আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লালনের জাত ঠিক করে দিলো (?) গৌতম ঘোষ ...

আমি চাষার ছেলে, আমার গা দিয়ে কয় মাটির গন্ধ....

না জেনে ইতিহাস রচনা করলে কি দাড়ায়? মূল ঘটনাকে বির্তকিত করে। তেমনি মতাদর্শন বা তত্ত্ব ভুল বুঝে লিখলে কি হয়? সাড়ে সর্বনাশ!!---- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর উপন্যাস অবলম্বনে মনের মানুষ ঠিক এই কাজটি করেছে। বাউল সম্রাট লালনকে জনমনে স্পস্ট একটি ভুল রেখার উপর দাড়করিয়েছে। -গৌতম ঘোষ যে কাউকে নিয়েই তার ইচ্ছেমতোন ম্যুভি বানাতে পারেন। এটা তার স্বাধীনতা।

লালনকে নিয়ে বানালেও হতো। তিনি তা করেননি। করেছে ভয়ানক একটি অপরাধ, বাউল সম্রাট লালন শাহকে অন্যের মনের কল্পনা থেকে চিত্রায়িত করেছেন। সাথে তার বাউল সম্রাট লালন শাহর মতাদশর্নকে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। তার ধর্ম বর্ণ ও জাত সম্পর্কে একটি ধারনা দেয়া হয়েছে।

মনের মানুষে সরল ভাবে দেখানো হয়েছে জন্মসূত্রে লালন হিন্দু ধর্মের (?) লালন হিন্দু না মুসলমান এনিয়ে বিস্তর মতভেদ। লালন গবেষকরা যেমন লিখেছেন লালন কায়স্ত পরিবারের সন্তান যার পিতা মাধব এবং মাতা পদ্মাবতী। পরে লালন ধর্ম পরিবর্তন করেন। আবার গবেষকদের একাংশ মনে করেন লালন মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। পিতা দরিবুল্লাহ দেওয়ান, মাতার নাম আমিনা খাতুন।

মূলত লালনকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করে গবেষকরা নানান সময়ে হিন্দু বা মুসলমান বানানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু লালন নিজেই এসব প্রশ্নের উত্তর এবং সমাধান দিয়েছেন জাত জন্মের ব্যাপারে লালনের সোজাসুজি কথা- “সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে লালন কয় জাতের কিরুপ দেখলাম না এই নজরে। .......... জগত জুড়ে জাতের কথা লোকে গল্প করে যথাতথা লালন বলে জাতের ফাতা ডুবিয়েছি সাধ বাজারে। ” আরেক জায়গায় একই বিষয়ে লালন লিখেছেন- “সবে বলে লালন ফকির হিন্দু কি যবন লালন বলে আমার আমি না জানি সন্ধান। ......... বিবিদের নাই মুসলমানী পৈতে নাই যার সেও তো বামনী বোঝরে ভাই দিব্যজ্ঞানী লালন তেমনি জাত একখানা।

” আরেক জায়গায় লালন বলেন - “সবে বলে লালন ফকির কোন জাতের ছেলে কারে বা কী বলি আমি দিশে না মেলে। ” -লালনের জাত পরিচয় বিষয়ক গানগুলো বিশ্লেষণ করলে যে জিনিষটা ভালো ভাবে অনুমান করা যায়, সেটা হল, লালন সচেতনভাবেই তাঁর পরিচয় গোপন করে রেখেছিলেন যাতে তাঁকে কোন ধর্মে বা জাতে বেধে রাখা না যায়। লালন বারবার এটাই চেয়ে আসছিলেন যাতে তাঁর পরিচয় একজন মানুষ হিসেবে পরিচিতি পায়। অথচ গৌতম গোষ তার মনের মানুষ ম্যুভিতে অবলিলায় লালনকে হিন্দু ঘরের বলে চালিয়ে দিলেন। যে মানুষটি জাতের উর্দ্ধে রয়েছেন তাকে জাতের হিসাব নিকাশে ফেলে অবর্শ্যই সর্বনাশ করা হয়েছে।

গৌতম ঘোষ বারবারই বিভিন্ন পত্র পত্রিকা, টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মনের মানুষ লালন ফকির এর জীবনী নয়। এটি শুধুমাত্র লালনের জীবনদর্শন, জীবনাদর্শ আর সঙ্গীত জীবনের প্রতিচ্ছবি । মনের মানুষ মূলত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর উপন্যাস। এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র লালন কিন্তু সেই লালন প্রকৃত লালন নয়, অনেকখানিই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর মনের কল্পনা। লালনের জীবনাদর্শকে পথ ধরে সেই উপন্যাসের পথচলা।

এটা কি এখন ওই উপন্যাস হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে? নাকি লালনের অটো-বায়োগ্রাফী হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে? সাধারন দর্শকরা কি হিসেবে এটাকে নিচ্ছে? লালন নামের পরিবর্তে কাল্পনিক এক বাউলের নাম দিলে কি হতো না? #

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।