাকে আড়াল করে রাখছে। অন্যেরা গাছের অন্তরালে রাত্ররাণীর তপস্যায় মগ্ন। আকাশের নীল জোছনা-পৃথিবীময় চিকন আলো।
তাদের বাসর যেন এ আলোতেই ঝলসে উঠছে। নীলিমার নিচে আধো আলো আধো আঁধারে মিলিয়ে আছে। গাছের ডালের পাখিরাও নীরব। মানুষের অফুরান্ত দাবির কাছে পৃথিবী যেন নিঃশব্দে আত্মদান করছে। শুধু করুণ বুকে চেপে থাকা দাবানল দাউ দাউ করে জ্বলছে।
সে এক অপরূপ অন্তিম প্রতিবাদের পর নিঃশব্দে নির্জনে পড়ে থাকার মত।
উন্মুক্ত পৃথিবী। উদোম জোছনার আলো। সুফির মুখখানা যেন স্বাভাবিক যত্নের অভাবে ময়লাময়ী হয়ে উঠছে। তাকে স্বপ্নময়ী বলে জড়িয়ে ধরলে স্বপ্ন ভঙ্গ হবে।
কুদ্দুস সুফির সুগঠিত দেহের পানে বিস্ময় বিবর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। সুফি যেন সপ্ত রঙ নিয়ে জোছনার পাখায় ভর করে নেমে আসছে দিগন্তের পথ ধরে। কুদ্দুস সুফির উপর একটা হাত উঠাইয়া দেয়। সুফি তা নামিয়ে দেয়। তবু কুদ্দুস জোর করে একটা হাত দিয়ে সুফিকে জড়িয়ে ধরে।
সুফি যেন আর প্রতিবাদ করতে চায় না। যার হাতে ধরা দিতে হবে তার কাছে ছুটাছুটি করে কি লাভ?
হঠাৎ একটা আওয়াজ ভেসে এলো, "সুফি-ই। "
চেনা সুর। সুফি মাথা খাড়া করে তাকাল। দেখল নবিলা।
উঠে বসল।
"দ্যাক্ষো, কত্তো ট্যাকা লইয়া আইছি। ওহন আমরা দ্যাশে চৈল্লা যামু। "
নবিলা আরো একটু এগিয়ে গেল। কুদ্দুস নবিলাকে ধাক্কা দিয়ে, "ওই, মিঞা।
তুই আইসছ ক্যান? সুফিরে আমি বিয়া করুম। "
"সুফিরে আমি দ্যাশে লইয়া যামু। "
সুফিরে টাকাগুলো দেখিয়ে, "দ্যাক্ষো, কত্তো ট্যাকা। পুকুর পাড়ে একট্টা গোলপাতার ঘর বাধুম। সারাডা জীবোন বইয়া খামু।
"
কুদ্দুস এবার আরো জোরে ধাক্কা মারে। "ওই ব্যাটা পাইছস কি? সুফি আমারে কত্থা দিছে। "
নবিলার পেটের সেলাই কেটে যায়। কঠিন বেগে রক্ত বের হয়। জোছনার আবছা আলোতেও তা দেখা গেল।
সুফি বলল, "চল, তরে লইয়া ডাক্তারের কাছে যাই। "
কুদ্দুস বলল, "না। তুই ওয়ারে লইয়া যাইতে পারবি না। তুই আমার লগে যাবি। "
নবিলাকে ধাক্কা মেরে সুফিকে টেনে ধরে।
সুফি গর্জে ওঠে, "ছাইড়া দাও কইলাম কিন্তু। "
কুদ্দুস তবু শক্ত করে ধরে। কিন্তু সুফির শক্তির কাছে পারে না। সুফি ছুটে আসে।
নবিলা বলে, "তুই কআ আর কোন্নদিন আমারে ভুলবি না।
"
"তুই কি মইরা যাইবি?"
"তুই পাশে থাক, আমি মরুম না। কত্থা দিলাম, আমি মরুম না। আমি বাঁচুম। তরে লইয়া পুকুর পাড়ে ঘর বাধুম। চাইন্দার হাটেরত্য সদাই আনুম।
তুই আর আমি এক লগে খামু। তোর পাশে শুইয়া শুইয়া কামের প্যালান করুম। "
সুফি নবিলাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চায়। কুদ্দুস বাধা দেয়। সারা রাত চলে ধস্তাধস্তি।
ভোর হয়ে এলো। মহাকাল তখন নবিলার শেষ নিঃশ্বাস টুকুও কেড়ে নিয়েছে। উর্ধে অনন্ত আকাশ, পাশে সারি বাঁধা গাছের পলাশীর প্রান্তর, ধূলায় ধুসারিত ধরিত্রি। মাঝে জমাট বাঁধা নবিলার থক্ থকে তাজা রক্ত। মাটির সাথে জমাট বেঁধে আছে।
পীচ ঢালা কালো রাস্তার উপর যেন মরীচার মিশন তৈরি হয়েছে। বাইরে জাগ্রত পৃথিবীর সব কোলাহল থেমে থেকে সুফির চোখ দিয়ে পানি ভেসে উঠল।
নবিলার সিথানে দুই বাণ্ডিল টাকা আর একটা নতুন শাড়ি। সুফি যেন টাকাগুলোর পানে তাকিয়ে নবিলার কবর খননের শব্দ শুনতে পেল। ও ওগুলো ধরল না।
শুধু শাড়িটা নিল।
কুদ্দুস বলল, "ওহন চল, আমরা চৈল্লা যাই। "
"তা কি অয়। তা আর অয় না। তরে আমি বিয়া করতে পারুম না।
তুই ট্যাকাগুলান লইয়া যা। সোন্দর একজনরে বিয়া করিস। আমি রাস্তার মানষ ঘর আর ওইব না। এই কাপড়ডা বুকে জড়াইয়া সারা জীবোন কাম করুম। এই রাস্তার কাম, এই পথের কাম।
"
সুফি অবাক পৃথিবীর পানে তাকিয়ে থাকল। তার স্বপ্ন বাসর একটা শোণিতো ধারায় ধূয়ে মুছে গেল। রাস্তার রক্ত ¯তূপের প্রতি তাকিয়ে থাকল। সে দাগ যেন চির অক্ষয়, চির অম্লান। অনন্ত অতিথির মর্মভেদী শ্লোগান।
সে দাগ যেন ক্ষত হৃদয়ের বিক্ষত চিহ্ন। ভিকারির অপূর্ণ প্রেমের প্রতিদান, অযূত মনের শাশ্বত আশীর্বাণী।
সুফি কাপড়টা বুকে জড়িয়ে বলল, "সারা জীবোন ধরে পানি দিয়া পরিষ্কার করুম এই পীচ ঢালা কালো রাস্তার রক্ত স্তূপ। "
০৪.০৫.২০০৪ইং
ডায়না প্যালেস
ঢাকা-১৩১০।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।