মোহসেনা হোসেন (ইলোরা)
আবারও সেই একই ঘটনা। আবারও সীমান্তে সহিংসতা। পর পর দুদিন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। গত ২/১০/১২ ভোর রাতে ঘটেছে নৃশংশ সেই ঘটনা।
চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মাসুদপুর সীমান্তে গতকাল ভোরে ভারতীয় মালদহ জেলার নিমতিতা ক্যাম্পের ২০ ব্যাটালিয়ানে বিএসএফ সদস্যরা ৭-৮ পিলারের কাছে নিহত ও আহতদের লক্ষ্য করে ধারালো গোঞ্জ দিয়ে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত, আহত চার ৪ জন।
এছাড়া বিএসএফ ১৮ জনকে ধরে নিয়ে গেছে। ঘটনাটি গরু আনার কারনেই ঘটে। বিজিবিরর- ৯ অপারেশন অফিসার মেজর আবু নাইম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। এঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে ব্যাটালিয়ান কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের জন্য আহ্বান করা হয় বলে জানান চাপাইনবাবগঞ্জ ৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মঞ্জুরুল আলম। এই ঘটনার রাত না পেরুতেই আরও এক নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলার মনোহরপুর সীমান্ত থেকে।
এলাকাবাসীর দাবী বিএসএফ সদস্যরা দুলাল নামের ওই তরুনের লাশ হত্যার পর পানিতে ফেলে দিয়েছে। যদিও এব্যপারে চাপাইনবাবগঞ্জ ৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মঞ্জুরুল আলম লাশ উদ্ধারের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও নিহত ব্যক্তি বিএসএফ এর নির্যাতনে মারা গেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু কথা হলো কেন বার বার এভাবে ঝড়ে যাবে এক একটি তরতাজা প্রান? এই প্রসঙ্গে গত ২৬/১/১২ ইং এ প্রকাশিত দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার কথা উলেখ না করে পারছিনা। কারন ওই পত্রিকায় প্রকাশিত বিবরন এবং ছবি গুলো দেখেই মাথায় একটা অসম্ভব চাপ, বুকে তীব্র ব্যাথা, একটা জ্বালা অনুভব করেছিলাম। ছবিগুলো অনেকবার দেখলেও মনের ভেতর চেপে থাকা যন্ত্রনাগুলো তো কমে না বরং হাজার গুন বেড়ে যায়।
যে প্রচন্ড মানসিক চাপ আমি অনুভব করি তা কি আর কেউ করেন? অবশ্যই করেন। যারা আমার মতো আমাদের মতো সাধারন জনগন তারা করতে বাধ্য। কিন্তু বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে যাই যখন শুনি এই ব্যাপারে যারা সংস্লিষ্ঠ তারা মোটেও চিন্তিত নন। ছবিগুলো ছিল পর্যায়ক্রমে ১. কাটাতারে ঝুলছে ফেলানীর লাশ। ২. শিকার করা পশুর মতো হত্যা করে বাশের সাথে ঝুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এক তরুনির লাশ।
৩. ভুরুঙ্গামারীর লতিফ লেবুর কফিন। ৪. চাপাইয়ের হাবিব কে উলঙ্গ করে নির্যাতন। সুত্র- “দৈনিক আমার দেশ তাং- ২৬/০১/১২।
বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে পরিস্থিতি দিন দিন কোন দিকে যাচ্ছে, কি হবে সেটা নিয়ে আতঙ্কিত, শঙ্কিত আর চিন্তিত হলেও এই মুহুর্তে আমার আলোচ্য বিষয় হলো কেন এমন হচ্ছে আর এই পরিস্থিতিতে আমাদের কি করনীয়। প্রতিনিয়ত যেভাবে হত্যা, নির্যাতন বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটছে তাতে বিবেকের কাছে একটি প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে, – এই কি সেই ভারত!!? যে বাড়িয়ে দিয়েছিল বন্ধুত্বের হাত? যে ভারত ছিল আমাদের মিত্র দেশ।
