পরিবর্তিত মালিকানা, একাধিক মালিকানা লিখেছেনঃ
আশরাফ আজীজ ইশরাক
প্রথম প্রকাশঃ বর্নমালা
ভারতীয় সিরিয়াল, ভারতীয় সিনেমা- কুড়ে কুড়ে খেয়েছে আমাদের, খাচ্ছে আজও। সাম্রাজ্যবাদী ভারতের হাতে এককালের মুক্তিযোদ্ধাদের হঠাত তাবেদারী আচরনের ফলে ভবিষ্যতেও হয়তো হব। ভারতীয়রা নিজেরাই অত্যন্ত খারাপ আর তাদের অনুকরন-অনুসরন করে আমরা সুযোগ্য নাগরিক হয়ে উঠব এমনটা আমি আশা করি না।
যেহুতু রাষ্ট্রীয়, সামাজিক এবং পারিপার্শ্বিকভাবে আমরা কোনভাবেই ভারতের শৃংখল থেকে মুক্ত হতে পারছি না নানা কারনে সেহুতু ভারতীয় সংস্কৃতিকে বাংলাদেশী সংস্কৃতির অংশ করে নিলে তাতে সংস্কৃতির অগ্রযাত্রারই সহায়ক হবে বৈ কমবে না। উপরন্তু আমি সীমানাবিহীন বিশ্ব চিন্তা করি।
সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিতে সাদা মানুষ-কালো মানুষে যেমন ভেদাভেদ নাই তেমনি সাদা ভবন (হোয়াইট হাউজ) দর্শনে মার্কিন মুলুকের অনুমতি নেওয়ারও কিছু নাই। আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীতে জাতি একটিই- মানুষ। মানুষ এবং মানুষের বাহিরে আর ওন জাতিই নাই। মানুষের মাঝে আমেরিকান-ভারতীয়-বাংলাদেশী ইত্যাদি সীমানায় আবদ্ধ করার খায়েশ লিঙ্কন, নেহরু, মুজিবদের খায়েশ হলেও হতে পারে তবে আমার নয়। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিতে প্রবেশাধিকার না দেওয়ার অধিকার ওদের কে দিয়েছে? বেদ, বাইবেল, কুরানে কি তাই লেখা হয়েছে?
দেশের ন্যায় সংস্কৃতিতেও আমি ভারতীয়, বাংলাদেশী কিংবা পাকিস্তানী সংস্কৃতিতে বাছবিচার করি না।
যেটা ভাল, সেটা ভারতীয় হলেও ভাল। আর যেটা খারাপ সেটা বাংলাদেশী হলেও খারাপ। ভারতীয় খুল্লাম খুল্লা নাচ কিংবা বাংলাদেশী রুপবানা নাচে কোমড় দুলাইয়া- কোনটাই গ্রহনযোগ্য না। আবার শিক্ষাখাতে ভারতীয় উন্নতি কিংবা স্থাপত্যশৈলীতে মধ্যপ্রাচ্যীয় সৌন্দর্য্য- দুটোই গ্রহনযোগ্য। কাজেই অযাচিত এবং মানবসৃষ্ট বিভেদের কাটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর দায় ভারতীয় কিংবা বাংলাদেশীদের নয় বরং দেশজ বিভেদ।
আমরা, মানুষের দোষ ধরতে অত্যন্ত পরাঙ্গম কিন্তু নিজেদের ভুলগুলোর ব্যাপারে তৃতীয় হস্তের ব্যাবহারে অত্যন্ত নিপুন। আমার বাবা বলে থাকেন, বাঙ্গালীর ৪ হাত- এক, ডান হাত; দুই, বাম হাত; তিন, অজুহাত এবং চার, কালোহাত। ভারতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনের কবলে পড়েছি আমরা এটা সত্য। কিন্তু সংস্কৃতি এমন কোন হাতিয়ার নয় যেটা আমাদের কোনঠাসা করতে পারে। সংস্কৃতি একটা টোপমাত্র।
ভারতীয় আগ্রাসনকে আমরা গ্রহন করছি বলেই তারা আগ্রাসন চালাতে পারছে। অন্যথায় বছরে ২০০ কোটি টাকা গচ্চা দিয়ে ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো নিশ্চয়ই এদেশে ব্যাবসা করত না। তর্কের স্বার্থে ধরে নেই, সাংস্কৃতিক পারমানবিক বোমার বিস্ফোরনের মুখে দাঁড়িয়ে এদেশবাসী একপ্রকার বাধ্য হয়ে ভারতীয় সিনেমা আর কূটনৈতিক সিরিয়ালগুলো গিলতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এতেই কি দায় শেষ?
