তারা ভরা রাতের নিষাচর...
আমরা তখন পাচ কি ছয় ক্লাসে পড়ি ঠিক মনে নেই। স্কুল ছিল পাহাড়ের কোল ঘেষে, পাশে লম্বা লম্বা ইউকেলিপটাস গাছ। তাতে বড় বড় ছিমের মত বিচিযুক্ত ফল ঝুলে থাকত আমরা নাম দিয়েছিলাম বাদরলাঠি। সুউচ্চ গাছে লাঠির মত লম্বা দেখেই বোধহয় এ নামকরন। তবে বাদর লাঠি গাছে বানর সাহেবদের দেখা মিলত কদাচিৎ।
এমনি একদিন আমারা ক্লাসরুমে ঢুকতেই দেখলাম এক বানর মহাশয় মহাআনন্দে ব্লাক বোর্ডের উপর হাত পা ছড়িয়ে বসে। আমদের আনেককে দেখে বোধহয় তার সারকাস দেখানোর ইচ্ছা হলো, দু বার ডিগবাজি দিয়ে লাফ দিয়ে স্যারের টেবিলে এসে বসলো। আমরা যখন তুমুল উত্তেজনার সাথে বানরের লাফঝাফ দেখায় ব্যস্ত তখনি স্যর উদ্যত বেত হাতে প্রবেশ করলেন। স্যরের উদ্যত বেত দেখেই কিনা বানর মহাশয় ব্লাক বোর্ডের উপর এক কোনায় গুটিশুটি মেরে বসে। সেই স্যার আবশ্য আমাদের বানর বলেই সম্বোধন করতেন তাই নতুন বানরের আগমন তার গোচরে এল না।
তবে বিপত্তি ঘটলো রোল কলের সময়। স্যার রোলকলের খাতা খুলতেই বানর সাহেব নড়ে চড়ে উঠলেন এবং স্যরকে নকল করে বিপুল অন্গভন্গি শুরু করলো। আমরা তুমুল কলরব আর হাসিতে তার এই কর্মকান্ডকে স্বাগত জানালাম।
স্যর যদিও আমাদের বানর, বানরের জাত ইত্যদি বলে ফেনা তুলেন সত্যিকারের বানর দেখে উনি বেশ ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলেন এবং রোলকল বাদ দিয়ে টিচার্স রুমের দিকে ছুটলেন। ইতিমধ্যে বানর স্যার স্যরের বেত আর রোলকল খাতা দখলের মাধ্যমে স্যর হিসাবে আর্তপ্রকাশ করলো।
তবে একটু পরে হারুন ভাই আর স্যর একত্রে প্রবেশ করলেন। তাদের দেখেই বানর বাদরামি বাদ দিয়ে ব্লাক বোর্ডের কোনায় গিয়ে বসে। স্যরের নির্দেশে আমরা সবাই বের হয়ে আসলাম। শুধু বানর মিয়াকে বহু ভয় দেখিয়েও বের করা গেল না, সম্ভবত বিনামূল্যে শিক্ষা অর্জনের এ সুযোগ সে ছাড়তে নারাজ। তাই বানরের গনা ডাকান হলো, বানরের আত্যচার থেকে মুক্তি পাবার লখ্যে।
কিন্তু বেচারা রুমের দরজা খুলতেই বানর তীব্র গতিতে পালাল। তবে যাবার সময় আমাদের ফার্স্ট বয়ের বই ছিনতাই করে নিয়ে গেল। সুউচ্চ ইউকালিপটাস গাছে বসে এক হাতে বই আর এক হাতে বাদর লাঠি নিয়ে সে বিচিত্র অন্গভন্গি করতে লাগলো। স্যর রসিকতা করে বললেন " দেখিশ তোর বইয়ের মত তোর প্রথম পজিশনটাও না বানরে দখল করে!"
সেদিন স্যরের কথায় সবাই হাসলেও, দেশের সুউচ্চ পদনাসিন কিছু নর-নারীর কার্জক্রম দেখলে কেবল সেই স্যরের কথা মনে হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।