স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সহযোগীতার কথা আমরা কেউই অস্বিকার করতে পারিনা। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদানের প্রতি সম্পূর্ন শ্রদ্ধা রেখেই বলছি চরম বিপদে যখন বাঙ্গালী তথা সমগ্র বাংলাদেশ ছিল চরম সংকটে তখন যে ভারত সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে আমাদের উদ্বুদ্ধ করতে পারে তবে এখন কেন এই আচরন? নিরীহ, সাধারন বেসামরিক মানুষকে হত্যা করে নির্যাতন করে কি লাভ হচ্ছে তাদের? আমি জানিনা তার এতে ভারতের কি লাভ হচ্ছে। কিন্তু যে অপুরনীয় ক্ষতি হচ্ছে সেই নির্যাতিতা বা মৃত ব্যক্তি, তার পরিবারের তথা বাংলাদেশের তার জন্য দায়ী কে? কোন মুল্যেই কি আমরা সেই ক্ষতি পুরন করতে পারবো? এও জানিনা কার নির্দেশে করা হচ্ছে যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং স্বয়ং সীমান্তে হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেখানে বিএসএফ এর কি এতই ক্ষমতা? এতই স্পর্দ্ধা প্রধান মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি অমান্য করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যায়? প্রশ্নগুলো এভাবে মনে আসতো না যদি ভারত তার অন্যান্য সীমান্ত দেশগুলোর সাথে একই আচরন করতো। বাংলাদেশ, পাকিসতান, নেপাল, ভুটান, চীন এবং মায়ানমার এই ছয়টি দেশের সীমানা রয়েছে ভারতকে ঘিরে। বিষ্ময়ের ব্যাপার অন্য পাঁচটি দেশের সীমান্তে ভারতের আচরন সম্পুর্ন বিপরীত।
সেসব সীমান্তে হত্যা বা নির্যাতন তো দুরের কথা সামান্য গুলির শব্দও শোনা যায় না। যেখানে রয়েছে পাকি¯তানের মতো প্রতিবেশী বিশেষ করে কাশ্মির সীমান্তে ভারত-পাকিসতান যুদ্ধের কথা কারো অজানা নয়। বহুল আলোচিত বা সমালোচিত এই ব্যাপারটি ১৯৪৭ এর দেশবিভাগের পর থেকেই চলছিল। কিন্তু ২০০২ সালের অস্র বিরতির পর এ পর্যন্ত কাশ্মির সীমান্তে আর কোন সহিংস ঘটনা ঘটে নাই। সেখানে বাংলাদেশের সাথে কেন এই আচরন? নেপাল, ভারত, ভুটান, চীন এর সীমাšত এলাকায় পরিস্থিতি সম্পুর্ন স্বাভাবিক শান্তিপূর্ন।
ভারতের সাথে এই সব দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় কোন হত্যার ঘটনা তো ঘটে নাই এমনকি তাদের কোন তিক্ত অভিঙ্গতাও নাই। এমনকি পাকি¯তান সীমান্তে ও গত ১০ বছরে কোন বেসামরিক মানুষ নিহত হয় নাই। অথচ ২০০০ সাল থেকে জানুয়ারী ২০১২ পর্যšত বিএসএফ ১০০৬ নিরীহ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে! মানবাধিকার হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ এর হিসাব মতে ২০০২ এর জানুয়ারী থেকে এই পর্যন্ত ৮৭৩ জন নিরীহ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। এ বছরের শুরুতেই তিন সপ্তাহে তিন জনকে হত্যা করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলেই প্রায় দুই শতাধিক হত্যাকান্ড ঘটেছে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে।
২০০২ থেকে এক জরিপে দেখা যায় যে ২০১১ সালে ৩৪ জন, ২০১০ এ ৭৪ জন, ২০০৯ এ ৯৬ জন, ২০০৮ এ ৬২ জন, ২০০৭ এ ১২০ জন, ২০০৬ এ ১৪৬ জন, ২০০৫ এ ১০৪ জন, ২০০৪ এ ৭৬ জন, ২০০৩ এ ৪৩ জন, ২০০২ এ ১০৫ জন, ২০০১ এ ৯৪ জন এবং ২০০০ এ ৩৯ জন নিরীহ বাংলাদেশী নিহত হয়েছে ভারতীয় বিএসএফ এর হাতে। সরকার এর তরফ থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. দীপু মনির উক্তি কতটা হতাশা ব্যাঞ্জক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি বলেন- “এ ব্যাপারে নতুন করে কিছুই বলার নাই। এধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন এবং এই হত্যাকান্ড বন্ধে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ” সত্যি দু:খ পেতে হয় এই ধরনের মন্তব শুনে।
যেখানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং স্বয়ং বহুবার সীমান্তে হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েও কাজ হচ্ছেনা সেখানে বাংলাদেশ সরকার পক্ষ থেকে শুধু প্রতিবাদ জানিয়ে এই পরিস্থিতির কি বা কতটুকু উন্নতি হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারন বিতর্কিত টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাওয়া সত্বেও শুধুমাত্র ভারত কে করিডোর দিতে তৈরী তিতাস নদীর বাঁধ কাটা হয়েছে। (সুত্র- দৈনিক আমার দেশ তাং-১৯/১/১২ ইং) আরও