আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"সাংস্কৃতিক আগ্রাসন-আসুন রুখে দেই"



সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের এক সংকটময় সময় অতিক্রম করছে দেশের সংস্কৃতি অঙ্গন। খুউব স্বাভাবিকভাবেই সেই আগ্রাসন আসে পুজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে। পুজিবাদ তার সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের জন্য যে কোন পথেই হাটবে সেটা হতে পারে জনমানুষের ক্ষতির মধ্য দিয়ে কারণ এটা তার চরিত্রের অন্তর্গত এবং সেটা খু্উব স্বাভাবিক। পুজিবাদ তার এই কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য বিভিন্ন পথ অবলম্বন করে তার পুজির মুনাফাকে নিশ্চিত করে। যা অনিবার্যভাবে সংস্কৃতি অঙ্গনে তার নখর থাবা বসায়।

এর একটি হাতিয়ার হিসেবে আমরা দেখি বিঞ্জাপন। বিঞ্জাপনের মধ্য দিয়ে পুজিবাদ তার পন্যের প্রচার,প্রসার,বিপনন ও মুনাফাকে নিশ্চিত করে। কিন্তু বিঞ্জাপনে যেটা থাকার কথা তা হল পন্য সম্পর্কিত তথ্য,পন্যের মান বিশেষত তার গুনাবলি ও ব্যবহারের দিক। কিন্তু আমরা যদি খেয়াল করি তবে দেখব,বিঞ্জাপন তার পন্য সম্পর্কে কোন তথ্য তো দেয়ই না বরং অতিরিক্ত অতিরঞ্জন করে এবং জনমানুষকে ভাগবাদ শেখাতে চায়। যেন এর বাইরে কোন জীবন হয় না,হতে পারে না ।

লক্ষণীয় বিষয় এই,বিঞ্জাপনে নারীকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করে পন্য তার সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের চেষ্টা চালায়। হতে পারে তা সমাজে নারীর অবদান,অবস্থান,সম্মান,মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে। হচ্ছেও তাই। এমন কিছু বিঞ্জাপনের নমুনা আমরা টিভি চ্যানেলসহ বিভিন্ন পত্রিকায় দেখতে পাই অহরহ। যেমন সাম্প্রতিক একটি বিঞ্জাপন এমন-বিয়ের পাত্রীর জন্য ছেলে(পাত্র) তার বন্ধুকে নিয়ে একটি ম্যারেজ মিডিয়া সেন্টারে গেছেন,সেই মিডিয়া সেন্টারের দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তি ছেলের কাছে জানতে চাচ্ছেন কি রকম মেয়ে তার পছন্দ।

জবাবে লাজুক হাসি দিয়ে ছেলেটি বলতে শুরু করেন-এমন একজন মেয়ে তার দরকার-ছেলেটিকে থামিয়ে দিয়ে ছেলের বন্ধু নিঃশ্বাস না নিয়ে বলে যান-যিনি ছেলের বন্ধুকে সবসময় সংগ দেবেন,সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলবেন,প্রয়োজনে ছেলেকে নেচে গেয়ে বিনোদনও দিবেন-এমন মেয়ে চাই। সংগে সংগে শর্ট ক্লোজে দেখানো হয় কর্তব্যরত লোকটি হেসে দিয়ে বলছেন,আসলে ছেলের তো কোন মেয়েরই দরকার নেই। সাথে সাথে আউট সাউন্ড আসছে-"তবে ছেলেটির কি দরকার"। হ্যা এই বিঞ্জাপন একটি মোবাইল কোম্পানীর যাতে বলা হচ্ছে নারী তো বিনোদনকারী,যদি তাই হয় তবে সেটা মোবাইলই তো দিতে পারে,এ জন্য বিয়ে করার দরকার কি?এই বিঞ্জাপনে সমাজে নারীর অবস্থানকে হেয় করা,নারীকে নিছক বিনোদনকারী হিসেবে উপস্থাপনের হীন চেষ্টা চালানো হয়েছে,যা নারীর জন্য অসন্মানের,অপমানকর। এরকম আর একটি বিঞ্জাপন এমন-বরপক্ষ মেয়ে দেখতে এসেছেন,যথারীতি মেয়েকে দেখানোর জন্য সামনে আনা হল-সেই মেয়েকে দেখে বর বিয়ে করতে নারাজ-কারন মেয়ের গায়ের রং ময়লা।

এক্ষেত্রে বিঞ্জাপনটি বলছে-ফেয়ারনেস ক্রিম,লোশন কিংবা সোপ হতে পারে সমাধান যা ব্যবহার করলে মাত্র কয়েক দিনে মেয়েটি হয়ে উঠবে ফর্সা ত্বক ও রুপের অধিকারী। হ্যা এখানেও বোঝানো হচ্ছে যে,মেয়ের বিয়ে হতে গেলে মেয়েকে ফর্সা ত্বক ও রুপের অধিকারী হতে হবে,এখানে মেয়েটির অন্যান্য গুনাবলি গৌণ। এখানেও নারীকে হেয় করার চেষ্টা হয়েছে। এরকম হাজার বিঞ্জাপন আছে যাতে নারীকে হেয় করা হয়। এতে নারীকে মানুষ নয়,বরং নারীকে ভোগ্য,পন্য,বিনোদনকারী ও অবলা ভাবতে শেখনো হয় যা,যে কোন সমাজে নেতিবাচকভাবে সুদূরপ্রসারী।

ঠিক এরকম এক অবস্থায় এর বিরুদ্ধে সমাজের ভেতর থেকে প্রতিবাদ উঠে আসা জরুরী। কিন্তু দৃশ্যমান তেমন কোন প্রতিবাদই উঠে আসছে না। খেয়াল করার বিষয় এই,তথাকথিত নামধারী যারা নিজেদের পরিচয় দেন সাংস্কৃতিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে,নিজেদের জাহির করেন সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে তাদেরই টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় এরকম নারীর জন্য অপমানকর বিঞ্জাপন অবিরাম প্রচার করা হয়। এই সব নামধারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের খোলনলচে মুখোশ উম্মোচনও জরুরী। বিভিন্ন দিক থেকেই আমাদের সংস্কৃতির উপর আগ্রাসন আসছে,সেটা যেমন প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে তেমনি পাশ্চত্য দেশ থেকেও।

সমাজের শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন যে কোন মানুষের উচিত এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নিজেদের কন্ঠকে সোচ্চার করা নতুবা এই আগ্রাসন চলতে থাকলে অনেক বেশী মুল্য দিতে হবে আমদের। তাই আসুন এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসন,তাদের ধারক,বাহক ও পোষকদের রুখে দেই এবং সংস্কৃতির গণতান্ত্রিক বিকাশের পথকে প্রশস্ত করি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.