ভারতের অনেক ভাল কাজ আছে, অনেক সুন্দর সুন্দর নিদর্শন আছে। সিনেমাশিল্পে বিপ্লব আনা অনেক ধ্রুপদী সিনেমাও আছে ভারতের।
ভারত কেবল শিলা কি জাওয়ানির নয়, ভারত এ আর রহমানের "জয় হো"-রও বটে। কিন্তু আমরা, এদেশের মানুষ নাকি বাধ্য হয়েছি ভারতীয় সংস্কৃতিকে গিলতে। তাহলে গেলার সময় কেন আমরা "জয় হো" না গিলে শিলা কি জাওয়ানি গিললাম? তবুও দায়মুক্তি ঘটে না। নোংরা চলচ্চিত্রের বাজারে যে নিখাদ প্রেমের "দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে" কিংবা চূড়ান্ত শিক্ষামূলক "তারে জামিন পার" আমরা কি গ্রহন করেছি? যেভাবে মাসাক্কালি দিয়ে দেশ ভরে গিয়েছিল সেভাবে নিশ্চয়ই "ঝাঁসি কি রাণীর" লক্ষ্মী বাই কিংবা এমএলএ ফাটাকেষ্ট দেশের একটি গলিতেও দেখা যায় নাই।
প্রযোজকেরা তাই বানায় যা আমরা দেখতে চাই।
আমরা চাই নোংরামি, তাই তারা বানায় পর্নোসাইট। যদি আমরা পর্নোগ্রাফি দেখা বন্ধ করতাম তবে নিশ্চয়ই হিটের উপর চলা এসব পর্নোসাইট টিকে থাকতে পারত না। আমরা শিলা কি জাওয়ানি দেখতে চাই কিন্তু কৈলাস খায়েরের হাজারো গুন মাদকতাসমৃদ্ধ আকর্ষনীয় গান আমাদের কাছে পশ্চাদশীল বলে মনে হয়। আমরা কোটি টাকার বিনিময়ে পড়শী কিংবা মিলার স্বঘোষিত "আধুনিক" গান শুনতে চাই কিন্তু ওয়ারফেজের কিছু নীতিভরা গান কেবলই সত্য কিন্তু অচলের পাতায় ঠাঁই দেই। নিশ্চয়ই এসব সত্যপন্থীদের অশেষ অর্থ এবং সময় নেই যে কেবল লোকসান দিয়েই যাবে আর যাবে।
হিন্দীতে একটি জনপ্রিয় স্লোগান আছে,
সোচ বাদলো, দেশ বাদলেগা।
আমিও বলি, রুচী পাল্টান, সব পাল্টাবে। আপনি রুচী খারাপের দিকে পাল্টিয়েছেন তাই খারাপ হয়েছে।
এত কিছু বলার কারন একটিই, আজকে একটি হিন্দী চলচ্চিত্র দেখলাম যার নাম "টেবিল নম্বর ২১".... র্যাগিং এর উপর নির্মিত অসাধারন একটি চলচ্চিত্র। এই ছবিটিও হয়ত হিট হবে না, পাবে না ব্যবসা সফলতা।
আর দশজন প্রজোযকের মত এই ছবির নির্মাতাও হয়তো খুজবেন কোন গরম (হট) নায়িকা আর উত্তেজক গল্প যেটাতে যত না কাহিনী তার চেয়ে বেশী ঘটনা "স্ক্যান্ডাল" দিয়ে ভরা থাকবে। আমি চাইব আমরা যেন এগিয়ে আসি যা কিছু ভাল তার সাথে- হউক তা যেকোন দেশের, যেকোন মানুষের।
অনেকে দেশপ্রেমের দোহাই দিয়ে ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানী সংস্কৃতির বিরোধিতা করেন। যারা এহেন কথা বলেন তাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন হজ্জ্ব না করেন, চীনা পন্য ক্রয় না করেন, আমেরিকান কোম্পানিতে চাকুরী না করেন, আমেরিকান মুদ্রা (ডলার) ব্যবহার না করেন, রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান এড়িয়ে চলেন। এর কারন হিসেবে-
* সৌদি আরব মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী দেশ, সৌদি আরবের আয়ের সবচেয়ে বড় উতস হজ্জ্ব।
* চীন মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারী দেশ, চীনা পন্যের অন্যতম বৃহত বাজার বাংলাদেশ (পন্যও সংস্কৃতির অংশ)
* আমেরিকা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় বিরোধীতাকারী দেশ। আমেরিকান কোম্পানীতে চাকুরী করলে আমেরিকার লাভ হবে, আমেরিকান কারেন্সি ব্যবহার করলে সেদেশের কারেন্সীর গ্রহনযোগ্যতা বাড়বে।
*রাশিয়া মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীতে চূড়ান্ত অসহযোগিতাকারী দেশ, অনেকটা ভারতের মত।
আসলে দেশপ্রেমের দোহাই দিলে একজন বাংলাদেশীর জন্য পুরো পৃথিবীটার আয়তন কেবল এবং কেবলমাত্র ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার হয়ে যাবে। দেশ অত্যন্ত গৌন বিষয়।
বিশ্বায়নের এই যুগেও মানবতার উর্ধ্বে দেশকে স্থান দেয়া সংকীর্নমনতা বৈ কিছুই না। আমি ততক্ষন দেশপ্রেমিক যতক্ষন আমার দেশ ঠিক। একজন দেশপ্রেমিক পাকিস্তানির দায়িত্ব পালন করেছে একাত্তরের ঘাতক-দালালরা। আপনিও ঘাতক-দালাল হিসেবে চিহিত হতে চান? আবেগ ও আবেগব্যাবসায়ীদের কাছে যুক্তি,বিজ্ঞান ও ঐশ্বরিক বানীকে মিথ্যা প্রমান করা কেবলই আপনার আত্মদম্ভ এবং গোঁয়ার্তুমি ব্যাতীত কিছুই না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।