বেশী অবাক হতে হয় যখন দেখা যায় সংশ্লিষ্ট এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ এ ব্যাপারে কিছুই জানেনা। বাঁধ দেয়ার ব্যাপারেও কিছু জানতেন না এখন বাঁধ কাটার ব্যাপারেও কিছু জানেন না! তাহলে কার অনুমতিতে একটি স্বাধীন সার্বোভৌম রাষ্ট্রে হ¯তক্ষেপ করে? তাহলে কি আমাদের সরকার বলতে কিছু নাই? নাকি প্রতিবাদ করার সৎ সাহসটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন? আর এই অবস্থায় শুধুমাত্র মৌখিক প্রতিবাদ করে বাংলাদেশ সরকার সীমান্তে নারকীয় নির্যাতন বন্ধে কি বা কতটুকু করতে পারবেন তা সরকারই ভালো বলতে পারবেন। ভারতীয় হাইকমশিনরে র্ফাস্ট সক্রেটোরি (প্রসে অ্যান্ড পলটিক্যিাল) মনোজ কুমার মহাপাত্রে বলনে সীমান্তহত্যার ব্যাপারে আমাদরে স্পষ্ট বক্তব্য হলো— আমরা সীমান্তহত্যা শূন্যরে কোটায় নাময়ে আনতে চাই।
এজন্য বিজিবির সাহায্য প্রয়োজন। প্রতদিনি ২০০-৩০০ গরু চোরাকারবারি অবধৈভাবে সীমান্ত পার হয়।
বিজিবি যদি এদরে নয়িন্ত্রণ করে তাহলে হত্যার ঘটনা ঘটবে না। বিএসএফ এর পক্ষে সবকছিু করা সম্ভব না। পাকস্তিান, চীন, নপোলসহ অন্যান্য দশেরে সঙ্গে ভারতরে সীমান্ত রয়েছে।
সখোনে তো একটি হত্যার ঘটনাও ঘটে না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভারতীয় হাইকমশিনরে এই র্কমর্কতা বলনে, ওইসব দশে ভারতীয় গরু খেতে চায় না এবং গরু চোরাকারবারদিরে উত্সাহতি করে না। এজন্য সখোনে কোনো হত্যার ঘটনা ঘটে না। বাংলাদশে ভারতীয় গরু খেতে চায় এবং বিজিবির গরু চোরাচালানি উত্সাহতি করে। এজন্য সীমান্তে এই র্দুঘটনা ঘটে (সুত্র – দৈনিক আমার দেশ তাং- ২৬/১/১২)।
যদি গরু চোরাকারবারীদের প্রতিরোধই মুল উদ্দেশ্য হয় তবে ফেলানী কি গরু চোরা কারবারী? জ›তু জানোয়ারের মতো বাশে ঝুলিয়ে যে যুবতীর মৃতদেহ বিএসএফ বহন করছে সেই যুবতী কি চোরাকারবারী? কি অন্যায় করেছিল তারা যে এভাবে বিএসএফ এর গুলিতে তাদের প্রান হারাতে হল? আয়তনের বিশালতার মতোই ভারত শিক্ষা, সংস্ক, তথ্য প্রযুক্তি সহ সব ক্ষেত্রেই বিশ্বে স্থান করে নেয়া ভারতের মতো দেশের পক্ষে আরও সৈন্য মোতায়েন করে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা উচিত। ভারত কেন বাংলাদেশ সীমান্তে এই হীনমন্যতার এত ক্ষুদ্রতার পরিচয় দিচ্ছেন। আরও প্রশ্ন থেকে যায় যেখানে পাকি¯তান সীমান্তে কোন চোরাকারবারীদের লক্ষ্য করেও গুলি ছোড়া হয় না। সেখানে কমিশন দিতে না চাওয়াটাই কি ছিল হাবিবের দোষ যে এভাবে উলঙ্গ হয়ে প্রহৃত নির্যাতিত হতে হলো? এ ক্ষেত্রে দোষ কি শুধুই বাংলাদেশী চোরাকারবারীদের? ভারতীয় বিএসএফ এর কোন দোষ নেই?
ভারত সরকারের কাছে তাদের গরুর মূল্য থাকতে পারে। কিšতু বাংলাদেশ সরকারের কাছে রক্ত মাংসে গড়া মানুষের জীবনের কোন দাম নেই।
তাইতো অবলীলায়
ক্ষমতাসীন দলরে সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সয়ৈদ আশরাফুল ইসলাম বলনে, সীমান্তহত্যা নিয়ে রাষ্ট্র চন্তিতি নয়! ভারত তাদের গরুর জীবন রক্ষার্থে সীমান্তে বাংলাদেশী দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ দিয়েছে বিএসএফ কে। অথচ বাংলাদেশ কি করছে? তাদের একটার পর একটা তরতাজা প্রান চলে যাচ্ছে তবু রাষ্ট্র চিন্তিত নয় যেখানে প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিততাই তো বুঝতে পারছিনা। শেয়ার বাজার নিয়ে রাষ্ট্র চিন্তিতনয়। দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ে রাষ্ট্র চিন্তিতনয়।
ঋন সহায়তা ছাড় হচ্ছে না বলে রিজার্ভ ডলার কমছে তবুও রাষ্ট্র চিন্তিত নয়। আইন শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি- রাষ্ট্র চিন্তিতনয়। তাহলে কি নিয়ে চিšতা করে রাষ্ট্র? কোন রাষ্ট্রে বাস করছি আমরা।
এখান থেকে নেয়া হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।